ঢাকা ০২:৫০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫

রামগতিতে মেঘনার তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণে ধীরগতি, জনমনে অসন্তোষ

রামগতি (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ২৩ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

লক্ষ্মীপুরের রামগতি-কমলনগরে মেঘনার ভাঙ্গন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। চলতি বর্ষায় ভাঙ্গনের তীব্রতা বেড়েছে ব্যাপকহারে। এখন শুষ্ক মৌসুমেও ভাঙ্গছে মেঘনা। কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না রামগতি-কমলনগরে মেঘনার ভাঙ্গন। এতে নদীর তীরের লক্ষাধিক মানুষ রয়েছে উদ্বিগ্ন। কখন কার ঘরবাড়ি ভাঙ্গবে, সেই দুশ্চিন্তায় রয়েছে তারা। মেঘনার ভাঙন রোদে বিগত সরকার ‘তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের’ নামে তিন হাজার ৮৯ কোটি ৯৬ লাখ ৯৯ হাজার টাকার একটি প্রকল্প ২০২১ সালের ১ জুনে পাস করে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। কিন্তু চার বছরে মাত্র ৪০ শতাংশ কাজ হয়েছে বলে দাবি পাউবো কর্তৃপক্ষের।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে , ৪৫ বছর ধরে ধারাবাহিক ভাঙনে রামগতি ও কমলনগর উপজেলার ২৪২ বর্গকিলোমিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।এতে ভিটামাটি হারিয়ে বাস্তুচ্যুত হয়েছে লক্ষাধিক মানুষ।লক্ষ্মীপুর পাউবো সূত্রে জানা গেছে, মেঘনা নদীর বড়খেরী, লুধুয়াবাজার এবং কাদিরপণ্ডিতেরহাট বাজার তীর রক্ষা বাঁধ প্রকল্প নামের ৩৩.২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রকল্পটি ২০২১ সালের পহেলা জুন পাস করে একনেক সভায়। ২০২১ সালের ১৭ আগস্ট ই-জিপি টেন্ডার পোর্টাল এবং ১৮ আগস্ট পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। টেন্ডার অনুসারে শতাধিক লটের মাধ্যমে মোট তিন হাজার ৪০০ মিটার কাজ শুরু হয়। চার বছরে মাত্র ৪০ শতাংশ কাজ হয়েছে বলে দাবি পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের।জানা গেছে, কাজ পাওয়া ঠিকাদাররা প্রথমে স্থানীয় কিছু দালালের মাধ্যমে জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের কাজ শুরু করেন। পরে তাদের মধ্যে দরদাম ও কমিশন বাণিজ্য নিয়ে ঝামেলা দেখা দেয়। এরপর বালু সংকটের অজুহাত দেখিয়ে তাঁরা কাজগুলো বন্ধ রাখেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের তিনজন প্রকৌশলী জানিয়েছেন, প্রকল্পের কার্যাদেশপ্রাপ্ত ৯৭টি লটের মধ্যে ৩৫ টি লটে কোনো কাজ হচ্ছে না। তবে পাউবোর কর্মকর্তার দাবি ইতিমধ্যে অধিকাংশ লটে কাজ শুরু হয়েছে। অন্য লট গুলোতেও কাজ শুরুর প্রক্রিয়া চলছে। এর মধ্যে কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ পেলে উধাও হয়ে যায়। আবার এসএসইসিএলের সাতটি লটে দু-তিন ভাগ, এডব্লিউআরের পাঁচটি লটে দুই ভাগ, বিশ্বাস বিল্ডার্সের ছয়টি লটে দুই ভাগ, ইলেকট্রো গ্রুপের একটি লটে পাঁচ ভাগ কাজ শেষ হওয়ার পর প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখেন তাঁরা। অন্যদিকে ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ১৫টি লটে প্রায় ৪০ শতাংশ শেষ হওয়ার পর থেকে কাজ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রাখেন তাঁরাও। এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো কর্মকর্তা কথা বলতে রাজি হননি এ প্রতিবেদকের সাথে।চরগাজী ইউনিয়নের বাসিন্দা বাবুল সাহা বলেন, ৪ বছর শেষ হলেও দৃশ্যমান কাজ চোখে পড়ছেনা৷ মেঘনা নদীর তীর রক্ষা বাঁধ প্রকল্পের কাজ নিয়ে কোন ধরনের নয়ছয় মেনে নেওয়া হবেনা।বড়খেরী ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান বলেন, সময়মতো কাজ না করায় এই ইউনিয়নের স্থাপনা, ঘরবাড়ি, রাস্তঘাট বিলীন হওয়ার পথে। আমরা দ্রুত প্রকল্পটির কাজ সম্পন্ন চাই।এসব অভিযোগ অস্বীকার করে লক্ষ্মীপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ জামান খান বলেন, অনেক স্থানে বাঁধ দৃশ্যমান হয়েছে। কয়েকটি স্থানে বর্ষা সহ বিভিন্ন কারণে আমরা কাজ শুরু করতে দেরি হয়েছে। আমাদের চেষ্টার কোন কমতি নেই। তবে অচিরেই মেঘনার তীরের সব স্থানে সকল লটের কাজ শুরু হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

রামগতিতে মেঘনার তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণে ধীরগতি, জনমনে অসন্তোষ

আপডেট সময় :

লক্ষ্মীপুরের রামগতি-কমলনগরে মেঘনার ভাঙ্গন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। চলতি বর্ষায় ভাঙ্গনের তীব্রতা বেড়েছে ব্যাপকহারে। এখন শুষ্ক মৌসুমেও ভাঙ্গছে মেঘনা। কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না রামগতি-কমলনগরে মেঘনার ভাঙ্গন। এতে নদীর তীরের লক্ষাধিক মানুষ রয়েছে উদ্বিগ্ন। কখন কার ঘরবাড়ি ভাঙ্গবে, সেই দুশ্চিন্তায় রয়েছে তারা। মেঘনার ভাঙন রোদে বিগত সরকার ‘তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের’ নামে তিন হাজার ৮৯ কোটি ৯৬ লাখ ৯৯ হাজার টাকার একটি প্রকল্প ২০২১ সালের ১ জুনে পাস করে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। কিন্তু চার বছরে মাত্র ৪০ শতাংশ কাজ হয়েছে বলে দাবি পাউবো কর্তৃপক্ষের।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে , ৪৫ বছর ধরে ধারাবাহিক ভাঙনে রামগতি ও কমলনগর উপজেলার ২৪২ বর্গকিলোমিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।এতে ভিটামাটি হারিয়ে বাস্তুচ্যুত হয়েছে লক্ষাধিক মানুষ।লক্ষ্মীপুর পাউবো সূত্রে জানা গেছে, মেঘনা নদীর বড়খেরী, লুধুয়াবাজার এবং কাদিরপণ্ডিতেরহাট বাজার তীর রক্ষা বাঁধ প্রকল্প নামের ৩৩.২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রকল্পটি ২০২১ সালের পহেলা জুন পাস করে একনেক সভায়। ২০২১ সালের ১৭ আগস্ট ই-জিপি টেন্ডার পোর্টাল এবং ১৮ আগস্ট পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। টেন্ডার অনুসারে শতাধিক লটের মাধ্যমে মোট তিন হাজার ৪০০ মিটার কাজ শুরু হয়। চার বছরে মাত্র ৪০ শতাংশ কাজ হয়েছে বলে দাবি পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের।জানা গেছে, কাজ পাওয়া ঠিকাদাররা প্রথমে স্থানীয় কিছু দালালের মাধ্যমে জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের কাজ শুরু করেন। পরে তাদের মধ্যে দরদাম ও কমিশন বাণিজ্য নিয়ে ঝামেলা দেখা দেয়। এরপর বালু সংকটের অজুহাত দেখিয়ে তাঁরা কাজগুলো বন্ধ রাখেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের তিনজন প্রকৌশলী জানিয়েছেন, প্রকল্পের কার্যাদেশপ্রাপ্ত ৯৭টি লটের মধ্যে ৩৫ টি লটে কোনো কাজ হচ্ছে না। তবে পাউবোর কর্মকর্তার দাবি ইতিমধ্যে অধিকাংশ লটে কাজ শুরু হয়েছে। অন্য লট গুলোতেও কাজ শুরুর প্রক্রিয়া চলছে। এর মধ্যে কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ পেলে উধাও হয়ে যায়। আবার এসএসইসিএলের সাতটি লটে দু-তিন ভাগ, এডব্লিউআরের পাঁচটি লটে দুই ভাগ, বিশ্বাস বিল্ডার্সের ছয়টি লটে দুই ভাগ, ইলেকট্রো গ্রুপের একটি লটে পাঁচ ভাগ কাজ শেষ হওয়ার পর প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখেন তাঁরা। অন্যদিকে ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ১৫টি লটে প্রায় ৪০ শতাংশ শেষ হওয়ার পর থেকে কাজ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রাখেন তাঁরাও। এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো কর্মকর্তা কথা বলতে রাজি হননি এ প্রতিবেদকের সাথে।চরগাজী ইউনিয়নের বাসিন্দা বাবুল সাহা বলেন, ৪ বছর শেষ হলেও দৃশ্যমান কাজ চোখে পড়ছেনা৷ মেঘনা নদীর তীর রক্ষা বাঁধ প্রকল্পের কাজ নিয়ে কোন ধরনের নয়ছয় মেনে নেওয়া হবেনা।বড়খেরী ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান বলেন, সময়মতো কাজ না করায় এই ইউনিয়নের স্থাপনা, ঘরবাড়ি, রাস্তঘাট বিলীন হওয়ার পথে। আমরা দ্রুত প্রকল্পটির কাজ সম্পন্ন চাই।এসব অভিযোগ অস্বীকার করে লক্ষ্মীপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ জামান খান বলেন, অনেক স্থানে বাঁধ দৃশ্যমান হয়েছে। কয়েকটি স্থানে বর্ষা সহ বিভিন্ন কারণে আমরা কাজ শুরু করতে দেরি হয়েছে। আমাদের চেষ্টার কোন কমতি নেই। তবে অচিরেই মেঘনার তীরের সব স্থানে সকল লটের কাজ শুরু হবে।