রিভিউ রায় : বিচারপতি অপসারণ সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে
- আপডেট সময় : ১২:০৫:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ অক্টোবর ২০২৪ ৯৬ বার পড়া হয়েছে
বিচারপতি অপসারণে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনরুজ্জীবিত করে যে রায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ সাত বছর আগে দিয়েছিল, পর্যালোচনার পর সেই সিদ্ধান্তই বহাল রেখেছে সর্বোচ্চ আদালত।
বিচারপতি অপসারণ প্রক্রিয়া নিয়ে গত সরকারের সময় যে জটিলতা তৈরি হয়েছিল, এই রিভিউ রায়ের মধ্য দিয়ে তার অবসান ঘটল বলে আইনজীবীরা মনে করছেন।
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে আপিল বিভাগের দেওয়া ওই রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করেছিল রাষ্ট্রপক্ষ। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে ৬ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ রোববার শুনানি শেষে কিছু নির্দেশনাসহ তা নিষ্পত্তি করে দিয়েছে।
রোববার (২০ অক্টোবর) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। একইসঙ্গে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল পুনর্বহাল করা হয়।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। রিটকারী পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
আদালতের বন্ধু হিসেবে শুনানিতে মত দিয়েছেন সিনিয়র অ্যাভোকেট রুহুল কুদ্দুস কাজল। তিনি জানান, সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল সংক্রান্ত সংবিধানের ৯৬ (২,৩,৪,৫,৬,৭ ও ৮) অনুচ্ছেদ বহাল করা হয়েছে। আর পর্যবেক্ষণসহ রিভিউ নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
১৯৭২ সালে প্রণীত মূল সংবিধানে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে ছিল। ১৯৭৫ সালের ২৪ জানুয়ারি সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে এ ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে অর্পণ করা হয়। পরে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা দেওয়া হয় সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের কাছে। মার্শাল প্রক্লেমেশনে করা পঞ্চম সংশোধনীতে এক্ষেত্রে ৯৬ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন আনা হয়েছিল।
২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ষোড়শ সংশোধনীতে সেটা বাতিল করে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া হয় সংসদকে। বিলটি পাসের পর একই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর তা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়।
বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষেত্রে শারীরিক বা মানসিক অসামর্থ্য এবং গুরুতর অসদাচরণ তদন্ত করার সাংবিধানিক দায়িত্ব সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের ওপর ন্যস্ত। এ কাউন্সিল প্রধান বিচারপতি ও কর্মে প্রবীণ পরবর্তী দুই বিচারপতি নিয়ে গঠিত হয়। কাউন্সিলের রিপোর্টের পর রাষ্ট্রপতি বিচারকদের অপসারিত করবেন।
সংবিধানের এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের নয় আইনজীবী হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। এ রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে একই বছরের ৯ নভেম্বর এ সংশোধনী কেন অবৈধ, বাতিল ও সংবিধান পরিপন্থি ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
রুল শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ৫ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে রায় দেন বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ।
রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি পাওয়ার পর ২০১৭ সালের ৪ জানুয়ারি এ বিষয়ে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।
ওই আপিলের শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ৩ জুলাই হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে সর্বসম্মতিক্রমে চূড়ান্ত রায়টি দেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ। পরে একই বছরের ১ আগস্ট ৭৯৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশিত হয়। এ রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে ২০১৭ সালের ২৪ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে।