সংস্কার হয়নি ভঙ্গুর সংসদ ভবন

- আপডেট সময় : ৮২ বার পড়া হয়েছে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর তোড়জোরের শেষ নেই। গত বছরের ডিসেম্বর থেকেই সংসদ নির্বাচন দিতে অর্ন্তবর্তী সরকার প্রধান ড. ইউনুসের উপর চাপ প্রয়োগ করে আসতেছিল প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো।এরপ্রেক্ষিতে সরকার সংস্কারের পাশাপাশি নির্বাচনের প্রকিয়া চালাচ্ছিল ঢিমেতালে। সম্প্রতি সরকার নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে। সংস্কারের পাশাপাশি জুলাই গনঅভ্যূত্থানের স্মৃতি ধরে রাখতে সাবেক গনভবনে কাজ শুরু করে জুলাই স্মৃতি জাদুঘরের। দ্রুত কাজ এগোচ্ছে জাদুঘরের। কিন্তু গত এক বছরেও গনঅভ্যূত্থানে জনরোষে ভেঙ্গে ফেলা সংসদ ভবনের সংস্কার কাজ হয়নি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, এবিষয়ে তারা কোনো চিঠি বা বাজেট পাননি। অথচ সংসদ নির্বাচনে এমপি, মন্ত্রী হওয়াদের বাস ভবন খোঁজা শুরু করেছে সরকার। অথচ সাবেক গন ভবনে স্থাপিত জুলাই গনঅভ্যূত্থান জাদুঘরের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। সব বিষয়গুলো যেন তালগোল পাকিয়ে ফেলা হচ্ছে। এমনি মন্তব্য করেছেন সাবেক একাধিক সংসদ সদস্য।
২০২৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতীয় সংসদ ভবনে শুরু হচ্ছে বড় ধরনের সংস্কার ও আধুনিকায়নের কার্যক্রম। ২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে উৎসুক ছাত্র-জনতা সংসদ ভবনের ভেতরে ঢুকে পড়ে। এ সময় সংসদের ভেতরের প্রতিটি স্থাপনায় চালানো হয় ভাঙচুর। ঘটে চুরির মতো ঘটনাও। বর্তমানে সংসদের ভেতরের কার্যক্রম চালানোর মতো কোনো পরিবেশ নেই, অক্ষত নেই সংসদের চেয়ার, কার্পেটসহ আসবাবপত্র। ঘটনার পর প্রায় অচল হয়ে পড়া ভবনটিকে আবারো সচল ও প্রযুক্তিনির্ভর কাঠামোয় ফিরিয়ে আনতে সচেষ্ট সংসদ সচিবালয় ও গণপূর্ত অধিদপ্তর। প্রাথমিকভাবে ৩০০ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে। সংস্কার কাজ শুরু হওয়ার কথা এবং সময়সীমা ধরা হয়েছে ডিসেম্বর-২০২৫। লক্ষ্য একটাই- ২০২৬ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগেই সংসদের পূর্ণাঙ্গ কার্যকারিতা নিশ্চিত করা।
গত ৫ই আগস্ট তছনছ করা হয় সংসদ ভবনের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, হুইপ, সংসদীয় কমিটির দপ্তর, আইটি সেন্টার ও ভিআইপি কক্ষসমূহ। ধ্বংস হয়ে যায় এসি, কম্পিউটার, ই-ভোটিং প্রযুক্তি, সম্প্রচার ব্যবস্থা ও টেলিকম সংযোগ। সংসদের অধীন এমপি হোস্টেল, কর্মকর্তা-কর্মচারীর আবাসিক ভবনেও বিক্ষুব্ধ জনতা ভাঙচুর চালিয়েছে। লুট হয়েছে আসবাব, ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি, গুরুত্বপূর্ণ ফাইল। ভেতরে বিধ্বস্ত হয়েছে আসবাবপত্র।
জরুরী ভাবে সংস্কার করতে হচ্ছে, কাঠামোগত মেরামত, আসবাবপত্র ও কার্পেট প্রতিস্থাপন, সাউন্ড প্রুফিং ও সম্প্রচার ব্যবস্থা, নিরাপত্তায় আধুনিকায়ন, ভোটিং সফটওয়্যার ও আইটি পুনঃস্থাপন। সংসদ সচিবালয় ও গণপূর্ত বিভাগের তথ্যমতে, ভবন ও সংশ্লিষ্ট আবাসিক এলাকায় ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সংসদের নিজস্ব ক্ষতি ৫০ কোটি টাকার মতো। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আইটি বিভাগে।
গণপূর্ত বিভাগের কাঠ ও আসবাব শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজেদুল ইসলাম বলেন, সংসদের সংস্কারে এখনো বাজেট পাইনি। এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনাও পাইনি। বাজেট আর নির্দেশনা পেলে আমরা প্রস্তুত আছি খুব দ্রুতই কাজ শুরু করে দেবো। সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো জানিয়েছে, নতুন করে বসানো হবে সাইমুলটেনিয়াস ইন্টারপ্রেটেশন সিস্টেম (ঝওঝ), এক্সেস কন্ট্রোল, আর্চওয়ে, ব্যাগেজ স্ক্যানার, সিসিটিভি ও নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক। এসব ক্রয়ের জন্য তালিকা তৈরি করে জরুরি ভিত্তিতে অনুমোদন চাওয়া হয়েছে। কিন্তু এবিষয়ে তারা কোনো তথ্য পাননি।
অপরদিকে উচ্চকক্ষের আভাস, এখনো পরিকল্পনায় নয়, সকল রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ধারাবাহিক সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে উচ্চকক্ষ গঠনের বিষয়ে। কিন্তু উচ্চকক্ষের নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে এখনো জটিলতা কাটেনি। রাজনৈতিকভাবে উচ্চকক্ষ (সিনেট বা দ্বিতীয় চেম্বার) চালুর দাবি উঠলেও এখনই আলাদা ভবন নির্মাণ সম্বব হচ্ছে না।
সংসদের সংস্কার কার্যক্রমের বিষয়ে সংসদ সচিব (ভারপ্রাপ্ত) মো. কামাল উদ্দিন বলেন, এ বিষয় আমাদের বিভাগের কাজ না, এটা ইঞ্জিনিয়ার সেকশনের কাজ। এ বিষয়ে আর বেশি কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না। আপডেট থাকলে আমরা জানিয়ে দিব।
প্রসঙ্গত, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর জাতীয় সংসদ, গণভবনসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে। জাতীয় সংসদ ভবনের পাশাপাশি গণভবন হওয়ায় এই দুই স্থাপনা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
গন অভ্যূত্থানের পরদিন ৬ আগস্ট মঙ্গলবার সকালে জাতীয় সংসদ ভবনে গিয়ে দেখা গেছে, সংসদের প্রতিটি গেটে সেনা সদস্যরা পাহারায় রয়েছেন। সেই সঙ্গে প্রতিটি গেটেই উৎসুক জনতার চাপ লক্ষ্য করা গেছে। কেউ সংসদ ভবনের ভেতরে প্রবেশ করছেন, আবার কেউ সংসদের ভেতরে ঘুরে আসছেন। ভেতরে গিয়ে কেউ ছবি তুলছেন আবার কেউ ভিডিও করছেন। এ সময় গতকাল জাতীয় সংসদ ভবনে উৎসুক জনতার প্রতিটি জায়গায় ভাংচুর ও ক্ষতবিক্ষতের ছাপ দেখা গেছে। সংসদ ভবন নির্মাণের পর জানালায় যেসব গ্লাস লাগানো হয়, সেগুলোও ভেঙে ফেলা হয়েছে। সংসদেও মূল ভবনের হল রুমের বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভাংচুরের পাশাপাশি ব্যাপক লুটপাট হয়েছে বলে জানান সংসদের কর্মচারীরা।
গুলশান-২ থেকে জাতীয় সংসদ ভবনের ভেতরটা দেখতে আসেন মো. মিজানুর রহমান। মূলত দেখার জন্যই এসেছি এবং এসে ভালো লেগেছে। তবে কষ্ট লেগেছে ভাংচুরের পাশাশি মালামাল লুটপাট করেছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, জালিম সরকার পদত্যাগ করেছে এটা খুবই ভালো লাগছে। সংসদে ঢুকতে কেউ বাধা দেয়নি। রাস্তায় কোনো ট্রাফিক নেই। রাস্তায় শুধু জনগণ। দুই-তিনদিন আগেই এই সংসদের পাশে সাধারণ জনগণ আসতে পারতো না। অথচ এখন সাধারণ জনগণ এটার ভেতরে ঘুরছে। আল্লাহ জাস্ট শিক্ষা দিয়েছে। কোনো জিনিস নিয়ে অহংকার করা উচিত না। সরকার পতনে আমি খুব খুশি।