সচিবালয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, লাঠিচার্জ

- আপডেট সময় : ৯২ বার পড়া হয়েছে
রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনা, শিক্ষায় নানা অব্যবস্থাপনা এবং আইন ও শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ের গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়েন। গতকাল মঙ্গলবার বিকাল ৪টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। পুলিশ শিক্ষার্থীদের বের করে দেয়ার চেষ্টা করে। এদিন দুপুর থেকেই তারা আন্দোলন করছিলেন। শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ের ভেতরে ঢুকে ৭ ও ৮ নম্বর ভবনের সামনে রাখা গাড়ি ভাঙচুর করে। তারপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের লাঠিপেটা করে সচিবালয় থেকে বের করে দেন।
এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব সিদ্দিক জোবায়েরকে প্রত্যাহার করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা ও জনপ্রশাসন বিষয়ক কমিটির সদস্য সচিব মাহফুজ আলম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক বার্তায় এ তথ্য জানিয়েছেন। এ তথ্য জানানোর কিছুক্ষণ পরই পৃথক এক স্ট্যাটাসে তিনি বলেন, মাইলস্টোন ট্র্যাজেডির পূর্ণাঙ্গ তদন্তে শিগগির কমিটি গঠিত হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবিকে সমন্বয় করে তদন্ত কমিটি গঠিত হবে। এরই মধ্যে শিক্ষা সচিবকে অপসারণ করা হয়েছে। ন্যায্য যে কোনো দাবি মানতে সরকার দায়বদ্ধ। মাইলস্টোন কলেজে বিমান বিধ্বস্তে বহু হতাহতের ঘটনার পর মঙ্গলবারের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত না করায় গতকালই ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরা। তারা শিক্ষা উপদেষ্টা ও শিক্ষা সচিবের পদত্যাগ দাবি করেন। বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা গতকাল দুপুর আড়াইটার দিকে সচিবালয়ের সামনে এসে জড়ো হন। পরে সচিবালয়ের সব প্রবেশপথ বন্ধ করে দেওয়া হলে একপর্যায়ে বাধা ডিঙিয়ে তারা সচিবালয়ে ঢুকে পড়েন।উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব সিদ্দিক জোবায়েরকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তী সরকার।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষর্থীরা বলছেন, তাদের অনেকে আহত হয়েছে। এ ঘটনায় আনুমানিক ১০ থেকে ১৫ জন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে বলে জানা গেছে। এ সময় শিক্ষার্থীরা ছোটাছুটি শুরু করেন। লাঠিচার্জে অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। এরপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শিক্ষার্থীদের সচিবালয় থেকে বের হওয়ার সুযোগ দেয়। শিক্ষার্থীরা সচিবালয় থেকে বের হয়ে যান। শিক্ষার্থীরা সচিবালয় থেকে বের হয়ে বাইরে থেকে সচিবালয়ের ভেতরে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। এরপর পুলিশ বাইরে গিয়ে সাউন্ড নিক্ষেপ এবং টিয়ারশেল ছোড়ে।
এর আগে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বলেন, কাল মাইলস্টোনে এত বড় একটা ঘটনা ঘটলো, শিক্ষা উপদেষ্টাকে বিভিন্ন মহল থেকে এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিতের দাবি জানানো হয়েছিল। কিন্তু তিনি কথা শোনেননি। রাত ৩টায় পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। সে সময় শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। উনি কার জন্য শিক্ষা উপদেষ্টা? আমরাই তাকে বসিয়েছি, আমরাই তাকে নামাবো।
বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে প্রথমে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ঘেরাও করতে যায়। সেখান থেকে বেলা দেড়টার দিকে সচিবালয়ের সামনে আসে তারা। ঢাকার বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজ, ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজ, আইডিয়াল কলেজ, নূর মোহাম্মদ কলেজ, মিরপুর বাংলা কলেজ, কমার্স কলেজ, আদমজি ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, মিরপুর কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের চলমান এইচএসসি পরীক্ষার্থীসহ আরও কিছু শিক্ষার্থী এই বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেয়।
এরপর পুলিশের ব্যারিকেট ভেঙ্গে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা ভবনে ঢুকে পড়েন। পরে শিক্ষা ভবন থেকে মিছিল নিয়ে সচিবালয়ের সামনে এলে তখন সচিবালয়ের সবকটি গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ সময় সচিবালয়ের সামনে শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিতে থাকে ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে। আমার ভাই মরলো কেন, প্রশাসন জবাব দে’ স্লোগান দিলে সচিবালয়ের ভেতরে গেটগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নেন। এছাড়া শিক্ষার্থীদের একটি দল ঢাকা বোর্ড হয়ে সচিবালয়ের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছে। গত এসএসসি পরীক্ষায় যারা ফেল করেছেন তাদের পুনঃমূল্যায়নের দাবি জানাচ্ছেন তারা। গত সোমবার রাজধানীর তেজগাঁও পুরোনো বিমানবন্দর থেকে বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমানটি উড্ডয়নের পরপরই দুপুর সোয়া ১টার দিকে উত্তরার মাইলস্টোনে স্কুল অ্যান্ড কলেজের হায়দার আলী ভবনের ওপর আছড়ে পড়ে। এর কিছুক্ষণের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। কিছুক্ষণের মধ্যে সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা সেখানে গিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উদ্ধারের কাজ শুরু করেন। এ ঘটনায় পাইলটসহ নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১ জনে। নিহত সবার পরিচয় এখনও জানা যায়নি। বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে আরও ১৬৫ জন। এ পর্যন্ত ২০ জনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।