ঢাকা ০২:২৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪
সংবাদ শিরোনাম ::

সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রির ঘরে

স্টাফ রিপোর্টার
  • আপডেট সময় : ০৩:৫১:৫৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৪ ৩৮৫ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

দেশের বিভিন্ন স্থানে শৈত্যপ্রবাহের বিস্তৃতি আরও বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাতের তাপমাত্রা আরও কমতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ সময় মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং তা কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের গতকাল শুক্রবার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রাতে রাতের তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমে যেতে পারে। এতে শৈত্যপ্রবাহ আরও বিস্তৃত হতে পারে। গতকাল শুক্রবার সকালে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়। এটিই চলতি মৌসুমের সবচেয়ে কম সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। তবে ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে বেড়ে হয়েছে ১৫ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অফিস জানায়, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং তা কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন এবং সড়ক পরিবহন চলাচল ব্যাহত হতে পারে। চুয়াডাঙ্গা জেলাসহ রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা বিস্তার লাভ করতে পারে। সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। আজ শনিবার সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। রোববার সারাদেশে রাতের সামান্য বাড়তে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলে পূর্বাভাসে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়া অফিস জানায়, পরবর্তী ৫ দিনে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে গতকাল শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগে কিছুকিছু জায়গায় বৃষ্টি হয়েছে। এ সময়ে সবচেয়ে বেশি ৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে হাতিয়ায়।

এদিকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ থেকে তাপমাত্রার পারদ কমে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। এক দিনের ব্যবধানে ৮ ডিগ্রি থেকে তাপমাত্রা নেমে এসেছে ৫ ডিগ্রির ঘরে। গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টায় মৌসুমের ও দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় রেকর্ড করা হয়েছে ৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অফিস বলছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ থেকে কমে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এ জেলার উপর দিয়ে। গত কয়েকদিনের তুলনায় পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা উঠানামায় বেড়েছে কনকনে শীতের তীব্রতা। এদিকে বেলা বাড়লেও ঘন কুয়াশায় ঢেকে আছে চারপাশ। এতে করে গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও সড়কগুলোতে মানুষের উপস্থিতি অনেকটাই কমে গেছে। কনকনে শীতে জনজীবনে নেমে এসেছে জনদুর্ভোগ। এদিকে দেখা গেছে, তাপমাত্রার পারদ নেমে আসায় এবং শীতের তীব্রতা বাড়ায় বেশী দুর্ভোগে ও বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী এবং নিম্ন আয়ের মানুষরা। শীতের তীব্রতায় অনেকেই ঘরবন্দি জীবন অতিবাহিত করছেন। তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের পর্যবেক্ষক রোকনুজ্জামান রোকন বলেন, ভোর ৬টায় দেশের মধ্যে ও মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা তেঁতুলিয়ায় রেকর্ড হয়েছে ৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পরবর্তীতে এদিন সকাল ৯টায়ও একই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। পাহাড়ি হিম বাতাসের সঙ্গে কনকনে শীতের তীব্রতা বাড়ায় জেলায় নেমে এসেছে জনদুর্ভোগ। ঘন কুয়াশার সঙ্গে বৃষ্টির মত ঝড়ছে কুয়াশা। বিরূপ আবহাওয়ায় ও মাঘের শীতে দুর্ভোগের পাশাপাশি শীতজনিত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালগুলোতে বেশি ভর্তি হচ্ছেন শিশু ও বয়স্করা।

এদিকে শুধু পঞ্চগড় নয়, রংপুর অঞ্চলে হাড়কাঁপানো শীতের তীব্রতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সেই সঙ্গে ঘন কুয়াশা অব্যাহত রয়েছে। ফলে অচল হয়ে পড়েছে জনজীবন। রাত থেকে কুয়াশা শুরু হলেও অব্যাহত রয়েছে বেলা ১১টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত। একইভাবে রংপুর জেলায় ভোরের দিকে তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকলেও সকাল ৯টায় তা ৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এসেছে। রংপুর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টায় রংপুর জেলায় ৮ দশমিক ২ ডিগ্রি, নীলফামারীর সৈয়দপুরে ৯ ডিগ্রি, কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি, দিনাজপুরে ৭ দশমিক ২ ডিগ্রি, নীলফামারীর ডিমলায় ৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি, গাইবান্ধায় ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি, লালমনিরহাটে ৭ দশমিক ১ ডিগ্রি, ঠাকুরগাঁওয়ে ৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রংপুর আবহাওয়া অফিসের প্রধান সহকারী আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, রংপুর বিভাগে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে। নেমে যেতে পারে ২ ডিগ্রিতে। সেই সঙ্গে ঘন কুয়াশাও অব্যাহত থাকতে পারে। রংপুর বিভাগে শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকার কারণে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন সহায়-সম্বলহীন ছিন্নমূল মানুষ। শীতবস্ত্রের অভাবে খড়কুটো জ¦ালিয়ে না ঘুমিয়ে রাত কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন। অপরদিকে, খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বিশেষ করে শিশুদের বের না হওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন বিশিষ্ট শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. শরীফুল ইসলাম। একইভাবে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া নাগরিকদের বাসা থেকে বের না হতে জন্য রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বলা হয়েছে। এদিকে, শৈত্যপ্রবাহের কারণে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী ও কর্মজীবী মানুষজন। হাড়কাঁপানো শীতে বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না অনেকে। অপরদিকে রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, অব্যাহত ঘন কুয়াশার কারণে ধানের বীজতলা, আলুক্ষেতে লেট ব্লাইট রোগ ব্যাপকভাবে দেখা দিয়েছে। রংপুর অঞ্চলে টানা ১১ দিন সূর্যের মুখ দেখা না দেওয়ার পর আবারও ৩ দিন ধরে সূর্য দেখা যাচ্ছে না। ২/১ বার উঁকি দিলেও মেঘে ঢেকে যাচ্ছে সূর্য। অন্যদিকে, তীব্র শীতের কারণে কোল্ড ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ নানান রোগবালাই ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। আক্রান্তদের বেশির ভাগ শিশু ও বয়োবৃদ্ধ।

অপরদিকে নীলফামারীতে তাপমাত্রা উঠানামা করলেও কমেনি শীতের দাপট। শৈত্যপ্রবাহে কাবু হয়ে পড়েছে সমগ্র জেলার মানুষ। কনকনে ঠান্ডা আর ঘন কুয়াশায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা গত বৃহস্পতিবার ছিল ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত বৃহস্পতিবার তাপমাত্রা কম থাকলেও সূর্য ছিল ঝলমলে। এদিকে, রাত ও দিনে তাপমাত্রা একই রকম বিরাজ করছে। সন্ধ্যার পর থেকে দুপুর পযন্ত ঘন কুয়াশায় যান চলাচল বিঘ্ন ঘটছে। দুপুরের আগ পর্যন্ত দেখা মিলছে না সূর্যের। মানুষ আগুন জ¦ালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। প্রচণ্ড শীতে কাজে বের হতে গিয়ে বেকায়দায় পড়ছেন শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষ। শৈত্যপ্রবাহে জেলার হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিনই বাড়ছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। রামগঞ্জ এলাকার দিনমজুর মোহাম্মদ আবদুস ছালাম বলেন, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঘর থেকে বের হওয়া যায় না। এত ঠান্ডা যে শরীর হাড়সহ কাঁপছে। বাদিয়ার মোড় এলাকার অটোচালক আবদুল মোতালেব বলেন, পেট খায় যেহেতু তাই এত ঠান্ডায় গাড়ি চালাচ্ছি। শীতের কারণে যাত্রী কম বের হচ্ছে। ঠান্ডায় সবার সমস্যা হচ্ছে। বাসচালক মতিয়ার রহমান বলেন, ঘন কুয়াশার কারণে দিনের বেলায় হেডলাইট জ¦ালিয়ে গাড়ি চালাতে হচ্ছে। এ ছাড়া দুর্ঘটনা এড়াতে ধীরে ধীরে চালাতে গিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে দেরি হচ্ছে। নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের ইনচার্জ মনিরা বেগম বলেন, শিশু ওয়ার্ডে প্রতিদিন গড়ে ৪০-৫০ রোগী ভর্তি হচ্ছে। ঠান্ডায় শিশু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সৈয়দপুর বিমানবন্দরের আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ লোকমান হোসেন বলেন, নীলফামারীতে শৈত্যপ্রবাহ চলছে। যা জানুয়ারি মাসজুড়ে চলবে। গতকাল শুক্রবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এদিকে নদীবেষ্টিত কুড়িগ্রাম জেলায় ঘন-কুয়াশা আর কনকনে ঠান্ডায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনপদ। জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। গতকাল শুক্রবার জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কুড়িগ্রামের কৃষি আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক সুবল চন্দ্র জানান, গতকাল শুক্রবার জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার নালিয়ার দোলা এলাকার কৃষক আবদুল মমিন জানান, বোরো মৌসুম শুরু হলেও জমিতে নামা কঠিন হয়ে পড়েছে। তারপরও রোয়া লাগানো শুরু করেছেন। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাওয়ার হাউজপাড়ার আমেনা বেগম জানান, ঠান্ডায় খুব কষ্টে আছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন কম্বল পাননি। কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসন অফিস সূত্র জানায়, শীতের শুরু থেকে এ পর্যন্ত জেলার ৯ উপজেলায় সরকারিভাবে ৭০ হাজারেরও বেশি কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রির ঘরে

আপডেট সময় : ০৩:৫১:৫৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৪

দেশের বিভিন্ন স্থানে শৈত্যপ্রবাহের বিস্তৃতি আরও বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাতের তাপমাত্রা আরও কমতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ সময় মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং তা কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের গতকাল শুক্রবার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রাতে রাতের তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমে যেতে পারে। এতে শৈত্যপ্রবাহ আরও বিস্তৃত হতে পারে। গতকাল শুক্রবার সকালে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়। এটিই চলতি মৌসুমের সবচেয়ে কম সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। তবে ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে বেড়ে হয়েছে ১৫ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অফিস জানায়, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং তা কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন এবং সড়ক পরিবহন চলাচল ব্যাহত হতে পারে। চুয়াডাঙ্গা জেলাসহ রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা বিস্তার লাভ করতে পারে। সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। আজ শনিবার সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। রোববার সারাদেশে রাতের সামান্য বাড়তে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলে পূর্বাভাসে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়া অফিস জানায়, পরবর্তী ৫ দিনে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে গতকাল শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগে কিছুকিছু জায়গায় বৃষ্টি হয়েছে। এ সময়ে সবচেয়ে বেশি ৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে হাতিয়ায়।

এদিকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ থেকে তাপমাত্রার পারদ কমে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। এক দিনের ব্যবধানে ৮ ডিগ্রি থেকে তাপমাত্রা নেমে এসেছে ৫ ডিগ্রির ঘরে। গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টায় মৌসুমের ও দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় রেকর্ড করা হয়েছে ৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অফিস বলছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ থেকে কমে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এ জেলার উপর দিয়ে। গত কয়েকদিনের তুলনায় পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা উঠানামায় বেড়েছে কনকনে শীতের তীব্রতা। এদিকে বেলা বাড়লেও ঘন কুয়াশায় ঢেকে আছে চারপাশ। এতে করে গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও সড়কগুলোতে মানুষের উপস্থিতি অনেকটাই কমে গেছে। কনকনে শীতে জনজীবনে নেমে এসেছে জনদুর্ভোগ। এদিকে দেখা গেছে, তাপমাত্রার পারদ নেমে আসায় এবং শীতের তীব্রতা বাড়ায় বেশী দুর্ভোগে ও বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী এবং নিম্ন আয়ের মানুষরা। শীতের তীব্রতায় অনেকেই ঘরবন্দি জীবন অতিবাহিত করছেন। তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের পর্যবেক্ষক রোকনুজ্জামান রোকন বলেন, ভোর ৬টায় দেশের মধ্যে ও মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা তেঁতুলিয়ায় রেকর্ড হয়েছে ৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পরবর্তীতে এদিন সকাল ৯টায়ও একই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। পাহাড়ি হিম বাতাসের সঙ্গে কনকনে শীতের তীব্রতা বাড়ায় জেলায় নেমে এসেছে জনদুর্ভোগ। ঘন কুয়াশার সঙ্গে বৃষ্টির মত ঝড়ছে কুয়াশা। বিরূপ আবহাওয়ায় ও মাঘের শীতে দুর্ভোগের পাশাপাশি শীতজনিত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালগুলোতে বেশি ভর্তি হচ্ছেন শিশু ও বয়স্করা।

এদিকে শুধু পঞ্চগড় নয়, রংপুর অঞ্চলে হাড়কাঁপানো শীতের তীব্রতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সেই সঙ্গে ঘন কুয়াশা অব্যাহত রয়েছে। ফলে অচল হয়ে পড়েছে জনজীবন। রাত থেকে কুয়াশা শুরু হলেও অব্যাহত রয়েছে বেলা ১১টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত। একইভাবে রংপুর জেলায় ভোরের দিকে তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকলেও সকাল ৯টায় তা ৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এসেছে। রংপুর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টায় রংপুর জেলায় ৮ দশমিক ২ ডিগ্রি, নীলফামারীর সৈয়দপুরে ৯ ডিগ্রি, কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি, দিনাজপুরে ৭ দশমিক ২ ডিগ্রি, নীলফামারীর ডিমলায় ৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি, গাইবান্ধায় ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি, লালমনিরহাটে ৭ দশমিক ১ ডিগ্রি, ঠাকুরগাঁওয়ে ৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রংপুর আবহাওয়া অফিসের প্রধান সহকারী আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, রংপুর বিভাগে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে। নেমে যেতে পারে ২ ডিগ্রিতে। সেই সঙ্গে ঘন কুয়াশাও অব্যাহত থাকতে পারে। রংপুর বিভাগে শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকার কারণে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন সহায়-সম্বলহীন ছিন্নমূল মানুষ। শীতবস্ত্রের অভাবে খড়কুটো জ¦ালিয়ে না ঘুমিয়ে রাত কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন। অপরদিকে, খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বিশেষ করে শিশুদের বের না হওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন বিশিষ্ট শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. শরীফুল ইসলাম। একইভাবে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া নাগরিকদের বাসা থেকে বের না হতে জন্য রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বলা হয়েছে। এদিকে, শৈত্যপ্রবাহের কারণে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী ও কর্মজীবী মানুষজন। হাড়কাঁপানো শীতে বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না অনেকে। অপরদিকে রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, অব্যাহত ঘন কুয়াশার কারণে ধানের বীজতলা, আলুক্ষেতে লেট ব্লাইট রোগ ব্যাপকভাবে দেখা দিয়েছে। রংপুর অঞ্চলে টানা ১১ দিন সূর্যের মুখ দেখা না দেওয়ার পর আবারও ৩ দিন ধরে সূর্য দেখা যাচ্ছে না। ২/১ বার উঁকি দিলেও মেঘে ঢেকে যাচ্ছে সূর্য। অন্যদিকে, তীব্র শীতের কারণে কোল্ড ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ নানান রোগবালাই ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। আক্রান্তদের বেশির ভাগ শিশু ও বয়োবৃদ্ধ।

অপরদিকে নীলফামারীতে তাপমাত্রা উঠানামা করলেও কমেনি শীতের দাপট। শৈত্যপ্রবাহে কাবু হয়ে পড়েছে সমগ্র জেলার মানুষ। কনকনে ঠান্ডা আর ঘন কুয়াশায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা গত বৃহস্পতিবার ছিল ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত বৃহস্পতিবার তাপমাত্রা কম থাকলেও সূর্য ছিল ঝলমলে। এদিকে, রাত ও দিনে তাপমাত্রা একই রকম বিরাজ করছে। সন্ধ্যার পর থেকে দুপুর পযন্ত ঘন কুয়াশায় যান চলাচল বিঘ্ন ঘটছে। দুপুরের আগ পর্যন্ত দেখা মিলছে না সূর্যের। মানুষ আগুন জ¦ালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। প্রচণ্ড শীতে কাজে বের হতে গিয়ে বেকায়দায় পড়ছেন শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষ। শৈত্যপ্রবাহে জেলার হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিনই বাড়ছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। রামগঞ্জ এলাকার দিনমজুর মোহাম্মদ আবদুস ছালাম বলেন, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঘর থেকে বের হওয়া যায় না। এত ঠান্ডা যে শরীর হাড়সহ কাঁপছে। বাদিয়ার মোড় এলাকার অটোচালক আবদুল মোতালেব বলেন, পেট খায় যেহেতু তাই এত ঠান্ডায় গাড়ি চালাচ্ছি। শীতের কারণে যাত্রী কম বের হচ্ছে। ঠান্ডায় সবার সমস্যা হচ্ছে। বাসচালক মতিয়ার রহমান বলেন, ঘন কুয়াশার কারণে দিনের বেলায় হেডলাইট জ¦ালিয়ে গাড়ি চালাতে হচ্ছে। এ ছাড়া দুর্ঘটনা এড়াতে ধীরে ধীরে চালাতে গিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে দেরি হচ্ছে। নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের ইনচার্জ মনিরা বেগম বলেন, শিশু ওয়ার্ডে প্রতিদিন গড়ে ৪০-৫০ রোগী ভর্তি হচ্ছে। ঠান্ডায় শিশু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সৈয়দপুর বিমানবন্দরের আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ লোকমান হোসেন বলেন, নীলফামারীতে শৈত্যপ্রবাহ চলছে। যা জানুয়ারি মাসজুড়ে চলবে। গতকাল শুক্রবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এদিকে নদীবেষ্টিত কুড়িগ্রাম জেলায় ঘন-কুয়াশা আর কনকনে ঠান্ডায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনপদ। জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। গতকাল শুক্রবার জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কুড়িগ্রামের কৃষি আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক সুবল চন্দ্র জানান, গতকাল শুক্রবার জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার নালিয়ার দোলা এলাকার কৃষক আবদুল মমিন জানান, বোরো মৌসুম শুরু হলেও জমিতে নামা কঠিন হয়ে পড়েছে। তারপরও রোয়া লাগানো শুরু করেছেন। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাওয়ার হাউজপাড়ার আমেনা বেগম জানান, ঠান্ডায় খুব কষ্টে আছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন কম্বল পাননি। কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসন অফিস সূত্র জানায়, শীতের শুরু থেকে এ পর্যন্ত জেলার ৯ উপজেলায় সরকারিভাবে ৭০ হাজারেরও বেশি কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।