সুর ও নৃত্য ছন্দের তালে প্রাণ-প্রকৃতি ও ইশ্বর বন্দনা
- আপডেট সময় : ০২:৫৬:৩৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ মে ২০২৪ ২৫৪ বার পড়া হয়েছে
শাস্ত্রীয় সংগীত, নৃত্যের চর্চা, প্রসার এবং নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের সংগীতের সমৃদ্ধ ধারায় উদ্বুদ্ধ করতে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে চলছে ৬ দিনব্যাপী ১৬তম শাস্ত্রীয় সংগীত ও নৃত্য উৎসব। সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগের ব্যবস্থাপনায় জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে ১৬তম শাস্ত্রীয় সংগীত ও নৃত্য উৎসবের তৃতীয় দিনে মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয় মঙ্গলবার।
অনুষ্ঠানে শুরুতে সমবেত সংগীত অষ্টপ্রহর, পরিবেশন করবে অষ্টপ্রহর সংগীত দল। ঋতু পরিবর্তনে বাংলার মানুষের মননে যে পরিবর্তন হয়, তারই উপস্থাপন রাগাসৃত এই পরিবেশনা। ঋতুতে রাগে বাংলাদেশ। কথা ও সুর: শহিদুজ্জামাম স্বপন, সংগীতায়োজন: বিনোদ রায়, ভাবনা: ইয়াসমীন আলী।
সমবেত শাস্ত্রীয় নৃত্য কত্থক-কৃষ্ণ বন্দনা এবং তারানা পরিবেশন করে নৃত্যাঞ্চল। একক শাস্ত্রীয় সংগীত রাগ-মুলতিনি পরিবেশন করেন মীরাজুল জান্নাত সোনিয়া। একক শাস্ত্রীয় সংগীত রাগ- বেহাগ পরিবেশন করেন বিশ্বজিৎ জোদ্দার এবং একক শাস্ত্রীয় নৃত্য মনিপুরি পরিবেশন করেন ওয়ার্দা রিহাব। সমবেত শাস্ত্রীয় নৃত্য ‘ওড়িশি হংসধ্বনি পল্লবী’ পরিবেশন করে নৃত্যছন্দ দল।
পল্লবী শব্দের অর্থ বিস্তার। যে রাগের উপর ভিত্তি করে পল্লবী নির্মিত হয় সেই রাগানুযায়ী এর নামকরণ করা হয়। রাগ হংসধ্বনি, তাল একতালি। নৃত্য পরিকল্পনা পদ্মবিভূষণ গুরু কেলুচরণ মহাপাত্র। পরিচালনা করেন বেনজীর সালাম । সমবেত শাস্ত্রীয় নৃত্য ‘কত্থক- তারানা’ পরিবেশন করে কত্থক নৃত্য সম্প্রদায়। তাল- ত্রিতাল, রাগ- মালকোষ। এটি একটি শুদ্ধ কথক নৃত্য নির্মিতি।
এতে রয়েছে ঠাট, আমোদ, তেহাই, টুকরা, পড়ন, সরগম ও লাড়ি। এটি প্রথমে বিলম্বিত লয় দিয়ে শুরু হয়ে পরে মধ্য লয় ও দ্রুত লয় দিয়ে শেষ হয়েছে। এরপর একক সংগীত পরিবেশন করেন চন্দ্র সাহা, রাগ-কেদার ও টিংকু শীল, রাগ-ভীন্ন ষড়জ/ কৌশিকধ্বনি।
সমবেত শাস্ত্রীয় নৃত্য ‘মণিপুরী এবং ওড়িশী’ যুগলবন্দী নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যম নৃত্যশীলন কেন্দ্র। তাদের পরিবেশনা তান্ডব-লাস্য। লাস্য এর প্রতিযোগিতামূলক আঙ্গিকে পরিবেশিত হয়। তেওড়া তালে তান্ডব- লাস্য রচনা করেছেন গুরু বিপিন সিংহ। ওড়িশী নৃত্যভঙ্গি সংযোজন করেন তামান্না রহমান। যুগল নৃত্যের পরিচালনা করেন তামান্না রহমান। তান্ডব নৃত্য পরিবেশনায় মাহমুদুল হাসান রিপন, ঐন্দ্রিলা আকতার বীথি, নূরবানু মুক্তা এবং আরিবা ইবনাত ছোঁয়া। লাস্য পরিবেশনায় মণিপুরীতে মানোমী তানজানা অর্থী এবং ওড়িশী নৃত্যে তামান্না রহমান। সংগীতে গুরু কলাবতী দেবী এবং পুংলোল এ গুরু বিম্বাবতী দেবী।
ধারাবাহিক এ মনোজ্ঞ পরিবেশনায় একক শাস্ত্রীয় নৃত্য কত্থক পরিবেশন করেন শিল্পী ফিফা চাকমা, পরিবেশিত হয় কৃষ্ণ বর্নন, তাল-দীপচন্ডী। রচনাকারী – গুরু বিরজু মহারাজ, নৃত্য পরিচালনায় – শ্রীমতি নন্দিনী চক্রবর্তী। একক শাস্ত্রীয় সংগীত পরিবেশন করেন রেদোয়ান আলী এবং একক শাস্ত্রীয় নৃত্য কত্থক পরিবেশন করেন মো: হানিফ, পরিবেশিত হয় ধ্রুপদ সাংকারা আতি প্রাচান্দ্র, তাল- চৌতাল, কম্পোজিসান – গুরু রাজেন্দ্র গাংগানি জি। এরপর একক শাস্ত্রীয় সংগীত রাগ- মালকোষ পরিবেশন করেন সৌমিতা বৌস।
তাল-তানচপ ও মেনকূপ এ একক শাস্ত্রীয় নৃত্য মনিপুরি পরিবেশন করেন প্রিয়াংকা সাহা। তিনি পরিবেশন করেন রাধা অভিসার। এরপর একক শাস্ত্রীয় সংগীত ‘রাগ- দরবারী/ মধুবন্তী’ পরিবেশন করেন ইয়াকুব আলী খান। একক নৃত্য ‘কত্থক’ পরিবেশন করেন ঐশী দাস একা। তিনি পরিবেশন করেন শুদ্ধ নৃত্য তিনতাল এবং বিন্দাদীন মহারাজজীর রচিত ঠুমরী, নৃত্য পরিচালনা- বিদূষী মধুমিতা রায়।
এরপর সমবেত শাস্ত্রীয় নৃত্য ‘ভরতনাট্যম’ পরিবেশন করে নৃত্যবৃতি। রঘু বংশের বর রাম, যার মাথায় সোনার মুকুট, গলায় পান্নার মালা দোলানো, যিনি দশরথের পুত্র এবং সীতার পতিদেব। অসংখ্য দেবতা, ঋষি এবং গুণী মানুষ রঘু রাজবংশের রাম রূপে তাঁর আগমনের ঘোষণা দেন, যিনি জনক কন্যা সীতার আকর্ষণীয় স্বামী। আদি তালে পদম রাগ- হাংসানান্দানাম পরিবেশন করেন তিনি। পরিচালনায়ঃ গোলাম মোস্তফা ববি।
সবশেষে সমবেত শাস্ত্রীয় সংগীত ‘রাগ- ভূপালি’ পরিবেশন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির শাস্ত্রীয় সংগীত কোর্সের প্রশিক্ষণার্থীবৃন্দ।