ঢাকা ১০:৪২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

নাটোরে আঙ্গুর চাষে আমজাদের সফলতা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১১:৪১:০৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪ ৭১ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

সাদা রংয়ের পলিনেট হাউসের ভেতর মাচায় ঝুলে আছে থোকা থোকা আঙুর। আর সবুজ পাতার মাঝে উঁকি দিচ্ছে কোথাও লাল, কোথাও বা হলুদ-সবুজ রঙের মিশ্রণের আঙুর।

খেতে কোনোটা মিষ্টি আবার কোনোটা হালকা টক-মিষ্টি। এসব আঙুর দেখতে যেমন সুন্দর, খেতেও বেশ মজার।

আর আঙুরের এ বাগান দেখলে যে কারোরই মনে হবে এটা বুঝি বিদেশের কোনো বাগান। আগে মানুষের ধারণা ছিল, আঙুর একটি বিদেশি ফল, এ দেশে চাষ করলে হয় টক। কিন্তু সেই ধারণা পাল্টে দিয়ে মিষ্টি আঙুর চাষ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন নাটোরের বাগরোম গ্রামের তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা আমজাদ হোসেন।

শহরতলির কান্দিভিটা এলাকায় দেড় বিঘা জমিতে বাণিজ্যিকভাবে রাশিয়ান বাইকুনুরসহ সাতটি জাতের আঙুর চাষ করে সফল হয়েছেন তিনি। তার বাগানে গেলেই দেখা মিলবে মাচায় ঝুলে আছে থোকা থোকা টসটসে আঙুর। প্রতিদিন দেখতে অনেকেই তার বাগান দেখতে আসেন, অনেকে আসেন কিনতে।

আমজাদ হোসেন দখিয়ে দিয়েছেন, মনোবল, উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা থাকলে দেশের মাটিতে বিদেশি ফল চাষ করে স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি আর্থিকভাবে লাভ করা সম্ভব। পাশাপাশি বিদেশ থেকে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দেশেই আঙুর উৎপাদন করে বিদেশে রপ্তানি করার অপার সম্ভাবনা রয়েছে।

কৃষি বিভাগ বলছেন, বাংলাদেশের আবহাওয়া উপযোগী ও উন্নতমানের এ জাতের আঙুর চাষে কোনো কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের প্রয়োজন হয় না। কেবলমাত্র গোবর বা জৈব সার ও মাকড় মারার জন্য ভারমিটেক ব্যবহার করেই এ ফল চাষ করা যায়। তাই ফসলে জৈব-বালাইনাশক ব্যবহারের জন্য কৃষি উদ্যোক্তাদের আগ্রহ সৃষ্টি করানো হচ্ছে। পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে আঙুর চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

কৃষি উদ্যোক্তা মো. আমজাদ হোসেন সংবাদমধ্যমকে জানান, গেল দুই বছর আগে ইউটিউব দেখে রাশিয়া, ইউক্রেন, ইতালি ও অস্ট্রেলিয়া থেকে ৩৫ জাতের আঙুরের চারা সংগ্রহ করে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ শুরু করেন তিনি। প্রথম বছরেই আঙুর চাষে সফলতা পেয়েছেন।

তবে এর মধ্যে বাছাই করে সাতটি জাতের আঙুরের ফলন ভালো এবং স্বাদে মিষ্টি পেয়েছেন। এর মধ্যে রাশিয়ান বাইকুনুর জাতটি সবচেয়ে ভালো এবং ভালো ফলন হয়েছে। এ জাতটি দেশের আবহাওয়া ও চাষের পরিবেশ উপযোগী বলে তিনি দাবি করেন।

তিনি বলেন, প্রথমে প্রায় ৫০ শতাংশ নিজস্ব জমি ও লিজ নেওয়া ২৫ শতাংশ মিলিয়ে মোট ৭৫ শতাংশ জমিতে ৩৫ জাতের আঙুর চাষ করি। এরমধ্যে গবেষণা করে রাশিয়ান বাইকুনুর জাতসহ সাতটি জাতের আঙুরের ভালো ফলন ও ভালো স্বাদ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হই।

এরপর পরীক্ষিত জাতগুলো দিয়ে ২৫ শতাংশ জমিতে পলিনেট হাউজের মাধ্যমে একটি মাতৃবাগান তৈরি করেছি। এ বাগানে মোট ১২০টি চারা রোপণ করা হয়েছে। চারা রোপনের তিন মাস পর ফল এসেছে।

প্রায় ছয় মাস পর তিনি ফল বিক্রি শুরু করেছেন। তার মতে, রোপণ থেকে গাছের বয়স এক বছর হলে পরিপূর্ণভাবে আঙুর ফল বাজারজাত করা সম্ভব। এর মধ্যে তার এ আঙুর বাগানের প্রতিটি গাছে অফ-সিজনে আট থেকে ১০ কেজি করে ফল পাওয়া যাচ্ছে। সে হিসাবে ১২০টি গাছে অন্তত গড়ে এক হাজার ২০০ কেজি বা ৩০ মণ ফল পাওয়া যাবে।

বাজার মূল্য গড়ে ৩০০ টাকা কেজি দরে হিসাব করলে যার আর্থিক মূল্য দাঁড়ায় তিন লাখ ৬০ হাজার টাকা।  তার উৎপাদিত অনেক আঙুর বাজারে বিক্রি করেছেন এবং চাহিদা রয়েছে বেশ। কারণ খেতেও বেশ মিষ্টি।

তিনি বলেন, সাধারণত মার্চ-এপ্রিল মাস আঙুর চাষের জন্য উপযুক্ত সময়। ওই সময়ে বাণিজ্যিকভাবে বেশি আঙুর বিক্রি করা হয়। আর এখন অফ-সিজন হলেও বর্তমানে পাইকারি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি ধরে বাজারে আঙুর বিক্রি করছেন। বাজারে চাহিদা থাকায় আর পেছনে ফিরে তাকাতে হচ্ছে না। তার মতে, আঙুরের এ জাত নাটোরের মাটিতে চাষযোগ্য এবং বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা সম্ভব।

তিনি বলেন, পলিনেট হাউসে ২৫ শতাংশ জমিতে আঙুর চাষ করতে গিয়ে গাছের চারা, মাচা, পরিচর্যাসহ সব মিলিয়ে খরচ পড়েছে এক লাখ ২০ হাজার টাকা। আঙুর বাগানে যে পরিমাণ ফল এসেছে এবং বর্তমান যা বাজার মূল্য, তাতে আনুমানিক তিন থেকে চার লাখ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব। আর পলিনেট হাউস তৈরি করতে প্রায় ৩০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। তবে এ অর্থ কৃষি বিভাগের মাধ্যমে সরকারিভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া খোলা জায়গায় আরও ৭৫ শতাংশ জমিতে আঙুর চাষ করেছেন তিনি। আবার তাপ নিয়ন্ত্রণ করা যায় পলিনেট হাউজে। চাষ প্রক্রিয়ায় গোবর সার ও মাকড় মারার জন্য ভারমিটেক ব্যবহার করেন। আর পলিনেট হাউসে আঙুর চাষ করায় রোগবালাই অনেক কম। গাছে পোকার কোনো আক্রমণ হয়নি। কীটনাশক ব্যবহারের কোনো প্রয়োজন নেই। এজন্য এ ফলটি নিরাপদও বটে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

নাটোরে আঙ্গুর চাষে আমজাদের সফলতা

আপডেট সময় : ১১:৪১:০৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪

 

সাদা রংয়ের পলিনেট হাউসের ভেতর মাচায় ঝুলে আছে থোকা থোকা আঙুর। আর সবুজ পাতার মাঝে উঁকি দিচ্ছে কোথাও লাল, কোথাও বা হলুদ-সবুজ রঙের মিশ্রণের আঙুর।

খেতে কোনোটা মিষ্টি আবার কোনোটা হালকা টক-মিষ্টি। এসব আঙুর দেখতে যেমন সুন্দর, খেতেও বেশ মজার।

আর আঙুরের এ বাগান দেখলে যে কারোরই মনে হবে এটা বুঝি বিদেশের কোনো বাগান। আগে মানুষের ধারণা ছিল, আঙুর একটি বিদেশি ফল, এ দেশে চাষ করলে হয় টক। কিন্তু সেই ধারণা পাল্টে দিয়ে মিষ্টি আঙুর চাষ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন নাটোরের বাগরোম গ্রামের তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা আমজাদ হোসেন।

শহরতলির কান্দিভিটা এলাকায় দেড় বিঘা জমিতে বাণিজ্যিকভাবে রাশিয়ান বাইকুনুরসহ সাতটি জাতের আঙুর চাষ করে সফল হয়েছেন তিনি। তার বাগানে গেলেই দেখা মিলবে মাচায় ঝুলে আছে থোকা থোকা টসটসে আঙুর। প্রতিদিন দেখতে অনেকেই তার বাগান দেখতে আসেন, অনেকে আসেন কিনতে।

আমজাদ হোসেন দখিয়ে দিয়েছেন, মনোবল, উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা থাকলে দেশের মাটিতে বিদেশি ফল চাষ করে স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি আর্থিকভাবে লাভ করা সম্ভব। পাশাপাশি বিদেশ থেকে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দেশেই আঙুর উৎপাদন করে বিদেশে রপ্তানি করার অপার সম্ভাবনা রয়েছে।

কৃষি বিভাগ বলছেন, বাংলাদেশের আবহাওয়া উপযোগী ও উন্নতমানের এ জাতের আঙুর চাষে কোনো কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের প্রয়োজন হয় না। কেবলমাত্র গোবর বা জৈব সার ও মাকড় মারার জন্য ভারমিটেক ব্যবহার করেই এ ফল চাষ করা যায়। তাই ফসলে জৈব-বালাইনাশক ব্যবহারের জন্য কৃষি উদ্যোক্তাদের আগ্রহ সৃষ্টি করানো হচ্ছে। পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে আঙুর চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

কৃষি উদ্যোক্তা মো. আমজাদ হোসেন সংবাদমধ্যমকে জানান, গেল দুই বছর আগে ইউটিউব দেখে রাশিয়া, ইউক্রেন, ইতালি ও অস্ট্রেলিয়া থেকে ৩৫ জাতের আঙুরের চারা সংগ্রহ করে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ শুরু করেন তিনি। প্রথম বছরেই আঙুর চাষে সফলতা পেয়েছেন।

তবে এর মধ্যে বাছাই করে সাতটি জাতের আঙুরের ফলন ভালো এবং স্বাদে মিষ্টি পেয়েছেন। এর মধ্যে রাশিয়ান বাইকুনুর জাতটি সবচেয়ে ভালো এবং ভালো ফলন হয়েছে। এ জাতটি দেশের আবহাওয়া ও চাষের পরিবেশ উপযোগী বলে তিনি দাবি করেন।

তিনি বলেন, প্রথমে প্রায় ৫০ শতাংশ নিজস্ব জমি ও লিজ নেওয়া ২৫ শতাংশ মিলিয়ে মোট ৭৫ শতাংশ জমিতে ৩৫ জাতের আঙুর চাষ করি। এরমধ্যে গবেষণা করে রাশিয়ান বাইকুনুর জাতসহ সাতটি জাতের আঙুরের ভালো ফলন ও ভালো স্বাদ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হই।

এরপর পরীক্ষিত জাতগুলো দিয়ে ২৫ শতাংশ জমিতে পলিনেট হাউজের মাধ্যমে একটি মাতৃবাগান তৈরি করেছি। এ বাগানে মোট ১২০টি চারা রোপণ করা হয়েছে। চারা রোপনের তিন মাস পর ফল এসেছে।

প্রায় ছয় মাস পর তিনি ফল বিক্রি শুরু করেছেন। তার মতে, রোপণ থেকে গাছের বয়স এক বছর হলে পরিপূর্ণভাবে আঙুর ফল বাজারজাত করা সম্ভব। এর মধ্যে তার এ আঙুর বাগানের প্রতিটি গাছে অফ-সিজনে আট থেকে ১০ কেজি করে ফল পাওয়া যাচ্ছে। সে হিসাবে ১২০টি গাছে অন্তত গড়ে এক হাজার ২০০ কেজি বা ৩০ মণ ফল পাওয়া যাবে।

বাজার মূল্য গড়ে ৩০০ টাকা কেজি দরে হিসাব করলে যার আর্থিক মূল্য দাঁড়ায় তিন লাখ ৬০ হাজার টাকা।  তার উৎপাদিত অনেক আঙুর বাজারে বিক্রি করেছেন এবং চাহিদা রয়েছে বেশ। কারণ খেতেও বেশ মিষ্টি।

তিনি বলেন, সাধারণত মার্চ-এপ্রিল মাস আঙুর চাষের জন্য উপযুক্ত সময়। ওই সময়ে বাণিজ্যিকভাবে বেশি আঙুর বিক্রি করা হয়। আর এখন অফ-সিজন হলেও বর্তমানে পাইকারি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি ধরে বাজারে আঙুর বিক্রি করছেন। বাজারে চাহিদা থাকায় আর পেছনে ফিরে তাকাতে হচ্ছে না। তার মতে, আঙুরের এ জাত নাটোরের মাটিতে চাষযোগ্য এবং বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা সম্ভব।

তিনি বলেন, পলিনেট হাউসে ২৫ শতাংশ জমিতে আঙুর চাষ করতে গিয়ে গাছের চারা, মাচা, পরিচর্যাসহ সব মিলিয়ে খরচ পড়েছে এক লাখ ২০ হাজার টাকা। আঙুর বাগানে যে পরিমাণ ফল এসেছে এবং বর্তমান যা বাজার মূল্য, তাতে আনুমানিক তিন থেকে চার লাখ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব। আর পলিনেট হাউস তৈরি করতে প্রায় ৩০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। তবে এ অর্থ কৃষি বিভাগের মাধ্যমে সরকারিভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া খোলা জায়গায় আরও ৭৫ শতাংশ জমিতে আঙুর চাষ করেছেন তিনি। আবার তাপ নিয়ন্ত্রণ করা যায় পলিনেট হাউজে। চাষ প্রক্রিয়ায় গোবর সার ও মাকড় মারার জন্য ভারমিটেক ব্যবহার করেন। আর পলিনেট হাউসে আঙুর চাষ করায় রোগবালাই অনেক কম। গাছে পোকার কোনো আক্রমণ হয়নি। কীটনাশক ব্যবহারের কোনো প্রয়োজন নেই। এজন্য এ ফলটি নিরাপদও বটে।