ঢাকা ০১:২৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

নিষিদ্ধ হলো জামায়াত-শিবির

গণমুক্তি ডিজিটাল ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৪:২২:০৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ অগাস্ট ২০২৪ ৩১১ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হলো স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির। বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টা নাগাদ নিষেদ্ধের প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮ (১) ধারা অনুযায়ী জামায়াতে ইসলামী, ছাত্রশিবির ও তাদের অন্যান্য অঙ্গ-সংগঠনকে নিষিদ্ধ করে হাসিনা সরকার। এর আগে নিষিদ্ধের বিষয়ে আইনি মতামত দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে ফাইল পাঠায় আইন মন্ত্রক।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের বলেন, জামায়াতে ইসলামী, ছাত্রশিবির এবং তাদের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের যেসব কর্মী ১৯৭১ সালের পর জন্ম নিয়েছে, তাদের গণহারে বিচার করা হবে না। এর আগে মঙ্গলবার আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, জাময়াত-শিবির নিষিদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রধানন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। এদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে সাত মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী জরুরী বৈঠকে বসলেও সন্ধ্যা পর্যন্ত বৈঠকের সিদ্ধান্তের বিষয়ে কিছুই জানা যায়নি।

বুধবার সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামন খান কামাল সাংবাদিকদের জানান, জাময়াত-শিবির নিষিদ্ধে যে কোন সময়ে প্রজ্ঞাপন জারি হবে। অবশেষে বৃহস্পতিবার জাময়াত-শিবির নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলন ঘিরে সংঘাত-সহিংসতার পুলিশসহ দেড়শ মানুষ নিহত হবার কথা জানায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। বেসরকারি হিসাব অনুযায়ী এ সংখ্যা দুই শতাধিক।

আন্দোলনের সময় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয় রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বিটিভি, বনানীর সেতুভবন, মহাখালীর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবন, মেট্রোরেল মিরপুর ১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায়। সরকারের তরফের দাবি, বিএনপি ও জামায়াত-শিবির এ সহিংসতায় যুক্ত। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল জামায়াত।

যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে মামলায় দলটির সাবেক বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, আবদুল কাদের মোল্লা এবং মোহাম্মদ কামারুজ্জামান এই পাঁচজনের মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয়েছে। বাংলাদেশে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত নিষিদ্ধ ছিল জামায়াত। রাজনৈতিক নানা পট পরিবর্তনের পর দেশের রাজনীতিতে আবারও সক্রিয় হয় জামায়াত।

১৯৮৬ সালে প্রথম বাংলাদেশে নির্বাচনে অংশ নেয় দলটি। ২০০১ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার গঠন করলে জামায়াতের কয়েকজন নেতা মন্ত্রিসভায়ও স্থান পান, যা তখন ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। ২০০৮ সালে জামায়াতে ইসলামীকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন দেওয়া হয়। এরপর দলটির নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৯ সালে রিট আবেদন করেন ২৫ ব্যক্তি।

২০১৩ সালের ১ আগস্ট হাইকোর্ট জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে আদালত। ২০১৮ সালের ৮ ডিসেম্বর দলটির নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন। নির্বাহী আদেশে বুধবারের মধ্যে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ হবে জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, গত ১৬ জুলাই থেকে কোটাবিরোধী আন্দোলনের নামে যে সহিংসতা চালানো হয়েছে, যারা কোটাবিরোধী আন্দোলন করছেন তারা কিন্তু জানিয়েছেন, এ সহিংসতার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

সেক্ষেত্রে আমাদের কাছে তথ্য-উপাত্ত আছে, জামায়াত-বিএনপি ও ইসলামী ছাত্রশিবির, ছাত্রদলের যারা জঙ্গি, তারাই এটা করেছেন। আইনমন্ত্রী আরও বলেন, যদি দলটিকে নিষিদ্ধ করা হয়, তাহলে আইনশৃঙ্খলা এবং দেশের রাজনীতিরও অনেক উন্নতি হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

নিষিদ্ধ হলো জামায়াত-শিবির

আপডেট সময় : ০৪:২২:০৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ অগাস্ট ২০২৪

 

বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হলো স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির। বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টা নাগাদ নিষেদ্ধের প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮ (১) ধারা অনুযায়ী জামায়াতে ইসলামী, ছাত্রশিবির ও তাদের অন্যান্য অঙ্গ-সংগঠনকে নিষিদ্ধ করে হাসিনা সরকার। এর আগে নিষিদ্ধের বিষয়ে আইনি মতামত দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে ফাইল পাঠায় আইন মন্ত্রক।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের বলেন, জামায়াতে ইসলামী, ছাত্রশিবির এবং তাদের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের যেসব কর্মী ১৯৭১ সালের পর জন্ম নিয়েছে, তাদের গণহারে বিচার করা হবে না। এর আগে মঙ্গলবার আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, জাময়াত-শিবির নিষিদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রধানন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। এদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে সাত মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী জরুরী বৈঠকে বসলেও সন্ধ্যা পর্যন্ত বৈঠকের সিদ্ধান্তের বিষয়ে কিছুই জানা যায়নি।

বুধবার সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামন খান কামাল সাংবাদিকদের জানান, জাময়াত-শিবির নিষিদ্ধে যে কোন সময়ে প্রজ্ঞাপন জারি হবে। অবশেষে বৃহস্পতিবার জাময়াত-শিবির নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলন ঘিরে সংঘাত-সহিংসতার পুলিশসহ দেড়শ মানুষ নিহত হবার কথা জানায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। বেসরকারি হিসাব অনুযায়ী এ সংখ্যা দুই শতাধিক।

আন্দোলনের সময় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয় রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বিটিভি, বনানীর সেতুভবন, মহাখালীর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবন, মেট্রোরেল মিরপুর ১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায়। সরকারের তরফের দাবি, বিএনপি ও জামায়াত-শিবির এ সহিংসতায় যুক্ত। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল জামায়াত।

যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে মামলায় দলটির সাবেক বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, আবদুল কাদের মোল্লা এবং মোহাম্মদ কামারুজ্জামান এই পাঁচজনের মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয়েছে। বাংলাদেশে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত নিষিদ্ধ ছিল জামায়াত। রাজনৈতিক নানা পট পরিবর্তনের পর দেশের রাজনীতিতে আবারও সক্রিয় হয় জামায়াত।

১৯৮৬ সালে প্রথম বাংলাদেশে নির্বাচনে অংশ নেয় দলটি। ২০০১ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার গঠন করলে জামায়াতের কয়েকজন নেতা মন্ত্রিসভায়ও স্থান পান, যা তখন ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। ২০০৮ সালে জামায়াতে ইসলামীকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন দেওয়া হয়। এরপর দলটির নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৯ সালে রিট আবেদন করেন ২৫ ব্যক্তি।

২০১৩ সালের ১ আগস্ট হাইকোর্ট জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে আদালত। ২০১৮ সালের ৮ ডিসেম্বর দলটির নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন। নির্বাহী আদেশে বুধবারের মধ্যে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ হবে জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, গত ১৬ জুলাই থেকে কোটাবিরোধী আন্দোলনের নামে যে সহিংসতা চালানো হয়েছে, যারা কোটাবিরোধী আন্দোলন করছেন তারা কিন্তু জানিয়েছেন, এ সহিংসতার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

সেক্ষেত্রে আমাদের কাছে তথ্য-উপাত্ত আছে, জামায়াত-বিএনপি ও ইসলামী ছাত্রশিবির, ছাত্রদলের যারা জঙ্গি, তারাই এটা করেছেন। আইনমন্ত্রী আরও বলেন, যদি দলটিকে নিষিদ্ধ করা হয়, তাহলে আইনশৃঙ্খলা এবং দেশের রাজনীতিরও অনেক উন্নতি হবে।