পদ্মা জয়ের পর এবারে যমুনা জয় করলেন শেখ হাসিনা
- আপডেট সময় : ১০:৪৫:৫২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ২২১ বার পড়া হয়েছে
২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরে দেশটির সরকার যমুনা নদীতে বঙ্গবন্ধু রেল সেতু নির্মাণ প্রকল্পে অর্থায়নে সম্মত হয়। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে নেওয়া প্রকল্পে চূড়ান্ত নকশা প্রণয়নসহ বঙ্গবন্ধু রেলসেতুর নির্মাণব্যয় ধরা হয় ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা। ডিপিপি সংশোধনে সেতুর নির্মাণব্যয় ৭ হাজার ৪৭ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে
আমিনুল হক ভূইয়া
বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের সঙ্গে সরাসরি রেল যোগাযোগের নব দিগন্ত উন্মোচনের অপেক্ষায় সরকার। সহজেই বলা যায় ‘পদ্মা জয়ের পর এবারে যমুনাও জয়’ করলেন শেখ হাসিনা। নিজস্ব অর্থায়নে প্রমত্তা পদ্মায় সেতু নির্মাণ করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবারে যমুনা নদীতে রেলসেতু নির্মাণ করে আরও একটি দুঃসাহসিক পদক্ষেপ বাস্তবায়নের পথেই হাটলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ডিসেম্বর তথা বিজয়ের মাসেই উত্তরবঙ্গে পথে ১২০ কিলোমিটার গতিতে সরাসরি ট্রেন চলবে যমুনা নদীতে নির্মিত ‘বঙ্গবন্ধু রেলসেতু’ দিয়ে।
বর্তমানে যমুনা নদীতে বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতুতে সিঙ্গেল ট্র্যাক রেলপথ রয়েছে। উত্তরবঙ্গের পথে যাতায়তকারী ট্রেনগুলো ধীরগতিতে সেতু পারি দিয়ে থাকে। একটি ট্রেন সেতু অতিক্রমের সময় বিপরীতমুখী ট্রেন থামিয়ে রাখা হয়। অপর দিকে বঙ্গবন্ধু বহু মুখী সেতুটি মূলত যানবাহন চলাচলের সেতু। এই সেতুর এক পাশে সিঙ্গেল ট্র্যাক রেলপথ বসানো হয়।
২০১৬ সালে বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতুর ৩০০ মিটার দূরত্বে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু নির্মাণ কাজে হাত লাগায় হাসিনা সরকার। দেশের বৃহত্তম এ রেলওয়ে সেতুতে থাকছে ডাবল ট্র্যাক। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে এ সেতুর কাজ শেষ হবে এমনটিই জানালেন সেতুর প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান। তার মতে রেলসেতুর কাজের ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৮২ শতাংশ।
মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) আল ফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান সংবাদমাধ্যমকে জানান, ডিসেম্বরের মধ্যে সব কাজ শেষে বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল করা সম্ভব হবে। নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু সাধারণ ট্রেন ছাড়াও দ্রুতগতির (হাইস্পিড) ট্রেনও চালানোর উপযুক্ত করে নির্মাণ করা হচ্ছে। এ কারণে এই সেতু দিয়ে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৫০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল অতিক্রমের সক্ষমতা রয়েছে। উদ্বোধনের এক বছর পর্যন্ত সাধারণত ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করা যাবে।
সেতুটি চালুর পর উত্তর জনপদের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলা এবং খুলনা বিভাগের ১০ জেলার যাত্রীরা স্বস্তির যাত্রায় গা ভাসাতে পারবেন। রেলভবন জানায়, বর্তমানে ৪৮টি ট্রেন বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতু ব্যবহার করে চলাচল করছে। বঙ্গবন্ধু রেলসেতু চালুর পর প্রতিদিন ৮৮টি ট্রেন চলাচল করবে। এর অধিকাংশ ট্রেনে পণ্য পরিবাহিত হবে। তাদের করে উত্তর জনপদের অর্থণীতিতে নবদিগন্তেদর সূচনা হবে। এই রেলসেতুতে ব্রডগেজ লাইন হওয়ায় কনটেইনার পরিবহন করা যাবে।
এই রেলসেতুটি চালু হলে উত্তরাঞ্চলের রেল যোগাযোগে যেমন গতি বাড়বে, তেমনি প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে রেলে পণ্য পরিবহনের সক্ষমতাও তৈরি হবে।
২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরে দেশটির সরকার যমুনা নদীতে বঙ্গবন্ধু রেল সেতু নির্মাণ প্রকল্পে অর্থায়নে সম্মত হয়। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে নেওয়া প্রকল্পে চূড়ান্ত নকশা প্রণয়নসহ বঙ্গবন্ধু রেলসেতুর নির্মাণব্যয় ধরা হয় ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা। ডিপিপি সংশোধনে সেতুর নির্মাণব্যয় ৭ হাজার ৪৭ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
দেশের বৃহত্তম এ রেল সেতু নির্মাণে ৭ হাজার ৭২৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার কথা ছিল জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা)।
২০১৭ সালের মার্চে এ প্রকল্পের পরামর্শক নিয়োগ করা হয়। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন শেষ হয়।
২০২৪ সালের আগস্টে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পরে ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয়।