রাজশাহীতে মিথ্যা প্ররোচনায় স্বামীকে তালাক, প্রেমিককে বিয়ে করে নির্যাতন, থানায় মামলা
- আপডেট সময় : ০২:২২:৫০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ মার্চ ২০২৪ ৩৫৫ বার পড়া হয়েছে
মা হারা মেয়েটিকে কিশোরী বয়সেই বিয়ের পিড়িতে বসতে হয়েছিলো। বছর গড়াতেই কিশোর মায়ের দাবিদার হন। স্বামী-সন্তান নিয়ে কিশোরী মায়ের সংসারে টানাপোড়েন দেখা দেয়। মায়ের মৃত্যুর পর থেকেই দুঃখ নামক অভিশাপটা চেপে বসে। বিয়ের পর তা আরও কয়েকগুণ ভারি হয়ে দেখা দেয়।
জানা যায়, স্মৃতি (ছদ্মনাম) রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার ধুরইল গ্রামের মেয়ে। অষ্টম শ্রেনীতে পা রাখতেই মা গত হন। সময়টা ২০১৫ সালের ১৬ এপ্রিল। একই গ্রামের সাগরের সঙ্গে স্মৃতির বিয়ে হয়।
এরই মধ্যে ২০২৩ সালে উপজেলার হরিদাগাছী (কেশরহাট সংলগ্ন) গ্রামের রায়হানের প্রলোভনে পড়ে স্মৃতি। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে স্মৃতির সাথে দিনের পর দিন শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলে রায়হান। রায়হানের পরামর্শে তার স্বামীকে তালাক দেয়।
এক পর্যায়ে রায়হানকে বিয়ের জন্য অনুরোধ করে স্মৃতি। বিয়ের মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে বাড়ির রেখে পালিয়ে যায় রায়হান। এরই মাঝে ধর্ষন মামলার ভয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে প্রতারণার আশ্রয় নেয় রায়হানের পরিবার।
তারা কেশরহাট পৌরসভার কাউন্সিলর আসলাম আলী, সাংবাদিক মামুনসহ কয়েকজনের সহযোগিতায় গত ২৩ ফেব্রুয়ারী রাতে ননজুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে এভিডেভিডের মাধ্যমে মাত্র ৭০ হাজার টাকা দেনমোহর উল্লেখ করে বিয়ের নাটক সাজায়। বিয়ের এই আয়োজনে মেয়ে পক্ষের কোন অবিভাবক উপস্থিত ছিলেন না।
সুখের আশায় রায়হানের সঙ্গে ঘর বেধে দুর্বিষহ যন্ত্রণার মুখোমুখি হয় স্মৃতি। অসহায় মেয়েটির ওপর দিন দিন উপর শারীরিক ও মানুষিক নির্যাতন বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে যৌতুকের দাবীতে স্মৃতির ওপর স্বামী, ননদ ও শ্বাশুড়ির নির্যা নের মাত্রা বাড়তে থাকে।
এ অবস্থায় ৬ মার্চ (বুধবার) স্বামী, ননদ ও শ্বাশুড়ির নির্যাতনে আহত হয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি)-তে ভর্তি হয়।
চিকিৎসা শেষে ১০ মার্চ স্মৃতি বাদি হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ১১(গ)/৩০ ধারায় মোহনপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় স্বামী রায়হানসহ তিন জনকে আসামী করা হয়।
অভিযে গে উল্লেখ করা হয়, বিয়ের পরদিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে মারধোর করে রায়হান ও তার পরিবারের লোকজন। ৬ মার্চ সকালে রান্নাঘরে গেলে ননদ মনিরা খাতুন (২৪) তার চুলের মুঠি ধরে মাটিতে ফেলে দেয় এবং তার শাশুড়ী রোকসানা বেগম (৪৭) যৌতুকের টাকার জন্য লোহার গরম সিক দিয়ে ডান হাতের তালুতে ছ্যাকা দিয়ে পোড়া জখম করে। তারা যৌতুকের টাকা না দিলে তাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।
নিজের জীবন বাঁচাতে ধুরইল গ্রামে তার বাবার বাড়িতে পালিয়ে আসে। সেখানে তার ছোট ভাই সোহেল রানার সহযোগীতায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ওসিসি-তে ভর্তি হয় এবং চিকিৎসা গ্রহণ করে। এসময় তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত চিহ্ন দেখা গেছে।
এবিষয়ে মোহনপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হরিদাস মন্ডল জানান, যৌতুকের দাবীতে গৃহবধূকে নির্যাতন করা হয়েছে, এই মর্মে ২০০০ সারের নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্ত আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
স্মৃতির পরিবারের অভিযোগ মামলার আসামিরা প্রকাশ্য ঘুরে বেড়ালেও তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সিরাজুল ইসলাম অজ্ঞাত কারণে তাদের ধরছেন না। বরং তাদের জামিন নিতে সহযোগিতা করছেন বলে অভিযোগ।