ঢাকা ০৭:৫১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫

রিকন্ডিশনড গাড়ির বাজারে খরা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
  • আপডেট সময় : ১১:০৬:৪২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫ ৩৪ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে আশানুরূপ অগ্রগতি হয়নি। এই অনিশ্চয়তার প্রভাব পড়েছে দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে। বিশেষ করে রিকন্ডিশনড গাড়ির বাজারে ‘এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় মন্দা’ চলছে বলে জানিয়েছেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও, মনিপুরপাড়া ও মিরপুর এলাকার বেশ কয়েকটি রিকন্ডিশনড গাড়ির শোরুম ঘুরে দেখা গেছে, আগের মতো ক্রেতাদের ভিড় নেই। শোরুম মালিক ও বিক্রয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এমন পরিস্থিতি করোনাকালেও দেখা যায়নি। আগে যেখানে নিয়মিত ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা দামের গাড়ির চাহিদা থাকতো, এখন বেশিরভাগ ক্রেতাই খোঁজ করছেন চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা দামের গাড়ি। যেখানে একসময় মাসে গড়ে পাঁচ থেকে সাতটি গাড়ি বিক্রি হতো, এখন তা নেমে এসেছে সর্বোচ্চ তিন থেকে চারটিতে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, গাড়ির বাজার কেবল মানুষের অর্থনৈতিক সামর্থের ওপর নির্ভর করে না রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা পরিস্থিতির সঙ্গেও এর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর দুর্নীতি দমন ও অর্থপাচার রোধে কিছু সাফল্য এলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে রয়ে গেছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অপরাধ বেড়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সেনাবাহিনী মাঠে থাকলেও সাধারণ মানুষের মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে, যার প্রভাব পড়েছে গাড়ি কেনাবেচার ওপরও।
মনিপুরপাড়া সড়কের ‘কার কালেকশন’-এর ম্যানেজার মাকসুদুর রহমান বলেন, ‘গাড়ির বাজার বর্তমানে চরম মন্দার মধ্যে রয়েছে। আগে যেখানে ১০টি গাড়ি বিক্রি হতো, এখন হয় চারটি। সেগুলোর দামও তুলনামূলকভাবে অনেক কম। প্যারাডো, রোভার—এই ধরনের দামি গাড়ির ক্রেতা এখন নেই বললেই চলে। তিনি জানান, অনেক সম্ভাব্য ক্রেতাই বর্তমানে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। যারা আগে নিয়মিত গাড়ি কিনতেন, তাদের অনেকেই এখন বিদেশে। আমরা আশা করছি, নতুন সরকার ও নেতৃত্ব আসলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। তখন হয়তো আবার চাহিদা বাড়বে, বলেন মাকসুদুর।
মনিপুরপাড়ার আরেকটি শোরুম ‘আর পি কারস সেন্টার’-এর মালিক মুক্তার হোসেন বলেন, গত ২৫ বছর ধরে গাড়ির ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকলেও গত ১০ মাসের মতো খারাপ সময় আর কখনো আসেনি। এখন মানুষ খরচ করতে ভয় পাচ্ছে। যাদের হাতে টাকা ছিল, তারা অনেকেই দেশ ছেড়েছেন। আর যারা আছেন, তারাও অনিশ্চয়তার কারণে অপেক্ষায় রয়েছেন।
গাড়ির ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নেতারা মনে করছেন, এই অচলাবস্থা কাটিয়ে উঠতে একটি নির্বাচিত ও গণতান্ত্রিক সরকারের প্রয়োজন। তাদের মতে, নির্বাচনের মাধ্যমে একটি জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার গঠিত হলে জনগণের আস্থা ফিরবে এবং অর্থনীতি আবার ঘুরে দাঁড়াবে। বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিকলস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) সভাপতি আবদুল হক বলেন, ‘রাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণে আমাদের ব্যবসায় প্রায় ৪০ শতাংশ বিক্রি কমে গিয়েছিল। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতির দিকে। গত ১০ মাসে অনেক ক্রেতা দেশের বাইরে ছিলেন, ফলে বিক্রি কম হয়েছে। এছাড়া টাকার অবমূল্যায়ন ও অর্থপাচার দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচিত সরকার আসলে রাজনৈতিক নেতাদের গাড়ির চাহিদা বাড়বে। একই সঙ্গে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হলে সাধারণ মানুষের মধ্যেও আস্থা ফিরবে। তখন বড় বিনিয়োগ আসবে এবং গাড়ির বাজারেও আবারও চাঙ্গাভাব ফিরে আসবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

রিকন্ডিশনড গাড়ির বাজারে খরা

আপডেট সময় : ১১:০৬:৪২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫

গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে আশানুরূপ অগ্রগতি হয়নি। এই অনিশ্চয়তার প্রভাব পড়েছে দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে। বিশেষ করে রিকন্ডিশনড গাড়ির বাজারে ‘এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় মন্দা’ চলছে বলে জানিয়েছেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও, মনিপুরপাড়া ও মিরপুর এলাকার বেশ কয়েকটি রিকন্ডিশনড গাড়ির শোরুম ঘুরে দেখা গেছে, আগের মতো ক্রেতাদের ভিড় নেই। শোরুম মালিক ও বিক্রয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এমন পরিস্থিতি করোনাকালেও দেখা যায়নি। আগে যেখানে নিয়মিত ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা দামের গাড়ির চাহিদা থাকতো, এখন বেশিরভাগ ক্রেতাই খোঁজ করছেন চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা দামের গাড়ি। যেখানে একসময় মাসে গড়ে পাঁচ থেকে সাতটি গাড়ি বিক্রি হতো, এখন তা নেমে এসেছে সর্বোচ্চ তিন থেকে চারটিতে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, গাড়ির বাজার কেবল মানুষের অর্থনৈতিক সামর্থের ওপর নির্ভর করে না রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা পরিস্থিতির সঙ্গেও এর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর দুর্নীতি দমন ও অর্থপাচার রোধে কিছু সাফল্য এলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে রয়ে গেছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অপরাধ বেড়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সেনাবাহিনী মাঠে থাকলেও সাধারণ মানুষের মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে, যার প্রভাব পড়েছে গাড়ি কেনাবেচার ওপরও।
মনিপুরপাড়া সড়কের ‘কার কালেকশন’-এর ম্যানেজার মাকসুদুর রহমান বলেন, ‘গাড়ির বাজার বর্তমানে চরম মন্দার মধ্যে রয়েছে। আগে যেখানে ১০টি গাড়ি বিক্রি হতো, এখন হয় চারটি। সেগুলোর দামও তুলনামূলকভাবে অনেক কম। প্যারাডো, রোভার—এই ধরনের দামি গাড়ির ক্রেতা এখন নেই বললেই চলে। তিনি জানান, অনেক সম্ভাব্য ক্রেতাই বর্তমানে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। যারা আগে নিয়মিত গাড়ি কিনতেন, তাদের অনেকেই এখন বিদেশে। আমরা আশা করছি, নতুন সরকার ও নেতৃত্ব আসলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। তখন হয়তো আবার চাহিদা বাড়বে, বলেন মাকসুদুর।
মনিপুরপাড়ার আরেকটি শোরুম ‘আর পি কারস সেন্টার’-এর মালিক মুক্তার হোসেন বলেন, গত ২৫ বছর ধরে গাড়ির ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকলেও গত ১০ মাসের মতো খারাপ সময় আর কখনো আসেনি। এখন মানুষ খরচ করতে ভয় পাচ্ছে। যাদের হাতে টাকা ছিল, তারা অনেকেই দেশ ছেড়েছেন। আর যারা আছেন, তারাও অনিশ্চয়তার কারণে অপেক্ষায় রয়েছেন।
গাড়ির ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নেতারা মনে করছেন, এই অচলাবস্থা কাটিয়ে উঠতে একটি নির্বাচিত ও গণতান্ত্রিক সরকারের প্রয়োজন। তাদের মতে, নির্বাচনের মাধ্যমে একটি জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার গঠিত হলে জনগণের আস্থা ফিরবে এবং অর্থনীতি আবার ঘুরে দাঁড়াবে। বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিকলস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) সভাপতি আবদুল হক বলেন, ‘রাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণে আমাদের ব্যবসায় প্রায় ৪০ শতাংশ বিক্রি কমে গিয়েছিল। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতির দিকে। গত ১০ মাসে অনেক ক্রেতা দেশের বাইরে ছিলেন, ফলে বিক্রি কম হয়েছে। এছাড়া টাকার অবমূল্যায়ন ও অর্থপাচার দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচিত সরকার আসলে রাজনৈতিক নেতাদের গাড়ির চাহিদা বাড়বে। একই সঙ্গে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হলে সাধারণ মানুষের মধ্যেও আস্থা ফিরবে। তখন বড় বিনিয়োগ আসবে এবং গাড়ির বাজারেও আবারও চাঙ্গাভাব ফিরে আসবে।