ঢাকা ০১:৩৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo নবীনগরে ভূট্টায় কৃষকের স্বপ্ন Logo নওগাঁ সদর উপজেলা গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা Logo বিয়ের প্রতিশ্রুতিতে ২০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনএসআই মাঠ কর্মকর্তা বিরুদ্ধে Logo মধুখালীতে গোল্ডেন পরিবহনের চাপায় এক ভ্যান যাত্রী নিহত Logo সেনবাগে বৃদ্ধের বসতঘর ভংচুর, পিটিয়ে হাত ভাঙ্গল ভাতিজা Logo নরসিংদীর মেঘনায় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চলছে জাটকা নিধন Logo সপ্তাহ ব্যাপী অভিযানে ফেনী ব্যাটালিয়ান ৪ বিজিবির কোটি টাকার মালামাল আটক Logo ডাকবাংলায় আব্দুল মালেক ও বাবুল মাস্তানের দাপট: ফের সক্রিয় অপরাধ জগতে Logo পৌনে এক কোটি টাকার কালভার্টের মূল কাজ শুরু হয়নি ৪ বছরেও,দুর্ঘটনা ও ভোগান্তিতে ৫০গ্রামের বাসিন্দা Logo ত্রিশালের আমিরাবাড়ী ইউনিয়নে ওপেন হাউজ ডে অনুষ্ঠিত

শুরু হচ্ছে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ কাজ, চুক্তি ২২ এপ্রিল

এস এম হুমায়ুন কবির, কক্সবাজার
  • আপডেট সময় : ০৪:১৪:৪৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫ ৫৩ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সব জল্পনা-কল্পনার অবসান শেষে শুরু হচ্ছে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরের নির্মাণকাজ। ২২ এপ্রিল ঢাকায় জাপানি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের পরই শুরু হবে ৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি জেটির সমন্বয়ে একটি টার্মিনাল নির্মাণ। নানামুখী জটিলতায় বার বার পিছিয়েছে ২৪ হাজার কোটি টাকার এই মেগা প্রকল্প।

কয়েক বছর আগে ৯ হাজার কোটি টাকা খরচ করে কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়িতে তৈরি করা হয় সাড়ে ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং সাড়ে ১৪ মিটার গভীরতার কৃত্রিম চ্যানেল। এরই মধ্যে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য আনা কয়লা নিয়ে ভিড়েছে একাধিক বিশাল আকৃতির জাহাজ। কিন্তু নানামুখী জটিলতায় বার বার পিছিয়েছে পূর্ণাঙ্গ গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ কাজ।

চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, সময়ক্ষেপণের কারণে মাতারবাড়ি প্রকল্প খরচ দুই দফায় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার ৩৮১ কোটি টাকায়। আর প্রথম পর্যায়ে যে টার্মিনাল নির্মাণ হচ্ছে, তার খরচ ধরা হয়েছে ৬ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা। যা পুরোটাই বহন করবে জাপানি সংস্থা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)।

এরই অংশ হিসাবে জাপানি প্রতিষ্ঠান পেন্টা ওশান এবং থোয়া কর্পোরেশনের সঙ্গে ২২ এপ্রিল চুক্তি করতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। চুক্তি অনুযায়ী আগামী ৪ বছরে ৪৬০ মিটার দীর্ঘ একটি কনটেইনার জেটি এবং ৩০০ মিটার দীর্ঘ আরও একটি মাল্টি পারপাস জেটিসহ টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, ‘প্রায় ৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকায় এই চুক্তিটি হবে। পুরোটাই হবে জাইকার অর্থায়নে। ২০২৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এই চুক্তির মেয়াদ থাকবে, এর মধ্যেই প্রতিষ্ঠানটি টার্মিনাল নির্মাণ করবে।’

গভীর সমুদ্র বন্দরের সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে মাতারবাড়িতে এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় এনার্জি হাব গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। যে কারণে গভীর সমুদ্রে পাইপের মাধ্যমে তেল সরবরাহে এসপিএমের ল্যান্ডিং স্টেশন করা হয়েছে মাতারবাড়িতেই।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, তেল সরবরাহে এসপিএমের ল্যান্ডিং স্টেশন করা হয়েছে এখানে। মাতারবাড়িতে যেহেতু একটি এনার্জি হাব হবে, সেটি চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রমে অনেক সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

গত ১০ বছরের বেশি সময় ধরে বেশকয়টি দেশ এই গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণে সহযোগিতায় আগ্রহী হলেও বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত জাপানকেই বেছে নিয়েছে। এক্ষেত্রে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে নির্ধারিত সময় ২০২৯ সালের আগেই টার্মিনাল নির্মাণে আশাবাদী প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের সাবেক প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ জাফর আলম বলেন, এই বন্দরের জন্য বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব প্রযুক্তির অনেক কিছুই বাইরে তৈরি হবে, শুধু দেশে এনে স্থাপন করা হবে। তাই নির্মাণ কাজ অনেক দ্রুত শেষ হবে।

সাড়ে ১৪ মিটার গভীরতার কৃত্রিম এই চ্যানেলের কারণে বিশ্বের সবচেয়ে বড় জাহাজটিও সহজেই নোঙর করতে পারবে মাতারবাড়িতে। প্রতিটি জাহাজের কনটেইনার ধারণ সক্ষমতা থাকবে ৮ থেকে ৯ হাজার। বড় জাহাজ আসার পরিমাণ বাড়লে কমবে আমদানি খরচ।

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন সহ-সভাপতি শফিকুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টন ধারণক্ষমতার কার্গো এলে পণ্যের খরচ স্বাভাবিকভাবেই কমে যাবে। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বন্দরটির পরিচালনা শুরু করতে হবে। এতে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি বাড়বে।’

২০২৯ সালের মধ্যে ১১ লাখ এবং ২০৪১ সালে ২৬ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা থাকবে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

শুরু হচ্ছে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ কাজ, চুক্তি ২২ এপ্রিল

আপডেট সময় : ০৪:১৪:৪৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫

সব জল্পনা-কল্পনার অবসান শেষে শুরু হচ্ছে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরের নির্মাণকাজ। ২২ এপ্রিল ঢাকায় জাপানি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের পরই শুরু হবে ৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি জেটির সমন্বয়ে একটি টার্মিনাল নির্মাণ। নানামুখী জটিলতায় বার বার পিছিয়েছে ২৪ হাজার কোটি টাকার এই মেগা প্রকল্প।

কয়েক বছর আগে ৯ হাজার কোটি টাকা খরচ করে কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়িতে তৈরি করা হয় সাড়ে ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং সাড়ে ১৪ মিটার গভীরতার কৃত্রিম চ্যানেল। এরই মধ্যে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য আনা কয়লা নিয়ে ভিড়েছে একাধিক বিশাল আকৃতির জাহাজ। কিন্তু নানামুখী জটিলতায় বার বার পিছিয়েছে পূর্ণাঙ্গ গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ কাজ।

চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, সময়ক্ষেপণের কারণে মাতারবাড়ি প্রকল্প খরচ দুই দফায় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার ৩৮১ কোটি টাকায়। আর প্রথম পর্যায়ে যে টার্মিনাল নির্মাণ হচ্ছে, তার খরচ ধরা হয়েছে ৬ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা। যা পুরোটাই বহন করবে জাপানি সংস্থা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)।

এরই অংশ হিসাবে জাপানি প্রতিষ্ঠান পেন্টা ওশান এবং থোয়া কর্পোরেশনের সঙ্গে ২২ এপ্রিল চুক্তি করতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। চুক্তি অনুযায়ী আগামী ৪ বছরে ৪৬০ মিটার দীর্ঘ একটি কনটেইনার জেটি এবং ৩০০ মিটার দীর্ঘ আরও একটি মাল্টি পারপাস জেটিসহ টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, ‘প্রায় ৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকায় এই চুক্তিটি হবে। পুরোটাই হবে জাইকার অর্থায়নে। ২০২৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এই চুক্তির মেয়াদ থাকবে, এর মধ্যেই প্রতিষ্ঠানটি টার্মিনাল নির্মাণ করবে।’

গভীর সমুদ্র বন্দরের সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে মাতারবাড়িতে এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় এনার্জি হাব গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। যে কারণে গভীর সমুদ্রে পাইপের মাধ্যমে তেল সরবরাহে এসপিএমের ল্যান্ডিং স্টেশন করা হয়েছে মাতারবাড়িতেই।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, তেল সরবরাহে এসপিএমের ল্যান্ডিং স্টেশন করা হয়েছে এখানে। মাতারবাড়িতে যেহেতু একটি এনার্জি হাব হবে, সেটি চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রমে অনেক সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

গত ১০ বছরের বেশি সময় ধরে বেশকয়টি দেশ এই গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণে সহযোগিতায় আগ্রহী হলেও বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত জাপানকেই বেছে নিয়েছে। এক্ষেত্রে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে নির্ধারিত সময় ২০২৯ সালের আগেই টার্মিনাল নির্মাণে আশাবাদী প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের সাবেক প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ জাফর আলম বলেন, এই বন্দরের জন্য বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব প্রযুক্তির অনেক কিছুই বাইরে তৈরি হবে, শুধু দেশে এনে স্থাপন করা হবে। তাই নির্মাণ কাজ অনেক দ্রুত শেষ হবে।

সাড়ে ১৪ মিটার গভীরতার কৃত্রিম এই চ্যানেলের কারণে বিশ্বের সবচেয়ে বড় জাহাজটিও সহজেই নোঙর করতে পারবে মাতারবাড়িতে। প্রতিটি জাহাজের কনটেইনার ধারণ সক্ষমতা থাকবে ৮ থেকে ৯ হাজার। বড় জাহাজ আসার পরিমাণ বাড়লে কমবে আমদানি খরচ।

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন সহ-সভাপতি শফিকুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টন ধারণক্ষমতার কার্গো এলে পণ্যের খরচ স্বাভাবিকভাবেই কমে যাবে। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বন্দরটির পরিচালনা শুরু করতে হবে। এতে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি বাড়বে।’

২০২৯ সালের মধ্যে ১১ লাখ এবং ২০৪১ সালে ২৬ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা থাকবে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরে।