শ্রমিক অন্তোস পরিকল্পিত, পরাজিত শক্তির ইন্ধনে শ্রমিক অস্থিরতা!
- আপডেট সময় : ০১:২৭:৪৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ৩৫ বার পড়া হয়েছে
১৫ বছর ধরে যেসব দাবি কারখানা মালিকরা শোনেনি এমন দাবি নিয়ে মাঠ গরম করা হচ্ছে
বিগত ১৫ বছর অধিক সময় যে শিল্পমালিকরা সকল প্রকার সুবিধাভোগ করেছে, সেসব প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবিতে রাস্তায় নেমে আসবে কেন? স্কয়ারের মতো প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা মালিকদের বঞ্চনার শিকার হবে কেন?
তারাতো পতিত হাসিনার সরকারের সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে কাজ করেছে। এসব সুবিধাভোগী মালিকদের কারখানার শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভে নামা পরিকল্পত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
গাজীপুর, আশুলিয়ার মতো শিল্পাঞ্চলের রাস্তা অবরোধ করে হাজারো মানুষকে দুর্ভোগে দাবি আদায়ের সাজানো মহড়া বলেই মনে করছেন শ্রমিক সংশ্লিষ্টা। কর্তৃপক্ষের অভিযোগ নিত্যনতুন ইস্যু তৈরি করছেন শ্রমিকরা। আর পুলিশ সাফাই গাইছে দীর্ঘদিন সরকারের পক্ষাবলম্বন করে শ্রমিকদের অধিকার বঞ্চিতের অভিযোগে অ্যাকশনে যেতে পারছে না পুলিশ।
শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে গাজীপুরে ক্রমাগত শ্রমিক অসন্তোষ লেগেই আছে। কারখানা কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, দাবি আদায়ে নিত্যনতুন ইস্যু তৈরি করে মালিক পক্ষকে চাপ দিচ্ছেন শ্রমিকরা। শ্রমিকদের অভিযোগ, মালিকরা সরকারের পক্ষাবলম্বন করে শ্রমিকদের অধিকার বঞ্চিত করে আসছে বছরের পর বছর। এখন বিভিন্ন পেশার মানুষের সঙ্গে তারাও তাদের দাবি নিয়ে মাঠে নেমেছেন। তাদের এসব দাবি অনেক পুরোনা। এখন নতুন করে দাবি সামনে আনা হয়েছে।
অনেকে শিল্পখাত অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা করছে বলেও শিল্প মালিকরা অভিযোগ করেন। নানান কারণে এসব অসন্তোষ থামাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর হতে পারছে না বলেও জানিয়েছেন তারা।
এদিকে গত সোমবার সকাল থেকে গাজীপুর মহানগরীর ভোগড়াসহ বিভিন্ন স্থানে কারখানায় পুরুষ শ্রমিক নিয়োগের দাবিতে বিক্ষোভ ও মহাসড়ক অবরোধ করেন পুরুষ শ্রমিকরা। তাদের দাবি, বিভিন্ন কারখানায় কেবল নারী শ্রমিকদের চাকরি দেওয়া হয়। পুরুষ শ্রমিকদের চাকরি দেওয়া হয় না। তারা সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নারীদের পাশাপাশি পুরুষ শ্রমিকদেরও চাকরি দেওয়ার দাবি জানান।
‘পরিকল্পিতভাবে পরাজিত অপশক্তির ইন্ধনে একটি চক্র এসব অস্থিরতা সৃষ্টি করছে’
চাকরিচ্যুত শ্রমিক আবুল বাশার বলেন, তিনিসহ আরও বেশ কয়েকজন একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। তুচ্ছ ঘটনায় সাতজনের চাকরি চলে যায়। পরে জানতে পারেন সাতজন পুরুষের স্থানে সাতজন নারী শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এমন নানান অজুহাতে পুরুষ শ্রমিকদের বাদ দিয়ে নারী শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এতে পুরুষ শ্রমিকদের প্রতি বৈষম্যের সৃষ্টি করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কারখানা মালিক অভিযোগ করেন, নানান অজুহাতে কিছু সংখ্যক শ্রমিক কারখানাগুলোতে পরিকল্পিতভাবে অসন্তোষ সৃষ্টি করছে। অযৌক্তিক দাবি নিয়ে মালিকদের চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। আমরা পুলিশ ডেকেও যথা সময়ে পাচ্ছি না। বিশৃঙ্খলার কারণে আমাদের উৎপাদনও কমে যাচ্ছে। সঠিক সময়ে পণ্যের অর্ডার সরবরাহ করাও কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তিনি এ অবস্থার দ্রুত অবসান চান।
বিএনপি সমর্থক এক শিল্প মালিক বলেন, ১৫ বছর ধরে যেসব দাবি আমরা শুনিনি এখন সেসব দাবি করা হচ্ছে। আমার কারখানায় আমি পুরুষ শ্রমিক নেব না নারী শ্রমিক নেব সেটা আমার একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়। এখন এখানেও বৈষম্যের কথা বলা হচ্ছে।
তিনি বলেন, পরিকল্পিতভাবে পরাজিত অপশক্তির ইন্ধনে একটি চক্র এসব অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। এদের প্রতিহত করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর হতে হবে। তা না হলে শিল্পে উৎপাদন কমে যাবে।
এসব বিষয়ে শিল্প ও থানা পুলিশ বলছে, কারখানার মালিক ও শ্রমিক পক্ষের দাবি-দাওয়া তাদের দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে পারে। এখানে শিল্প পুলিশ মধ্যস্থতা করতে পারে। তবে আইনশৃঙ্খলা অবনতি হলে সেটা পুলিশ দেখে। মহাসড়ক অবরোধের ফলে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হলেও পরিবর্তিত সময়ে এখন পুলিশ কোনো অ্যাকশনে যেতে পারছে না।
২১ দফা দাবিতে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সূত্রাপুর এলাকায় স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড নামের ওষুধ তৈরি কারখানার শ্রমিকরা গত বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ করেন। এ সময় তারা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে টায়ার ও আবর্জনায় আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করেন।
কারখানার শ্রমিকরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের বেতন-ভাতাসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিয়ে বৈষম্য করে আসছে। এসব বৈষম্যের প্রতিবাদে এবং ২১ দফা দাবিতে তারা আন্দোলন কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
শ্রমিকদের দাবিগুলো হচ্ছে, অফিস চলাকালীন এবং অফিসে যাতায়াতকালীন যদি কোনো কর্মী দুর্ঘটনার শিকার হয় তাহলে তার সম্পূর্ণ চিকিৎসা খরচ কোম্পানি বহন করবে। সঙ্গে ওই কর্মীকে কোম্পানির এককালীন আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে।
কারখানার এইচআরডি এজিএম সুরজিৎ মুখার্জি এবং প্রোডাকশন সিনিয়র ম্যানেজার দিপালক কর্মকার, সিনিয়র ম্যানেজার জাহিদুর রহমান, এইচ আর ডি সাম্মি আক্তার ও রুহুল আমিনকে পদত্যাগ করতে হবে। ছুটির জন্য হয়রানিমূলক আচরণ বন্ধ করতে হবে। নন-ম্যানেজমেন্ট কর্মীদের সঙ্গে সর্বদা সহনশীল সদাচরণ করতে হবে। বৈষম্যবিরোধী শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের কোনো কর্মীকে পরবর্তীসময়ে কোনো প্রকার হয়রানি বা চাকরিচ্যুত করা যাবে না।