সুন্দরবনে অগ্নিকাণ্ড পরিকল্পিত বলছেন পরিবেশবিদরা
- আপডেট সময় : ১০:০৫:৫৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ মে ২০২৪ ১৯২ বার পড়া হয়েছে
আমিনুল হক ভূইয়া
সুন্দরবনের আমুরবুনিয়ায় মানববন্ধনে বক্তারা
পরিকল্পিত অগ্নিকান্ড বন্ধে বনবিভাগ ও সরকারকে গুরুত্ব দিতে হবে
বাংলাদেশ রক্ষার দেওয়াল গর্বের সুন্দরবনে কেন বার বার অগ্নিকাণ্ড? কোন পাপিষ্টের কুনজরে বাংলাদেশের ফুসফুস সুন্দরবন? সুন্দরবন রক্ষায় মস্তবড় কর্তাব্যক্তিরা দায়িত্বে। রয়েছে বনবিভাগের হাজারো কর্মী। তারপরও কেন বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনে বার বার আগুনের ঘটনা ঘটছে। প্রতিবারই বনপোড়ানোর ঘটনায় তদন্ত কমিটি হয়, কিন্তু আগুন থামে না।
পরিবেশবিদরা বলছেন, সুন্দরবনের আগুন পরিকল্পিত। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বনবিভাগের কর্মীরা। জেলে ও বনবিভাগের কিছু অসৎকর্মীদের যোগসাজশে আগুনে পোড়ানো হয় সুন্দরবন। আগুনে পোড়া গাছগাছালি থেকে মাছের খাদ্য হয়। যা কিনা মাছের খুব প্রিয়। এসব খাবার খেতে প্রচুর পরিমাণে মাছের আনাগোনা বেড়ে যায়। সেই সুযোগে জেলেরা বিপুল পরিমাণ মাছ আহরণ করে থাকে।
জেলে আর বনকর্মীদের যৌথ পরিকল্পনায় বছর বছর সুন্দরবন আগুনে পুড়ে ধ্বংস হয় জাতীয় সম্পদ আর বন পুড়িয়ে লাভবান হয় জেলে-বনকর্মী। কিন্তু তাদের বিচার হয়েছে এমন নজির মেলেনা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, বিশিষ্ট পরিবেশবিদ ও গবেষক, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক নুর আলম শেখ।
রোববার ( ৫ মে) সুন্দরবনের আমুরবুনিয়ায় সুন্দবনে পরিকল্পিত অগ্নিকাণ্ড বন্ধ কর, সুন্দরবন বাচাও, বাংলাদেশ বাচাও ব্যানার নিয়ে মানববন্ধন করেন নুর আলম শেখ। মানববন্ধনে বলা হয়, মানবসৃষ্ট সুন্দরবনের পরিকল্পিত অগ্নিকান্ড বন্ধে বনবিভাগ ও সরকারকে গুরুত্ব দিতে হবে। সুন্দরবন সংরক্ষিত বনাঞ্চল হলেও আমুরবুনিয়া টহল ফাঁড়ি অঞ্চলে চোরা শিকারীসহ মানুষের অবাধ যাতায়াত রয়েছে।
গত ২৪ বছরে সুন্দরবনে ২৬ বার আগুন লাগে এবং সরকারি হিসেবে প্রায় ৭৫ একর বনভূমি ধ্বংস হয়। মুনাফালোভী মাছ ব্যবসায়ী ও অসৎ বনকর্মকর্তার যোগসাজশে এবং অদক্ষ মৌয়ালদের কারনে সুন্দরবনে বারে বারে আগুন লাগছে। এর দায়ভার বনবিভাগ কোন ভাবেই এড়াতে পারেনা। পরিবেশকর্মী, সংবাদকর্মী, গবেষক ও বিশেষজ্ঞদের মতামত উপেক্ষা এবং অতীতে সংগঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন না করার কারনেই সুন্দরবনের আমুরবুনিয়া এলাকায় চার বছর পরে আবারো অগ্নিকান্ড সংগঠিত হলো।
সুন্দরবনে পরিকল্পিত অগ্নিকান্ড বন্ধের দাবিতে আমুরবুনিয়া টহল ফাঁড়ির সামনে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), সুন্দরবন রক্ষায় আমরা ও পশুর রিভার ওয়াটারকিপারের আয়োজনে মানববন্ধনে একথা বলেন বক্তারা।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক, সুন্দরবন রক্ষায় আমরা’র সমন্বয়কারী পশুর রিভার ওয়াটারকিপার মোঃ নূর আলম শেখ। মানববন্ধন চলাকালে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পশুর রিভার ওয়াটারকিপার ভলান্টিয়ার শেখ রাসেল, স্থানীয় বাপা নেতা ওমর ফারুক, সুন্দরবন রক্ষায় আমরা’র লাকী বেগম, শহিদুল ফারাজী, মাসুদ প্রমুখ।
মানববন্ধন চলাকালে সমাবেশে বক্তারা বলেন, আমুরবুনিয়া এলাকায় দু’দিন আগে থেকে আগুন জ্বললেও বনবিভাগের উদাসীনতায় আগুন নেভানোর কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। আগুনে প্রায় ৩/৪ একর বনভূমি পুড়ে গেছে। বক্তারা বলেন বাংলাদেশের ফুঁসফুঁস সুন্দরবন রক্ষায় বনবিভাগ, স্থানীয় জনগণ, সরকারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক হতে হবে।
সুন্দরবনের মধ্যে মুনাফালোভী ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে। নীতি-নির্ধারনী মহলের কাছে সুন্দরবন আজো গুরুত্বহীন। প্রাণীর জীবন ধারক অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইডের আদান-প্রদানের মাধ্যমে সুন্দরবন স্থানীয় জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক ও সুন্দরবন রক্ষায় আমরা’র সমন্বয়কারী পশুর রিভার ওয়াটারকিপার মোঃ নূর আলম শেখ বন বিভাগের সমন্বয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির সমালোচনা করে বলেন কেবলমাত্র বন বিভাগের কর্মকর্তাদের দিয়ে তদন্ত কমিটি করলে সুন্দরবনের আমুরবুনিয়ার অগ্নিকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হবেনা।
এশিয়ার ফুঁসফুঁস সুন্দরবনের মানবসৃষ্ট অগ্নিকান্ডের রহস্য উন্মোচন এবং এই ধরনের জঘন্য কর্মকান্ডে বন্ধে বনবিভাগ ও অনান্য আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্য, পরিবেশকর্মী, সুন্দরবন গবেষক ও বিশেষজ্ঞ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিকসহ নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে।
সুন্দরবন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন বা লবণাক্ত বনাঞ্চল। বাংলাদেশ-ভারত মিলিয়ে সুন্দরবনের মোট আয়তন প্রায় ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার। সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের আয়তন ৬,৫১৭ বর্গ কিলোমিটার। খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পটুয়াখালি ও বরগুনা জেলার অংশ নিয়েই বাংলাদেশের সুন্দরবন। ভারতের অংশে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা ও উত্তর ২৪ পরগণা জেলা নিয়ে গঠিত। ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো বাংলাদেশের সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে।