ঢাকা ০২:৩৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::

হাজার বছরের স্বাক্ষী ঐতিহ্যবাহী সাগরদীঘি

মোঃ শফিকুল ইসলাম, ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) 
  • আপডেট সময় : ১৬৮ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ঐতিহ্যবাহী ও পর্যটন সম্ভাবনাময় সাগরদীঘির সৌন্দর্য এখন ধ্বংসের মুখে। অবৈধ দখল, মাছ চাষ, পানিতে পোলট্রি বর্জ্য ফেলা ও দীঘির পাড়ে বসানো হচ্ছে মুরগির হাট। সংস্কারের অভাব ও অযত্ন-অবহেলায় দিন দিন দীঘিটি তার নিজস্ব জৌলুস হারাচ্ছে। স্থানীয়রা পর্যটন সম্ভাবনাময় এই দীঘিটিকে পুনঃ সংস্কার করে এর প্রকৃত সৌন্দর্য ধরে রাখার দাবী জানান।

টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চলে ঐতিহ্যবাহী এই দীঘিটি অবস্থিত। পালবংশের সাগর পাল ঐতিহাসিক এই দীঘিটি খনন করেন। কালের সাক্ষী হয়ে আজও টিকে আছে এই দীঘিটি। তৎকালীন রাজার নাম অনুসারেই দীঘির নামকরণ হয়েছিল। দীঘি খননের পর লোহানী থেকে রাজার নাম যুক্ত করে এ অঞ্চলের নামকরণ করা হয় লোহানী সাগরদীঘি। তবে রাজার নাম অনুসারে পরবর্তী সময়ে এই অঞ্চলের পরিচিতি শুরু হয় সাগরদীঘি নামে।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, পালবংশীয় আমলে এ অঞ্চলে বিশুদ্ধ পানির সংকট ছিল। তৎকালীন পালবংশীয় রাজা সাগর পাল পানিসংকট নিরসনের উদ্যোগ নেন। এরই ধারাবাহিকতায় দীঘি খননের পরিকল্পনা করেন তিনি। দুই হাজার শ্রমিকের প্রচেষ্টায় প্রায় ৩৬ একর জায়গাজুড়ে খনন করা হয় দীঘি।

কালের বিবর্তনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় উপাসনালয় ও ব্যবসা-বাণিজ্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে লোহানী সাগরদীঘি বাজার প্রতিষ্ঠা লাভ করে। দীঘির উত্তর পাশে অবস্থিত সাগরদীঘি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কালীমন্দির, দক্ষিণে সাগরদীঘি দাখিল মাদ্রাসা ও গজনবী ঈদগাহ মাঠ, পূর্ব পাশে সাগরদীঘি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র এবং পশ্চিমে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী লোহানী সাগরদীঘি বাজার।

সাগরদীঘি থেকে সামান্য পূর্বে এর চেয়েও প্রকাণ্ড আরেকটি দীঘি আছে, যার আয়তন হবে ৪০ একর। এর নাম বন্যাদীঘি। সাগর রাজার পুত্র বনরাজ পাল দীঘিটি খনন করেছিলেন।

স্থানীয় প্রভাবশালীরা সরকারের কাছ থেকে দীঘিটি লিজ নিয়ে প্রতিবছর মাছ চাষ করে আসছে। যার ফলে মাছের খাদ্য, পোলট্রির বর্জ্যসহ বিভিন্ন কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। যার প্রভাবে দীঘির প্রাণ ক্রমান্বয়ে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। ভরে যাচ্ছে তলদেশ।

সাগরদীঘি কলেজের অধ্যক্ষ মো: নাছির উদ্দিন বলেন, সাগরদীঘি পাহাড়ি এলাকার একটি ঐতিহ্যবাহী দীঘি। এই দীঘিকে কেন্দ্র করে এখানে প্রাচিন সভ্যতা গড়ে উঠে। ঐতিহ্যবাহী এই দীঘিটি রক্ষা করা সকলের এগিয়ে আসা উচিত। পাশাপাশি সরকারের উচিত দীঘিটিকে সংস্কার করে এর ঐতিহ্য ধরে রাখা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: আবু সাঈদ বলেন, ‘সাগরদীঘি একটি ঐতিহ্যবাহী প্রচিন জনপদ। নিঃসন্দেহে এটি একটি পর্যটন সম্ভাবনাময় স্থান। উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পর্যটন কেন্দের অংশ হিসাবে ইতোমধ্যে দীঘির পশ্চিম পাড়ে একটি রেস্ট হাউজ এবং একটি বিনোদন কেন্দ্রের কাজ শুরু হয়েছে। খুব শীঘ্রই ঐতিহ্যবাহী এই দীঘিটি পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে পরিচিতি লাভ করবে।’

 

 

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

হাজার বছরের স্বাক্ষী ঐতিহ্যবাহী সাগরদীঘি

আপডেট সময় :

ঐতিহ্যবাহী ও পর্যটন সম্ভাবনাময় সাগরদীঘির সৌন্দর্য এখন ধ্বংসের মুখে। অবৈধ দখল, মাছ চাষ, পানিতে পোলট্রি বর্জ্য ফেলা ও দীঘির পাড়ে বসানো হচ্ছে মুরগির হাট। সংস্কারের অভাব ও অযত্ন-অবহেলায় দিন দিন দীঘিটি তার নিজস্ব জৌলুস হারাচ্ছে। স্থানীয়রা পর্যটন সম্ভাবনাময় এই দীঘিটিকে পুনঃ সংস্কার করে এর প্রকৃত সৌন্দর্য ধরে রাখার দাবী জানান।

টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চলে ঐতিহ্যবাহী এই দীঘিটি অবস্থিত। পালবংশের সাগর পাল ঐতিহাসিক এই দীঘিটি খনন করেন। কালের সাক্ষী হয়ে আজও টিকে আছে এই দীঘিটি। তৎকালীন রাজার নাম অনুসারেই দীঘির নামকরণ হয়েছিল। দীঘি খননের পর লোহানী থেকে রাজার নাম যুক্ত করে এ অঞ্চলের নামকরণ করা হয় লোহানী সাগরদীঘি। তবে রাজার নাম অনুসারে পরবর্তী সময়ে এই অঞ্চলের পরিচিতি শুরু হয় সাগরদীঘি নামে।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, পালবংশীয় আমলে এ অঞ্চলে বিশুদ্ধ পানির সংকট ছিল। তৎকালীন পালবংশীয় রাজা সাগর পাল পানিসংকট নিরসনের উদ্যোগ নেন। এরই ধারাবাহিকতায় দীঘি খননের পরিকল্পনা করেন তিনি। দুই হাজার শ্রমিকের প্রচেষ্টায় প্রায় ৩৬ একর জায়গাজুড়ে খনন করা হয় দীঘি।

কালের বিবর্তনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় উপাসনালয় ও ব্যবসা-বাণিজ্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে লোহানী সাগরদীঘি বাজার প্রতিষ্ঠা লাভ করে। দীঘির উত্তর পাশে অবস্থিত সাগরদীঘি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কালীমন্দির, দক্ষিণে সাগরদীঘি দাখিল মাদ্রাসা ও গজনবী ঈদগাহ মাঠ, পূর্ব পাশে সাগরদীঘি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র এবং পশ্চিমে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী লোহানী সাগরদীঘি বাজার।

সাগরদীঘি থেকে সামান্য পূর্বে এর চেয়েও প্রকাণ্ড আরেকটি দীঘি আছে, যার আয়তন হবে ৪০ একর। এর নাম বন্যাদীঘি। সাগর রাজার পুত্র বনরাজ পাল দীঘিটি খনন করেছিলেন।

স্থানীয় প্রভাবশালীরা সরকারের কাছ থেকে দীঘিটি লিজ নিয়ে প্রতিবছর মাছ চাষ করে আসছে। যার ফলে মাছের খাদ্য, পোলট্রির বর্জ্যসহ বিভিন্ন কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। যার প্রভাবে দীঘির প্রাণ ক্রমান্বয়ে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। ভরে যাচ্ছে তলদেশ।

সাগরদীঘি কলেজের অধ্যক্ষ মো: নাছির উদ্দিন বলেন, সাগরদীঘি পাহাড়ি এলাকার একটি ঐতিহ্যবাহী দীঘি। এই দীঘিকে কেন্দ্র করে এখানে প্রাচিন সভ্যতা গড়ে উঠে। ঐতিহ্যবাহী এই দীঘিটি রক্ষা করা সকলের এগিয়ে আসা উচিত। পাশাপাশি সরকারের উচিত দীঘিটিকে সংস্কার করে এর ঐতিহ্য ধরে রাখা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: আবু সাঈদ বলেন, ‘সাগরদীঘি একটি ঐতিহ্যবাহী প্রচিন জনপদ। নিঃসন্দেহে এটি একটি পর্যটন সম্ভাবনাময় স্থান। উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পর্যটন কেন্দের অংশ হিসাবে ইতোমধ্যে দীঘির পশ্চিম পাড়ে একটি রেস্ট হাউজ এবং একটি বিনোদন কেন্দ্রের কাজ শুরু হয়েছে। খুব শীঘ্রই ঐতিহ্যবাহী এই দীঘিটি পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে পরিচিতি লাভ করবে।’