ঢাকা ০৩:৩২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo নেত্রকোণায় তামাক নিয়ন্ত্রণে মতবিনিময় Logo বান্দরবান সার্বজনীন কেন্দ্রীয় দূর্গা মন্দিরের উৎসর্গ ও পঞ্চ বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা উৎসব শুরু Logo শ্রীপুর থেকে সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য চয়ন ইসলামকে গ্রেপ্তার Logo কেশবপুরের বিদ্যানন্দকাঠি ইউনিয়ন পরিষদে তালা Logo ত্রিশালে মানচিত্রের কান্না বইয়ের মোড়ক উন্মোচন Logo টিভি জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন কক্সবাজার এর আহবায়ক কমিটি গঠিত Logo জয়পুরহাটে হিমাগারে আলু সংরক্ষণে ভাড়া বৃদ্ধি-প্রতিবাদে মানববন্ধন Logo কেএম মামুন শুধু নবীনগর নয় কেন্দ্রীয় ভাবে আরো শক্তিশালী নেতা : কৃষিবিদ হাসান জারিফ তুহিন Logo চাঁপাইনবাবগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের মাঝে বিআরটিএর চেক বিতরণ Logo বাগেরহাটে সাবেক এমপি শেখ হেলাল, তন্ময়, বাদশাসহ ৩৫ জনের নামে মামলা, সাবেক এসপি কারাগারে

২৫ মার্চ: জাতীয় গণহত্যা দিবস

গণমুক্তি রিপোর্ট
  • আপডেট সময় : ০৪:৪১:০০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ মার্চ ২০২৪ ২৭১ বার পড়া হয়েছে

সংগ্রহ

দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির অপেক্ষায়

 

১৯৭১ সালের ২৫মার্চ রাতে পাকিস্তানি বর্বর বাহিনী ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালির ওপর অতর্কিতে হামলা চালায়। তারা নির্বিচারে মানুষ হত্যায় মেতে ওঠে। পৃথিবীর ইতিহাসে নৃশংস এই গণত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মেলেনি স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও।

আজ সোমবার (২৫ মার্চ) জাতীয় গণহত্যা দিবস। বাঙালি জাতি নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিন পালন করবে। এই রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পরিকল্পিতভাবে বাঙালির ওপর যেভাবে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল, যা কিনা পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম গণহত্যার নজির।

২০১৭ সালের ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে ২৫ মার্চকে জাতীয় গণহত্যা দিবস পালনের প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হবার মধ্যদিয়ে দিনটি জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। তবে জাতিসংঘ গণহত্যার স্বীকৃতি দেয়নি। এটি কেবল দুঃখজনকই নয়, বরং জাতিসংঘের চরম ব্যর্থতা ও দৈন্যতারই বহিঃপ্রকাশ।

পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্কট সম্পর্কে যে শ্বেতপত্র পাকিস্তান সরকার মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রকাশ করেছিল, তাতে ১৯৭১ সালের ১ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ রাত পর্যন্ত ১ লাখেরও বেশি মানুষের জীবননাশের কথা বলা হয়েছে।

পাকিস্তানি সেনারা কুখ্যাত অপারেশন সার্চ লাইট নাম দিয়ে নিরীহ বাঙালি সাধারণ মানুষকে হত্যা শুরু করে। তাদের এ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতা-কর্মীসহ সকল সচেতন নাগরিককে নির্বিচারে হত্যা করা।

এদিন সকালে প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো প্রেসিডেন্ট ভবনে একান্ত বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে ভুট্টো সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, পরিস্থিতি সঙ্কটজনক।

ভুট্টোর সঙ্গে বৈঠকের পরই জেনারেল ইয়াহিয়া গোপনে বৈঠক করেন পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলের সামরিক প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান, চিফ অব জেনারেল স্টাফ জেনারেল আবদুল হামিদ খান, মেজর জেনারেল মিঠঠা খান, মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীসহ উচ্চপদস্থ সেনা কর্তাদের সঙ্গে।

প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান কোনো রকম ঘোষণা ছাড়াই গোপনে সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে সরাসরি বিমানবন্দরে চলে যান। তিনি নিরাপদে পশ্চিম পাকিস্তানে নামতেই পূর্ব পাকিস্তানে তৎপর হয়ে ওঠে তার বাহিনী।

রাত সাড়ে ১১টার পর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৩২ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের অধিনায়ক কর্নেল তাজের নেতৃত্বে পাকিস্তানি সেনাদের কনভয় রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে আক্রমণ শুরু করে।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ২২তম বালুচ রেজিমেন্টের সেনারা পিলখানায় তৎকালীন ইপিআর সদর দপ্তরে ওপর হামলা চালায়। ব্যারাকে থাকা বাঙালি সেনারা চরম সীমাবদ্ধতার মধ্যেও প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু করেন।

পিলখানা ইপিআর ও রাজারবাগ পুলিশ লাইনস আক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাঁখারি বাজারসহ সমগ্র ঢাকাতে শুরু হয় প্রচণ্ড আক্রমণ। এসময় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ায় রাতের অন্ধকারে গুলি, বোমা আর ট্যাংকের আওয়াজে কেঁপে ওঠে পুরো শহর।

সেদিন পাকিস্তানি হায়েনাদের কাছ থেকে রক্ষা পায়নি রোকেয়া হলের ছাত্রীরাও। ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব ও জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, ড. মনিরুজ্জামানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ৯ জন শিক্ষককে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে চলে নৃশংসতম হত্যার সবচেয়ে বড় ঘটনাটি। এখানে হত্যাযজ্ঞ চলে রাত থেকে সকাল পর্যন্ত। যশোর, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, সৈয়দপুর, কুমিল্লা, সিলেট, চট্টগ্রামে একযোগে গণহত্যা চালায় পাকিস্তানী বাহিনী।

সে রাতে ধানমণ্ডির বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। সেসময় অনেকেই বঙ্গবন্ধুকে আত্মগোপনে যেতে বলেছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমাকে না পেলে ওরা ঢাকা জ্বালিয়ে দেবে।

গ্রেপ্তারের আগে ২৬ মার্চ (২৫ মার্চ মধ্যরাতে) বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং যে কোনো মূল্যে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানান।

বঙ্গবন্ধুর এই আহবানে সাড়া দিয়ে বাঙালি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র লড়াই শেষে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর পূর্ণ বিজয় অর্জন করে। বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

২৫ মার্চ: জাতীয় গণহত্যা দিবস

আপডেট সময় : ০৪:৪১:০০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ মার্চ ২০২৪

 

আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির অপেক্ষায়

 

১৯৭১ সালের ২৫মার্চ রাতে পাকিস্তানি বর্বর বাহিনী ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালির ওপর অতর্কিতে হামলা চালায়। তারা নির্বিচারে মানুষ হত্যায় মেতে ওঠে। পৃথিবীর ইতিহাসে নৃশংস এই গণত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মেলেনি স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও।

আজ সোমবার (২৫ মার্চ) জাতীয় গণহত্যা দিবস। বাঙালি জাতি নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিন পালন করবে। এই রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পরিকল্পিতভাবে বাঙালির ওপর যেভাবে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল, যা কিনা পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম গণহত্যার নজির।

২০১৭ সালের ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে ২৫ মার্চকে জাতীয় গণহত্যা দিবস পালনের প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হবার মধ্যদিয়ে দিনটি জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। তবে জাতিসংঘ গণহত্যার স্বীকৃতি দেয়নি। এটি কেবল দুঃখজনকই নয়, বরং জাতিসংঘের চরম ব্যর্থতা ও দৈন্যতারই বহিঃপ্রকাশ।

পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্কট সম্পর্কে যে শ্বেতপত্র পাকিস্তান সরকার মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রকাশ করেছিল, তাতে ১৯৭১ সালের ১ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ রাত পর্যন্ত ১ লাখেরও বেশি মানুষের জীবননাশের কথা বলা হয়েছে।

পাকিস্তানি সেনারা কুখ্যাত অপারেশন সার্চ লাইট নাম দিয়ে নিরীহ বাঙালি সাধারণ মানুষকে হত্যা শুরু করে। তাদের এ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতা-কর্মীসহ সকল সচেতন নাগরিককে নির্বিচারে হত্যা করা।

এদিন সকালে প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো প্রেসিডেন্ট ভবনে একান্ত বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে ভুট্টো সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, পরিস্থিতি সঙ্কটজনক।

ভুট্টোর সঙ্গে বৈঠকের পরই জেনারেল ইয়াহিয়া গোপনে বৈঠক করেন পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলের সামরিক প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান, চিফ অব জেনারেল স্টাফ জেনারেল আবদুল হামিদ খান, মেজর জেনারেল মিঠঠা খান, মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীসহ উচ্চপদস্থ সেনা কর্তাদের সঙ্গে।

প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান কোনো রকম ঘোষণা ছাড়াই গোপনে সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে সরাসরি বিমানবন্দরে চলে যান। তিনি নিরাপদে পশ্চিম পাকিস্তানে নামতেই পূর্ব পাকিস্তানে তৎপর হয়ে ওঠে তার বাহিনী।

রাত সাড়ে ১১টার পর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৩২ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের অধিনায়ক কর্নেল তাজের নেতৃত্বে পাকিস্তানি সেনাদের কনভয় রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে আক্রমণ শুরু করে।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ২২তম বালুচ রেজিমেন্টের সেনারা পিলখানায় তৎকালীন ইপিআর সদর দপ্তরে ওপর হামলা চালায়। ব্যারাকে থাকা বাঙালি সেনারা চরম সীমাবদ্ধতার মধ্যেও প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু করেন।

পিলখানা ইপিআর ও রাজারবাগ পুলিশ লাইনস আক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাঁখারি বাজারসহ সমগ্র ঢাকাতে শুরু হয় প্রচণ্ড আক্রমণ। এসময় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ায় রাতের অন্ধকারে গুলি, বোমা আর ট্যাংকের আওয়াজে কেঁপে ওঠে পুরো শহর।

সেদিন পাকিস্তানি হায়েনাদের কাছ থেকে রক্ষা পায়নি রোকেয়া হলের ছাত্রীরাও। ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব ও জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, ড. মনিরুজ্জামানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ৯ জন শিক্ষককে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে চলে নৃশংসতম হত্যার সবচেয়ে বড় ঘটনাটি। এখানে হত্যাযজ্ঞ চলে রাত থেকে সকাল পর্যন্ত। যশোর, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, সৈয়দপুর, কুমিল্লা, সিলেট, চট্টগ্রামে একযোগে গণহত্যা চালায় পাকিস্তানী বাহিনী।

সে রাতে ধানমণ্ডির বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। সেসময় অনেকেই বঙ্গবন্ধুকে আত্মগোপনে যেতে বলেছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমাকে না পেলে ওরা ঢাকা জ্বালিয়ে দেবে।

গ্রেপ্তারের আগে ২৬ মার্চ (২৫ মার্চ মধ্যরাতে) বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং যে কোনো মূল্যে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানান।

বঙ্গবন্ধুর এই আহবানে সাড়া দিয়ে বাঙালি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র লড়াই শেষে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর পূর্ণ বিজয় অর্জন করে। বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের।