ঢাকা ০১:১২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০২ এপ্রিল ২০২৫

পোশাক শিল্পের অস্থিরতা, অব্যবস্থাপনা ও প্রতিকার

অনন্ত জলিল ও প্রেস সচিবের বিতর্ক, কিছু প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন…

মাসুদ কবির
  • আপডেট সময় : ০২:২৮:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ মার্চ ২০২৫ ৭২ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

সম্প্রতি  AJ Group এর কর্নধার জনাব অনন্ত জলিল এক সংবাদ সম্মেলনে পোশাক শিল্পের অস্থিরতা, অব্যবস্থাপনা এবং তার প্রতিকার চেয়ে প্রধান উপদেস্টা বরাবর কিছু দাবী তুলে ধরেন, যা দেশের জাতীয় মিডিয়ায় গুরুত্ব সহকারে কভার করে। তার প্রতিক্রিয়ায় মাননীয় প্রধান উপদেস্টার প্রেস সচিব জনাব সফিকুল আলম তাৎক্ষনিক তার ভেরিফাইড ফেসবুক একাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন, যা অনেকটা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে পাল্টা জবাব দেয়ার মতো। পোশাক শিল্পের একজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে জনাব প্রেস সচিবের বক্তব্যের প্রতিউত্তর ও কিছু প্রাসঙ্গিক প্রশ্নের উত্তর জানা প্রয়োজন মনে করছি, যা এই শিল্পের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রেস সচিবের নিকট প্রশ্ন?

১। জনাব অনন্ত জলিল বলেছেন গত ৭ মাসে প্রায় ২৪০ টি পোশাক শিল্প কারখানা বন্ধ হয়েছে। ধরে নিলাম, তিনি সঠিক তথ্য দিতে পারেননি, যা প্রেস সচিব “মিথ্যা” বলে সরাসরি প্রত্যাক্ষান করেছেন কিন্তু সচিব মহোদয়ের কাছে কি তথ্য আছে আগস্টের পর কতটি ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়েছে? সেখানে যদি ১ টি ফ্যাক্টরি ও বন্ধ হয়ে থাকে সেটা তো তদন্ত করে দেখা উচিৎ কি কারণে এবং কার দায়ে এমনটি হয়েছে? নাকি আপনার তথ্যমতে কোন ফ্যাক্টরি গত ৭ মাসে বন্ধ হয়নি!
উল্লেখ্য, গত কয়েকমাস দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে গার্মেন্টস শিল্প কারখানা বন্ধের নিয়মিত রিপোর্ট প্রচার করা হয়েছে তার মধ্যে গত ০৫ মার্চ দৈনিক প্রথম আলো তে প্রকাশ তিন শিল্প এলাকায় সাত মাসে বন্ধ ৯৫ কারখানা । প্রথম আলো এই রিপোর্টে উল্লেখ আছে অস্থায়ীভাবে ও অনেক কারখানা বন্ধ!

এখন স্থায়ী ও অস্থায়ীভাবে মোট কতটি কারখানা বন্ধ হয়েছে সে রিপোর্ট আশা করি সরকার ও জনাব প্রেস সচিব দ্রুত জাতিকে জানাবেন।
২। জনাব সচিব বলেছেন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি ৮৪% এক্সপোর্ট করে, এটা রেমিট্যান্স হার না, ঠিক আছে। তাহলে এখানে রেমিট্যান্স হার কত % আর ফ্যাক্টরিগুলোতে কত % কর্মসংস্থান হচ্ছে? বেকার সমস্যা দূর করা, জনশক্তির দক্ষতা বৃদ্ধি ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে পোশাক শিল্পের Contribution জাতীয় অর্থনীতিতে কত ভাগ, তা আমরা জানতে চাই। রপ্তানীর হার এবং তার বিপরীতে নানা প্রতিকূলতার হার বিবেচনা করে একটি তুলনামূলক তথ্য চিত্র দাড় করানোর পর এই শিল্প নিয়ে আপনি তাচ্ছিল্য দেখাতে পারেন। তার পুর্বে করলে সরকারের পক্ষ থেকে ভুল বার্তা পৌঁছাবে।

৩। ১১% রপ্তানি বৃদ্ধির ক্রেডিট আপনি কিভাবে কোন ড্যাটার ভিত্তিতে নিচ্ছেন এখানে রপ্তানি টার্গেট কি ছিলো? সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে নাকি ব্যাহত হয়েছে? সেখানে পুর্বের কোন ব্যাক লগ ছিলো কিনা? আর এই রপ্তানি বৃদ্ধির কত% আমাদের সামস্টিক আয়? উৎপাদন ব্যয় ও দায় বৃদ্ধি করে রপ্তানি বাড়লেও কি সেটা সঠিক যথাযথ পরিসংখ্যান ও তথ্য-উপাত্ত ছাড়া মোটা দাগে ক্রেডিট নিতে গেলে তো বিপদ!!  আমার জানামতে, জুলাই-সেপ্টেম্বরের অভ্যুত্থান ও পরবর্তীতে শ্রমিক অসন্তোষের ফলে অনেক অর্ডার জমা পড়েছিলো যা পরবর্তীতে শুধু কাস্টমার ধরে রাখার জন্য এয়ার/ডিসকাউন্ট দিয়ে পন্য রপ্তানি করা হয় যা এই বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। কিন্তু এই রপ্তানীতে কারখানার কতটুকু লোকসান দিয়ে টিকে থাকলো বা ব্যাংক / সরকার তাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসছে কিনা! সেই তথ্য কি আপনার কাছে আছে জনাব সচিব আপনি নিশ্চয়ই জানেন পতিত ফ্যাসিস্ট সর্বক্ষেত্রে উন্নয়নের ক্রেডিট নিতে গিয়ে গোটা অর্থনীতিকে ফোকলা করে রসাতলে ডুবিয়েছে, সেই খাদের কিনারায় যেন আবার কেউ না পড়ে।

৪। গাজিপুর আশুলিয়ায় ৯৯% ফ্যাক্টরি ওপেন এটা খুবই আশার কথা এবং প্রশংসনীয় উদ্যোগ। শিল্প রক্ষার স্বার্থে এই ধারা যেন অব্যাহত থাকে, আইন শৃংখলা ও নিরাপত্তা যেন বিরাজমান থাকে। পাশাপাশি এই তথ্যটি জানা দরকার, এ সব এলাকায় মোট কারখানা সংখ্যা কতটি  ৯৯% এর তালিকায় কোন ক্যাটাগরির ফ্যাক্টরিকে বিবেচনা করা হয়েছে কারণ এই শিল্পে ছোট-মাঝারী-বড় সাইজের পাশাপাশি বিভিন্ন ক্যাটাগরির অনেক সহযোগী ফ্যাক্টরি আছে। তাই নির্দিস্ট % বলার আগে সকল হিসাব বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন নয় কি?

প্রেস সচিবের নিকট নিম্নের ড্যাটা/তথ্য প্রকাশের দাবী জানাই –
১। বিশ্বব্যাংকের জরিপ মতে, EASE of doing business index এ বাংলাদেশের অবস্থান ১৯০ টি দেশের মধ্যে ১৬৮?? সেই অবস্থা থেকে গত ৭ মাসে কতধাপ এগিয়েছে? এবং কি কি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে?
২। ব্যাংক ঋণ হার আমাদের উৎপাদন প্রতিযোগী দেশের তুলনায় বাংলাদেশে কতভাগ বেশী? এই হার বজায় রেখে শিল্প বিপ্লব বা শিল্পের বিকাশ অনুপ্রাণিত হবে নাকি ক্ষতিগ্রস্থ হবে? বা সুদ হার কমানোর কার্যকর কি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে?
৩। বিদ্যুত-জ্বালানীর নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহ ও মূল্যের ভিত্তিতে শিল্প-কারখানার উৎপাদন ব্যয় অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের কতভাগ বেশী দিতে হয়? লোড শেডিং এর ফলে যে লোকসান হয় তার দায় কেন শুধু উদ্যোক্তাদের বহন করতে হবে ?
৪। ব্যাংক, কাস্টমস, বন্ড, পোর্টে লাল ফিতার দৌরাত্ম ও নীতি নির্ধারনী সময় ক্ষেপনে শিল্প কারখানা কিভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ? মোট জিডিপি লক্ষ্য পূরনে এই ঘাটতির কত %  এ থেকে পরিত্রাণের সুনির্দিস্ট কি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে?
৫। শ্রমিক সংগঠন নামে যে সকল নামধারী সংগঠনকে বিদেশী মদদে এ শিল্পকে অস্থির ও ক্ষতিগ্রস্থ করছে এবং দিনিশেষে দেশের শিল্প ও উদ্যোক্তারা খেলাপী হচ্ছে তার প্রতিকারে সরকার কি উদ্যোগ বা ব্যবস্থা নিতে পেরেছে?

৬। আগস্টে বিপ্লব এবং বিপ্লব পরবর্তী নাশকতা, শ্রমিক অসন্তোষের কারণে শিল্প মালিকগন বিপুল মাধ্যমে ত্যাগ-কুরবানী করেছে, এর বিনিময়ে শিল্প রক্ষায় সরকার কি সিগনিফিকেন্ট উদ্যোগ বা ভুমিকা রেখেছে তা সবিনয়ে জানতে চাই। আন্দোলনে শহীদ, পঙ্গু-আহতদের মতো এই শিল্পে আর্থিকভাবে যারা পঙ্গু-আহত তাদের রক্ষায় কি ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে? উপরন্তু, এয়ার/ডিসকাউন্ট/ক্রয়াদেশ বাতিলের ক্ষতি সকল শিল্প মালিকদের ফোর্স লোন করতে বাধ্য করে দেশের অর্থনীতি আরো ঝুঁকিপূর্ন করে তোলা হয়েছে। এটা কি শ্রেফ অজ্ঞতা নাকি অদৃশ্য কোন অপশক্তির যোগসাজেশে হয়েছে? আর এ বিষয়ে কতটুকু এনালাইসিস বা ড্যটা আপনার কাছে আছে?

৭। মাননীয় প্রধান উপদেস্টার আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড ভ্যালু এবং সারা বিশ্বে তার পরিচিতি কাজে লাগিয়ে ঋধরৎ Fair & Ethical buying Price নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ক্রেতাদের চাপ দেয়া, আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় তথ্য উপস্থাপন করে ক্রেতাদের দ্বিচারিতা তুলে ধরে জনাব তথ্য সচিব এ দেশের সর্ববৃহৎ শিল্প ও রপ্তানি খাতকে আরো সুসংহত এবং সিকিউর করতে পারতেন। বরং আমরা নিকট অতীতে দেখেছি আপনি নানা অমূলক মন্তব্য শিল্প মালিক-শ্রমিক বিরোধে রসদ জুগিয়েছে পাশাপাশি সাধারন মানুষের কাছে এই শিল্প ও উদ্যোক্তাদের সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হয়েছে। আমরা জানতে চাই, এই বুনো উল্লাস ও শিল্পকে দেশের শ্রমিক ও সাধারান মানুষের কাছে ব্র্যান্ড ইমেজ ক্ষুন্ন করলে কে বা কারা বেনিফিশিয়ারী হয়? তা কি কখনো ভেবে দেখেছেন?

অর্থনৈতিক ঝুঁকি, অনিশ্চয়তা ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে একজন উদ্যোক্তা তার প্রতিকার চেয়ে রাস্ট্রের প্রধান অভিভাবকের কাছে অভিযোগ করতেই পারেন এবং তা আমলে নিয়ে অধিকতর মূল্যায়ন বা পর্যবেক্ষন ও করতে পারেন কিন্তু কোনরূপ তথ্য যাচাই বাছাই না করে সরাসরি “মিথ্যা” বলে খারিজ করে দেয়া স্বৈরাচারী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ, যা প্রকারান্তরে দেশী-বিদেশী চক্রান্তকারী ও সুযোগ সন্ধানীদের ষড়যন্ত্রের পথ উন্মুক্ত করে দিবে। তেমনটি হলে দেশের সর্ব বৃহৎ শিল্প খাত ই শুধু ক্ষতিগ্রস্থ হবে না, বরং ৪৫ লক্ষ শ্রমজীবি মানুষ নিরাপত্তাহীনতা এবং মৌলিক চাহিদা পূরনের সংকটে পড়বে। সু-নাগরিক হিসেবে আমাদের সকলের দায়িত্ব সঠিক সমস্যাকে চিহ্নিত করে তার জন্য যথাযথ পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নেয়া।

চার দশকের অধিক এই শিল্পের জন্য দ্রুত সংস্কার কমিশন করে একটি টেকসই প্রস্তাবনা ও গাইড লাইন তৈরি হোক, আর চাই আলাদা মন্ত্রনালয়/অভিভাবক যার মাধ্যমে এ শিল্প বিশ্ব দরবারে তার অবস্থান মজুবত করবে, দেশের অর্থনীতি ও শ্রমিকদের নিরাপত্তায় অগ্রণী ভুমিকা রাখবে। মাসুদ কবির, লেখক-গবেষক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মোটেক্স ফ্যাশন।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

পোশাক শিল্পের অস্থিরতা, অব্যবস্থাপনা ও প্রতিকার

অনন্ত জলিল ও প্রেস সচিবের বিতর্ক, কিছু প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন…

আপডেট সময় : ০২:২৮:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ মার্চ ২০২৫

 

সম্প্রতি  AJ Group এর কর্নধার জনাব অনন্ত জলিল এক সংবাদ সম্মেলনে পোশাক শিল্পের অস্থিরতা, অব্যবস্থাপনা এবং তার প্রতিকার চেয়ে প্রধান উপদেস্টা বরাবর কিছু দাবী তুলে ধরেন, যা দেশের জাতীয় মিডিয়ায় গুরুত্ব সহকারে কভার করে। তার প্রতিক্রিয়ায় মাননীয় প্রধান উপদেস্টার প্রেস সচিব জনাব সফিকুল আলম তাৎক্ষনিক তার ভেরিফাইড ফেসবুক একাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন, যা অনেকটা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে পাল্টা জবাব দেয়ার মতো। পোশাক শিল্পের একজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে জনাব প্রেস সচিবের বক্তব্যের প্রতিউত্তর ও কিছু প্রাসঙ্গিক প্রশ্নের উত্তর জানা প্রয়োজন মনে করছি, যা এই শিল্পের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রেস সচিবের নিকট প্রশ্ন?

১। জনাব অনন্ত জলিল বলেছেন গত ৭ মাসে প্রায় ২৪০ টি পোশাক শিল্প কারখানা বন্ধ হয়েছে। ধরে নিলাম, তিনি সঠিক তথ্য দিতে পারেননি, যা প্রেস সচিব “মিথ্যা” বলে সরাসরি প্রত্যাক্ষান করেছেন কিন্তু সচিব মহোদয়ের কাছে কি তথ্য আছে আগস্টের পর কতটি ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়েছে? সেখানে যদি ১ টি ফ্যাক্টরি ও বন্ধ হয়ে থাকে সেটা তো তদন্ত করে দেখা উচিৎ কি কারণে এবং কার দায়ে এমনটি হয়েছে? নাকি আপনার তথ্যমতে কোন ফ্যাক্টরি গত ৭ মাসে বন্ধ হয়নি!
উল্লেখ্য, গত কয়েকমাস দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে গার্মেন্টস শিল্প কারখানা বন্ধের নিয়মিত রিপোর্ট প্রচার করা হয়েছে তার মধ্যে গত ০৫ মার্চ দৈনিক প্রথম আলো তে প্রকাশ তিন শিল্প এলাকায় সাত মাসে বন্ধ ৯৫ কারখানা । প্রথম আলো এই রিপোর্টে উল্লেখ আছে অস্থায়ীভাবে ও অনেক কারখানা বন্ধ!

এখন স্থায়ী ও অস্থায়ীভাবে মোট কতটি কারখানা বন্ধ হয়েছে সে রিপোর্ট আশা করি সরকার ও জনাব প্রেস সচিব দ্রুত জাতিকে জানাবেন।
২। জনাব সচিব বলেছেন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি ৮৪% এক্সপোর্ট করে, এটা রেমিট্যান্স হার না, ঠিক আছে। তাহলে এখানে রেমিট্যান্স হার কত % আর ফ্যাক্টরিগুলোতে কত % কর্মসংস্থান হচ্ছে? বেকার সমস্যা দূর করা, জনশক্তির দক্ষতা বৃদ্ধি ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে পোশাক শিল্পের Contribution জাতীয় অর্থনীতিতে কত ভাগ, তা আমরা জানতে চাই। রপ্তানীর হার এবং তার বিপরীতে নানা প্রতিকূলতার হার বিবেচনা করে একটি তুলনামূলক তথ্য চিত্র দাড় করানোর পর এই শিল্প নিয়ে আপনি তাচ্ছিল্য দেখাতে পারেন। তার পুর্বে করলে সরকারের পক্ষ থেকে ভুল বার্তা পৌঁছাবে।

৩। ১১% রপ্তানি বৃদ্ধির ক্রেডিট আপনি কিভাবে কোন ড্যাটার ভিত্তিতে নিচ্ছেন এখানে রপ্তানি টার্গেট কি ছিলো? সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে নাকি ব্যাহত হয়েছে? সেখানে পুর্বের কোন ব্যাক লগ ছিলো কিনা? আর এই রপ্তানি বৃদ্ধির কত% আমাদের সামস্টিক আয়? উৎপাদন ব্যয় ও দায় বৃদ্ধি করে রপ্তানি বাড়লেও কি সেটা সঠিক যথাযথ পরিসংখ্যান ও তথ্য-উপাত্ত ছাড়া মোটা দাগে ক্রেডিট নিতে গেলে তো বিপদ!!  আমার জানামতে, জুলাই-সেপ্টেম্বরের অভ্যুত্থান ও পরবর্তীতে শ্রমিক অসন্তোষের ফলে অনেক অর্ডার জমা পড়েছিলো যা পরবর্তীতে শুধু কাস্টমার ধরে রাখার জন্য এয়ার/ডিসকাউন্ট দিয়ে পন্য রপ্তানি করা হয় যা এই বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। কিন্তু এই রপ্তানীতে কারখানার কতটুকু লোকসান দিয়ে টিকে থাকলো বা ব্যাংক / সরকার তাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসছে কিনা! সেই তথ্য কি আপনার কাছে আছে জনাব সচিব আপনি নিশ্চয়ই জানেন পতিত ফ্যাসিস্ট সর্বক্ষেত্রে উন্নয়নের ক্রেডিট নিতে গিয়ে গোটা অর্থনীতিকে ফোকলা করে রসাতলে ডুবিয়েছে, সেই খাদের কিনারায় যেন আবার কেউ না পড়ে।

৪। গাজিপুর আশুলিয়ায় ৯৯% ফ্যাক্টরি ওপেন এটা খুবই আশার কথা এবং প্রশংসনীয় উদ্যোগ। শিল্প রক্ষার স্বার্থে এই ধারা যেন অব্যাহত থাকে, আইন শৃংখলা ও নিরাপত্তা যেন বিরাজমান থাকে। পাশাপাশি এই তথ্যটি জানা দরকার, এ সব এলাকায় মোট কারখানা সংখ্যা কতটি  ৯৯% এর তালিকায় কোন ক্যাটাগরির ফ্যাক্টরিকে বিবেচনা করা হয়েছে কারণ এই শিল্পে ছোট-মাঝারী-বড় সাইজের পাশাপাশি বিভিন্ন ক্যাটাগরির অনেক সহযোগী ফ্যাক্টরি আছে। তাই নির্দিস্ট % বলার আগে সকল হিসাব বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন নয় কি?

প্রেস সচিবের নিকট নিম্নের ড্যাটা/তথ্য প্রকাশের দাবী জানাই –
১। বিশ্বব্যাংকের জরিপ মতে, EASE of doing business index এ বাংলাদেশের অবস্থান ১৯০ টি দেশের মধ্যে ১৬৮?? সেই অবস্থা থেকে গত ৭ মাসে কতধাপ এগিয়েছে? এবং কি কি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে?
২। ব্যাংক ঋণ হার আমাদের উৎপাদন প্রতিযোগী দেশের তুলনায় বাংলাদেশে কতভাগ বেশী? এই হার বজায় রেখে শিল্প বিপ্লব বা শিল্পের বিকাশ অনুপ্রাণিত হবে নাকি ক্ষতিগ্রস্থ হবে? বা সুদ হার কমানোর কার্যকর কি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে?
৩। বিদ্যুত-জ্বালানীর নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহ ও মূল্যের ভিত্তিতে শিল্প-কারখানার উৎপাদন ব্যয় অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের কতভাগ বেশী দিতে হয়? লোড শেডিং এর ফলে যে লোকসান হয় তার দায় কেন শুধু উদ্যোক্তাদের বহন করতে হবে ?
৪। ব্যাংক, কাস্টমস, বন্ড, পোর্টে লাল ফিতার দৌরাত্ম ও নীতি নির্ধারনী সময় ক্ষেপনে শিল্প কারখানা কিভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ? মোট জিডিপি লক্ষ্য পূরনে এই ঘাটতির কত %  এ থেকে পরিত্রাণের সুনির্দিস্ট কি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে?
৫। শ্রমিক সংগঠন নামে যে সকল নামধারী সংগঠনকে বিদেশী মদদে এ শিল্পকে অস্থির ও ক্ষতিগ্রস্থ করছে এবং দিনিশেষে দেশের শিল্প ও উদ্যোক্তারা খেলাপী হচ্ছে তার প্রতিকারে সরকার কি উদ্যোগ বা ব্যবস্থা নিতে পেরেছে?

৬। আগস্টে বিপ্লব এবং বিপ্লব পরবর্তী নাশকতা, শ্রমিক অসন্তোষের কারণে শিল্প মালিকগন বিপুল মাধ্যমে ত্যাগ-কুরবানী করেছে, এর বিনিময়ে শিল্প রক্ষায় সরকার কি সিগনিফিকেন্ট উদ্যোগ বা ভুমিকা রেখেছে তা সবিনয়ে জানতে চাই। আন্দোলনে শহীদ, পঙ্গু-আহতদের মতো এই শিল্পে আর্থিকভাবে যারা পঙ্গু-আহত তাদের রক্ষায় কি ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে? উপরন্তু, এয়ার/ডিসকাউন্ট/ক্রয়াদেশ বাতিলের ক্ষতি সকল শিল্প মালিকদের ফোর্স লোন করতে বাধ্য করে দেশের অর্থনীতি আরো ঝুঁকিপূর্ন করে তোলা হয়েছে। এটা কি শ্রেফ অজ্ঞতা নাকি অদৃশ্য কোন অপশক্তির যোগসাজেশে হয়েছে? আর এ বিষয়ে কতটুকু এনালাইসিস বা ড্যটা আপনার কাছে আছে?

৭। মাননীয় প্রধান উপদেস্টার আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড ভ্যালু এবং সারা বিশ্বে তার পরিচিতি কাজে লাগিয়ে ঋধরৎ Fair & Ethical buying Price নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ক্রেতাদের চাপ দেয়া, আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় তথ্য উপস্থাপন করে ক্রেতাদের দ্বিচারিতা তুলে ধরে জনাব তথ্য সচিব এ দেশের সর্ববৃহৎ শিল্প ও রপ্তানি খাতকে আরো সুসংহত এবং সিকিউর করতে পারতেন। বরং আমরা নিকট অতীতে দেখেছি আপনি নানা অমূলক মন্তব্য শিল্প মালিক-শ্রমিক বিরোধে রসদ জুগিয়েছে পাশাপাশি সাধারন মানুষের কাছে এই শিল্প ও উদ্যোক্তাদের সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হয়েছে। আমরা জানতে চাই, এই বুনো উল্লাস ও শিল্পকে দেশের শ্রমিক ও সাধারান মানুষের কাছে ব্র্যান্ড ইমেজ ক্ষুন্ন করলে কে বা কারা বেনিফিশিয়ারী হয়? তা কি কখনো ভেবে দেখেছেন?

অর্থনৈতিক ঝুঁকি, অনিশ্চয়তা ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে একজন উদ্যোক্তা তার প্রতিকার চেয়ে রাস্ট্রের প্রধান অভিভাবকের কাছে অভিযোগ করতেই পারেন এবং তা আমলে নিয়ে অধিকতর মূল্যায়ন বা পর্যবেক্ষন ও করতে পারেন কিন্তু কোনরূপ তথ্য যাচাই বাছাই না করে সরাসরি “মিথ্যা” বলে খারিজ করে দেয়া স্বৈরাচারী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ, যা প্রকারান্তরে দেশী-বিদেশী চক্রান্তকারী ও সুযোগ সন্ধানীদের ষড়যন্ত্রের পথ উন্মুক্ত করে দিবে। তেমনটি হলে দেশের সর্ব বৃহৎ শিল্প খাত ই শুধু ক্ষতিগ্রস্থ হবে না, বরং ৪৫ লক্ষ শ্রমজীবি মানুষ নিরাপত্তাহীনতা এবং মৌলিক চাহিদা পূরনের সংকটে পড়বে। সু-নাগরিক হিসেবে আমাদের সকলের দায়িত্ব সঠিক সমস্যাকে চিহ্নিত করে তার জন্য যথাযথ পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নেয়া।

চার দশকের অধিক এই শিল্পের জন্য দ্রুত সংস্কার কমিশন করে একটি টেকসই প্রস্তাবনা ও গাইড লাইন তৈরি হোক, আর চাই আলাদা মন্ত্রনালয়/অভিভাবক যার মাধ্যমে এ শিল্প বিশ্ব দরবারে তার অবস্থান মজুবত করবে, দেশের অর্থনীতি ও শ্রমিকদের নিরাপত্তায় অগ্রণী ভুমিকা রাখবে। মাসুদ কবির, লেখক-গবেষক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মোটেক্স ফ্যাশন।