বনবিভাগের উখিয়ায় সংরক্ষিত বনভুমি ক্রয় বিক্রয়
অবাধে গড়ে উঠছে দালান কোঠা
- আপডেট সময় : ৯০ বার পড়া হয়েছে
কক্সবাজারের উখিয়ায় সংরক্ষিত বনভূমি জবরদখল বাসা বাড়ির জমি হিসাবে বিক্রি হচ্ছে। সাধারণ জোত জমির মত বনভূমির জমিও চড়া দামে ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে। তিনশ টাকার স্টাম্পে দাগের পরিবর্তে চৌদ্দি দিয়ে সাধারণ জোত জমির ন্যায় বিক্রি হচ্ছে অবাধে। উখিয়ায় সংরক্ষিত বনভুমি ক্রয় বিক্রয় ; অবাধে গড়ে উঠছে দালান কোটা
এসব ভুমি খরিদের পর কাঁচা আধাপাকা বা কোথাও কোথাও বহুতল ভবন নির্মাণ হচ্ছে। এলাকা গুলো হচ্ছে- পাতাবাড়ি, লম্বাঘোনা, শৈলরঢেবা, হাঙ্গরঘোনা, হাজমিরপাড়া, বৌদ্ধমন্দির এলাকা, কুতুপালং ও হাইওয়ে সড়কের দু’পাশে দোকান, গোদামঘর সহ প্রচুর বসতির সন্ধান মিলেছে।
অভিযোগ রয়েছে, থাইনখালী থেকে উখিয়া পর্যন্ত কমপক্ষে ২০টির মত সিন্ডিকেট কাজ করছে। এসব পৃথকদল গুলো স্বস্ব বিটকর্তার নির্দেশের অধিনে থেকে নিজ নিজ এলাকায় বনভুমি হস্থান্তর বা দখল প্রক্রিয়া শেষ করে অর্থ পৌছিয়ে দেয় পদায়ন মতে সংশিলষ্ট কর্তার কাছে। কোন জায়গায় কতটাকা বাকি তাও হিসাব রাখে নোটখাতায়।
বনভূমিতে গৃহনির্মাণের মৌখিক অনুমোদন দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এ অপকর্মে বনরক্ষক, জায়গীরদার, হেডম্যানসহ তাদের নিয়োজিত লোক জড়িত। মোটরসাইকেলে চড়ে তারা বিভিন্ন স্থানে গিয়ে নির্মাণাধিন বাড়ির মালিকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে থাকে। পরে এসব টাকা ভাগাভাগি হয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে।
পরিবেশবাদী সংগঠনের জরিপ অনুযায়ী, উখিয়া সদর থেকে কুতুপালং পর্যন্ত বনভূমি বেচাকেনা এখন নিয়মিত ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। প্রতি কানি (৪০ শতক) জমির দাম উঠেছে ৪০–৫০ লাখ টাকায়। দখলদাররা মাটি বিক্রি, পাহাড় কাটা ও ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করে জমি বিক্রি করছে। এসব জমিতে টিনশেড ঘর, বহুতল ভবন নির্মাণেও কোনো বাধা নেই—শুধু বনকর্মীদের আর্থিক ‘বোঝাপড়া’ হলেই কাজ এগোয়।
ভুক্তভোগী স্থানীয় আবদুস সালাম জানান, বনকর্মীদের ম্যানেজ না করে এমনকি বাঁশের টুকরো দিয়েও বাড়ির সীমানা ঘেরা যায় না। অভিযোগ রয়েছে, তাদের সহযোগী কিছু অপসাংবাদিকও ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করে। সম্প্রতি পাতাবাড়ি এলাকায় একটি ঘর নির্মাণকালে ৪-৫টি তথাকথিত সাংবাদিকের দল একত্রে প্রায় ৭০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়।
বাস্তব চিত্র সরাসরি পরিদর্শনে দেখা গেছে, উখিয়া সদর থেকে থাইংখালী পর্যন্ত সড়কের দুপাশে শতাধিক দালানকোঠা গড়ে উঠেছে। অধিকাংশ মালিকের কোনো কাগজপত্র নেই; তারা বনকর্মীদের টাকা দিয়ে ‘বৈধতা’ নিয়েছে বলে স্বীকার করেন। অর্থ দিতে অপরাগতা জানালে তাদের নামে বন মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়।
বন বিভাগের দাবি, উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুল মন্নান বলেন, উখিয়া রেঞ্জে প্রায় ২০ হাজার হেক্টর বনভূমি রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৪ হাজার হেক্টর ভূমি রোহিঙ্গাদের বসতির জন্য সরকার বরাদ্দ দিয়েছে। ২০১৭ সালের পর রোহিঙ্গারা প্রচুর বনজ সম্পদ নষ্ট করেছে, যার আর্থিক ক্ষতি হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। বর্তমানে নিয়মিত টহল জোরদার করা হলেও জনবল সংকটের কারণে অতীতের বেহাত হওয়া বনভুমি উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছেনা।
উখিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) যারিন তাসনিম বলেন, বিপুল পরিমাণ বনভূমি দখল ও বনসম্পদ ধ্বংস অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সাত লক্ষাধিক মানুষের চাপ সামাল দেওয়া কঠিন হলেও প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গত তিন মাসে একাধিক পাহাড়ি মাটি বহনকারী ডাম্পার আটক করে জরিমানা আদায় করা হয়েছে। সম্প্রতি পশ্চিম রুমখাঁ এলাকায় অবৈধ করাতকলও উচ্ছেদ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে পরিবেশবাদী নেতা বাপা কক্সবাজার শাখার নেতা এইচএম এরশাদ বনাঞ্চল রক্ষায় জনবল বৃদ্ধিসহ দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।




















