ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের কার্যক্রম বাস্তবায়নে ‘ইলিশের উৎপাদন দ্বিগুণ’
- আপডেট সময় : ০৫:৫৮:২৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ এপ্রিল ২০২৪ ৩৩৬ বার পড়া হয়েছে
কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে জেলেদের মাঝে বাছুর বিতরণ করেন মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সেলিম উদ্দিন ও ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের পরিচালক মোল্লা এমদাদুল্যা
আমিনুল হক ভূইয়া
বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশ। সম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে ইলিশের উৎপাদন বেড়ে দ্বিগুন হয়েছে। ‘ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পে’র নানামুখী কর্মসূচী বাস্তবায়নের ফলে এখন বারো মাসই ইলিশ মেলে বাংলাদেশে। পৃথিবীর মোট উৎপাদিত ইলিশের ৮০ শতাংশের ওপরে ইলিশের উৎপাদন হয় বাংলাদেশে। অথচ ইলিশের বাড়ি বাংলাদেশে কয়েক বছর আগেও ইলিশের উৎপাদন অর্ধেকে নেমে আসে। এমন পরিস্থিতিতে ইলিশ সম্পদের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং গৌরব ফেরাতে গুচ্ছ কর্মসূচী গ্রহণ করে হাসিনা সরকার।
সম্প্রতি মুন্সিগঞ্জের পদ্মা, শরীয়তপুর, মাদারিপুর, ভেদরগঞ্জ, চাঁদপুর পর্যন্ত নদীপথে জাটকা ইলিশ সংরক্ষণ কার্যক্রম বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ে দিন রাত ঘুরে বেড়াচ্ছেন ‘ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পে’র পরিচালক মোল্লা এমদাদুল্যাহ। বড় আকারের স্পীড বোর্ড নিয়ে জাটকা সংরক্ষণে জনসচেতনতা বাড়াতে পদ্মা তীরের ঘাটে ঘাটে মানুষদের সচেতনায় কাজ করে চলেছেন। জাটকা ইলিশ সংরক্ষণ কার্যক্রমের পাশাপাশি ইলিশের অভয়ারণ্যে ছুটে যাচ্ছেন।
নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ছাড়াও তীরে নেমে এলাকাবাসীকে নিয়ে পথসভা করেন এবং জাতীয় মছ সম্পর্কে লিফলেট বিতরণ করেন। জাটকা নিধন থেকে বিরত থাকতে জাতীয় মছের বংশ বিস্তারে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। ইলিশ আমদের জাতীয় মছ, এর বংশ যতই বাড়বে, তাতে স্থানীয় মনুষই লাভবান হবেন। কারণ, দূরের কেউ এসে ইলিশ ধরে নিয়ে যাবেন না। পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর তীরে তীরে মনুষের কাছে ছুটে যান চারণ বাউলের। এই সরকারী কর্মকর্তা সম্মিলিতভাবে ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে সাধারণ মানুষকে অংশিদার হতে বলেন।
সরজমিন পরিদর্শনকালে মৎস্য অধিদপ্তরের স্পীড দেখে ছোট ছোট নৌকা নিয়ে পদ্মা-মেঘনায় জাটকা আহরণকারী জেলেরা দ্রুত পালিয়ে যায়।
ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের পরিচালক মোল্লা এমদাদুল্যা বলেন, দেখুন এক সময় বাংলাদেশের প্রায় সকল নদ-নদী এবং শাখা ও উপনদীতে প্রচুর পরিমাণ ইলিশ পাওয়া যেত। প্লাবনে নদী ছাড়াও বিল-হাওরে ইলিশ মাছ মিলতো। ৮০ দশকের পূর্বে মোট মৎস্য উৎপাদনের ২০ শতাংশ ছিল ইলিশের অবদান। দেশের গুরুত্বপূর্ণ এ সম্পদ ৮০ দশকে সংকটে পড়ে। ২০০২-০৩ অর্থ বছরে ইলিশের উৎপাদন নেমে আসে মাত্র ৮ শতাংশে (১.৯৯ মে.টন)।
মেল্লা এমদাদুল্যা বলেন, ২০০৯ সাল থেকে পরিকল্পিতভাবে ইলিশ সম্পদ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করে মৎস্য অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের পরিকল্পিত কার্যক্রমের আওয়াতায় ইলিশের উৎপাদন বাড়তে থাকে। ইলিশের উৎপাদন দ্বিগুণের লক্ষ্যে ২০২০ সালে ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। সেই থেকে মা ইলিশ ও জাটকা রক্ষায় সামাজিকভাবে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ইলিশ আহরণকারী মৎস্যজীবীসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে অভয়াশ্রম ও নদী তীরবর্তী এলাকায় সচেতনতামুলক কার্যক্রম বাস্তবায়নে সভা, মাইকিং, প্রচার, পোস্টার ও লিফলেট বিতরণসহ নানামুখী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছে।
যার সুফল হিসাবে বর্তমানে বাংলাদেশে ইলিশের উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৭১ হাজার মেট্রিক টনে দাঁড়িয়েছে। ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের পরিচালক বলেন, জাটকা ও মা ইলিশ রক্ষায় সরকারের নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে নির্ধারিত জেলেদের খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। বহু পরিবারকে বকনা বাছুর, জালসহ বিভিন্ন রকমের উপকরণ সহায়তা দিয়েছে সরকার। সরকারের এই উদ্যোগের ফলে বহু মৎস্যজীবী এরই মধ্যে সাবলম্বি হয়েছে। বাংলাদেশে মোট মৎস্য উৎপাদনে ইলিশের অবদান সর্বোচ্চ (প্রায় ১২.২৩ ভাগ) এবং জিডিপিতে অবদান ১ শতাংশ এর বেশী। তবে এটি দিন দিন বাড়তির দিকে। উপকূলীয় মৎস্যজীবীদের জীবিকার প্রধান উৎস ইলিশ। প্রায় ৬ লক্ষ জেলে ইলিশ আহরণে সরাসরি নিয়োজিত এবং ২০ থেকে ২৫ লক্ষ মৎস্যজীবী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত। বিশ্বে ইলিশ আহরণকারী ১১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। সারা বিশ্বের মোট উৎপাদিত ইলিশের প্রায় ৮০ শতাংশ এ দেশের নদ-নদী ও সমুদ্র থেকে আহরিত হয় ।