ঈদের ছুটি শেষে স্বস্তিতেই ফিরছেন কর্মজীবি মানুষ

- আপডেট সময় : ০৪:৫৬:৪৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ জুন ২০২৫ ৬০ বার পড়া হয়েছে
ঈদের ছুটির শেষ দিকে এসে রাজধানীতে ফিরতে শুরু করেছেন কর্মজীবী মানুষ। গতকাল ১০ জুন মঙ্গলবার ঈদের চতুর্থ দিন সকালে রাজধানীর বিভিন্ন বাস টার্মিনাল ও রেলওয়ে স্টেশনে দেখা গেছে, ফিরতি মানুষের ঢল। তবে কোথাও তেমন বিড়ম্বনা বা বিশৃঙ্খলা নেই। দূরপাল্লার বাসগুলো নির্ধারিত সময়েই ঢাকায় পৌঁছাচ্ছে, ট্রেনগুলোও সময়মতো স্টেশনে প্রবেশ করছে। তবে এবার ফিরতি পথেও ভাড়া নিয়ে বাড়াবাড়ি আছে। আগেভাগেই টিকিট বুক করায় ঝামেলা হয়নি, তবে বেশি টাকা দেওয়া লাগছে। এদিকে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, সকাল থেকে ট্রেনগুলো ঢাকায় ফিরছে। ট্রেনে যাত্রীদের চাপ আছে, তবে অতিরিক্ত নয়। হয়তো আগামী বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবারের ট্রেনগুলোতে চাপ বাড়বে। সরকারি ছুটি আগামী ১৪ জুন পর্যন্ত হওয়ায় এখন পর্যন্ত রাজধানীমুখী মানুষের ফিরতি যাত্রা রয়েছে স্বস্তিকর ও শৃঙ্খলাপূর্ণ।
রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনালে আগত যাত্রীরা জানান, তারা নির্বিঘেœ ঢাকায় পৌঁছাতে পারছেন। পথে বড় কোনো যানজট নেই। ঢাকায় প্রবেশের গাজীপুর, আমিনবাজার, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টেও যান চলাচল ছিল স্বাভাবিক। সাধারণত ঈদের পরদিন ও তৃতীয় দিন থেকেই ঢাকায় লোকজন ফিরতে শুরু করে। তবে এবার ঈদ পরবর্তী ছুটি লম্বা হওয়ায় এখনো চাপ বাড়েনি।
জামালপুরের সরিষাবাড়ী থেকে রাতে বাসে ঢাকায় এসে তিনি বলেন, ভাবছিলাম যাওয়ার সময় যেমন ভোগান্তি হয়েছিল, ফেরার সময় হয়তো তার কিছুটা হলেও হবে। কিন্তু সবকিছু খুব স্বাভাবিক ছিল। এমনকি আমাদের বাসটা নির্ধারিত সময়ের আগেই ঢাকায় এসে গেছে। পুরো পথে কোথাও কোনো যানজট চোখে পড়েনি।
নেত্রকোনার মদন থেকে সকালে মহাখালী আসেন বেসরকারি চাকরিজীবী ফাহমিদা বেগম। তিনি বলেন, বাড়িতে ছিলাম ৫ দিন। ঝামেলামুক্তভাবে আসার জন্য আগে আগেই ফিরলাম, যাতে ঢাকায়ও কিছুদিন থাকা যায়। ২ দিন পর থেকে আবার ঢাকায় ফেরার চাপ শুরু হয়ে যাবে। তখন ঢাকায় আসতে যাওয়ার সময়ের মতো ভোগান্তি হবে। সাধারণত ঈদের পর রাস্তায় অস্থিরতা থাকে, কিন্তু এবার দেখলাম পরিস্থিতি শান্ত।
আন্তঃজেলা বাসের চালক মাকসুদ বলেন, বাড়ি যাওয়ার সময় ঈদের আগে চাপ অনেক বেশি ছিল, কারণ বেশিরভাগ মানুষ একই সময়ে রওনা দেন। কিন্তু ফেরার সময় মানুষ ধীরে ধীরে ফিরছেন বলে সড়কে চাপটা নেই। এতে করে এখনও কোথাও ভোগান্তি হয়নি।
এদিকে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের কর্মকর্তা জানান, সকাল থেকে ট্রেনগুলো ঢাকায় ফিরছে। ট্রেনে যাত্রীদের চাপ আছে, তবে অতিরিক্ত নয়। হয়তো আগামী বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবারের ট্রেনগুলোতে চাপ বাড়বে। সরকারি ছুটি আগামী ১৪ জুন পর্যন্ত হওয়ায় এখন পর্যন্ত রাজধানীমুখী যাত্রা রয়েছে স্বস্তিকর ও শৃঙ্খলাপূর্ণ।
আমাদের টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, ঈদের ছুটি শেষে রাজধানীতে ফিরতে শুরু করেছেন কর্মজীবী মানুষ। অনেকে ভোগান্তি এড়াতে সরকারি ছুটি শেষ হওয়ার আগেই ফিরছেন ঢাকায়। এতে ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে। গতকাল মঙ্গলবার টাঙ্গাইল মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
এদিকে যমুনা সেতুর ওপর দিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ২৩ হাজার ৮০৩টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এতে টোল আদায় হয়েছে ১ কোটি ৪৯ লাখ ২০ হাজার ৩শ টাকা। যমুনা সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, রোববার রাত ১২টা থেকে সোমবার রাত ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ২৩ হাজার ৮০৩টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গগামী ১২ হাজার ৫৯টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এতে টোল আদায় হয়েছে ৭৫ লাখ ৬৪ হাজার ২৫০টাকা।
অপরদিকে ঢাকাগামী ১১ হাজার ৭৪৪টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এর বিপরীত টোল আদায় হয়েছে ৭৩ লাখ ৫৬ হাজার ৫০ টাকা। গত মঙ্গলবার গণপরিবহনের পাশাপাশি ব্যক্তিগত গাড়ি প্রাইভেট কার নিয়ে রাজধানীতে মানুষ যাচ্ছেন। তবে কোথায় কোনো যানজটের সৃষ্টি হয়নি। মহাসড়ক অনেকটাই ফাঁকা। টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, ঢাকামুখী যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ সদস্যরা কাজ করছেন। নির্বিঘেœই মানুষ ঢাকায় যেতে পারছেন।
অন্যদিকে দক্ষিণের মানুষ ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছে। এতে করে ভিড় বাড়ছে লঞ্চে। ১৪ জুন ছুট শেষ হলেও ঝামেলা এড়াতে এর আগেই কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছে দক্ষিণের মানুষ। বিশেষ করে দুই দিন ধরে বরিশাল লঞ্চ টার্মিনালে মানুষের ভিড় দেখা গেছে। আগামী চার দিন পর্যায়ক্রমে ভিড় আরও বাড়বে বলে মনে করছে নদী বন্দর কর্তৃপক্ষ।
বরিশাল নদী বন্দর কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, মঙ্গলবার বরিশাল থেকে চারটি লঞ্চ যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাচ্ছে। যাত্রীর চাপ বাড়লে লঞ্চ বাড়ানো হবে। এখন পর্যন্ত খুব বেশি চাপ লক্ষ্যনীয় নয়। তবে আশা করছি ছুটি শেষ হয়ে আসতে আসতে যাত্রীর চাপ আরও বাড়তে থাকবে।এমভি পারাবত ১৮ লঞ্চের যাত্রী হেনোয়ারা বেগম বলেন, আরও কিছুদিন বাড়িতে থাকতে পারতাম। ছুটির শেষ সময়ে মাত্রাতিরিক্ত ভিড় থাকায় যেতে কষ্ট হয়। তাই আগেভাগে চলে যাচ্ছি।
এমভি সুন্দরবন ১১ লঞ্চের যাত্রী জসিম উদ্দিন বলেন, আগে থেকেই ১০ তারিখের টিকিট নিয়েছিলাম। ভিড় বাড়ার আগেই কর্মস্থলে ফিরছি। স্বাভাবিক ভিড়ে লঞ্চ জার্নি ভালো লাগছে।
এমভি ফারহান লঞ্চের যাত্রী মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, লঞ্চে যাত্রীর চাপ নেই বললেই চলে। হয়তো ছুটি শেষের দুই দিন (শুক্রবার ও শনিবার) প্রচ- ভিড় হতে পারে। তবে আগের মতো আর হাজার হাজার যাত্রী হওয়ার সুযোগ নাই। পদ্মা সেতু হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ঈদযাত্রা আরামদায়ক করে দিয়েছে।
সুন্দরবন নেভিগেশনের পরিচালক আকতার হোসেন আকেজ বলেন, ঈদ উপলক্ষ্যে কিছু যাত্রী লঞ্চে যাতায়াত করছে। তা ছাড়া সাড়া বছরই যাত্রী সংকটে চলতে হচ্ছে। লঞ্চ ব্যবসা যাত্রী সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
বরিশাল সদর নৌ-থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সনাতন চন্দ্র সরকার বলেন, নদী বন্দরে যাত্রীদের নিরাপত্তায় নৌপুলিশ সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে। এখন পর্যন্ত অতিরিক্ত যাত্রী চাপ দেখা যাচ্ছে না। যাত্রীর চাপ বাড়লে ফোর্স বাড়ানো হবে। উল্লেখ্য, ঈদ উপলক্ষে লঞ্চের স্পেশাল সার্ভিস ৩ জুন শুরু হয়ে ১৪ জুন পর্যন্ত চলবে।