ঢাকা ০৩:১২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০২ এপ্রিল ২০২৫

কর্মজীবনে ছুটি যাদের সোনার হরিণ

বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ১০:৫১:১৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩১ মার্চ ২০২৫ ৩২ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মুসলিম বিশ্বে ঈদ সবার সবার জন্য সমান। ঈদ প্রাণের উৎসব হলেও এমন কিছু পেশা আছে। যেখানে ছুটি পাওয়া কঠিন। তাদের জন্য ছুটি যেন সোনার হরিণ। যাদের ঈদসহ জাতীয় ফেষ্টিভেল দিবসে মেলে না ছুটি পেশাগত কারণে। ব্যস্ত সময় কাটান কর্মস্থলেই। উৎসবের দিনে তারা পান না আপনজনের সান্নিধ্য। কর্মস্থলেই তারা ঈদ উদযাপন করতে বাধ্য হয়। তবে এবার ঈদের ছুটি টানা ৯ দিন। জরুরি পরিষেবা খাতে কর্মরতরা এই ছুটির আওতার বাইরে থাকবেন। বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, সাংবাদিক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, বন্দর, চিকিৎসাসেবা, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট পরিষেবা, ডাকসেবা এবং এ সংক্রান্ত যানবাহন ও কর্মীরা তাদের দায়িত্ব পালন করছেন।
এমনই একজন সুমি আক্তার। পেশায় পুলিশ সার্জেন্ট। বাসা বাড়ি ও আপনজনদের ছেড়ে ঈদুল ফিতরের ছুটি কাটাচ্ছেন রাস্তায়। শুধু সুমি নয়, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকা- প্রতিরোধে শুধু রাজধানীতেই অন্তত ১৫ হাজার পুলিশ তৎপর রয়েছে। ইতোমধ্যে ২৮ মার্চ থেকে আগামী ৫ এপ্রিল পযন্ত ঈদের ছুটি চলমান রয়েছে। এ সময় স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে রাজধানী ছেড়ে যাবে বিপুল সংখ্যক মানুষ। আর তাদের রেখে যাওয়া বাসাবাড়ি ও বিতান, সড়ক, প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার কাজে থাকবেন পুলিশ সদস্যরা, এমনকি ঈদের দিনও। পুলিশ সার্জেন্ট সুমি তার অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে বলেন, ‘ঈদের সময় ছুটি না পেলে মন খারাপ হওয়াটা স্বাভাবিক। বাড়ির সবাই অপেক্ষা করে থাকে একসঙ্গে ঈদ করার জন্য। ট্রেনিং শেষ করে চাকরিতে যোগদানের পর এটিই ছিল সুমির প্রথম ঈদ। কষ্ট লাগছে যে, বাড়ি যাওয়া হয়নি। কিন্তু এটাও ভালো লাগছে যে, নিজে কষ্ট সহ্য করে হলেও মানুষকে সেবা দিতে পারছেন তিনি। এত বড় পবিত্র দায়িত্ব পালন করার মতো সৌভাগ্য তো সবার হয় না। সমির কলিগরাই এখন খুব আপন হয়ে গেছেন, এককথায় একটা পরিবারের মতোই। নানা অনিয়মের মধ্য দিয়ে তারা প্রতিদিন অমানবিক পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। মানুষ যাতে বাসায় গিয়ে ইফতার করতে পারে। এর জন্য যানজট নিরসনে রাস্তায় ইফতার করেন তারা। তাই দিনশেষে এটাই তার চাওয়া, তাদের এ পরিশ্রমে সাধারণ জনগণ যদি একটু স্বস্তি পান এবং সহযোগিতা করেন, তা হলে তাদের এ কষ্ট সার্থক হতো সবার।
এছাড়া যারা হাসপাতালে চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত আছেন তারা কোনোও ঈদে ছুটি ভোগ করতে পারছেন না। ঈদুল ফিতরের ছুটিতে দেশের হাসপাতালগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন চিকিৎসাসেবা চালু রাখতে ১৬ দফা নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নির্দেশনায় বলা হয়, জরুরি বিভাগে প্রয়োজনীয়সংখ্যক চিকিৎসকের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে বেশ কিছু চিকিৎসককে সদা তৎপর থাকতেই হবে এ সময়। এ রকম সেবা বেশ অনেক বছর ধরেই দিয়ে আসছেন ডা. নজরুল ইসলাম। তিনি আনোয়ার খান মডার্ন মেডিক্যাল হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক।
তিনি বলেন, চিকিৎসকদের জীবন সব সময় পরিবার আর কর্মস্থলের দায়িত্ব। এই দোটানায় কাটে তাদের দিন। যে কোনো উৎসব, যেমনÑ ঈদে এই দোটানা আরও বেড়ে যায়। যখন পরিবারের মানুষ আর বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে সবাই ঈদের খুশি ঘোরাফেরায় ব্যস্ত, তখন চিকিৎসকরা সেই আনন্দ উপভোগ না করে চিকিৎসকদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে হয়। ঝকঝকে নতুন পোশাকের বদলে গায়ে ওঠে সাদা অ্যাপ্রন। ঈদের সময় হাসপাতালে রুটিন রোগী কম থাকলেও মুমূর্ষু রোগীদের প্রয়োজন তো ঈদ বা কোনো ছুটিতে থেমে থাকে না। তাই পরিবার-পরিজন রেখে কর্তব্য পালনে ছুটে আসেন কর্মস্থলে। কিন্তু মনকে কি মানানো যায়? হাসপাতালে আসার সময় হয়তো ছোট শিশুটির চোখের জল দেখতে হয়েছে, পরিবারের অন্য সদস্যরাও মুখ ভার করেছে। ডিউটিতে আসার আগে রাতে অথবা খুব সকালে হয়তো রান্নাবান্নার আয়োজন করতে হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সঙ্গী অথবা পরিবারের অন্য সদস্যদের সমর্থনটা খুবই দরকার। ঈদের সময় সহকর্মীদের সঙ্গে ডিউটি ভাগাভাগি করে নিতে হয়। দিনের শেষে কর্মস্থলে সব চিকিৎসক, নার্স আর অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী মিলে যেন আরও একটি পরিবার হয়ে যায়। সেখানেও ছোট পরিসরে ঈদের আনন্দ আসে। চিকিৎসকদের সব আক্ষেপ লাঘব হয় যখন রোগী সুস্থ হয়ে ওঠে, রোগীর সুস্থতাই তখন তাদের ঈদের আনন্দ।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

কর্মজীবনে ছুটি যাদের সোনার হরিণ

আপডেট সময় : ১০:৫১:১৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩১ মার্চ ২০২৫

মুসলিম বিশ্বে ঈদ সবার সবার জন্য সমান। ঈদ প্রাণের উৎসব হলেও এমন কিছু পেশা আছে। যেখানে ছুটি পাওয়া কঠিন। তাদের জন্য ছুটি যেন সোনার হরিণ। যাদের ঈদসহ জাতীয় ফেষ্টিভেল দিবসে মেলে না ছুটি পেশাগত কারণে। ব্যস্ত সময় কাটান কর্মস্থলেই। উৎসবের দিনে তারা পান না আপনজনের সান্নিধ্য। কর্মস্থলেই তারা ঈদ উদযাপন করতে বাধ্য হয়। তবে এবার ঈদের ছুটি টানা ৯ দিন। জরুরি পরিষেবা খাতে কর্মরতরা এই ছুটির আওতার বাইরে থাকবেন। বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, সাংবাদিক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, বন্দর, চিকিৎসাসেবা, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট পরিষেবা, ডাকসেবা এবং এ সংক্রান্ত যানবাহন ও কর্মীরা তাদের দায়িত্ব পালন করছেন।
এমনই একজন সুমি আক্তার। পেশায় পুলিশ সার্জেন্ট। বাসা বাড়ি ও আপনজনদের ছেড়ে ঈদুল ফিতরের ছুটি কাটাচ্ছেন রাস্তায়। শুধু সুমি নয়, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকা- প্রতিরোধে শুধু রাজধানীতেই অন্তত ১৫ হাজার পুলিশ তৎপর রয়েছে। ইতোমধ্যে ২৮ মার্চ থেকে আগামী ৫ এপ্রিল পযন্ত ঈদের ছুটি চলমান রয়েছে। এ সময় স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে রাজধানী ছেড়ে যাবে বিপুল সংখ্যক মানুষ। আর তাদের রেখে যাওয়া বাসাবাড়ি ও বিতান, সড়ক, প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার কাজে থাকবেন পুলিশ সদস্যরা, এমনকি ঈদের দিনও। পুলিশ সার্জেন্ট সুমি তার অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে বলেন, ‘ঈদের সময় ছুটি না পেলে মন খারাপ হওয়াটা স্বাভাবিক। বাড়ির সবাই অপেক্ষা করে থাকে একসঙ্গে ঈদ করার জন্য। ট্রেনিং শেষ করে চাকরিতে যোগদানের পর এটিই ছিল সুমির প্রথম ঈদ। কষ্ট লাগছে যে, বাড়ি যাওয়া হয়নি। কিন্তু এটাও ভালো লাগছে যে, নিজে কষ্ট সহ্য করে হলেও মানুষকে সেবা দিতে পারছেন তিনি। এত বড় পবিত্র দায়িত্ব পালন করার মতো সৌভাগ্য তো সবার হয় না। সমির কলিগরাই এখন খুব আপন হয়ে গেছেন, এককথায় একটা পরিবারের মতোই। নানা অনিয়মের মধ্য দিয়ে তারা প্রতিদিন অমানবিক পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। মানুষ যাতে বাসায় গিয়ে ইফতার করতে পারে। এর জন্য যানজট নিরসনে রাস্তায় ইফতার করেন তারা। তাই দিনশেষে এটাই তার চাওয়া, তাদের এ পরিশ্রমে সাধারণ জনগণ যদি একটু স্বস্তি পান এবং সহযোগিতা করেন, তা হলে তাদের এ কষ্ট সার্থক হতো সবার।
এছাড়া যারা হাসপাতালে চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত আছেন তারা কোনোও ঈদে ছুটি ভোগ করতে পারছেন না। ঈদুল ফিতরের ছুটিতে দেশের হাসপাতালগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন চিকিৎসাসেবা চালু রাখতে ১৬ দফা নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নির্দেশনায় বলা হয়, জরুরি বিভাগে প্রয়োজনীয়সংখ্যক চিকিৎসকের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে বেশ কিছু চিকিৎসককে সদা তৎপর থাকতেই হবে এ সময়। এ রকম সেবা বেশ অনেক বছর ধরেই দিয়ে আসছেন ডা. নজরুল ইসলাম। তিনি আনোয়ার খান মডার্ন মেডিক্যাল হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক।
তিনি বলেন, চিকিৎসকদের জীবন সব সময় পরিবার আর কর্মস্থলের দায়িত্ব। এই দোটানায় কাটে তাদের দিন। যে কোনো উৎসব, যেমনÑ ঈদে এই দোটানা আরও বেড়ে যায়। যখন পরিবারের মানুষ আর বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে সবাই ঈদের খুশি ঘোরাফেরায় ব্যস্ত, তখন চিকিৎসকরা সেই আনন্দ উপভোগ না করে চিকিৎসকদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে হয়। ঝকঝকে নতুন পোশাকের বদলে গায়ে ওঠে সাদা অ্যাপ্রন। ঈদের সময় হাসপাতালে রুটিন রোগী কম থাকলেও মুমূর্ষু রোগীদের প্রয়োজন তো ঈদ বা কোনো ছুটিতে থেমে থাকে না। তাই পরিবার-পরিজন রেখে কর্তব্য পালনে ছুটে আসেন কর্মস্থলে। কিন্তু মনকে কি মানানো যায়? হাসপাতালে আসার সময় হয়তো ছোট শিশুটির চোখের জল দেখতে হয়েছে, পরিবারের অন্য সদস্যরাও মুখ ভার করেছে। ডিউটিতে আসার আগে রাতে অথবা খুব সকালে হয়তো রান্নাবান্নার আয়োজন করতে হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সঙ্গী অথবা পরিবারের অন্য সদস্যদের সমর্থনটা খুবই দরকার। ঈদের সময় সহকর্মীদের সঙ্গে ডিউটি ভাগাভাগি করে নিতে হয়। দিনের শেষে কর্মস্থলে সব চিকিৎসক, নার্স আর অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী মিলে যেন আরও একটি পরিবার হয়ে যায়। সেখানেও ছোট পরিসরে ঈদের আনন্দ আসে। চিকিৎসকদের সব আক্ষেপ লাঘব হয় যখন রোগী সুস্থ হয়ে ওঠে, রোগীর সুস্থতাই তখন তাদের ঈদের আনন্দ।