কাজীর গরু কেতাবে গোয়ালে নেই

- আপডেট সময় : ৪৪ বার পড়া হয়েছে
একটু বৃষ্টিতেই ডুবে যায় রাজধানী। জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় নগরীর বিভিন্ন সড়কে। নগরপিতা থেকে প্রশাসক সব আমলেই আছে জলাবদ্ধতা, এ নিয়ে রাজধানীবাসীর ভোগান্তি যেন নিয়তিতে পরিনত হয়েছে। নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে আশির দশকের পর থেকে এ পর্যন্ত নেয়া হয়েছে প্রায় ৬টি মাস্টারপ্ল্যান। এর কোনটিই এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন করা হয়নি। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের অবহেলায় রয়ে গেছে জলাবদ্ধতা।
ঢাকার জলাবদ্ধতার দায়-দায়িত্ব এখন সিটি করপোরেশনকেই নিতে হবে বলে মন্তব্য করেন নগর পরিকল্পনাবিদ আকতার মাহমুদ। তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে কিছু নিয়মিত ও ছোট কাজ আছে, যেমন খাল ও নালা পরিষ্কার করা। এটি জলাবদ্ধতা নিরসনের একেবারে প্রাথমিক কাজ। সিটি করপোরেশন এটুকুই করছে। ঢাকার জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানে তাদের উদ্যোগ এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান নয়। জলাবদ্ধতা দূর করতে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত বিবেচনা করে সেভাবে ড্রেনেজ (নালা) ব্যবস্থাপনা তৈরি করতে হবে। কিন্তু বিগত বছরগুলোতে এর কিছুই হয়নি।
মাত্র দুই-তিন ঘণ্টার বৃষ্টি, আর এতেই ডুবে যায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অধীনে থাকা নিউমার্কেট এলাকা।
১৯৮৮ সালের এক প্রজ্ঞাপনে ঢাকা মহানগরীর বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসাকে দেয়া হয়। তখন থেকে জলাবদ্ধতা নিরসনের অংশ হিসেবে ঢাকা ওয়াসা ২৬টি খাল এবং ৩৮৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের নালা দেখভাল করতো।
২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর, ওয়াসার অধীনে থাকা নালা ও খাল ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করে সংস্থাটি। বারবার অভিভাবক পরিবর্তন হলেও রাজধানীর জলাবদ্ধতার কোনো পরিবর্তন হয়নি। চলতি বছর বৃষ্টিতে দক্ষিণ সিটির যেসব এলাকাগুলোতে সবচেয়ে বেশি জলাবদ্ধতা হচ্ছে। এরমধ্যে নিউমার্কেট, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট এবং পুরান ঢাকার আগা সাদেক সড়ক অন্যতম। নায়েম সড়কের বাসিন্দারা জানান, বৃষ্টি হলে পানি সরে যেতে সময় লাগে। আগের তুলনায় এখন আরও ধীরে পানি নিষ্কাশিত হয়। সমস্যার সমাধানে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ আশা করছে এলাকাবাসী।
এদিকে ভারী বৃষ্টিতেও ঢাকায় যাতে জলাবদ্ধতা না হয়, সে জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন গত চার বছরে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে খরচ করেছে প্রায় ৩৬০ কোটি টাকা। দক্ষিণ সিটির প্রকৌশল বিভাগ সূত্র এটি নিশ্চিত করেছে। অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটির প্রকৌশল বিভাগ বলছে, জলাবদ্ধতা নিরসনে চার বছরে খরচ করা হয়েছে প্রায় ৩৭০ কোটি টাকা। দুই সিটির প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, আগের চেয়ে ঢাকার জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। আরও উন্নতির জন্য মানুষকেও সচেতন হতে হবে। কারণ, পলিথিনজাতীয় বর্জ্য নির্বিচার নর্দমা ও খালে ফেলা হয়।
এমন পরিস্থিতিতে কর্মকর্তারা বলছেন, রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে আশির দশকের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৬টি মাস্টারপ্ল্যান নেয়া হয়েছে। কিন্তু এর কোনোটিই এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন করেনি ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন। ফলে জলাবদ্ধতার সমস্যা রয়েই গেছে।
নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আকতার মাহমুদ বলেন, এখানে শুধুমাত্র সিজন্যাল কাজ করা হয়। এ কাজগুলো দিয়ে জলাবদ্ধতার সমস্যা দূর করা সম্ভব না। সমস্যা দূর করতে আরও ইনভেস্টমেন্ট প্রয়োজন। তবে মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে প্রশ্ন করেও সদুত্তর মেলেনি সিটি কর্পোরেশন থেকে। নানা পরিকল্পনার কথা বলেই দায় সারলো সংস্থাটি।
ডিএসসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপক এয়ার কমডোর মো. মাহাবুবুর রহমান তালুকদার বলেন, আমাদের সমন্বিত যে কাজ আছে এগুলো এখন করা হচ্ছে। আমাদের পানির আউটলেট না বাড়লে ফ্লো বাড়বে না। তাই বুড়িগঙ্গার সাইডে আউটলেট ক্লিয়ার করার চেষ্টা করছি।
বিগত সময়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন চারটি খালের সৌন্দর্যবর্ধনে ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে ‘খাল পুনরুদ্ধার, সংস্কার ও নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টি’ শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদন পায়। ৮৯৮ কোটি টাকার এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২০২৭ সালের জুনে। ঠিকমতো কাজ শুরু হওয়ার আগেই ২১ মাস পেরিয়ে গেছে। এই সময়ে সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ এসব খাল থেকে বর্জ্যও প্রত্যাশিত মাত্রায় অপসারণ করেনি।