ঢাকা ০২:৩৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫

গ্যাস ও বায়ুদূষণ রোধে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা

স্টাফ রিপোর্টার
  • আপডেট সময় : ০৯:৩২:২৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫ ১০ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 বাংলাদেশে গ্যাস সরবরাহ নিরাপত্তা জোরদার এবং বায়ুমান উন্নয়নে দুটি প্রকল্পে মোট ৬৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা অনুমোদন করেছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালনা পর্ষদ এই অর্থায়নের অনুমোদন দেয়

বাংলাদেশে গ্যাস সরবরাহ নিরাপত্তা জোরদার এবং বায়ুমান উন্নয়নে দুটি প্রকল্পে মোট ৬৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা অনুমোদন করেছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালনা পর্ষদ বুধবার এই অর্থায়নের অনুমোদন দেয়।
বিশ্বব্যাংকের অন্তর্বর্তীকালীন কান্ট্রি ডিরেক্টর গেইল মার্টিন বলেন, ‘জ্বালানি নিরাপত্তা ও বায়ু মান উন্নয়ন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রকল্পদ্বয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।’
প্রথম প্রকল্প ‘এনার্জি সেক্টর সিকিউরিটি এনহান্সমেন্ট’ এর আওতায় পেট্রোবাংলার জন্য সাশ্রয়ী অর্থায়নের সুযোগ তৈরি করা হবে। ৩৫০ মিলিয়ন ডলারের এই প্রকল্পটি একটি আইডিএ গ্যারান্টির মাধ্যমে সাত বছরে ২.১ বিলিয়ন ডলার বেসরকারি পুঁজি সংগ্রহে সহায়তা করবে, যা তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির জন্য ব্যবহৃত হবে।
বর্তমানে দেশের মোট গ্যাস ব্যবহারের এক-চতুর্থাংশ এলএনজি আমদানি নির্ভর, যার ৪২ শতাংশই বিদ্যুৎ খাতে ব্যবহার হয়। তাই গ্যাস সংকট বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত করে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। নতুন এই প্রকল্পের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে এলএনজি আমদানিতে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও কার্যকর পেমেন্ট ব্যবস্থার সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।
প্রকল্পটির টিম লিডার ও বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ওলায়িনকা এডেবিরি বলেন, এই উদ্যোগ শিল্প ও সাধারণ জনগণের জন্য নির্ভরযোগ্য ও সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে। এটি অর্থনীতির টেকসই প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে।
দ্বিতীয় প্রকল্প ‘বাংলাদেশ ক্লিন এয়ার প্রজেক্ট’ এর আওতায় ২৯০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে একটি সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি পরিবেশ অধিদপ্তরের আওতায় বায়ু দূষণ পর্যবেক্ষণ নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করবে এবং আধুনিক মনিটরিং স্টেশন স্থাপন করবে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বায়ু দূষণে ২০১৯ সালে বাংলাদেশে ১ লাখ ৫৯ হাজারের বেশি অকাল মৃত্যু এবং ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন কর্মদিবস হারিয়েছে, যা দেশের মোট জিডিপির ৮ দশমিক ৩ শতাংশ সমপরিমাণ ক্ষতির কারণ।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে ৪০০টি পুরোনো ডিজেলচালিত বাস সরিয়ে নতুন শূন্য-নিষ্কাশন (ইলেকট্রিক) বাস চালু করা হবে। পাশাপাশি পাঁচটি নতুন যানবাহন পরিদর্শন কেন্দ্র নির্মাণ, দুটি অকার্যকর কেন্দ্র আধুনিকীকরণ এবং ২০টি মোবাইল ভেহিকেল এমিশন ইউনিট স্থাপন করা হবে। এর ফলে বছরে আনুমানিক ২ হাজার ৭৩৪ মেট্রিক টন পিএম ২ দশমিক ৫ নির্গমন হ্রাস পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রকল্পটির টিম লিডার ও বিশ্বব্যাংকের লিড এনভায়রনমেন্ট স্পেশালিস্ট আনা লুইসা গোমেস লিমা বলেন, এটি বায়ুমান উন্নয়নের প্রথম বড় উদ্যোগ। যেহেতু বায়ু এক দেশের সীমানায় সীমাবদ্ধ নয়, তাই এ প্রকল্প আঞ্চলিক সহযোগিতা ও তথ্য বিনিময়ে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকেই বিশ্বব্যাংক দেশের অন্যতম প্রধান উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে কাজ করছে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশকে ৪৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অনুদান ও স্বল্পসুদে ঋণ দিয়েছে সংস্থাটি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ আইডিএ’র বৃহত্তম অর্থ গ্রহণকারী দেশগুলোর অন্যতম।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

গ্যাস ও বায়ুদূষণ রোধে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা

আপডেট সময় : ০৯:৩২:২৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫

 বাংলাদেশে গ্যাস সরবরাহ নিরাপত্তা জোরদার এবং বায়ুমান উন্নয়নে দুটি প্রকল্পে মোট ৬৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা অনুমোদন করেছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালনা পর্ষদ এই অর্থায়নের অনুমোদন দেয়

বাংলাদেশে গ্যাস সরবরাহ নিরাপত্তা জোরদার এবং বায়ুমান উন্নয়নে দুটি প্রকল্পে মোট ৬৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা অনুমোদন করেছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালনা পর্ষদ বুধবার এই অর্থায়নের অনুমোদন দেয়।
বিশ্বব্যাংকের অন্তর্বর্তীকালীন কান্ট্রি ডিরেক্টর গেইল মার্টিন বলেন, ‘জ্বালানি নিরাপত্তা ও বায়ু মান উন্নয়ন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রকল্পদ্বয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।’
প্রথম প্রকল্প ‘এনার্জি সেক্টর সিকিউরিটি এনহান্সমেন্ট’ এর আওতায় পেট্রোবাংলার জন্য সাশ্রয়ী অর্থায়নের সুযোগ তৈরি করা হবে। ৩৫০ মিলিয়ন ডলারের এই প্রকল্পটি একটি আইডিএ গ্যারান্টির মাধ্যমে সাত বছরে ২.১ বিলিয়ন ডলার বেসরকারি পুঁজি সংগ্রহে সহায়তা করবে, যা তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির জন্য ব্যবহৃত হবে।
বর্তমানে দেশের মোট গ্যাস ব্যবহারের এক-চতুর্থাংশ এলএনজি আমদানি নির্ভর, যার ৪২ শতাংশই বিদ্যুৎ খাতে ব্যবহার হয়। তাই গ্যাস সংকট বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত করে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। নতুন এই প্রকল্পের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে এলএনজি আমদানিতে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও কার্যকর পেমেন্ট ব্যবস্থার সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।
প্রকল্পটির টিম লিডার ও বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ওলায়িনকা এডেবিরি বলেন, এই উদ্যোগ শিল্প ও সাধারণ জনগণের জন্য নির্ভরযোগ্য ও সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে। এটি অর্থনীতির টেকসই প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে।
দ্বিতীয় প্রকল্প ‘বাংলাদেশ ক্লিন এয়ার প্রজেক্ট’ এর আওতায় ২৯০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে একটি সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি পরিবেশ অধিদপ্তরের আওতায় বায়ু দূষণ পর্যবেক্ষণ নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করবে এবং আধুনিক মনিটরিং স্টেশন স্থাপন করবে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বায়ু দূষণে ২০১৯ সালে বাংলাদেশে ১ লাখ ৫৯ হাজারের বেশি অকাল মৃত্যু এবং ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন কর্মদিবস হারিয়েছে, যা দেশের মোট জিডিপির ৮ দশমিক ৩ শতাংশ সমপরিমাণ ক্ষতির কারণ।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে ৪০০টি পুরোনো ডিজেলচালিত বাস সরিয়ে নতুন শূন্য-নিষ্কাশন (ইলেকট্রিক) বাস চালু করা হবে। পাশাপাশি পাঁচটি নতুন যানবাহন পরিদর্শন কেন্দ্র নির্মাণ, দুটি অকার্যকর কেন্দ্র আধুনিকীকরণ এবং ২০টি মোবাইল ভেহিকেল এমিশন ইউনিট স্থাপন করা হবে। এর ফলে বছরে আনুমানিক ২ হাজার ৭৩৪ মেট্রিক টন পিএম ২ দশমিক ৫ নির্গমন হ্রাস পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রকল্পটির টিম লিডার ও বিশ্বব্যাংকের লিড এনভায়রনমেন্ট স্পেশালিস্ট আনা লুইসা গোমেস লিমা বলেন, এটি বায়ুমান উন্নয়নের প্রথম বড় উদ্যোগ। যেহেতু বায়ু এক দেশের সীমানায় সীমাবদ্ধ নয়, তাই এ প্রকল্প আঞ্চলিক সহযোগিতা ও তথ্য বিনিময়ে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকেই বিশ্বব্যাংক দেশের অন্যতম প্রধান উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে কাজ করছে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশকে ৪৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অনুদান ও স্বল্পসুদে ঋণ দিয়েছে সংস্থাটি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ আইডিএ’র বৃহত্তম অর্থ গ্রহণকারী দেশগুলোর অন্যতম।