ঢাকা ০৪:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::

ঘুষ বাণিজ্য ও দুর্নীতির মহোৎসবে রায়পুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিস

মোবারাক হোসেন, ‎‎রায়পুর (লক্ষ্মীপুর)
  • আপডেট সময় : ১৮ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

‎লক্ষ্মীপুরের রায়পুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে চলছে অনিয়ম রমরমা ঘুষ বাণিজ্য ও দুর্নীতির মহোৎসব। অভিযোগ উঠেছে, অফিসের নাইটগার্ড কাম ঝাড়ুদার সোহেল,অফিস সহকারী আসমা,অফিস সহায়ক পিয়ন মোস্তাফিজুর রহমান ,নকল নোটিস কামরুল হাসন ও দলিল লেখক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী নাজমুল কাদের গুলজার এই পাঁচজনের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে এক প্রভাবশালী দুর্নীতির সিন্ডিকেট।‎
‎অভিযোগ সূত্রে জানা যায় , এই সিন্ডিকেট সাব-রেজিস্ট্রারকে প্রভাবিত করে দলিল আটকিয়ে রাখে, নানা অজুহাতে দলিল দাতা ও গ্রহীতাকে জিম্মি করে ১০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ আদায় করে থাকে।
‎‎অফিস সূত্রে জানা গেছে, ঝাড়ুদার সোহেল নিজেকে অফিসের “সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী” হিসেবে চালান। তিনি সাব-রেজিস্ট্রারকে রেস্ট রুমে বসতে বাধ্য করেন, এজলাসে বসতে দেন না। দলিল লেখকদের মাধ্যমে আসা দলিলগুলো “ঝামেলা আছে” বলে আটকে রেখে ঘুষের বিনিময়ে যুক্ত করেন।‎
‎দলিল লেখক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী নাজমুল কাদের গুলজার সোহেলকে নির্দেশ দেন, “যেই সাব-রেজিস্ট্রারই আসুক, তার ছায়া হয়ে থাকবে।” অভিযোগ রয়েছে, তিনিই সোহেলকে ব্যবহার করে নির্দিষ্ট হারে ঘুষ আদায়ের তালিকা তৈরি করেছেন। প্রতি পাঁচ লক্ষ টাকার দলিলে ৫০০ থেকে ১,০০০ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত আদায় করা হয়, আবার বড় দলিলে অনুপাতে আদায়ের পরিমাণও বেড়ে যায়।
‎গুলজারের নির্দেশে সোহেল অফিসে প্রভাব বিস্তার করছে বলে তথ্য পাওয়া যায়।
‎অভিযোগ রয়েছে—গুলজারের ছত্রছায়ায় সোহেল , মোস্তাফিজ ও আসমা ,কামরুল হাসান এখন কোটি টাকার মালিক।
‎‎নৈশ্যপহরী সোহেল স্বৈরাচার ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর পৌর আওয়ামীলীগের সহসভাপতি ও পৌর কর প্রধান ইসমাইল মাহবুব পাটোয়ারীর ভাইবেটি জামাই তার প্রভাবে সোহেল আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে।
‎‎রায়পুরের খাইল্লার পুল এঁলাকায় সোহেলের দেড় কোটি টাকার বাড়ি এবং একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে।
‎‎বিশেষ করে ব্যাংকের মর্টগেজ দলিল রেজিস্ট্রি করতে সোহেলের ‘চুক্তি’ ছাড়া কোনো কাজ হয় না বলে দলিল লেখকরা জানান। ১০ লক্ষ টাকার মর্টগেজে ২০ হাজার, ৫০ লক্ষে ৫০ হাজার এবং এক কোটি টাকার ক্ষেত্রে ১ লক্ষ টাকারও বেশি ঘুষ দিতে হয়। এমনকি জাতীয় পরিচয়পত্র ও খতিয়ানের নামে সামান্য অমিল থাকলেও সোহেল ৫০–১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত দাবি করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।‎
‎একটি ভিডিওতে দেখা যায় অফিস সহকারী আসমা লেখকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিতে এবং টাকা নেওয়ার পর সোহেলকে দেয়। দলিল লেখকরা অতিরিক্ত টাকা না দিলে আছমা কেরানি লিখকদের সাথে খারাপ আচরণ করে।
‎‎অভিযোগে আরও বলা হয়, সোহেল প্রতি মাসে মোটা অংকের টাকা “ম্যানেজ” করে সাব-রেজিস্ট্রারকে দেন। এই বিশাল ঘুষের অঙ্ক ভাগ হয় সিন্ডিকেট সদস্যদের মধ্যে। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে সিন্ডিকেটের প্রভাবে দলিল লেখক সমিতিতে কোনো স্বচ্ছ নির্বাচন বা সুশাসন নেই। কেউ প্রতিবাদ করলে ভয়ভীতি ও মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করা হয়।এছাড়ও কোন লেখক অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে লেখকের লাইসেন্স নবায়ন না করার ঝুঁকি থাকে।‎
‎অন্যদিকে মোস্তাফিজকে দেখা যায় রেজিস্ট্রেশন থাম বইতে টিপসই নেওয়ার সময় ২০০থেকে ১০০০ টাকা করে চাঁদা তেলে প্রকাশ্যে। কেউ টাকা দিতে অপারকতা দেখালে তার দলিলে বা রেজিস্ট্রেশন থাম বইয়ে টিপসই নেয়না। এতে হতে হয় হয়রানির শিকার। একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, মোস্তাফিজ চেয়ারে বসে গুণে গুণে টাকা নিচ্ছেন।
‎‎আরো একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, সোহেল অফিস সহায়কের চেয়ারে বসে আছেন ।সে নৈশপ্রহরী হয়েও দিনের আলোতে তাকে দেখা যায়। এবং বিভিন্ন লেখকদের কাছ থেকে ঘুষের টাকা নিতে দেখা যায়। রায়পুরের সাধারণ মানুষ বলেন, “এখন রায়পুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিস মানেই ঘুষের বাজার। সেবা নয়, সোহেলের টেবিলে টাকা দিলেই দলিল হয়!”
‎‎গত ২৯ মার্চ২০২৩শে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে সোহেলকে মোবাইল ফোনে বিভিন্ন ব্যাক্তিদের সাথে অবৈধ লেনদেনের ও যোগাযোগ তথ্য পাওয়া যায়। পরে জেলা রেজিস্ট্রার লেকমান হোসেন স্মারক নং ৩৭৩(৮)২০/১০/২০২৪ প্রেষণে তাকে কমলনগরে বদলি করলেও তিনি সেখানে যোগদান না দিয়ে রায়পুরেই বহাল থাকেন। এই ঘটনায় ২৯/১০/২০২৪ বদলীকৃত তারিখে উক্ত কার্যালয়ে যোগদান না করায় সাব রেজিস্টার কমলনগর এর স্মারক নং ৩১৯তাং ২৯/১০/২০২৪ উদ্ধিতন কতৃপক্ষের দাপ্তরিক আদেশ অবহেলায় করার ঘটনায় তাকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়।‎
‎সাব রেজিস্ট্রার অফিসের উদ্বোতন কতৃপক্ষগন ঝাড়ুদার সোহেলের এতো দূর্নীতি করার পরও কিভাবে কোন সুবাদে সোহেলকে রায়পুর সাব রেজিস্ট্রার অফিসে বহাল রাখে।‎
‎অপরদিকে অফিস সহায়ক,অফিস সহকারী,মোহরা,সরকারী কর্মচারী থাকা শত্বেও একজন ঝাড়ুদার সোহেলকে দিয়েই কমিশনি দলিলী রেজিষ্ট্রেশন সম্পাদন করে থাকেন সাব রেজিস্ট্রার ইউনুস। এতে দেখা যায় সোহেল কমিশনি দলিল সম্পাদন করতে গেলে দলিল লেখকগন সোহেলকে দিতে হয় ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা। টাকা না দিলে দলিল সম্পাদন হয়না।‎
‎কিন্তুু সোহেল এখনও বহাল তবিয়তে রায়পুরের রয়েছেন। তবে তার পরিবর্তে তার ভগ্নিপতি আব্দুল মন্নানকে রাতে অফিস পাহারায় দেখা যায়। এবং সকালে অফিস পরিস্কার করতে দেখা যায়। সেবা প্রার্থীরা অভিযোগ করেন অন্য লোক দিয়ে অফিস পাহারা দেওয়া অফিসের গুরুত্বপূর্ন নথিপত্র গায়েব হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
‎‎সোহেল নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন,“আমি বদলি হওয়ার পর ৫ মাস কমলনগরে ছিলাম। তদন্ত শেষে রায়পুরে ফিরে এসেছি। দুদকের বিষয়টি এখনো তদন্তাধীন।”‎
‎অন্যদিকে, রায়পুর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে যোগদানের পর থেকেই সপ্তাহে ৩ দিন অফিস করছেন, উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার মো. ইউনুস সোহেল। যোগদানের পর থেকেই
‎এমনিভাবেই সপ্তাহে দু’দিন বিনা ছুটিতে অফিসে না এসেই নিজের ইচ্ছামতো চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
‎‎সচেতন নাগরিকদের আশঙ্কা “রায়পুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের এই ভয়াবহ দুর্নীতি বন্ধ না হলে ভূমি রেজিস্ট্রেশনে সাধারণ মানুষের আস্থা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাবে।”তারা দ্রুত দুদক ও জেলা প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন।
‎‎অভিযোগের বিষয়ে সাব রেজিস্টার মোঃ ইউনুস সোহেল বলেন, নাইটগার্ড কাম ঝাড়ুদার সোহেলের বিষয়ে এখন পর্যন্ত হাজারেরও বেশী অভিযোগ রয়েছে। এতে অভিযোগের পরও সে কীভাবে কার ছত্রছায়ায় এখানে কর্মরত আছে এই বিষয়ে জেলা রেজিস্টার বলতে পারে এবং সাব রেজিস্টার নিজের অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেন আমি এখনে আপনাদের সাথে কিছু বলবোনা ,এটা আপনাদের এলাকা দেখার দায়িত্ব আপনাদের। প্রতিদিন আসতে আমি বাধ্য নয়। আসবো কি আসবো না এটা আমার ইখতিয়ার । তবে আমার কাছে যা কিছু বলতে চান সবকিছু আমাকে না বলে রেজিস্ট্রার সমিতির সেক্রেটারি রুবেলকে বলবেন। রুবেল যা বলবে সেটাই আমার কথা, এর বাইরে আমার কোন কথা নেই। ”
‎‎এবিষয়ে দলিল লেখক সমিতির সেক্রেটারি মাহবুব হোসেন রুবেল বলেন, “আমি কেন তার অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য দিবো? আমার ডিপার্টমেন্ট এবং তার ডিপার্টমেন্ট সম্পূর্ণ আলাদা। তার বিষয়ে আমার কিছু বলা নেই। “

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

ঘুষ বাণিজ্য ও দুর্নীতির মহোৎসবে রায়পুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিস

আপডেট সময় :

‎লক্ষ্মীপুরের রায়পুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে চলছে অনিয়ম রমরমা ঘুষ বাণিজ্য ও দুর্নীতির মহোৎসব। অভিযোগ উঠেছে, অফিসের নাইটগার্ড কাম ঝাড়ুদার সোহেল,অফিস সহকারী আসমা,অফিস সহায়ক পিয়ন মোস্তাফিজুর রহমান ,নকল নোটিস কামরুল হাসন ও দলিল লেখক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী নাজমুল কাদের গুলজার এই পাঁচজনের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে এক প্রভাবশালী দুর্নীতির সিন্ডিকেট।‎
‎অভিযোগ সূত্রে জানা যায় , এই সিন্ডিকেট সাব-রেজিস্ট্রারকে প্রভাবিত করে দলিল আটকিয়ে রাখে, নানা অজুহাতে দলিল দাতা ও গ্রহীতাকে জিম্মি করে ১০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ আদায় করে থাকে।
‎‎অফিস সূত্রে জানা গেছে, ঝাড়ুদার সোহেল নিজেকে অফিসের “সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী” হিসেবে চালান। তিনি সাব-রেজিস্ট্রারকে রেস্ট রুমে বসতে বাধ্য করেন, এজলাসে বসতে দেন না। দলিল লেখকদের মাধ্যমে আসা দলিলগুলো “ঝামেলা আছে” বলে আটকে রেখে ঘুষের বিনিময়ে যুক্ত করেন।‎
‎দলিল লেখক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী নাজমুল কাদের গুলজার সোহেলকে নির্দেশ দেন, “যেই সাব-রেজিস্ট্রারই আসুক, তার ছায়া হয়ে থাকবে।” অভিযোগ রয়েছে, তিনিই সোহেলকে ব্যবহার করে নির্দিষ্ট হারে ঘুষ আদায়ের তালিকা তৈরি করেছেন। প্রতি পাঁচ লক্ষ টাকার দলিলে ৫০০ থেকে ১,০০০ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত আদায় করা হয়, আবার বড় দলিলে অনুপাতে আদায়ের পরিমাণও বেড়ে যায়।
‎গুলজারের নির্দেশে সোহেল অফিসে প্রভাব বিস্তার করছে বলে তথ্য পাওয়া যায়।
‎অভিযোগ রয়েছে—গুলজারের ছত্রছায়ায় সোহেল , মোস্তাফিজ ও আসমা ,কামরুল হাসান এখন কোটি টাকার মালিক।
‎‎নৈশ্যপহরী সোহেল স্বৈরাচার ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর পৌর আওয়ামীলীগের সহসভাপতি ও পৌর কর প্রধান ইসমাইল মাহবুব পাটোয়ারীর ভাইবেটি জামাই তার প্রভাবে সোহেল আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে।
‎‎রায়পুরের খাইল্লার পুল এঁলাকায় সোহেলের দেড় কোটি টাকার বাড়ি এবং একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে।
‎‎বিশেষ করে ব্যাংকের মর্টগেজ দলিল রেজিস্ট্রি করতে সোহেলের ‘চুক্তি’ ছাড়া কোনো কাজ হয় না বলে দলিল লেখকরা জানান। ১০ লক্ষ টাকার মর্টগেজে ২০ হাজার, ৫০ লক্ষে ৫০ হাজার এবং এক কোটি টাকার ক্ষেত্রে ১ লক্ষ টাকারও বেশি ঘুষ দিতে হয়। এমনকি জাতীয় পরিচয়পত্র ও খতিয়ানের নামে সামান্য অমিল থাকলেও সোহেল ৫০–১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত দাবি করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।‎
‎একটি ভিডিওতে দেখা যায় অফিস সহকারী আসমা লেখকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিতে এবং টাকা নেওয়ার পর সোহেলকে দেয়। দলিল লেখকরা অতিরিক্ত টাকা না দিলে আছমা কেরানি লিখকদের সাথে খারাপ আচরণ করে।
‎‎অভিযোগে আরও বলা হয়, সোহেল প্রতি মাসে মোটা অংকের টাকা “ম্যানেজ” করে সাব-রেজিস্ট্রারকে দেন। এই বিশাল ঘুষের অঙ্ক ভাগ হয় সিন্ডিকেট সদস্যদের মধ্যে। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে সিন্ডিকেটের প্রভাবে দলিল লেখক সমিতিতে কোনো স্বচ্ছ নির্বাচন বা সুশাসন নেই। কেউ প্রতিবাদ করলে ভয়ভীতি ও মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করা হয়।এছাড়ও কোন লেখক অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে লেখকের লাইসেন্স নবায়ন না করার ঝুঁকি থাকে।‎
‎অন্যদিকে মোস্তাফিজকে দেখা যায় রেজিস্ট্রেশন থাম বইতে টিপসই নেওয়ার সময় ২০০থেকে ১০০০ টাকা করে চাঁদা তেলে প্রকাশ্যে। কেউ টাকা দিতে অপারকতা দেখালে তার দলিলে বা রেজিস্ট্রেশন থাম বইয়ে টিপসই নেয়না। এতে হতে হয় হয়রানির শিকার। একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, মোস্তাফিজ চেয়ারে বসে গুণে গুণে টাকা নিচ্ছেন।
‎‎আরো একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, সোহেল অফিস সহায়কের চেয়ারে বসে আছেন ।সে নৈশপ্রহরী হয়েও দিনের আলোতে তাকে দেখা যায়। এবং বিভিন্ন লেখকদের কাছ থেকে ঘুষের টাকা নিতে দেখা যায়। রায়পুরের সাধারণ মানুষ বলেন, “এখন রায়পুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিস মানেই ঘুষের বাজার। সেবা নয়, সোহেলের টেবিলে টাকা দিলেই দলিল হয়!”
‎‎গত ২৯ মার্চ২০২৩শে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে সোহেলকে মোবাইল ফোনে বিভিন্ন ব্যাক্তিদের সাথে অবৈধ লেনদেনের ও যোগাযোগ তথ্য পাওয়া যায়। পরে জেলা রেজিস্ট্রার লেকমান হোসেন স্মারক নং ৩৭৩(৮)২০/১০/২০২৪ প্রেষণে তাকে কমলনগরে বদলি করলেও তিনি সেখানে যোগদান না দিয়ে রায়পুরেই বহাল থাকেন। এই ঘটনায় ২৯/১০/২০২৪ বদলীকৃত তারিখে উক্ত কার্যালয়ে যোগদান না করায় সাব রেজিস্টার কমলনগর এর স্মারক নং ৩১৯তাং ২৯/১০/২০২৪ উদ্ধিতন কতৃপক্ষের দাপ্তরিক আদেশ অবহেলায় করার ঘটনায় তাকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়।‎
‎সাব রেজিস্ট্রার অফিসের উদ্বোতন কতৃপক্ষগন ঝাড়ুদার সোহেলের এতো দূর্নীতি করার পরও কিভাবে কোন সুবাদে সোহেলকে রায়পুর সাব রেজিস্ট্রার অফিসে বহাল রাখে।‎
‎অপরদিকে অফিস সহায়ক,অফিস সহকারী,মোহরা,সরকারী কর্মচারী থাকা শত্বেও একজন ঝাড়ুদার সোহেলকে দিয়েই কমিশনি দলিলী রেজিষ্ট্রেশন সম্পাদন করে থাকেন সাব রেজিস্ট্রার ইউনুস। এতে দেখা যায় সোহেল কমিশনি দলিল সম্পাদন করতে গেলে দলিল লেখকগন সোহেলকে দিতে হয় ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা। টাকা না দিলে দলিল সম্পাদন হয়না।‎
‎কিন্তুু সোহেল এখনও বহাল তবিয়তে রায়পুরের রয়েছেন। তবে তার পরিবর্তে তার ভগ্নিপতি আব্দুল মন্নানকে রাতে অফিস পাহারায় দেখা যায়। এবং সকালে অফিস পরিস্কার করতে দেখা যায়। সেবা প্রার্থীরা অভিযোগ করেন অন্য লোক দিয়ে অফিস পাহারা দেওয়া অফিসের গুরুত্বপূর্ন নথিপত্র গায়েব হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
‎‎সোহেল নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন,“আমি বদলি হওয়ার পর ৫ মাস কমলনগরে ছিলাম। তদন্ত শেষে রায়পুরে ফিরে এসেছি। দুদকের বিষয়টি এখনো তদন্তাধীন।”‎
‎অন্যদিকে, রায়পুর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে যোগদানের পর থেকেই সপ্তাহে ৩ দিন অফিস করছেন, উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার মো. ইউনুস সোহেল। যোগদানের পর থেকেই
‎এমনিভাবেই সপ্তাহে দু’দিন বিনা ছুটিতে অফিসে না এসেই নিজের ইচ্ছামতো চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
‎‎সচেতন নাগরিকদের আশঙ্কা “রায়পুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের এই ভয়াবহ দুর্নীতি বন্ধ না হলে ভূমি রেজিস্ট্রেশনে সাধারণ মানুষের আস্থা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাবে।”তারা দ্রুত দুদক ও জেলা প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন।
‎‎অভিযোগের বিষয়ে সাব রেজিস্টার মোঃ ইউনুস সোহেল বলেন, নাইটগার্ড কাম ঝাড়ুদার সোহেলের বিষয়ে এখন পর্যন্ত হাজারেরও বেশী অভিযোগ রয়েছে। এতে অভিযোগের পরও সে কীভাবে কার ছত্রছায়ায় এখানে কর্মরত আছে এই বিষয়ে জেলা রেজিস্টার বলতে পারে এবং সাব রেজিস্টার নিজের অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেন আমি এখনে আপনাদের সাথে কিছু বলবোনা ,এটা আপনাদের এলাকা দেখার দায়িত্ব আপনাদের। প্রতিদিন আসতে আমি বাধ্য নয়। আসবো কি আসবো না এটা আমার ইখতিয়ার । তবে আমার কাছে যা কিছু বলতে চান সবকিছু আমাকে না বলে রেজিস্ট্রার সমিতির সেক্রেটারি রুবেলকে বলবেন। রুবেল যা বলবে সেটাই আমার কথা, এর বাইরে আমার কোন কথা নেই। ”
‎‎এবিষয়ে দলিল লেখক সমিতির সেক্রেটারি মাহবুব হোসেন রুবেল বলেন, “আমি কেন তার অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য দিবো? আমার ডিপার্টমেন্ট এবং তার ডিপার্টমেন্ট সম্পূর্ণ আলাদা। তার বিষয়ে আমার কিছু বলা নেই। “