তারুণ্যের সমাবেশে জনসমুদ্র

- আপডেট সময় : ০১:৫৪:১৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫ ২৫ বার পড়া হয়েছে
নির্বাচন নিয়ে মনে হয় এরই মধ্যে টালবাহানা শুরু হয়েছে : তারেক রহমান
রাজধানী ঢাকার নয়াপল্টন গতকাল বিকেলে রূপ নেয় এক বিশাল জনসমুদ্রে। বিএনপির তিন সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল যৌথভাবে এই রাজনৈতিক সমাবেশ আয়োজন করে। আয়োজিত তারুণ্যের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, জনগণের রায় বাস্তবায়ন করতে হলে নির্বাচিত সরকার দরকার। নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে মনে হয় এরই মধ্যে টালবাহানা শুরু হয়েছে বা চলছে। কথিত অল্প সংস্কার আর বেশি সংস্কারের অভিনব আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে জাতীয় নির্বাচনের ভবিষ্যৎ। জনগণের বিশ্বাস ও ভালোবাসা নষ্ট হয় এমন কোন পদক্ষেপ অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া ঠিক হবে না। রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রতিপক্ষ বানাবেন না। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, আপনাদের কেউ যদি রাষ্ট্র পরিচালনায় থাকতে চায় তাহলে সরকার থেকে পদত্যাগ করে নির্বাচন করুন। যদি জনগণের রায় পান তাহলে আবার সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।
বিএনপির তিন অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল এবং ছাত্রদল যৌথভাবে এ সমাবেশের আয়োজন করে। যুবদল সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্নার সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আব্দুল মঈন খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
দুপুর গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দলে দলে নেতাকর্মী ও সমর্থকরা মিছিল নিয়ে যোগ দেন সমাবেশস্থলে। আয়োজকদের দাবি, ঢাকা, সিলেট, ফরিদপুর ও ময়মনসিংহ থেকে আসা প্রায় ১৫ লাখ তরুণ এই সমাবেশে অংশ নিয়েছেন। নয়াপল্টনের রাজপথ ও সংলগ্ন এলাকাগুলো নেতাকর্মীদের ভিড়ে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়, সৃষ্টি হয় জনস্রোতের চিত্র। বেলা ৩টা ৩৫ মিনিটে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্যে দিয়ে এই সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশে লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সভাপতিত্ব করছেন যুবদলের সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না। ওদিকে কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সকাল ১০টা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে সমাবেশস্থলে জড়ো হতে দেখা গেছে। বেলা সাড়ে ১২ দিকে নেতাকর্মীদের স্লোগান ও পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে নয়াপল্টন। ঢাকায় বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানা, সিলেট, ফরিদপুর ও ময়মনসিংহ থেকে আসা নেতাকর্মীদের নয়াপল্টনে আসতে দেখা গেছে। এছাড়া এই বিভাগের বাইরে বরিশাল, বগুড়াসহ বিভিন্ন জেলা এবং বিভাগ থেকে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা এসেছেন।
ওদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের বিপরীত পাশের সড়কে সমাবেশের মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। সমাবেশকে কেন্দ্র করে নয়াপল্টনের আশেপাশ এলাকায় টানানো হয়েছে মাইক। সকাল থেকেই মাইকে ভেসে আসে সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে গান। ওদিকে সমাবেশ শুরু’র আগে মঞ্চে দেশীয় শিল্পীরা তাদের জনপ্রিয় গান পরিবেশন করেন। নেতাকর্মীরা বিভিন্ন ব্যানার, জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি সম্বলিত ফেস্টুন, টি শার্ট ও বিভিন্ন রঙের ক্যাপ পরে এবং মাথায় জাতীয় ও দলীয় পতাকা বেঁধে সমাবেশে এসেছেন। তারা বিভিন্ন স্লোগানে সমাবেশ প্রাঙ্গণ মুখরিত করে তুলেছেন। ওদিকে নয়াপল্টন এবং এর আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে দেখা গেছে।
বক্তারা জানান, এই সমাবেশের মূল লক্ষ্য ছিল তরুণদের রাজনৈতিকভাবে উদ্বুদ্ধ করা এবং তাদের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন। মে মাসজুড়ে দেশজুড়ে তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে মতবিনিময়ের অংশ হিসেবে এই কর্মসূচি আয়োজন করা হয়। ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে চারটি বিভাগীয় শহর ও রাজধানীসহ মোট আটটি স্থানে সেমিনার ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
বিএনপির নেতারা বলেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে তরুণদের ঐক্যবদ্ধ করা খুবই জরুরি। তারা অভিযোগ করেন, বর্তমান সরকার তরুণদের অধিকার ও ভবিষ্যৎকে হরণ করছে। বক্তারা আগামী দিনে আন্দোলনের অগ্রভাগে তরুণদের থাকার আহ্বান জানান। নয়াপল্টন এলাকাজুড়ে ছিল কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সমাবেশস্থলের আশপাশে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে। যদিও কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি, তবে যানজট ও পথচারীদের ভোগান্তি ছিল চোখে পড়ার মতো।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেছেন, আজকে নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ তারুণ্যের সমুদ্রে পরিণত হয়েছে। আপনার (তারেক রহমান) নেতৃত্বে বাংলাদেশের তরুণরা জেগে উঠেছে। ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার আমাদের দেশকে ধ্বংস করেছিল। দেশের তরুণ ছাত্রসমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। জুলাই আগস্টে আমাদের প্রথম বিজয় হয়েছে। আমাদের আন্দোলন কিন্তু থেমে যায়নি। আমরা বিজয়ের দ্বিতীয় পর্যায়ে রয়েছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে গণতন্ত্রে রূপ দিতে হবে। অবিলম্বে দ্রুত নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ দিতে হবে। জনগণ চায় গণতন্ত্র। আমরা সরকারকে সেজন্য সহযোগিতা করেছি। সহযোগিতা থাকবে। কিন্তু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। না হলে বিক্ষুব্ধ তরুণ সমাজের আন্দোলনে কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার পালাতে পারবে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, এই সরকারের (অন্তর্বর্তী সরকার) মাথা থেকে নিচ পর্যন্ত পচন ধরেছে। রা আওয়ামী লীগের চেয়ে বেশি ক্ষতি করছে। এই সরকার গণমানুষের আকাঙ্ক্ষা ও আস্থার সরকার ছিল কিন্তু নয় মাসের কার্যক্রমে এই সরকার থেকে কিছুই পাইনি। শুধু পেয়েছি অবজ্ঞা।