থামাও কসাই নেতানিয়াহুকে

- আপডেট সময় : ০২:৩৩:১২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ এপ্রিল ২০২৫ ১৫ বার পড়া হয়েছে
দ্য ওয়ার্ল্ড স্টপস ফর গাজা, বিক্ষোভে উত্তাল রাজধানীসহ সারাদেশ
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলের নিষ্ঠুর, নির্বিচার হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে ঘোষিত দ্য ওয়ার্ল্ড স্টপস ফর গাজা কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল সোমবার রাজধানীসহ সারাদেশে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে লাখো জনতা। গতকাল সকাল থেকে রাজধানীর সায়েন্সল্যাব, মোহাম্মদপুর ও বাড্ডাসহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধনে বিক্ষুব্দ জনতার উচ্চারণ ছিলো- বন্ধ করো জাতিগত নিধন, থামাও কসাই নেতানিয়াহুকে। ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও সংহতি জানাচ্ছেন ‘দ্য ওয়ার্ল্ড স্টপস ফর গাজা’ কর্মসূচিতে। বেলা ১১টা থেকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত রাজধানীর সায়েন্সল্যাব এলাকায় তিনটি বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিটি মিছিল সায়েন্সল্যাব মোড় থেকে শুরু হয়ে বাটা সিগন্যালে গিয়ে শেষ হয়েছে।
বিক্ষোভকারীরা প্ল্যাকার্ড, ব্যানার হাতে ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’, ‘স্টপ কিলিং ইন গাজা’সহ নানা স্লোগান দেন। শান্তিপূর্ণ এ কর্মসূচি চলাকালীন সড়কে যান চলাচলে সাময়িক কিছুটা সমস্যা হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতায় নিয়ন্ত্রণে আছে পরিস্থিতি।
বিক্ষোভে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাশাপাশি অংশ নিয়েছেন শিক্ষার্থীরাও। এর মধ্যে একটি মিছিলে অংশ নেওয়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠান স্টারটেকের এক কর্মী বলেন, দ্য ওয়ার্ল্ড স্টপস ফর গাজা কর্মসূচির অংশ হিসেবে আমরা আজ রাস্তায় নেমেছি। গাজায় ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী যেভাবে সাধারণ মানুষের ওপর নৃশংস হামলা চালাচ্ছে, আমরা তার তীব্র নিন্দা জানাই।
তিনি আরও বলেন, শিশু, নারী ও নিরীহ মানুষদের ওপর ইসরায়েলি হামলা আজ মানবতাকেও প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। অথচ বিশ্ব আজ নিশ্চুপ। কোথায় গেল সেই মানবতা, কোথায় গেল নৈতিকতা?
বেলা ১১টা ২৫ মিনিটের দিকে একটি মিছিল নিয়ে সায়েন্সল্যাব এলাকায় আসেন বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী গাজায় নির্মমভাবে মানুষকে হত্যা করছে। তাদের এই হত্যাযজ্ঞ দেখে বাংলাদেশের প্রতিটি শিক্ষার্থী ক্ষুব্ধ এবং ব্যথিত। তারা চান দ্রুত যেন বিশ্ববাসী এ গণহত্যা বন্ধ করে।
এছাড়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। বেলা ১১ টার পর থেকে ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকে সাধারণ মানুষ। এ সময় তাদের কণ্ঠে শোনা যায় ‘ইসরায়েলের কালো হাত, ভেঙ্গে দাও-গুড়িয়ে দাও’, ‘সারা বিশ্বের মুসলমান, লড়াই করো-লড়াই করো’ ‘ইসরায়েলের ঠিকানা, এই দুনিয়ায় হবে না’ ইত্যাদি স্লোগান। দ্য ওয়ার্ল্ড স্টপস ফর গাজা’র সমর্থনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরাও। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে মানববন্ধনে অংশ নেন বুয়েটের বেশ কয়েকজন শিক্ষকও। কর্মসূচি পালনকালে ফ্রম দ্য রিভার টু দ্য সী, প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি’, ‘ইস্ট টু ওয়েস্ট, নো ফ্লো টু জায়নিস্ট’, মেঘনা টু জেরুজালেম, ইনসাফ ইনসাফ’, ‘শেম শেম জায়নিস্ট, মেক ফ্রি প্যালেস্টাইন’, ‘ফিলিস্তিন মুক্তি পাক, ইসরায়েল নিপাত যাক’; ‘ইনকিলাব ইনকিলাব, আল আকসা জিন্দাবাদ’ ইত্যাদি স্লোগান দেন বিক্ষোভকারীরা।
বুয়েট শিক্ষার্থীরা বলেন, গাজায় নিরীহ শিশু, নারী এবং সাধারণ মানুষের ওপর যে নৃশংসতা চালানো হচ্ছে তা শুধু একটি রাজনৈতিক সংকট নয়, এটি একটি চরম মানবিক ও নৈতিক সংকট। এমনকি যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন, মানবিক করিডোরে হামলা এবং জরুরি স্বাস্থ্যসেবা কাঠামো ধ্বংসের মতো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সভ্যতার চরম অবক্ষয়। আমরা বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় চলমান অমানবিক সহিংসতা, নির্বিচারে হত্যা, বোমাবর্ষণ, রাসায়নিক হামলা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে গভীর উদ্বেগ ও তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। তারা বলেন, আমরা এই বর্বরতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে, সংগঠিত হতে এবং কার্যকর অবস্থান নিতে সর্বদা নৈতিকভাবে একতাবদ্ধ। শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদ জানানোই যথেষ্ট নয়, এখন সময় এসেছে রাস্তায় দাঁড়ানোর, কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে মানবতার পক্ষে আওয়াজ তোলার। ‘গ্লোবাল স্ট্রাইক ফর গাজা’র অংশ হিসেবে আমরা আজ বিশ্বের অন্যান্য সচেতন মানুষের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছি। গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন মোহাম্মদপুর এলাকার শিক্ষার্থীরাও। মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন শেষে বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা। মোহাম্মদপুর থেকে শুরু করে আসাদগেট হয়ে মানিক মিয়া এভিনিউতে গিয়ে শেষ হয় মিছিলটি। ‘দ্য ওয়ার্ল্ড স্টপস ফর গাজা’ কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে বাড্ডায় মিছিল বের করেছেন ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ‘দ্য ওয়ার্ল্ড স্টপস ফর গাজা’ সমর্থনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি), রাজশাহী বিদ্যালয় (রাবি), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি), বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি), বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি), রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট), চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট), সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয় (গবি), মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (মাভাপ্রবি), ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট) ক্যাম্পাসেও।
শুধু রাজধানী ও বিশ্ববিদ্যালয় নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানেই গতকাল বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন হচ্ছে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে। এর মধ্যে ঝালকাঠিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভের পাওয়া গেছে। সকাল ৯টা থেকে শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মিছিল নিয়ে ফায়ার সার্ভিস মোড়ে জড়ো হন হাজারো জনতা। এসময় এ সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। জরুরি সেবা ছাড়া সবধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাট বন্ধ ছিল। এ কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করে ঝালকাঠির বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।
মূলত, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় সর্বশেষ যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যাওয়ার পর থেকে আবারও অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। প্রতিদিনই যেন বাড়ছে হামলার তীব্রতা। দখলদার বাহিনীর নির্বিচার এসব হামলায় গাজায় দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। এ অবস্থায় গত ৬ এপ্রিল গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে সোমবার (৭ এপ্রিল) বিশ্বব্যাপী সাধারণ ধর্মঘটের ঘোষণা দেয় ফিলিস্তিনি ন্যাশনাল এবং ইসলামিক ফোর্সেস গ্রুপ। কর্মসূচির নাম দেওয়া হয় ‘দ্য ওয়ার্ল্ড স্টপস ফর গাজা’। দ্বিতীয় ইন্তিফাদার সূত্রপাতের পরপরই ইয়াসির আরাফাতের অনুমোদনে এবং মারওয়ান বারগুতির নেতৃত্বে গঠিত একটি জোট হলো এই ফিলিস্তিনি ন্যাশনাল এবং ইসলামিক ফোর্সেস গ্রুপ। তাদের বৈশ্বিক এ ধর্মঘটের ডাকে সাড়া দিয়েই গতকাল সারাদেশে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। কর্মসূচিতে একাত্ম হচ্ছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষও।