দখলদারিত্বের রাজনীতি ফিরছে ঢাবিতে

- আপডেট সময় : ০৯:২৪:০১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫ ২১ বার পড়া হয়েছে
শিক্ষার্থীদের জোরালো দাবির মুখে হলের ভেতরে ছাত্র সংগঠনগুলোর রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়। একই বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দলীয় লেজুড়বৃত্তির বেড়াজালে সেই সিদ্ধান্ত শুধু কাগজে-কলমে রয়ে গেছে।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ ছাড়া বাকি সব রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠন নিজস্ব ব্যানারে চালাচ্ছে কার্যক্রম। পাশাপাশি জনহিতকর ও শিক্ষার্থীবান্ধব কার্যক্রমও পরিচালনা করছে তারা। ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে যেমন রয়েছে ভালো কাজের প্রতিযোগিতা তেমনি চলছে স্নায়ুযুদ্ধ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছাত্রসংগঠনগুলো বাগযুদ্ধে লিপ্ত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। শিক্ষার্থীদের মতে, সহাবস্থানের রাজনীতি ছেড়ে ছাত্রসংগঠনগুলো দ্বন্দ্বের পথেই হাঁটছে। যতটা না তাদের মধ্যে একে-অপরের প্রতি সহমর্মিতা থাকার কথা, তার থেকে বেশি বিদ্বেষ পরিলক্ষিত হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভ্যন্তরীণ গ্রুপগুলো এবং ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের ফেসবুক আইডির পোস্টগুলোতে বিরোধী মতের প্রতি তাচ্ছিল্য, আক্রমণাত্মক প্রত্যুত্তর স্পষ্টতই নিজেদের মধ্যে সহিষ্ণুতার অভাব হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। অনলাইন কিংবা অফলাইনে ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে এমন দ্বন্দ্ব শিক্ষার্থীবান্ধব ছাত্ররাজনীতি নিয়ে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে ঢাবি শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের নেতা সাম্য হত্যার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি ক্রান্তিকাল পার করছে। সাম্য হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যর্থতার দায়ে ভিসি ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করে ছাত্রদল ও বামপন্থি ছাত্রসংগঠনগুলো। তাদের এই দাবির প্রতি সংহতি না দেখানো স্পষ্টতই সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে দূরত্ব তৈরি করছে— মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তারা বলছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি উঠলেও এখন প্রতিনিয়ত ক্যাম্পাসে ছাত্রসংগঠনগুলোর পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে উত্তপ্ত থাকছে। ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মনে অতীতের দখলদারি রাজনীতি ফিরে আসার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
সর্বশেষ জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের বেকসুর খালাসের পর বামপন্থি ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে শাহবাগবিরোধী ঐক্যের দ্বন্দ্ব মারমুখি অবস্থান তৈরি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলপাড়ায়। অন্যদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন চলমান ছিল ঈদুল আজহার ছুটির আগ পর্যন্ত। ঈদের ছুটির পরও এই নির্বাচন চেয়ে ছাত্রসংগঠনগুলো অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে।
ক্যাম্পাসে এখন পড়াশোনার চেয়ে রাজনীতিতে বেশি সময় অপচয় করা হচ্ছে। গ্রুপগুলোতে শিক্ষার্থীবান্ধব আলোচনার চেয়ে রাজনীতি নিয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে। ছাত্ররাজনীতির প্রতিনিধিদের উচিত শিক্ষার্থীদের অধিকার এবং তাদের শিক্ষার পরিবেশ উন্নয়নের জন্য কাজ করা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে সেই পুরানো রূপ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী পাভেল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা যাবে না। ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহনশীলতার সম্পর্ক বাড়াতে হবে। অন্যের মত ও সমালোচনা সহ্য করার মানসিকতা তৈরি করতে হবে। আমরা চাই না ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বা সিট দখল করার জন্য কোনো রাজনীতি হোক। কিন্তু হলভিত্তিক যে রাজনীতি আমরা দেখে আসছি, বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ প্রয়োগ, জোর করে দলীয় কর্মসূচিতে নিয়ে যাওয়া— এগুলো যেন আর ফিরে না আসে।
শিক্ষার্থীরা ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ছাত্রসংসদ— যেকোনো সংগঠন পছন্দ করতেই পারে। কিন্তু সহাবস্থানের রাজনীতিটা প্রাধান্য পাক, পারস্পরিক দ্বন্দ্ব নিপাত যাক। ভিন্ন মতের কোনো নেতাকর্মীকে মারধর করা বা হেনস্তা করার মতো কোনো ঘটনা যেন কেউ না ঘটাক, সেটাই আমাদের চাওয়া। স্থিতিশীল ক্যাম্পাসের জন্য অবশ্যই পারস্পরিক সহনশীলতা এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ ছাত্ররাজনীতি ক্যাম্পাসে থাকা প্রয়োজন।
ছাত্রদল ছাত্রশিবিরকে মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক লড়াইয়ে বাম ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে আওয়ামী কালচারাল ন্যারেটিভ গ্রহণ করেছে। বিষয়টি নিয়ে আমিসহ বাংলাদেশপন্থি ও ইসলামপন্থি ছাত্রসংগঠনগুলো প্রতিবাদ জানিয়েছি। আধিপত্য বিস্তারের রাজনীতি যেন আরও খারাপ পরিস্থিতিতে না যায় তা মোকাবিলা করতে অতিদ্রুত ডাকসু নির্বাচন জরুরি
স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংসদের আহ্বায়ক জামালুদ্দিন মোহাম্মদ খালিদ
ঢাবির ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী উম্মে ছালমা বলেন, ‘১৫ জুলাই ছাত্রলীগের হামলা আমাদের মনে ছাত্ররাজনীতি নিয়ে একটা ভীতির পরিবেশ তৈরি করেছে। নারী শিক্ষার্থী, সাংবাদিক বা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের নির্মম হামলার প্রতিবাদস্বরূপ প্রতিটি হলে ১৭ জুলাই ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়। তারপর হল ও ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে যায়। ৫ আগস্টের পর সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে আসলে অনেকে নতুনভাবে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ চান। ফলস্বরূপ নিষিদ্ধ হয় ছাত্রলীগের রাজনীতি। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায়, এতদিন যারা ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ নিয়ে সোচ্চার ছিলেন তারাই কোনো না কোনো দলে গিয়ে ছাত্ররাজনীতির যে নোংরা রূপ আছে সেটি প্রদর্শন করছেন।
ক্যাম্পাসে এখন পড়াশোনার চেয়ে রাজনীতিতে বেশি সময় অপচয় করা হচ্ছে। গ্রুপগুলোতে শিক্ষার্থীবান্ধব আলোচনার চেয়ে রাজনীতি নিয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে। ছাত্ররাজনীতির প্রতিনিধিদের উচিত শিক্ষার্থীদের অধিকার এবং তাদের শিক্ষার পরিবেশ উন্নয়নের জন্য কাজ করা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে সেই পুরানো রূপ। ছাত্ররাজনীতির নামে চলছে মাদারপার্টিকে সার্ভ করার প্রতিশ্রুতি। যেকোনো ইস্যুতে ন্যায়-নৈতিকতা বিবেচনা না করে মাদারপার্টির আশা-আকাঙ্ক্ষার ওপর প্রাধান্য দিচ্ছেন ছাত্রনেতারা। ভিন্ন মতাবলম্বীদের সঙ্গে তাদের আচরণ দিনদিন আক্রমণাত্মক হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ছাত্ররাজনীতি নিয়ে আমি ব্যক্তিগতভাবে আশাহত।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে ধর্মীয়-অধর্মীয় বিষয়গুলোকে ইস্যু বানানো হচ্ছে। এখানে আদর্শগত কিছু বিষয় আছে। একসঙ্গে অনেকগুলো ছাত্রসংগঠন মাঠে থাকলে কোনো একটি প্রতিদ্বন্দ্বীকে থামিয়ে দিতে পারলে কারও জন্য সুবিধা হয়। সেক্ষেত্রে মারমুখি পরিবেশ গ্রহণযোগ্য নয়। তবে, এটি চলে আসছে। এখন ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সবাই নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এটি শেষ হলে আশা করি দ্বন্দ্বমূলক রাজনীতি আর থাকবে না
আধিপত্যমূলক রাজনৈতিক প্রবণতা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের কর্মী আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে আমরা দেখেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটি ছাত্রসংগঠনের একক আধিপত্য ছিল। তখন অন্য কোনো ছাত্রসংগঠন ক্যাম্পাসে স্বাধীন ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারত না। ৫ আগস্টের পর আমরা ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু ধারার রাজনৈতিক পরিবেশ দেখতে পাচ্ছি। এখন সব ছাত্রসংগঠনের উচিত আধিপত্যমূলক রাজনীতি না করে সহনশীলতার রাজনীতি করা এবং অন্যান্য ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলা। ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে ভালো কাজের প্রতিযোগিতা সবার কাম্য।
৫ আগস্টের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি নিয়ে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির বিষয়ে ‘স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংসদ’-এর আহ্বায়ক জামালুদ্দিন মোহাম্মদ খালিদ বলেন, ‘৫ আগস্টের পর ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের অবর্তমানে ক্ষমতার যে ভ্যাকুয়াম (শূন্যতা) তৈরি হয়েছে, সেটি নিয়ে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে লড়াই করা ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগঠনগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্বের একটা আশঙ্কা শুরু থেকেই ছিল। আমাদের আকাঙ্ক্ষা ছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলন এমন রাজনীতি সামনে নিয়ে আসবে যার পরিপ্রেক্ষিতে আধিপত্য বিস্তারের জায়গাটা আমাদের সামনে আর উপস্থাপিত হবে না। কিন্তু শুরুতেই তারা নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি যত দেরিতে আশঙ্কা করা হচ্ছিল তা দ্রুতই প্রতিফলিত হতে শুরু করে।
রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনগুলোর উচিত এমন ধরনের রাজনৈতিক চর্চা গড়ে তোলা, যেখানে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন ও অগ্রাধিকারই হবে মূল লক্ষ্য। এজন্য সহনশীলতা ও সহাবস্থানের চর্চা অত্যন্ত জরুরি। কেন্দ্রীয় রাজনীতির সঙ্গে ছাত্রসংগঠনগুলোর সম্পৃক্ততা থাকতেই পারে, তবে তা শুধু সমর্থন ও আদর্শিক সংহতিতে সীমিত থাকা উচিত। এটি যেন শিক্ষাঙ্গনে দ্বন্দ্বের জন্ম না দেয়
এমন পরিস্থিতিতে সবকিছু স্থিতিশীল রাখতে ডাকসু নির্বাচন খুবই জরুরি। শিক্ষার্থীনির্ভর ছাত্রপ্রতিনিধি আনা এখন সময়ের দাবি। গত বছরের ডিসেম্বরে বলেছিলাম দ্রুত ডাকসু নির্বাচন না হলে ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হবে। এমনকি অফলাইনেও এর প্রভাব পড়বে। কিন্তু এ বিষয়ে বৃহৎ ছাত্রসংগঠনগুলো সেভাবে আগ্রহ দেখায়নি। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ধীরগতিও লক্ষ করা গেছে।
ইসলামপন্থি সংগঠনগুলোর সঙ্গে বাম সংগঠনগুলোর দ্বন্দ্বে জদিয়ে পড়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইসলামপন্থি ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে বামপন্থিদের দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে, বিষয়টি এমন নয়। এটিকে ছাত্রশিবিরের সঙ্গ ছাত্রদলের রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব বলা যায়। অন্যদিকে, ছাত্রদল ছাত্রশিবিরকে মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক লড়াইয়ে বাম ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে আওয়ামী কালচারাল ন্যারেটিভ গ্রহণ করেছে। বিষয়টি নিয়ে আমিসহ বাংলাদেশপন্থি ও ইসলামপন্থি ছাত্রসংগঠনগুলো প্রতিবাদ জানিয়েছি। আধিপত্য বিস্তারের রাজনীতি যেন আরও খারাপ পরিস্থিতিতে না যায় তা মোকাবিলা করতে অতিদ্রুত ডাকসু নির্বাচন জরুরি।’
ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে মতভেদ ও দ্বন্দ্ব থাকলেও সব সংগঠনের মধ্যে ‘সুস্থ রাজনীতি চর্চা’ জরুরি বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বর্তমান ছাত্ররাজনীতি প্রসঙ্গে সঙ্গে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদের। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি ছাত্রসংগঠনই চাইবে সবার চেয়ে সেরা হতে। সেজন্য তারা ভালো কাজের প্রতিযোগিতায় নামবে। এটি আমরা ইতিবাচক হিসেবেই দেখি।
এখন ক্যাম্পাসে একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রয়েছে। সবাই একটি প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশের মধ্যে আছে। তবে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ধর্মীয়-অধর্মীয় বিষয়গুলোকে ইস্যু বানানো হচ্ছে। এখানে আদর্শগত কিছু বিষয় আছে। একসঙ্গে অনেকগুলো ছাত্রসংগঠন মাঠে থাকলে কোনো একটি প্রতিদ্বন্দ্বীকে থামিয়ে দিতে পারলে কারও জন্য সুবিধা হয়। সেক্ষেত্রে মারমুখি পরিবেশ গ্রহণযোগ্য নয়। তবে, এটি চলে আসছে। এখন ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সবাই নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এটি শেষ হলে আশা করি দ্বন্দ্বমূলক রাজনীতি আর থাকবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, যখন ছাত্ররাজনীতি শিক্ষার্থীদের কল্যাণের পরিবর্তে কেন্দ্রীয় রাজনীতির স্বার্থ রক্ষায় ব্যবহৃত হয়, তখনই এর ভেতরে এক ধরনের অপসংস্কৃতি গড়ে ওঠে। আমাদের দেশের ছাত্ররাজনীতি আজ সেই কলুষতার শিকার। কারণ, এতে শিক্ষার্থীদের স্বার্থকে উপেক্ষা করে দলীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।
তার মতে, ‘রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনগুলোর উচিত এমন ধরনের রাজনৈতিক চর্চা গড়ে তোলা, যেখানে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন ও অগ্রাধিকারই হবে মূল লক্ষ্য। এজন্য সহনশীলতা ও সহাবস্থানের চর্চা অত্যন্ত জরুরি। কেন্দ্রীয় রাজনীতির সঙ্গে ছাত্রসংগঠনগুলোর সম্পৃক্ততা থাকতেই পারে, তবে তা শুধু সমর্থন ও আদর্শিক সংহতিতে সীমিত থাকা উচিত। এটি যেন শিক্ষাঙ্গনে দ্বন্দ্বের জন্ম না দেয়।
ঢাবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেন, ‘ক্ষমতার স্থান যখন শূন্য থাকে, তখন সবাই সেটি দখল করতে চায়। বর্তমানে প্রত্যেক ছাত্রসংগঠন তাদের রাজনৈতিক দলের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। তারা চায় ডাকসুর মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রভাব বিস্তার করতে। এই প্রতিযোগিতার ফলে একেকটি সংগঠন অন্যটির স্বার্থের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে দলের স্বার্থ প্রায়ই জনগণের স্বার্থকে ছাপিয়ে যায়। সেই একই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতিতেও। ছাত্রসংগঠনগুলোর নিজস্ব স্বার্থ বড় হয়ে উঠেছে শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত কল্যাণের চেয়ে। প্রত্যেকেই নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী কাজ করতে চাচ্ছে, ফলে সংঘাত-দ্বন্দ্ব বাড়ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে যদি সত্যিকার অর্থে গবেষণা ও জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে হয়, তাহলে রাজনৈতিক বা দলীয় সীমারেখা পেরিয়ে শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার ও প্রয়োজনের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীদের সার্বিক স্বার্থে দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে সবাইকে কাজ করতে হবে। এটিই এখন বেশি জরুরি।