ঢাকা ০৭:১৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ মে ২০২৪

দিনাজপুরে ৩২ হাজার ১১৭ মেট্রিক টন লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা

রাজু বিশ্বাস, দিনাজপুর থেকে
  • আপডেট সময় : ০৮:২৮:১৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ মে ২০২৪ ৩৩ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

বড় কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত না হানলে দিনাজপুরে লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরনের আশা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের। দিনাজপুর নামটি উচ্চারণ হলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে সুস্বাদু আর রসালো লিটুর চিত্র। মিষ্টি ও রসালো স্বাদ আর বৈশিষ্ট নিয়ে বিভিন্ন জাতের লিচুর বাড়ি দিনাজপুর। বেদানা, বোম্বাই, মাদ্রাজি, চায়না-থ্রি আর দেশী লিচু।

মাস খানেক আগেই মুকুলে মুকুলে ছেয়ে গিয়েছিল লিচু গাছের ডালপালা। গাছে গাছে শতকরা ৮৫ ভাগ মুকুল ধরেছিল। কিন্তু হঠাৎ অনাকাঙ্খিত বৃষ্টি প্রায় ৬০% লিচুর গুটিঁ ঝরে পড়ে। এমনটিই বলছে, দিনাজপুর কৃষি সম্পসারন অধিদপ্তর।

বৃষ্টির পর তীব্র তাপাদাহে লিচুর গুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমন পরিস্থিতিতেও দিনাজপুর জেলায় এবারের লিচুর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধূারণ করা হয়েছে ৩২ হাজার ১ শত ১৭ মেট্রিক টন। পাতা ভর্তি গাছের ডাল-পালা লিচুর গুঁিট কম দেখা যায়। দিনাজপুর সদরের মাসিমপুর, কসবা, বাশেরহাট, পুলহাট, পাঁচবাড়ি, বিরল উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলার লিচুর গাছে ডালে ডালে লিচুর গুঁটিঁ দেখা কম। কৃষিবিদরা বলছেন, ৫০ শতাংশ লিচুর গুঁিট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।


মাসিমপুরো মেম্বার পাড়ার লিচুর বাগানের মালিক মো. আকবর আলী জানান, ৫ বিঘা জমিতে তার লিচুর বাগান রয়েছে। সেখানে গাছের সংখ্যা প্রায় দেড়শ’। গাছে গাছে প্রচুর মুকুলের ধরেছিলো। তখন হঠাৎ বৃষ্টি হওয়াতে মুকুল ঝরে গিয়েছিল। এখন গাছে প্রায় ৪০ শতাংশ লিচুর গুটিঁ রয়েছে। সেচে ব্যয় প্রচুর। খরচ বহন করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এবারে লিচুর উৎপাদনের চাইতে খরচ বেশী পড়বে।

বিরল উপজেলার মাধবাটিতে ১০ বিঘার জমির উপর লিচুর বাগানের ইজারাদার মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ৩২ লক্ষ টাকায় তিন বৎসরের জন্য বাগানটি ইজারা নিয়েছেন। বাগানে ২২৫টি লিচু গাছ রয়েছে। তিনভাগ টাকার মধ্যে দুই বৎসরে দুইভাগ টাকা ওঠলেও এবার একভাগ টাকা উঠানো সম্ভব হবে না। তার বাগানে প্রায় ৪০ শতাংশ গুটিঁর দানা ধরেছে। এখনও কাল বৈশাখী ঝড়, ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়ে গেছে। রই মধ্যে লিচু বাগান বেচা-কেনা শুরু হয়েছে। ব্যবসা চলবে ৩ মাস।

১০ বছর আগেও দিনাজপুরে লিচু চাষের জমির পরিমান ছিল ১ হাজার ৫শ হেক্টর। সেখানে বৃদ্ধি পেয়ে দাড়িয়েছে ৫ হাজার ৪শ ৯০ হেক্টরে। কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর থেকে বলছে দিন দিন লিচুর ফলন এবং দাম ভাল পাওয়ায় লিচুর আবাদে আগ্রহী হয়ে ওঠছেন স্থানীয় কৃষক। জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (উদ্যান) মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, দিনাজপুর জেলায় ৫ হাজার ৪শত ৯০ হেক্টর জমিতে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৯ হাজার ৯৮টি লিচু বাগান রয়েছে। বাগান ছাড়াও কিছু সংখ্যক বাড়ী, বাড়ী সংলগ্ন জমিতে ২/৪টি করে লিচু গাছ রয়েছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানায়।

জৈষ্ঠ মাসের শেষভাগে মাদ্রাজি লিচু ওঠতে শুরু করবে এবং বাজারে পাওয়া যাবে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে এবারে কিছুটা লিচু ওঠতে দেরী হচ্ছে। দিনাজপুর জেলায় এবার প্রতি হেক্টরে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৮৫ মেট্রিক টন অর্থাৎ ৩২ হাজার ১ শত ১৬ মেট্রিক টন। দিনাজপুরের বিরলে সিংহভাগ লিচুর চাষাবাদ হচ্ছে। প্রায় ২ হাজার ৫ শত ৫৮ হেক্টর জমিতে লিচু বাগান রয়েছে।

উল্লেখ্য, এক দশক যাবত অবিশ্বাস্য গতিতে বৃহত্তর দিনাজপুরের বিভিন্ন উপজেলায় লিচু চাষাবাদ বেড়েছে। বিরল, পার্বতীপুর, চিরিরবন্দর, সদরসহ ও কাহারোল উপজেলাতে লিচুর চাষাবাদ বাড়ছে।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

দিনাজপুরে ৩২ হাজার ১১৭ মেট্রিক টন লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা

আপডেট সময় : ০৮:২৮:১৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ মে ২০২৪

 

বড় কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত না হানলে দিনাজপুরে লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরনের আশা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের। দিনাজপুর নামটি উচ্চারণ হলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে সুস্বাদু আর রসালো লিটুর চিত্র। মিষ্টি ও রসালো স্বাদ আর বৈশিষ্ট নিয়ে বিভিন্ন জাতের লিচুর বাড়ি দিনাজপুর। বেদানা, বোম্বাই, মাদ্রাজি, চায়না-থ্রি আর দেশী লিচু।

মাস খানেক আগেই মুকুলে মুকুলে ছেয়ে গিয়েছিল লিচু গাছের ডালপালা। গাছে গাছে শতকরা ৮৫ ভাগ মুকুল ধরেছিল। কিন্তু হঠাৎ অনাকাঙ্খিত বৃষ্টি প্রায় ৬০% লিচুর গুটিঁ ঝরে পড়ে। এমনটিই বলছে, দিনাজপুর কৃষি সম্পসারন অধিদপ্তর।

বৃষ্টির পর তীব্র তাপাদাহে লিচুর গুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমন পরিস্থিতিতেও দিনাজপুর জেলায় এবারের লিচুর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধূারণ করা হয়েছে ৩২ হাজার ১ শত ১৭ মেট্রিক টন। পাতা ভর্তি গাছের ডাল-পালা লিচুর গুঁিট কম দেখা যায়। দিনাজপুর সদরের মাসিমপুর, কসবা, বাশেরহাট, পুলহাট, পাঁচবাড়ি, বিরল উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলার লিচুর গাছে ডালে ডালে লিচুর গুঁটিঁ দেখা কম। কৃষিবিদরা বলছেন, ৫০ শতাংশ লিচুর গুঁিট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।


মাসিমপুরো মেম্বার পাড়ার লিচুর বাগানের মালিক মো. আকবর আলী জানান, ৫ বিঘা জমিতে তার লিচুর বাগান রয়েছে। সেখানে গাছের সংখ্যা প্রায় দেড়শ’। গাছে গাছে প্রচুর মুকুলের ধরেছিলো। তখন হঠাৎ বৃষ্টি হওয়াতে মুকুল ঝরে গিয়েছিল। এখন গাছে প্রায় ৪০ শতাংশ লিচুর গুটিঁ রয়েছে। সেচে ব্যয় প্রচুর। খরচ বহন করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এবারে লিচুর উৎপাদনের চাইতে খরচ বেশী পড়বে।

বিরল উপজেলার মাধবাটিতে ১০ বিঘার জমির উপর লিচুর বাগানের ইজারাদার মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ৩২ লক্ষ টাকায় তিন বৎসরের জন্য বাগানটি ইজারা নিয়েছেন। বাগানে ২২৫টি লিচু গাছ রয়েছে। তিনভাগ টাকার মধ্যে দুই বৎসরে দুইভাগ টাকা ওঠলেও এবার একভাগ টাকা উঠানো সম্ভব হবে না। তার বাগানে প্রায় ৪০ শতাংশ গুটিঁর দানা ধরেছে। এখনও কাল বৈশাখী ঝড়, ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়ে গেছে। রই মধ্যে লিচু বাগান বেচা-কেনা শুরু হয়েছে। ব্যবসা চলবে ৩ মাস।

১০ বছর আগেও দিনাজপুরে লিচু চাষের জমির পরিমান ছিল ১ হাজার ৫শ হেক্টর। সেখানে বৃদ্ধি পেয়ে দাড়িয়েছে ৫ হাজার ৪শ ৯০ হেক্টরে। কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর থেকে বলছে দিন দিন লিচুর ফলন এবং দাম ভাল পাওয়ায় লিচুর আবাদে আগ্রহী হয়ে ওঠছেন স্থানীয় কৃষক। জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (উদ্যান) মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, দিনাজপুর জেলায় ৫ হাজার ৪শত ৯০ হেক্টর জমিতে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৯ হাজার ৯৮টি লিচু বাগান রয়েছে। বাগান ছাড়াও কিছু সংখ্যক বাড়ী, বাড়ী সংলগ্ন জমিতে ২/৪টি করে লিচু গাছ রয়েছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানায়।

জৈষ্ঠ মাসের শেষভাগে মাদ্রাজি লিচু ওঠতে শুরু করবে এবং বাজারে পাওয়া যাবে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে এবারে কিছুটা লিচু ওঠতে দেরী হচ্ছে। দিনাজপুর জেলায় এবার প্রতি হেক্টরে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৮৫ মেট্রিক টন অর্থাৎ ৩২ হাজার ১ শত ১৬ মেট্রিক টন। দিনাজপুরের বিরলে সিংহভাগ লিচুর চাষাবাদ হচ্ছে। প্রায় ২ হাজার ৫ শত ৫৮ হেক্টর জমিতে লিচু বাগান রয়েছে।

উল্লেখ্য, এক দশক যাবত অবিশ্বাস্য গতিতে বৃহত্তর দিনাজপুরের বিভিন্ন উপজেলায় লিচু চাষাবাদ বেড়েছে। বিরল, পার্বতীপুর, চিরিরবন্দর, সদরসহ ও কাহারোল উপজেলাতে লিচুর চাষাবাদ বাড়ছে।