ফাঁকা ঢাকায় বেপরোয়া বাইক ৪ দিনে হাসপাতালে সহস্ত্রাধিক

- আপডেট সময় : ০৩:১৯:২৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ জুন ২০২৫ ৭৯ বার পড়া হয়েছে
ঈদের ছুটিতে রাজধানীতে বেড়েছে সড়ক দুর্ঘটনা। ফাঁকা রাস্তায় বেপরোয়া গতিই এর কারণ। গত ৪ দিনে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ১৯৫ জন। আহতদের বেশির ভাগই মোটরসাইকেল আরোহী। এছাড়া ঢাকার বাইরে আসা আহতরাও ভর্তি হয়েছেন রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালসহ একাধিক সরকারী হাসপাতালে। এদের মধ্যে সিংহভাগ রোগীর মাথায় ও হাত পায়ে জখম। বেপরোয়া বাইক চালানো ফলে এত দুর্ঘটনা ঘটেছে।
জানা গেছে, ঈদের ছুটিতে রাজধানীর রাস্তাঘাট অনেকটাই ফাঁকা। আর ফাঁকা রাস্তায় নিয়ম না মেনে বেপরোয়া গতিতে চলছে অনেক যানবাহন। বেড়েছে মোটরসাইকেল, অটোরিকশা ও অন্যান্য যানবাহনের দুর্ঘটনা। পঙ্গু হাসপাতাল নামে পরিচিত রাজধানীর অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) গত ৪ দিনে আহত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ১৯৫ জন। এর বেশিরভাগই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার এবং কমবয়সী।
এদিকে কোরবানীর ঈদের ছুটিকে কেন্দ্র করে সারাদেশেই ভয়াবহ আকারে বেড়েছে সড়ক দুর্ঘটনা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেপরোয়া চলাচলের কারণে ঘটা এসব সড়ক দুর্ঘটনার বেশিরভাগই মোটরসাইকেলজনিত। আর দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এসব রোগী এসে চিকিৎসা নিচ্ছেন রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান বা পঙ্গু হাসপাতালে (নিটোর)। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, ঈদকেন্দ্রীক বাড়তি রোগী আসায় পুরো হাসপাতালই এখন রোগীতে ঠাসা। রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান বা পঙ্গু হাসপাতাল ঘুরে ও রোগী-চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। হাসপাতালের গিয়ে কথা হয় রফিকুল ইসলাম নামের রোগীর এক স্বজনের সঙ্গে। তিনি জানান, ঈদের পরদিন মোটরসাইকেলে করে মামার বাড়ি যাচ্ছিল ৮ বছরের জিহাদ হোসেন। কিন্তু ভয়াবহ এক দুর্ঘটনায় মামার বাড়ি যাওয়ার বদলে এখন রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের বারান্দায় শুয়ে কাতরাচ্ছে সে। তার হাত-পাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যান্ডেজ। তার চিৎকারে হাসপাতালের আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠছে।
জানা গেছে, দুর্ঘটনায় তার বাবা রফিকুল ইসলামও সামান্য আহত হন, তবে সামান্য চিকিৎসা নিয়ে এখন তিনি সুস্থ হলেও এবার সন্তানকে নিয়ে চলছে চিকিৎসার লড়াই। হাসপাতালে ভর্তি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের বাসিন্দা নাহিদুল ইসলাম জানান, সোমবার রাতে মোটরসাইকেলে তিনি তার ভাইসহ বাজারে আসছিলেন, তখন পেছন দিক থেকে একটি বাস ধাক্কা দিলে তারা দুইজনই গুরুতর আহত হন। তবে তার ভাইয়ের আঘাত কিছুটা কম হলে তার অবস্থা খুবই খারাপ। হাসপাতালে শয্যা না পেয়ে ফ্লোরে শুয়ে ব্যথায় কাতরাচ্ছেন। তিনি জানান, গতকাল দুই পায়েই অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। এখন পা হারানোর শঙ্কায় আছেন তিনি।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঈদকেন্দ্রিক সড়ক দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হয়ে ঈদের দিনেই নিটোর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৪১ জন, পরদিন এসে ভর্তি হয়েছেন ৩৩০ জন। তবে গতকাল থেকে আজ পর্যন্ত রোগীর সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া না গেলেও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত দুই দিনের তুলনায় আজ রোগীর সংখ্যা আরও অনেক বেশি। আর আহত এসব রোগীদের মধ্যে বেশি রয়েছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার রোগী, এরপর প্রাইভেটকার, ট্রাক-বাস দুর্ঘটনার রোগী।
এদিকে রোগীদের সেবায় ঈদের সরকারি ছুটিতেও রোস্টার অনুযায়ী হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করছেন চিকিৎসক-নার্সসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য কর্মীরা। এবিষয়ে জানতে চাইলে নিটোর পরিচালক ডা. আবুল কেনান বলেন, ঈদকেন্দ্রীক যারা এখন হাসপাতালে ভর্তি আছে, তাদের মধ্যে অন্তত শ’খানেক আছেন সিরিয়াস ইনজুরড (মারাত্মক আহত)। তবে হাসপাতালে ভর্তির পর এখন পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় কোনো মৃত্যু নেই।
তিনি বলেন, ঈদের ছুটিতে আসা রোগীদের সেবায় কোনো ধরনের ব্যাঘাত যেন না ঘটে সেদিকে সর্বোচ্চ নজর দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালে রোস্টার অনুযায়ী টিম গঠন করা দেওয়া হয়েছে। ১০০ চিকিৎসক ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করবেন। হাসপাতালের সক্ষমতা অনুযায়ী রোগীরা সেবা পাবেন। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর চিকিৎসকসহ বিভিন্ন সেবা বেশি রাখা হয়েছে।
এই চিকিৎসক আরও বলেন, হাসপাতালটিতে ঈদের ছুটিতে নিয়মিত ওটি ২৮টি, জরুরি বিভাগে ওটি ৮টি খোলা থাকবে। সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকবে আটটি ওটি। এছাড়া প্রয়োজনে অন্যান্য সহযোগিতা নেওয়া হয়। রোগীর সংখ্যা বেশি হলে তা যেন সামাল দেওয়া যায়, কেননা সবাই প্রত্যাশা নিয়ে সেবা নিতে আসেন। তবে সবাইকে অনুরোধ চলাচলে সাবধান থাকার জন্য। তাতে রোগী সংখ্যা কমবে। ঈদের গাড়িগুলো অনিয়ন্ত্রিতভাবে চলাফেরা করে, এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকা প্রয়োজন।
চিকিৎসা নিতে এসে বিড়ম্বনার শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছেন আহতরা। ঈদের ছুটির কারণে কম লোকবল নিয়ে বাড়তি চাপ সামলানো হচ্ছে বলে দাবি হাসপাতাল কর্মীদের। এরপরও পূর্ণ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতের চেষ্টার কথা জানান হাসপাতালটির পরিচালক।
নিটোরের পরিচালক ডা: মো: আবুল কেনান বলেন, ‘মোটরসাইকেল, অটোরিকশা এ ধরনের দুর্ঘটনার রোগীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি। আর অন্যান্য দুর্ঘটনা তো সেই সাথে আছেই। আমাদের এখানে জরুরি টিম সার্বক্ষণিক, ২৪ ঘণ্টা কাজ করছে। প্রতি শিফটে ১৫ জন করে থাকে। আমরা সকলের সহযোগিতায় ম্যানেজ করতে পারছি। দুর্ঘটনা এড়াতে ফাঁকা রাস্তায় দ্রুত ও বেপরোয়া গতিতে বাইকসহ অন্যান্য যানবাহন না চালানোর পরামর্শ চিকিৎসকদের।