বইছে নির্বাচনী হাওয়া

- আপডেট সময় : ১০:২২:২৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫ ৭৯ বার পড়া হয়েছে
দীর্ঘ ১৭ বছর ভোট দিতে পারেনি বাংলাদেশের জনগণ। এবার অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট দিতে উন্মুখ গোটা জাতি। জনবান্ধব নির্বাচিত সরকার পেতে আবার ভোট উৎসবে মাতবে জনগণ। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী ফেব্রুয়ারিতেই হতে যাচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। রাজনীতির আকাশ থেকে কেটে গেছে কালো মেঘ। লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর বইতে শুরু করেছে নির্বাচনী হাওয়া।
লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে তারেক রহমান আগামী বছরের রমজানের আগে নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রস্তাব দেন। সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতির ওপর জোর দিলেও প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ২০২৬ সালের রমজান শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠকের পর আগামী নির্বাচন নিয়ে যে সন্দেহ-সংশয় ছিল তা কেটে গেছে। তারা বলছেন, ওই বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে সমঝোতা হওয়ায় দেশজুড়ে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ও তারেক রহমানের মধ্যে যে বৈঠক হয়েছে তা খুবই ইতিবাচক। সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন দেশের জন্য মঙ্গল। শুধু একটি রাজনৈতিক দল নয়, নির্বাচন হতে হবে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) শিগগিরই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবে, লন্ডনে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমানের এ কথা জানানোর পর এখন সবার চোখ কমিশনের দিকে। ইসি সূত্র বলছে, অনানুষ্ঠানিকভাবে এ নিয়ে কমিশন কার্যালয়ে বসার কথা রয়েছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের।
এদিকে আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে রাজনৈতিক দলগুলো। মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপও শুরু করেছেন বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আগ্রহী প্রার্থীরা। প্রার্থী চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে অন্য সব দলের চেয়ে এগিয়ে আছে সংস্কারের দাবিতে সোচ্চার থাকা জামায়াতে ইসলামী।
তৃণমূলে সভা-সমাবেশ, উঠান বৈঠকসহ নানাভাবে ভোটারদের কাছে টানার চেষ্টা করছেন বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। ব্যানার, ফেস্টুনসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চলছে প্রচার-প্রচারণা। আগামী নির্বাচনে জয়ী হতে ভেতরে ভেতরে জোরালো প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে রাজনৈতিক দলগুলো। প্রার্থী বাছাইয়ের পাশাপাশি নির্বাচনী ছক কষতে শুরু করেছে বিএনপি-জামায়াতসহ রাজনৈতিক দলগুলো। নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থী কারা হবেন তা নিয়েও বিএনপিসহ অন্যান্য দল কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ে খোঁজখবর চালিয়ে যাচ্ছে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের আমলনামা পর্যালোচনা চলছে। ক্লিন ইমেজ, দলের প্রতি ত্যাগ, স্থানীয় পর্যায়ে জনসমর্থন ও গ্রহণযোগ্যতা, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সঙ্গে জিতে আসার সম্ভাবনা- এসব বিষয়ে চলছে বিশ্লেষণ, পর্যালোচনা।
গণহত্যার বিচার, সংস্কার এবং জুলাই সনদ ঘোষণাকে গুরুত্বসহকারে অগ্রাধিকার দিলেও ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন নিয়ে কোনো আপত্তি নেই জামায়াতে ইসলামীর। জামায়াত ইতোমধ্যে ৩০০ আসনে তাদের সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করেছে। ওই প্রার্থীরা ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন ধরেই নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় কাজ করছেন বলে দলটির সূত্রে জানা গেছে।
আগামী নির্বাচন নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আমরা দীর্ঘদিন বিভিন্ন দাবিতে ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে আন্দোলন করেছি। তার মধ্যে অন্যতম ছিল অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন। আর এই নির্বাচনের জন্যই মানুষ অপেক্ষা করছে। নির্বাচন কেন্দ্র করে দেশব্যাপী উৎসাহ উদ্দীপনা বিরাজ করবে এটাই স্বাভাবিক। আগামী নির্বাচনের যে দামামা বেজে উঠেছে তা বাস্তবে প্রতিফলিত হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি। জাতীয় নির্বাচনের জন্য আগামী ফেব্রুয়ারি মাসই উপযুক্ত সময় বলে মনে করেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি। তিনি বলেন, লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বৈঠকের পর সারা দেশে যে উচ্ছ্বাস উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে, তাতেই প্রমাণিত হয় মানুষ একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কতটা অপেক্ষায় আছে। নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে এ্যানি বলেন, নির্বাচন নিয়ে দুই একটি রাজনৈতিক দল কিছুটা কৌশলী মন্তব্য করছে। তবে অধিকাংশ দল নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। দেশের মানুষ প্রায় ১৬ বছর অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চেখে দেখেনি উল্লেখ করে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করা বেশ ভালো লক্ষণ। দীর্ঘদিন জনগণ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও উন্নতি ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার গণতান্ত্রিক মনোভাব খুব শক্তিশালী না হলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন বেশ কঠিন হবে বলে মনে করেন মঞ্জু। তিনি বলেন, প্রশাসন ও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে অনেকেই এখনও সংশয়ে আছেন। আমরা আশা করবো, সরকার এ ব্যাপারে খুব সচেষ্ট হবে।
ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি বেছে নিতে জনগণ মুখিয়ে আছে মন্তব্য করে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান বলেন, বাংলাদেশের মানুষ দীর্ঘদিন ভোট দিতে পারেনি। বিগত ৩টি জাতীয় নির্বাচনের ফল আওয়ামী লীগ এবং ভারত থেকে পূর্ব নির্ধারিত ছিল। উৎসবমুখর নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেইং ফিল্ড প্রয়োজন মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, আশা করি আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য এবং ভারতীয় প্রভাবমুক্ত।