ঢাকা ১২:১৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ০২ জুন ২০২৫

বাজেটে থাকছে শুল্ক ও কর সংস্কারে ব্যাপক উদ্যোগ

ইব্রাহিম খলিল
  • আপডেট সময় : ১১:২২:৪১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩১ মে ২০২৫ ২৩ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ কাল ঘোষণা করবেন

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ কাল সোমবার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করবেন। বাজেটে ব্যাপক শুল্ক ও কর সংস্কারের উদ্যোগ নিচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এতে এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যবসা সহজীকরণ ও রাজস্ব আদায়ে জোর দেয়া হবে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নতুন বাজেটে ৬২২টি পণ্যে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার বা হ্রাস এবং ১০০টি পণ্যে কাস্টমস ডিউটি কমানোর প্রস্তাব করা হচ্ছে। উপকৃত পণ্যের তালিকায় রয়েছে কোল্ড স্টোরেজ যন্ত্রপাতি, পেপার পণ্য, বাস, নিউজপ্রিন্ট, ক্যান্সার চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং ওষুধ ও পরিবেশবান্ধব পণ্যের কাঁচামাল।
এছাড়া তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ও ওষুধ শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামালের ওপর শুল্ক অব্যাহতির প্রস্তাবও থাকছে। আমদানি ঘোষণায় ভুল থাকলে বর্তমানে ৪০০ শতাংশ শাস্তির পরিবর্তে তা কমিয়ে ২০০ শতাংশ করার সুপারিশ করা হয়েছে, যাতে ব্যবসায়িক পরিবেশ আরও সহনশীল হয়।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে এনবিআর ১০০টি পণ্যে শূন্য শুল্কের প্রস্তাব আনছে। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে টেক্সটাইল খাতের কাঁচামাল, শিল্প যন্ত্রপাতি এবং সামরিক সরঞ্জাম।
ক্যান্সার, কিডনি ও হৃদরোগের ওষুধ উৎপাদনে ব্যবহৃত ৭৯টি নতুন কাঁচামালকে শুল্কমুক্ত তালিকায় আনা হচ্ছে। এতে দেশে চিকিৎসা ব্যয় হ্রাস এবং স্বাস্থ্যসেবার গুণগত মান উন্নত হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
কৃষিপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে কোল্ড স্টোরেজ যন্ত্রপাতির (বিশেষ করে কম্প্রেসর) ওপর শুল্ক ছাড় দেওয়া হচ্ছে। খেলনা ও ক্রিকেট ব্যাট তৈরির কাঁচামালে শুল্ক কমানোর পাশাপাশি প্রস্তুত খেলনার আমদানি শুল্কমূল্য নির্ধারণ করা হচ্ছে প্রতি কেজি ৪ ডলার। উইলো কাঠের (ক্রিকেট ব্যাট তৈরির জন্য জনপ্রিয় কাঠ) শুল্ক ৩৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৬ শতাংশ করার প্রস্তাবও থাকছে।
ঢাকার যানজট নিরসনে ১৬ থেকে ৪০ আসনের বাস আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হচ্ছে। মাইক্রোবাসে (১০-১৫ আসন) সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
পরিশোধিত চিনির ওপর নির্দিষ্ট শুল্ক ৪ হাজার ৫০০ টাকা থেকে কমিয়ে ৪ হাজার টাকা প্রতি টন করার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা বাজারে দামের ভারসাম্য রক্ষায় সহায়ক হবে।
দেশীয় সফটওয়্যার রফতানিতে উৎসাহ দিতে সফটওয়্যার উন্নয়ন সরঞ্জাম, অপারেটিং সিস্টেম, ডেটাবেস এবং সিকিউরিটি সফটওয়্যারের আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব আনা হচ্ছে।
অপরিহার্য খাতে শুল্ক ছাড়ের পাশাপাশি বিলাসপণ্যে শুল্ক মূল্য বৃদ্ধি করা হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, লিপস্টিক ও ফেসওয়াশের ন্যূনতম শুল্ক মূল্য দ্বিগুণ করে প্রতি কেজি ৪০ ডলার করা হচ্ছে। চকোলেটের ক্ষেত্রেও একই ধরনের মূল্যবৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে।
ব্যবসা ও জরুরি সেবায় ব্যবহৃত হেলিকপ্টার আমদানিতে শুল্ক ১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
শিল্প ও বিদ্যুৎ খাতে উৎপাদন ব্যয় হ্রাসে এলএনজি আমদানিতে ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) মওকুফ করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
রাজস্ব আয় বাড়াতে আসন্ন বাজেটে আয়কর কাঠামোয় একাধিক পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে সরকার। উচ্চ আয়ের ব্যক্তিদের জন্য পুনরায় ৩০ শতাংশ করহার চালুর সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি আয়ের বিভিন্ন স্তর অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন করহার নির্ধারণ করে ধাপে বাড়তে থাকা হারে (গ্র্যাজুয়েটেড) কর কাঠামো চালুর চিন্তা-ভাবনাও রয়েছে। ফলে স্বল্প আয়ের করদাতাদের তুলনায় উচ্চ আয়ের করদাতাদের ওপর করের চাপ বেশি পড়বে।
উল্লেখ্য, এই বাজেটের মূল লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশকে এলডিসি পরবর্তী প্রতিযোগিতামূলক অর্থনীতিতে রূপান্তরিত করা। একইসঙ্গে রাজস্ব আহরণ, শিল্পোন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা ও ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নয়নে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

বাজেটে থাকছে শুল্ক ও কর সংস্কারে ব্যাপক উদ্যোগ

আপডেট সময় : ১১:২২:৪১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩১ মে ২০২৫

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ কাল ঘোষণা করবেন

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ কাল সোমবার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করবেন। বাজেটে ব্যাপক শুল্ক ও কর সংস্কারের উদ্যোগ নিচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এতে এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যবসা সহজীকরণ ও রাজস্ব আদায়ে জোর দেয়া হবে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নতুন বাজেটে ৬২২টি পণ্যে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার বা হ্রাস এবং ১০০টি পণ্যে কাস্টমস ডিউটি কমানোর প্রস্তাব করা হচ্ছে। উপকৃত পণ্যের তালিকায় রয়েছে কোল্ড স্টোরেজ যন্ত্রপাতি, পেপার পণ্য, বাস, নিউজপ্রিন্ট, ক্যান্সার চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং ওষুধ ও পরিবেশবান্ধব পণ্যের কাঁচামাল।
এছাড়া তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ও ওষুধ শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামালের ওপর শুল্ক অব্যাহতির প্রস্তাবও থাকছে। আমদানি ঘোষণায় ভুল থাকলে বর্তমানে ৪০০ শতাংশ শাস্তির পরিবর্তে তা কমিয়ে ২০০ শতাংশ করার সুপারিশ করা হয়েছে, যাতে ব্যবসায়িক পরিবেশ আরও সহনশীল হয়।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে এনবিআর ১০০টি পণ্যে শূন্য শুল্কের প্রস্তাব আনছে। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে টেক্সটাইল খাতের কাঁচামাল, শিল্প যন্ত্রপাতি এবং সামরিক সরঞ্জাম।
ক্যান্সার, কিডনি ও হৃদরোগের ওষুধ উৎপাদনে ব্যবহৃত ৭৯টি নতুন কাঁচামালকে শুল্কমুক্ত তালিকায় আনা হচ্ছে। এতে দেশে চিকিৎসা ব্যয় হ্রাস এবং স্বাস্থ্যসেবার গুণগত মান উন্নত হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
কৃষিপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে কোল্ড স্টোরেজ যন্ত্রপাতির (বিশেষ করে কম্প্রেসর) ওপর শুল্ক ছাড় দেওয়া হচ্ছে। খেলনা ও ক্রিকেট ব্যাট তৈরির কাঁচামালে শুল্ক কমানোর পাশাপাশি প্রস্তুত খেলনার আমদানি শুল্কমূল্য নির্ধারণ করা হচ্ছে প্রতি কেজি ৪ ডলার। উইলো কাঠের (ক্রিকেট ব্যাট তৈরির জন্য জনপ্রিয় কাঠ) শুল্ক ৩৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৬ শতাংশ করার প্রস্তাবও থাকছে।
ঢাকার যানজট নিরসনে ১৬ থেকে ৪০ আসনের বাস আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হচ্ছে। মাইক্রোবাসে (১০-১৫ আসন) সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
পরিশোধিত চিনির ওপর নির্দিষ্ট শুল্ক ৪ হাজার ৫০০ টাকা থেকে কমিয়ে ৪ হাজার টাকা প্রতি টন করার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা বাজারে দামের ভারসাম্য রক্ষায় সহায়ক হবে।
দেশীয় সফটওয়্যার রফতানিতে উৎসাহ দিতে সফটওয়্যার উন্নয়ন সরঞ্জাম, অপারেটিং সিস্টেম, ডেটাবেস এবং সিকিউরিটি সফটওয়্যারের আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব আনা হচ্ছে।
অপরিহার্য খাতে শুল্ক ছাড়ের পাশাপাশি বিলাসপণ্যে শুল্ক মূল্য বৃদ্ধি করা হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, লিপস্টিক ও ফেসওয়াশের ন্যূনতম শুল্ক মূল্য দ্বিগুণ করে প্রতি কেজি ৪০ ডলার করা হচ্ছে। চকোলেটের ক্ষেত্রেও একই ধরনের মূল্যবৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে।
ব্যবসা ও জরুরি সেবায় ব্যবহৃত হেলিকপ্টার আমদানিতে শুল্ক ১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
শিল্প ও বিদ্যুৎ খাতে উৎপাদন ব্যয় হ্রাসে এলএনজি আমদানিতে ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) মওকুফ করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
রাজস্ব আয় বাড়াতে আসন্ন বাজেটে আয়কর কাঠামোয় একাধিক পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে সরকার। উচ্চ আয়ের ব্যক্তিদের জন্য পুনরায় ৩০ শতাংশ করহার চালুর সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি আয়ের বিভিন্ন স্তর অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন করহার নির্ধারণ করে ধাপে বাড়তে থাকা হারে (গ্র্যাজুয়েটেড) কর কাঠামো চালুর চিন্তা-ভাবনাও রয়েছে। ফলে স্বল্প আয়ের করদাতাদের তুলনায় উচ্চ আয়ের করদাতাদের ওপর করের চাপ বেশি পড়বে।
উল্লেখ্য, এই বাজেটের মূল লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশকে এলডিসি পরবর্তী প্রতিযোগিতামূলক অর্থনীতিতে রূপান্তরিত করা। একইসঙ্গে রাজস্ব আহরণ, শিল্পোন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা ও ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নয়নে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।