ঢাকা ১১:৫১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫

বালু খোর ফারুকের কাছে জিম্মি হরিরামপুরের হাজারো কৃষক

পার্বতীপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ২৬ বার পড়া হয়েছে

oppo_2

দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নীতিমালার তোয়াক্কা না করে পার্বতীপুরে তিন ফসলি জমির মাটি যাচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। জমির ওপরের অংশ অর্থাৎ টপ সয়েল ইটভাটায় যাওয়ায় জমির উর্বরতা হারাচ্ছে। এতে করে খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা করছে কৃষি বিভাগ। দ্রæত ইটভাটার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে আগামীতে খাদ্য ঘাটতিসহ ফসলি জমি হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করছেন সচেতনরা।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, পার্বতীপুর উপজেলায় প্রায় ৫২টি ইটভাটা আছে। যার অধিকাংশেরই পরিবেশ অধিদফতরের কোনো ছাড়পত্র নাই।
ইট তৈরির প্রধান কাঁচামাল মাটি। ফসলি জমির মাটি ইট তৈরিতেও সুবিধা। এছাড়া হাতের নাগালে হওয়ায় কৃষকদের বিভিন্ন ভাবে বুঝিয়ে এ মাটি কিনে নেয় একটি পক্ষ। এরপর তারা বেশি দামে ইটভাটায় সরবরাহ করে থাকেন।
মাটি বিক্রি করায় ফসলি জমির উপরিভাগের মাটিতে যে জিপসাম বা দস্তা থাকে তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া মাটিতে যে জীবানু থাকে এবং অনুজীবের কার্যাবলি আছে তা সীমিত হয়ে যাচ্ছে। এতে করে দিন দিন ফসলি জমিতে উৎপাদন ক্ষমতা কমছে। মাটির জৈব শক্তি কমে গিয়ে দীর্ঘ মেয়াদী ক্ষতির মুখে পড়বে। আর এভাবে ফসলি জমির মাটি ইট ভাটায় যেতে থাকলে আস্তে আস্তে ফসল উৎপাদন ব্যহত হবে।
উপজেলার দোলাইকোটা গ্রামের কৃষক হোসেন ও সোহেল বলেন, মূলত ফসলি জমির উপরের অংশের মাটি ইটভাটায় বিক্রি করা হয়ে থাকে। এতে করে দেড় থেকে দুই বছর ওই জমিতে তেমন ফসল উৎপাদন হয় না। তবে প্রচুর পরিমাণ জৈব্য সার, খৈল, জিপসাম, ফসফেট ও পটাসসহ বিভিন্ন সার ব্যবহার করা হলে আগের মতো আবাদ হয়ে থাকে
উপজেলার মেসার্স একেবি বিক্সস’র মালিক আবুল কালাম বলেন, নদী ও পরিত্যাক্ত স্থানের মাটি ইটভাটায় ব্যবহার করা হয়। তবে নদীর মাটিতে বালুর পরিমাণ বেশি থাকায় ইট ভালো হয় না। নদীর মাটির সঙ্গে সামান্য পরিমাণ ফসলি জমির মাটি মিশিয়ে ইট তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়।
পার্বতীপুর কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক বলেন, এভাবে ফসলি জমির মাটি ইটভাটায় যেতে থাকলে আস্তে আস্তে ফসল উৎপাদন ব্যহত হবে। কমপক্ষে ২/৩ বছর ওই জমি থেকে ভালো ফলন আশা করা যায় না। এতে করে আগামীতে খাদ্য ঘাটতির সম্ভবনা রয়েছে।
উপজেলার হরিরামপুর উত্তরা গ্রামের ফারুক হোসেন ঐ এলাকায় তিন ফসলি আবাদি জমি থেকে ১০/১৫/ফিট গর্ত করে বালি ইটের ভাটায় দিচ্ছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেও প্রতিকার পাচ্ছে না কৃষকেরা।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কৃষক বলেন যাকে অভিযোগ করিননা কেন ফারুক টাকা দিয়ে সব ম্যানেজ করে বালি তুলে। মাঝে মধ্যে উপজেলা থেকে অভিযান করে জরিমানা করেও তার বালুর পয়েন্ট বন্ধ হয়না। বালু খোর ফারুকের কাছে আমরা জিম্মি কেননা পাশের জমি থেকে বালু উত্তোলন করলে অটোমেটিক পাশের আর সব জমি ধসে যায় তখন বাধ্য হয়ে জমির মাটি বালু দুটোই তার কাছে বিক্রি করতে হয়।
এবিষয়ে বালু খোর ফারুকের সাথে কথা বললে সে বলে আপনাদের মত সাংবাদিকরা আমার কিছুই করতে পারবেনা থানা, পুলিশ, এসিল্যান্ড আমার পকেটে। আপনার কি করার আছে করেন।
পার্বতীপুর নির্বাহী অফিসার মো. সাদ্দাম হোসেন বলেন, ইট ভাটাগুলোতে নিয়মিত অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে সেই ফসলি জমি থেকে ইটভাটায় মাটি না নেয়ার জন্য ইট ভাটা ও মাটি ব্যবসাহীদের সতর্ক করা হয়েছে এর পর মাটি কাটা বন্ধ না করলে অভিযান চলমান থাকবে।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

বালু খোর ফারুকের কাছে জিম্মি হরিরামপুরের হাজারো কৃষক

আপডেট সময় :

নীতিমালার তোয়াক্কা না করে পার্বতীপুরে তিন ফসলি জমির মাটি যাচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। জমির ওপরের অংশ অর্থাৎ টপ সয়েল ইটভাটায় যাওয়ায় জমির উর্বরতা হারাচ্ছে। এতে করে খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা করছে কৃষি বিভাগ। দ্রæত ইটভাটার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে আগামীতে খাদ্য ঘাটতিসহ ফসলি জমি হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করছেন সচেতনরা।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, পার্বতীপুর উপজেলায় প্রায় ৫২টি ইটভাটা আছে। যার অধিকাংশেরই পরিবেশ অধিদফতরের কোনো ছাড়পত্র নাই।
ইট তৈরির প্রধান কাঁচামাল মাটি। ফসলি জমির মাটি ইট তৈরিতেও সুবিধা। এছাড়া হাতের নাগালে হওয়ায় কৃষকদের বিভিন্ন ভাবে বুঝিয়ে এ মাটি কিনে নেয় একটি পক্ষ। এরপর তারা বেশি দামে ইটভাটায় সরবরাহ করে থাকেন।
মাটি বিক্রি করায় ফসলি জমির উপরিভাগের মাটিতে যে জিপসাম বা দস্তা থাকে তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া মাটিতে যে জীবানু থাকে এবং অনুজীবের কার্যাবলি আছে তা সীমিত হয়ে যাচ্ছে। এতে করে দিন দিন ফসলি জমিতে উৎপাদন ক্ষমতা কমছে। মাটির জৈব শক্তি কমে গিয়ে দীর্ঘ মেয়াদী ক্ষতির মুখে পড়বে। আর এভাবে ফসলি জমির মাটি ইট ভাটায় যেতে থাকলে আস্তে আস্তে ফসল উৎপাদন ব্যহত হবে।
উপজেলার দোলাইকোটা গ্রামের কৃষক হোসেন ও সোহেল বলেন, মূলত ফসলি জমির উপরের অংশের মাটি ইটভাটায় বিক্রি করা হয়ে থাকে। এতে করে দেড় থেকে দুই বছর ওই জমিতে তেমন ফসল উৎপাদন হয় না। তবে প্রচুর পরিমাণ জৈব্য সার, খৈল, জিপসাম, ফসফেট ও পটাসসহ বিভিন্ন সার ব্যবহার করা হলে আগের মতো আবাদ হয়ে থাকে
উপজেলার মেসার্স একেবি বিক্সস’র মালিক আবুল কালাম বলেন, নদী ও পরিত্যাক্ত স্থানের মাটি ইটভাটায় ব্যবহার করা হয়। তবে নদীর মাটিতে বালুর পরিমাণ বেশি থাকায় ইট ভালো হয় না। নদীর মাটির সঙ্গে সামান্য পরিমাণ ফসলি জমির মাটি মিশিয়ে ইট তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়।
পার্বতীপুর কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক বলেন, এভাবে ফসলি জমির মাটি ইটভাটায় যেতে থাকলে আস্তে আস্তে ফসল উৎপাদন ব্যহত হবে। কমপক্ষে ২/৩ বছর ওই জমি থেকে ভালো ফলন আশা করা যায় না। এতে করে আগামীতে খাদ্য ঘাটতির সম্ভবনা রয়েছে।
উপজেলার হরিরামপুর উত্তরা গ্রামের ফারুক হোসেন ঐ এলাকায় তিন ফসলি আবাদি জমি থেকে ১০/১৫/ফিট গর্ত করে বালি ইটের ভাটায় দিচ্ছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেও প্রতিকার পাচ্ছে না কৃষকেরা।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কৃষক বলেন যাকে অভিযোগ করিননা কেন ফারুক টাকা দিয়ে সব ম্যানেজ করে বালি তুলে। মাঝে মধ্যে উপজেলা থেকে অভিযান করে জরিমানা করেও তার বালুর পয়েন্ট বন্ধ হয়না। বালু খোর ফারুকের কাছে আমরা জিম্মি কেননা পাশের জমি থেকে বালু উত্তোলন করলে অটোমেটিক পাশের আর সব জমি ধসে যায় তখন বাধ্য হয়ে জমির মাটি বালু দুটোই তার কাছে বিক্রি করতে হয়।
এবিষয়ে বালু খোর ফারুকের সাথে কথা বললে সে বলে আপনাদের মত সাংবাদিকরা আমার কিছুই করতে পারবেনা থানা, পুলিশ, এসিল্যান্ড আমার পকেটে। আপনার কি করার আছে করেন।
পার্বতীপুর নির্বাহী অফিসার মো. সাদ্দাম হোসেন বলেন, ইট ভাটাগুলোতে নিয়মিত অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে সেই ফসলি জমি থেকে ইটভাটায় মাটি না নেয়ার জন্য ইট ভাটা ও মাটি ব্যবসাহীদের সতর্ক করা হয়েছে এর পর মাটি কাটা বন্ধ না করলে অভিযান চলমান থাকবে।