ঢাকা ১২:৩৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫

বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য একই শ্রম আইনের দাবি

স্টাফ রিপোর্টার
  • আপডেট সময় : ০৫:৪৭:৫৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫ ২৮ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

দেশের সব অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইজেড) ও রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ইপিজেড) সব শ্রমিককে একই শ্রম আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন শ্রমিক নেতারা। একই সঙ্গে আগামী ২০ রমজানের মধ্যে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।

আজ (১৬ মার্চ) রোববার রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত “আইএলও রোডম্যাপ বাস্তবায়নে বাংলাদেশের অগ্রগতি: ট্রেড ইউনিয়নের প্রত্যাশা” শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়।

যৌথভাবে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করেছে ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ইউনিয়ন কনফেডারেশন (আইটিইউসি) বাংলাদেশ কাউন্সিল, ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিল এবং পিএসআই-এনসিসি ফর বাংলাদেশ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আইটিইউসি বাংলাদেশ কাউন্সিলের সেক্রেটারি জেনারেল সাকিল আখতার চৌধুরী। আরো বক্তব্য দেন ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিলের জেনারেল সেক্রেটারি শহিদুল্লাহ বাদল।

লিখিত বক্তব্যে সাকিল আখতার চৌধুরী বলেন, বর্তমান সরকার সব ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করার ওপরে জোর দিচ্ছে। আমরাও সেটি চাই। এজন্য শ্রম আইনের বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কার প্রস্তাব করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চল বা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের মত বিশেষ অঞ্চলগুলোতে আলাদা শ্রম আইন রয়েছে। আমরা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের সব শ্রমিককে একই শ্রম আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।

সংবাদ সম্মেলনে ঈদের সময় শ্রম অসন্তোষের আশঙ্কা রয়েছে কিনা এমন প্রশ্ন করেন সাংবাদিকেরা। জবাবে শহিদুল্লাহ বাদল জানান, ঈদকে সামনে রেখে গত সপ্তাহে শ্রম মন্ত্রণালয়ে মালিক, শ্রমিক ও সরকারের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ত্রিপক্ষীয় সভা হয়েছে। সেখানে মালিকপক্ষ আগামী ২০ রমজানের মধ্যে গত ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন ও ঈদ বোনাস দেওয়ার বিষয়ে রাজি হয়েছে।

শহিদুল্লাহ বাদল বলেন, যদি সঠিক সময়ে বেতন-বোনাস দিয়ে দেওয়া হয় তাহলে একটি জায়গায়ও শ্রম অসন্তোষ হবে না। আর ঠিক সময়ে বেতন-বোনাস না পেলে শ্রমিকেরা বিক্ষুব্ধ হতেই পারেন। সে ক্ষেত্রে এর দায়দায়িত্ব সরকার ও কারখানা মালিকদের নিতে হবে।

এ প্রসঙ্গে সাকিল আখতার চৌধুরী বলেন, গত ছয় মাসে বেশ কিছু জায়গায় আমরা শ্রম অসন্তোষ দেখেছি। দেখা গেছে ক্ষেত্রেই ঠিকভাবে মজুরি না পাওয়ায় শ্রমিকেরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। আবার এক জায়গায় অসন্তোষ হলে সেটি ছড়িয়ে যায়। সুতরাং নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দিয়ে দেওয়া উচিত হবে। এ ছাড়া যেসব কারখানা আর্থিকভাবে দুর্বল রয়েছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে শ্রমিকদের বেতন বোনাস কীভাবে দেওয়া হবে সেই দায়-দায়িত্ব বিজিএইএ বা বিকেএমইএর মতো সংগঠন তথা মালিকপক্ষকে নিতে হবে। আর ঈদের আগে হঠাৎ করে কোন কারখানা বন্ধ করা যাবে না।

আগামীকাল সোমবার (১৭ মার্চ) সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) গভর্নিং বডির সভায় বাংলাদেশের সরকারের দাখিল করা আইএলও রোডম্যাপ বাস্তবায়নের সর্বশেষ অগ্রগতির প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা হবে। ওই সভাকে সামনে রেখে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে আইটিইউসি বাংলাদেশ কাউন্সিলের সেক্রেটারি জেনারেল সাকিল আখতার চৌধুরী জানান, বর্তমান সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিলেও এখন পর্যন্ত দেশে শ্রমিকদের অধিকার পরিস্থিতির প্রকৃত উন্নয়ন তেমন একটা দৃশ্যমান নয়। এ অবস্থায় আইএলওর সভায় বাংলাদেশ সরকারের প্রতিবেদন কতটুকু বাস্তব চিত্রকে তুলে ধরবে তা বড় প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

সার্বিক পরিস্থিতিতে সরকারের কাছে বিবেজনার জন্য বেশ কিছু সুপারিশ করেছে শ্রমিক সংগঠন তিনটি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- শ্রমিক সংজ্ঞা বিস্তৃত করতে হবে যাতে শ্রম আইন সুরক্ষা সকল শ্রমিকের জন্য প্রযোজ্য হয়; সকল শ্রমিকের জন্য পরিচয়পত্র ও নিয়োগপত্র বাধ্যতামূলক করতে হবে; সরকারি বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানের জন্য সমান ২৪ সপ্তাহ মাতৃত্বকালীন ছুটি নিশ্চিত করতে হবে; শ্রম বিভাগের নিয়ন্ত্রণ সীমিত করে ট্রেড ইউনিয়নের স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করতে হবে; ধারা ২৬ এবং ধারা ২৭(৩) (এ) বাতিল করতে হবে, যা শ্রমিক নেতাদের অন্যায্যভাবে বরখাস্ত করার জন্য ব্যবহৃত হয়; জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা এবং সকল খাতে মজুরি কমিশন গঠন করতে হবে; শ্রমিকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আগে তাদের আইনগত পরামর্শদাতা নিয়োগের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে এবং শ্রমিক নেতৃবৃন্দের নামে দায়েরকৃত হয়রানিমূলক সকল মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।

সাকিল আখতার চৌধুরী বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০২৩ সালে শ্রমিক নেতৃবৃন্দের নামে হয়রানিমূলক অনেক মামলা হয়েছিল, সেগুলো এখনো তুলে নেওয়া হয়নি। আমরা এসব মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাই। একই সঙ্গে আদালতে ২২ হাজার মামলা ঝুলে আছে; এসব মামলাও দ্রুত নিষ্পত্তির দাবি জানাচ্ছি। শ্রম আদালতে পর্যাপ্ত বিচারক ও প্রসিকিউটার না থাকায় মামলার সংখ্যা ও জটিলতা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সরকারকে প্রতি ছয় মাসে আইএলওতে চারটি ক্ষেত্রে অগ্রগতির প্রতিবেদন দাখিল করতে হয়। এগুলো হচ্ছে – শ্রম আইন সংস্কার, ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন, শ্রম পরিদর্শন ও বাস্তবায়ন এবং শ্রমিকদের প্রতি বৈষম্যমূলক ও অন্যায্য শ্রম আচরণ ও সহিংসতা মোকাবিলা। এ ক্ষেত্রে ট্রেড ইউনিয়নগুলো দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে যে, তাদের বেশিরভাগ সুপারিশ এখনও বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া সর্বশেষ প্রতিবেদনে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে স্বাক্ষরিত ১৮ দফা ত্রিপক্ষীয় চুক্তিকে বড় অর্জন হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে বিভিন্ন শিল্প এলাকায় এর বাস্তবায়ন আশানুরূপ নয়।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন প্রক্রিয়া এখনো যথেষ্ট জটিল, ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪৬ হাজার শ্রমিক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করা হলেও অধিকাংশ ট্রেড ইউনিয়ন এ বিষয়ে অবগত নয়। এছাড়া সরকারের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ১৫ হাজার ৫৭৬টি কারখানা পরিদর্শন হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ৮৫টি কারখানা পরিদর্শন হয়েছে। তবে বর্তমানে মাত্র ৪৪১ জন শ্রম পরিদর্শক দিয়ে এত বেশি কারখানা পরিদর্শন করা বাস্তবসম্মত নয় বলে জানান শ্রমিক নেতারা। পরিদর্শন প্রতিবেদন তৈরির ক্ষেত্রে শ্রমিক প্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য একই শ্রম আইনের দাবি

আপডেট সময় : ০৫:৪৭:৫৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫

দেশের সব অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইজেড) ও রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ইপিজেড) সব শ্রমিককে একই শ্রম আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন শ্রমিক নেতারা। একই সঙ্গে আগামী ২০ রমজানের মধ্যে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।

আজ (১৬ মার্চ) রোববার রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত “আইএলও রোডম্যাপ বাস্তবায়নে বাংলাদেশের অগ্রগতি: ট্রেড ইউনিয়নের প্রত্যাশা” শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়।

যৌথভাবে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করেছে ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ইউনিয়ন কনফেডারেশন (আইটিইউসি) বাংলাদেশ কাউন্সিল, ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিল এবং পিএসআই-এনসিসি ফর বাংলাদেশ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আইটিইউসি বাংলাদেশ কাউন্সিলের সেক্রেটারি জেনারেল সাকিল আখতার চৌধুরী। আরো বক্তব্য দেন ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিলের জেনারেল সেক্রেটারি শহিদুল্লাহ বাদল।

লিখিত বক্তব্যে সাকিল আখতার চৌধুরী বলেন, বর্তমান সরকার সব ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করার ওপরে জোর দিচ্ছে। আমরাও সেটি চাই। এজন্য শ্রম আইনের বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কার প্রস্তাব করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চল বা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের মত বিশেষ অঞ্চলগুলোতে আলাদা শ্রম আইন রয়েছে। আমরা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের সব শ্রমিককে একই শ্রম আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।

সংবাদ সম্মেলনে ঈদের সময় শ্রম অসন্তোষের আশঙ্কা রয়েছে কিনা এমন প্রশ্ন করেন সাংবাদিকেরা। জবাবে শহিদুল্লাহ বাদল জানান, ঈদকে সামনে রেখে গত সপ্তাহে শ্রম মন্ত্রণালয়ে মালিক, শ্রমিক ও সরকারের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ত্রিপক্ষীয় সভা হয়েছে। সেখানে মালিকপক্ষ আগামী ২০ রমজানের মধ্যে গত ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন ও ঈদ বোনাস দেওয়ার বিষয়ে রাজি হয়েছে।

শহিদুল্লাহ বাদল বলেন, যদি সঠিক সময়ে বেতন-বোনাস দিয়ে দেওয়া হয় তাহলে একটি জায়গায়ও শ্রম অসন্তোষ হবে না। আর ঠিক সময়ে বেতন-বোনাস না পেলে শ্রমিকেরা বিক্ষুব্ধ হতেই পারেন। সে ক্ষেত্রে এর দায়দায়িত্ব সরকার ও কারখানা মালিকদের নিতে হবে।

এ প্রসঙ্গে সাকিল আখতার চৌধুরী বলেন, গত ছয় মাসে বেশ কিছু জায়গায় আমরা শ্রম অসন্তোষ দেখেছি। দেখা গেছে ক্ষেত্রেই ঠিকভাবে মজুরি না পাওয়ায় শ্রমিকেরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। আবার এক জায়গায় অসন্তোষ হলে সেটি ছড়িয়ে যায়। সুতরাং নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দিয়ে দেওয়া উচিত হবে। এ ছাড়া যেসব কারখানা আর্থিকভাবে দুর্বল রয়েছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে শ্রমিকদের বেতন বোনাস কীভাবে দেওয়া হবে সেই দায়-দায়িত্ব বিজিএইএ বা বিকেএমইএর মতো সংগঠন তথা মালিকপক্ষকে নিতে হবে। আর ঈদের আগে হঠাৎ করে কোন কারখানা বন্ধ করা যাবে না।

আগামীকাল সোমবার (১৭ মার্চ) সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) গভর্নিং বডির সভায় বাংলাদেশের সরকারের দাখিল করা আইএলও রোডম্যাপ বাস্তবায়নের সর্বশেষ অগ্রগতির প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা হবে। ওই সভাকে সামনে রেখে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে আইটিইউসি বাংলাদেশ কাউন্সিলের সেক্রেটারি জেনারেল সাকিল আখতার চৌধুরী জানান, বর্তমান সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিলেও এখন পর্যন্ত দেশে শ্রমিকদের অধিকার পরিস্থিতির প্রকৃত উন্নয়ন তেমন একটা দৃশ্যমান নয়। এ অবস্থায় আইএলওর সভায় বাংলাদেশ সরকারের প্রতিবেদন কতটুকু বাস্তব চিত্রকে তুলে ধরবে তা বড় প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

সার্বিক পরিস্থিতিতে সরকারের কাছে বিবেজনার জন্য বেশ কিছু সুপারিশ করেছে শ্রমিক সংগঠন তিনটি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- শ্রমিক সংজ্ঞা বিস্তৃত করতে হবে যাতে শ্রম আইন সুরক্ষা সকল শ্রমিকের জন্য প্রযোজ্য হয়; সকল শ্রমিকের জন্য পরিচয়পত্র ও নিয়োগপত্র বাধ্যতামূলক করতে হবে; সরকারি বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানের জন্য সমান ২৪ সপ্তাহ মাতৃত্বকালীন ছুটি নিশ্চিত করতে হবে; শ্রম বিভাগের নিয়ন্ত্রণ সীমিত করে ট্রেড ইউনিয়নের স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করতে হবে; ধারা ২৬ এবং ধারা ২৭(৩) (এ) বাতিল করতে হবে, যা শ্রমিক নেতাদের অন্যায্যভাবে বরখাস্ত করার জন্য ব্যবহৃত হয়; জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা এবং সকল খাতে মজুরি কমিশন গঠন করতে হবে; শ্রমিকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আগে তাদের আইনগত পরামর্শদাতা নিয়োগের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে এবং শ্রমিক নেতৃবৃন্দের নামে দায়েরকৃত হয়রানিমূলক সকল মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।

সাকিল আখতার চৌধুরী বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০২৩ সালে শ্রমিক নেতৃবৃন্দের নামে হয়রানিমূলক অনেক মামলা হয়েছিল, সেগুলো এখনো তুলে নেওয়া হয়নি। আমরা এসব মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাই। একই সঙ্গে আদালতে ২২ হাজার মামলা ঝুলে আছে; এসব মামলাও দ্রুত নিষ্পত্তির দাবি জানাচ্ছি। শ্রম আদালতে পর্যাপ্ত বিচারক ও প্রসিকিউটার না থাকায় মামলার সংখ্যা ও জটিলতা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সরকারকে প্রতি ছয় মাসে আইএলওতে চারটি ক্ষেত্রে অগ্রগতির প্রতিবেদন দাখিল করতে হয়। এগুলো হচ্ছে – শ্রম আইন সংস্কার, ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন, শ্রম পরিদর্শন ও বাস্তবায়ন এবং শ্রমিকদের প্রতি বৈষম্যমূলক ও অন্যায্য শ্রম আচরণ ও সহিংসতা মোকাবিলা। এ ক্ষেত্রে ট্রেড ইউনিয়নগুলো দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে যে, তাদের বেশিরভাগ সুপারিশ এখনও বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া সর্বশেষ প্রতিবেদনে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে স্বাক্ষরিত ১৮ দফা ত্রিপক্ষীয় চুক্তিকে বড় অর্জন হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে বিভিন্ন শিল্প এলাকায় এর বাস্তবায়ন আশানুরূপ নয়।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন প্রক্রিয়া এখনো যথেষ্ট জটিল, ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪৬ হাজার শ্রমিক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করা হলেও অধিকাংশ ট্রেড ইউনিয়ন এ বিষয়ে অবগত নয়। এছাড়া সরকারের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ১৫ হাজার ৫৭৬টি কারখানা পরিদর্শন হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ৮৫টি কারখানা পরিদর্শন হয়েছে। তবে বর্তমানে মাত্র ৪৪১ জন শ্রম পরিদর্শক দিয়ে এত বেশি কারখানা পরিদর্শন করা বাস্তবসম্মত নয় বলে জানান শ্রমিক নেতারা। পরিদর্শন প্রতিবেদন তৈরির ক্ষেত্রে শ্রমিক প্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।