ঢাকা ১২:৪৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

বেতনের দাবিতে অবরোধ মহাসড়ক, চরম দুর্ভোগ যাত্রীদের

গণমুক্তি ডিজিটাল ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১১:৩৪:২৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪ ৫২ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

গাজীপুরে একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ রাখায় উত্তরজনপদ এবং ময়মনসিং-ঢাকার পথে চলাচল বন্ধ রয়েছে। ২৪সন্টায়ও পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পারেনি প্রশাসন। টিঅ্যান্ডজেড অ্যাপারেলস লিমিটেড এর তরফেও কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

পুলিশ, প্রশাসন, সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর কোনও আশ্বাস ও কথাই শুনতে নারাজ শ্রমিকরা। তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত সড়কেই অবস্থানের পক্ষে অনড় তারা। এতে মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রীরা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন সড়কে। রোববার (১০ নভেম্বর) সকালেও অবরোধ অব্যাহত রয়েছে।

শনিবার (৯ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টা থেকে শুরু হওয়া সড়ক অবরোধের কারণে এ মহাসড়ক দিয়ে চলাচলকারী মানুষ ও পরিবহনচালকরা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। শনিবার দুপুর থেকে অবরোধ সরিয়ে নেওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বারবার শ্রমিকদের আশ্বস্ত করলেও সারা রাত তাদের অবরোধ অব্যাহত রাখেন। শ্রমিকরা মহাসড়কেই নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন।

বকেয়া বেতন ও কারখানা খোলার দাবিতে গাজীপুর মহানগরের মালেকের বাড়ি এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন টিঅ্যান্ডজেড অ্যাপারেলস লিমিটেডের শ্রমিকরা। এতে মহাসড়কের উভয়পাশে কয়েক কিলোমিটার এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। দেশের ব্যস্ততম এ সড়ক দিয়ে চলাচলকারী সাধারণ মানুষ পড়েন চরম ভোগান্তি আর অবর্ণনীয় দুর্ভোগে।

এর আগে, কারখানার শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। এরপরই শ্রমিকরা মালেকের বাড়ি এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। দীর্ঘ সময় ধরে অবরোধের কারণে মহাসড়কের উভয়পাশে তীব্র যানজটের তৈরি হয়। অনেক যানবাহন ১৫-২০ ঘণ্টা ধরে রাস্তায় আটকা।

রাজশাহী থেকে ট্রাকযোগে পণ্য নিয়ে আসা চালক ইকবাল হোসেন বলেন, শনিবার সকাল ১০টার দিকে ভোগড়া বাইপাস মোড়ে আসি। রবিবার সকাল ৭টা পর্যন্ত মাত্র আধা কিলোমিটারের মতো আসতে পেরেছি। রাস্তা সরু হওয়ায় গাড়ি ঘুরিয়ে বিকল্প পথে যাওয়ার কোনও উপায়ও নেই।

প্রাইভেটকারচালক সাফায়েত হোসেন বলেন, জরুরি কাজে অফিসের স্যারকে নিয়ে শনিবার দুপুর থেকে বাসন সড়ক এলাকায় আটকা পড়েছি। বিকল্প যানে বস চলে গেলেও আমি রাস্তায় পড়ে আছি। খাবার, গোসল সবকিছু বন্ধ। গাড়ি রাস্তায় রেখে কোথাও যেতেও পারছি না। সারা রাত গাড়ির মধ্যে আতঙ্কে নির্ঘুম কাটিয়েছি।

নওগাঁ থেকে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আসা যাত্রী শরিফ আহমেদ বলেন, সকালে ভোগড়া বাইপাস মোড়ে বাস থেকে নেমে ঢাকায় যাওয়ার কোনও যানবাহন না পেয়ে দুই সন্তান, স্ত্রী ও দুটি ব্যাগ নিয়ে অনেক কষ্ট করে এক কিলোমিটারের মতো পথ হেঁটে এসেছি। এখন আর পারছি না, জানতে পারলাম আরও এক কিলোমিটার পথ হেঁটে পার হলে কিছু একটা পাওয়া যেতে পারে।

রবিবার ভোরে অবরোধস্থল কলম্বিয়া এলাকায় গেলে দেখা যায় শ্রমিকরা লাঠিসোঁটা হাতে নিয়ে সড়কের উভয়পাশে অবস্থান নিয়েছেন। দুই পাশের কয়েকটি বাস ও ট্রাক আড়াআড়িভাবে রেখে সড়কে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে রেখেছেন। অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলও চলাচল করতে দিচ্ছেন না আন্দোলনরত শ্রমিকরা।

সড়কে নির্ঘুম রাত কাটানো শ্রমিক রেহেনা আক্তার বলেন, আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। পুলিশ ও প্রশাসন বারবার আমাদের বকেয়া বেতন পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিলেও বাস্তবে আমাদের দাবি মেটানো হয়নি। বাসাভাড়া, দোকানের বাকি পরিশোধ করতে পারছি না। ঘরে খাবার নেই, সন্তানকে বাবার কাছে রেখে আমি বেতনের দাবিতে সারা রাত রাস্তায় কাটিয়েছি।

অপর শ্রমিক সালমা আক্তার বলেন, আমরা মানুষের দুর্ভোগ ও কষ্টের কথা বুঝতে পারছি। কিন্তু আমাদের কিছুই করার নেই। আমাদের কষ্টের কথাও সবাইকে বুঝতে হবে। আমরা শখ করে রাস্তায় রাত জেগে বসে থাকিনি। আমরা আমাদের বকেয়া বেতন পেলেই অবরোধ তুলে নেবো।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক) ইব্রাহিম খান বলেন, শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধের কারণে সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। মহাসড়কের দক্ষিণ দিকে টঙ্গীর কাছাকাছি যানজট গিয়ে পৌঁছেছে। অনেক গাড়ি বিকল্প পথে চলাচল করছে। আমরা মালিক ও শ্রমিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (অপরাধ, উত্তর) নাজির আহমেদ বলেন, আমরা এ পর্যন্ত ১০ থেকে ১২ বার শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত তাদের বকেয়া আদায়ের ব্যবস্থা করা হবে বলেও আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু অতীতে মালিকপক্ষ কথা রাখেনি এমন অভিযোগ তুলে শ্রমিকরা প্রথমে বলেছিল দুপুর ২টায় অবরোধ তুলে নেবে। পরে বলেছিল বিকাল পাঁচটায়, কিন্তু তারা অবরোধ তুলে নেয়নি। তারপরও আমরা তাদের বোঝানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু তারা কোনও আশ্বাস মানতে রাজি হচ্ছে না।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

বেতনের দাবিতে অবরোধ মহাসড়ক, চরম দুর্ভোগ যাত্রীদের

আপডেট সময় : ১১:৩৪:২৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪

 

গাজীপুরে একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ রাখায় উত্তরজনপদ এবং ময়মনসিং-ঢাকার পথে চলাচল বন্ধ রয়েছে। ২৪সন্টায়ও পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পারেনি প্রশাসন। টিঅ্যান্ডজেড অ্যাপারেলস লিমিটেড এর তরফেও কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

পুলিশ, প্রশাসন, সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর কোনও আশ্বাস ও কথাই শুনতে নারাজ শ্রমিকরা। তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত সড়কেই অবস্থানের পক্ষে অনড় তারা। এতে মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রীরা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন সড়কে। রোববার (১০ নভেম্বর) সকালেও অবরোধ অব্যাহত রয়েছে।

শনিবার (৯ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টা থেকে শুরু হওয়া সড়ক অবরোধের কারণে এ মহাসড়ক দিয়ে চলাচলকারী মানুষ ও পরিবহনচালকরা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। শনিবার দুপুর থেকে অবরোধ সরিয়ে নেওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বারবার শ্রমিকদের আশ্বস্ত করলেও সারা রাত তাদের অবরোধ অব্যাহত রাখেন। শ্রমিকরা মহাসড়কেই নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন।

বকেয়া বেতন ও কারখানা খোলার দাবিতে গাজীপুর মহানগরের মালেকের বাড়ি এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন টিঅ্যান্ডজেড অ্যাপারেলস লিমিটেডের শ্রমিকরা। এতে মহাসড়কের উভয়পাশে কয়েক কিলোমিটার এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। দেশের ব্যস্ততম এ সড়ক দিয়ে চলাচলকারী সাধারণ মানুষ পড়েন চরম ভোগান্তি আর অবর্ণনীয় দুর্ভোগে।

এর আগে, কারখানার শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। এরপরই শ্রমিকরা মালেকের বাড়ি এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। দীর্ঘ সময় ধরে অবরোধের কারণে মহাসড়কের উভয়পাশে তীব্র যানজটের তৈরি হয়। অনেক যানবাহন ১৫-২০ ঘণ্টা ধরে রাস্তায় আটকা।

রাজশাহী থেকে ট্রাকযোগে পণ্য নিয়ে আসা চালক ইকবাল হোসেন বলেন, শনিবার সকাল ১০টার দিকে ভোগড়া বাইপাস মোড়ে আসি। রবিবার সকাল ৭টা পর্যন্ত মাত্র আধা কিলোমিটারের মতো আসতে পেরেছি। রাস্তা সরু হওয়ায় গাড়ি ঘুরিয়ে বিকল্প পথে যাওয়ার কোনও উপায়ও নেই।

প্রাইভেটকারচালক সাফায়েত হোসেন বলেন, জরুরি কাজে অফিসের স্যারকে নিয়ে শনিবার দুপুর থেকে বাসন সড়ক এলাকায় আটকা পড়েছি। বিকল্প যানে বস চলে গেলেও আমি রাস্তায় পড়ে আছি। খাবার, গোসল সবকিছু বন্ধ। গাড়ি রাস্তায় রেখে কোথাও যেতেও পারছি না। সারা রাত গাড়ির মধ্যে আতঙ্কে নির্ঘুম কাটিয়েছি।

নওগাঁ থেকে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আসা যাত্রী শরিফ আহমেদ বলেন, সকালে ভোগড়া বাইপাস মোড়ে বাস থেকে নেমে ঢাকায় যাওয়ার কোনও যানবাহন না পেয়ে দুই সন্তান, স্ত্রী ও দুটি ব্যাগ নিয়ে অনেক কষ্ট করে এক কিলোমিটারের মতো পথ হেঁটে এসেছি। এখন আর পারছি না, জানতে পারলাম আরও এক কিলোমিটার পথ হেঁটে পার হলে কিছু একটা পাওয়া যেতে পারে।

রবিবার ভোরে অবরোধস্থল কলম্বিয়া এলাকায় গেলে দেখা যায় শ্রমিকরা লাঠিসোঁটা হাতে নিয়ে সড়কের উভয়পাশে অবস্থান নিয়েছেন। দুই পাশের কয়েকটি বাস ও ট্রাক আড়াআড়িভাবে রেখে সড়কে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে রেখেছেন। অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলও চলাচল করতে দিচ্ছেন না আন্দোলনরত শ্রমিকরা।

সড়কে নির্ঘুম রাত কাটানো শ্রমিক রেহেনা আক্তার বলেন, আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। পুলিশ ও প্রশাসন বারবার আমাদের বকেয়া বেতন পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিলেও বাস্তবে আমাদের দাবি মেটানো হয়নি। বাসাভাড়া, দোকানের বাকি পরিশোধ করতে পারছি না। ঘরে খাবার নেই, সন্তানকে বাবার কাছে রেখে আমি বেতনের দাবিতে সারা রাত রাস্তায় কাটিয়েছি।

অপর শ্রমিক সালমা আক্তার বলেন, আমরা মানুষের দুর্ভোগ ও কষ্টের কথা বুঝতে পারছি। কিন্তু আমাদের কিছুই করার নেই। আমাদের কষ্টের কথাও সবাইকে বুঝতে হবে। আমরা শখ করে রাস্তায় রাত জেগে বসে থাকিনি। আমরা আমাদের বকেয়া বেতন পেলেই অবরোধ তুলে নেবো।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক) ইব্রাহিম খান বলেন, শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধের কারণে সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। মহাসড়কের দক্ষিণ দিকে টঙ্গীর কাছাকাছি যানজট গিয়ে পৌঁছেছে। অনেক গাড়ি বিকল্প পথে চলাচল করছে। আমরা মালিক ও শ্রমিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (অপরাধ, উত্তর) নাজির আহমেদ বলেন, আমরা এ পর্যন্ত ১০ থেকে ১২ বার শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত তাদের বকেয়া আদায়ের ব্যবস্থা করা হবে বলেও আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু অতীতে মালিকপক্ষ কথা রাখেনি এমন অভিযোগ তুলে শ্রমিকরা প্রথমে বলেছিল দুপুর ২টায় অবরোধ তুলে নেবে। পরে বলেছিল বিকাল পাঁচটায়, কিন্তু তারা অবরোধ তুলে নেয়নি। তারপরও আমরা তাদের বোঝানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু তারা কোনও আশ্বাস মানতে রাজি হচ্ছে না।