ঢাকা ১০:০২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৬ জুন ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo জনপ্রিয়তা বাড়াতে রাজনৈতিক নেতাদের নিজ এলাকায় ঈদ Logo রাজধানীর বাউনিয়াবাদে চাচা-ভাতিজার দাপট: হত্যা, চাঁদাবাজি ও ভয়ে স্তব্ধ মানুষ Logo কারাগারে ঈদের ৩ জামাত বন্দিদের বিশেষ আয়োজন Logo রাজধানীতে আসছে উত্তরাঞ্চলের মৌসুমি কসাই Logo জমে উঠছে রাজধানীর পশুরহাট ব্যাপারীরা ক্রেতার অপেক্ষায় Logo ভোগান্তিহীন স্বস্তির ঈদযাত্রা ঢাকার ভেতরেই যত বিড়ম্বনা Logo কালীগঞ্জে ৩ হাজার ২শত কৃষককে দেওয়া হল বিনামূল্যে সার ও বীজ Logo খাতের সফল খামারি উদ্যোক্তাদের মাঝে সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান Logo কাজী মামুনুর রশীদ কচি সদস্য হওয়াতে জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা Logo মৌলভীবাজার অনলাইন প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দের সাথে জাতীয় ভোক্তা অধিকারের মতবিনিময় সভা

ভোগান্তিহীন স্বস্তির ঈদযাত্রা ঢাকার ভেতরেই যত বিড়ম্বনা

হালিম মোহাম্মদ
  • আপডেট সময় : ০২:৩৩:৪৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ জুন ২০২৫ ৭২ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

আর মাত্র একদিন পরেই কোরবানির ঈদ। ঈদের আনন্দ পরিবারের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে নাড়ির টানে বাসের ছাদসহ ট্রাক ও পিকআপভ্যানে ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফিরছে ঘরমুখো মানুষ। এতে করে ঢাকা-টাঙ্গাইল যমুনা সেতু মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বাড়লেও মহাসড়কে নেই চিরচেনা সেই যানজট। এবারের ঈদযাত্রা ভোগান্তিহীন এবং স্বস্তির। নির্বিঘেœ মানুষ গন্তব্যে পৌঁছেছে।
এদিকে হাইওয়ে সড়কে বেশি যানজট না থাকলেও ঈদযাত্রায় ঢাকাতেই সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি এবং বিড়ম্বনা। হেমায়েতপুর থেকে শ্যামলী সড়কে ধীরগতি ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি দপ্তরে আজই ছিল শেষ কার্যদিবস। কার্যত ঈদযাত্রায় সর্বোচ্চ চাপ এখন গাবতলী-টেকনিক্যাল, কল্যাণপুরে। কোথাও যানজট, কোথাও ধীরগতির কারণে উত্তরবঙ্গ রুটের অধিকাংশ ঢাকা ফেরত বাস পড়ছে ভোগান্তিতে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাভারের হেমায়েতপুর থেকে রাজধানীর কল্যাণপুর-শ্যামলী পর্যন্ত সড়কে যান চলাচলে গাড়ির জট, কোথাও ধীরগতি। সংগত কারণে সব রুটের বাস আধা ঘণ্টা, এক ঘণ্টা দেরিতে ছাড়ছে।
গত বুধবার রাত ৯টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা যায়, গাবতলী পর্বতা সিগনাল থেকে মাজার রোড, টেকনিক্যাল পর্যন্ত সড়কে তীব্র যানজট। থেমে থেমে কিছুক্ষণ পর পর সচল হচ্ছে গাড়ির চাকা। ঈদযাত্রার এই সময়েও গাবতলীর মতো সড়কে হরহামেশা চলতে দেখা গেছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাও।
অপরদিকে নদীপথের লঞ্চের যাত্রীরা বলেছেন, ঈদে দীর্ঘ ছুটি! যত কষ্টই হোক, উদ্দেশ্য অপেক্ষায় থাকা পরিবার-পরিজন ও নিকটাত্মীয়দের নিয়ে বাড়িতে পৌঁছে সবাই মিলে পবিত্র ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করা। এই আনন্দ ভাগাভাগি করতে রাজধানীবাসী সড়কপথের পাশাপাশি তারা আরামদায়ক ভ্রমন হিসেবে বেছে নিয়েছেন নৌপথও। সন্ধ্যা নামতেই সেই চিত্রই যেন ফুটে উঠেছে রাজধানীর সদরঘাট এলাকায়, যেখান থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যের ৪১টি রুটে যাত্রা করছে ছোট বড় বহু লঞ্চ।
গত বুধবার সন্ধ্যায় সদরঘাটে দেখা যায়, দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ঘরমুখো যাত্রীদের চাপ বিকেল থেকেই বাড়তে থাকে। সন্ধ্যার সঙ্গে সঙ্গে পুরো টার্মিনাল যাত্রীতে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। শিশু থেকে বৃদ্ধ, সব শ্রেণির যাত্রীর আনাগোনা লক্ষ্য করা যায়। যদিও অনেক যাত্রী লঞ্চযাত্রা স্বস্তিকর ও আরামদায়ক বলে মনে করেন। আবার কম আয়ের মানুষেরা ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে প্রশ্ন তুলছেন।
অন্যদিকে ঈদযাত্রায় ঘরমুখো মানুষের নির্বিঘœ চলাচল নিশ্চিত করতে সিরাজগঞ্জের যমুনা সেতুর পশ্চিমপাড়ে গত বুধবার রাত থেকে শুরু হয়েছে সেনাবাহিনী ও হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার পুলিশের যৌথ টহল কার্যক্রম। থে যানজট, চুরি, ছিনতাই কিংবা ডাকাতির মতো যেকোনো অপরাধ ঠেকাতে রাতভর মহাসড়কে টহল দিচ্ছে যৌথবাহিনী। টহলের আওতায় মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ মোড়, সেতুর উভয়পাড় ও ব্যস্ত রুটগুলোতে চলছে তৎপরতা।
বুধবার দুপুর থেকে যানবাহনের চাপ বাড়লেও স্বস্তিতে বাড়ি ফিরছে উত্তরবঙ্গের মানুষ হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রউফ বলেন, ঈদের সময়ে সাধারণত ঘরমুখো মানুষের চাপ বেশি থাকে। তাই আগেই প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সেনাবাহিনী ও পুলিশের সমন্বয়ে আমরা কাজ করছি, যাতে কোথাও কোনো যানজট বা নিরাপত্তা বিঘœ না ঘটে। সেনাবাহিনীর ১১ পদাতিক ডিভিশন জানিয়েছে, গত রমজানের ঈদের দিনগুলোতেও একই ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। মহাসড়কে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সড়কে টহল অভিযান চলমান থাকবে।
এছাড়া রাজধানীর ট্রাফিক পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মাজার রোড ও টেকনিক্যাল, কল্যাণপুর খালেক পাম্প সিগনালে ইউটার্ন বন্ধ রেখেছে ট্রাফিক পুলিশ। ঈদযাত্রার দূরপাল্লার বাসসহ বড় বড় সব যানবাহনকে গণভবন ও আসাদগেট গিয়ে ইউটার্ন নিতে পারছে। তার ওপর ঈদযাত্রার যাত্রীদের যত্রতত্র পারাপার, গরুর সঙ্গে হেঁটে সঙ্গে একদল মানুষও– এসবও সড়কে ধীরগতির কারণ। যে কারণে সড়কে গতি কমেছে।
এদিকে রাজধানীর গাবতলী বালুরমাঠ হানিফ কাউন্টারের সামনে সড়কে আটকে থাকা ফিরতি যাত্রার হানিফ পরিবহনের একটি বাসের হেলপার বলেন, গাবতলী-আমিনবাজার ব্রিজের পর থকে আউটগোয়িং রাস্তা ক্লিয়ার। কিন্তু ফিরতি সড়কে ধীর গতি। এক ঘণ্টা লাগছে শুধু হেমায়েতপুর থেকে পর্বতা সিগনাল ক্রস করতে। শ্যামলী পরিবহনের আরেকটি বাসের চালকও একই কথা জানান। তিনি বলেন, এবার এখন পর্যন্ত ঈদযাত্রায় ঢাকাতেই ভোগান্তি। হাইওয়েতে এখনো যানজটের দেখা মেলেনি।
বরিশালগামী আরেক লঞ্চযাত্রী সোলাইমান বলেন, পদ্মা সেতু হওয়ার কারণে লঞ্চে আগের মতো ভিড় হয় না, তবে আজকে মোটামুটি ভালোই যাত্রী আছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে লঞ্চে যাত্রা আরামদায়ক, তাই আমার মতো অনেকেই লঞ্চকেই বেছে নিচ্ছেন। লঞ্চে তেমন কোনো সমস্যা না থাকলেও গুলিস্তান থেকে অনেককেই হেঁটে সদরঘাট আসতে হয়েছে। যানজটের কিছুটা ভোগান্তি ছাড়া ঈদযাত্রা স্বস্তিরই বলা চলে।
অন্যদিকে ঈদ মৌসুমে ডাকাতি ঠেকানো ও যানজট নিরসনে পুলিশের বিশেষ প্রস্তুতি দেখা গেছে। ঈদের আগে-পরে যাত্রীবাহী যানবাহন এবং পশুবাহী ট্রাকে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। অতীতের ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করে এবার দুটি মহাসড়ক ডাকাতপ্রবণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। তা হলো সাভার, এলেঙ্গা হয়ে যমুনা সেতু সড়ক ও গাজীপুরের সালনা থেকে মাওনা সড়ক। এই দুই সড়কে মোবাইল টিম, পিকেট ডিউটি বাড়ানো, সাব-কন্ট্রোল রুম স্থাপনসহ নিরাপত্তা বাড়িয়েছে হাইওয়ে পুলিশ। এই দুই সড়ক ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেও আলাদা নজর রাখছে পুলিশ। হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি জেলা পুলিশ, ট্রাফিক এবং গোয়েন্দাদের সঙ্গে তথ্যের সমন্বয় করা হচ্ছে। এরই মধ্যে মহাসড়কে ডাকাতির সঙ্গে যুক্ত ১৪শ ডাকাতের তালিকা করা হয়েছে। তাদের নজরদারিতে রেখেছে সংশ্লিষ্ট জেলা ও থানা পুলিশ।
পুলিশের হাইওয়ের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. শামসুল আলম (অ্যাডমিন ও মিডিয়া) বলেন, মহাসড়কে ডাকাতি, চাঁদাবাজি বন্ধ ও যানজট নিরসন। এই তিন বিষয় সামনে রেখে ঈদ পরিকল্পনা সাজিয়েছে হাইওয়ে পুলিশ। পশুবাহী গাড়িতে চাঁদাবাজি প্রতিরোধে কনভয় আকারে গাড়িগুলো চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া যানজটপ্রবণ ১২৫টি জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। ছয়টি মহাসড়কের পাশে ২৩০টি স্থায়ী ও অস্থায়ী পশুর হাট বসেছে এবার। যেগুলোর মধ্যে ৫৪টি হাট গুরুত্বপূর্ণ। এসব স্থানে যানজট এড়াতে নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা।
বিগত সময়ের মতো এবারও মহাসড়কের যাত্রা নিরাপদ করতে চালু রয়েছে ‘হ্যালো এইচপি’ অ্যাপ। এ ছাড়া সড়কে চলাচলকারীদের সেবা নিশ্চিত করার জন্য নতুনভাবে ডেভেলপ করা হয়েছে হাইওয়ে পুলিশের ওয়েবসাইট।
এদিকে মহাসড়কে পশুবাহী ও যাত্রীবাহী যানে চাঁদাবাজি প্রতিরোধে কৌশলী অবস্থান নিয়েছে পুলিশ। নির্ধারিত পয়েন্ট থেকে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে সাত থেকে আটটি ট্রাক একসঙ্গে চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। হাইওয়ে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের প্রস্তুতিতে এই কনভয় আকারে গাড়িগুলো চলাচল করার ব্যবস্থা রয়েছে।
মহাসড়কে যানজট হতে পারে এমন ১২৫টি জায়গা চিহ্নিত করেছে হাইওয়ে পুলিশ। ছয়টি মহাসড়কের মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রামে ৪৫টি, ঢাকা-আরিচায় ৯টি, ঢাকা-সিলেটে ১৮টি, ঢাকা-উত্তরবঙ্গে ৩৭টি, ঢাকা-ময়মনসিংহে ১৪টি ও ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে দুটি এলাকা রয়েছে।
হাইওয়ে পুলিশের প্রধান এবং অতিরিক্ত আইজি মো. দেলোয়ার হোসেন মিঞা বলেন, সম্প্রতি ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কে দুটি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। দ্রুত ডাকাতদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মালপত্রও উদ্ধার হয়েছে। যাত্রীরা পরিবহন করছে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকার। গণপরিবহন সংকট ও অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে অনেকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খোলা ট্রাক-পিকআপ ও বাসের ছাদে গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছে।
এদিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কের গোড়াই থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত প্রায় ৬৫ কিলোমিটার সড়কে সার্বিক নিরাপত্তায় ও ঈদযাত্রা স্বস্তি দায়ক করতে জেলা পুলিশের প্রায় ৬ শতাধিক সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীও মহাসড়কে দায়িত্ব পালন করছে।
মিরপুর থেকে আসা বাসের যাত্রী সুমন খান এবং আবিদ খান বলেন, মিরপুর থেকে চন্দ্রা আসতেই ৪ ঘণ্টা লেগে গেছে। আবার চন্দ্রা থেকে থেকে কালিয়াকৈর পর্যন্ত যানজট। এই যানজটে বেশ ভোগান্তি হয়েছে। তবে মির্জাপুর থেকে টাঙ্গাইলে আসতে কোনো যানজটে পড়তে হয় নাই।
জসীমউদ্দীন নামে আরেক যাত্রী বলেন, চন্দ্রা থেকে আগে টাঙ্গাইল আসতে ৬০ থেকে ৭০ টাকা লাগতো। আজকে চন্দ্রা থেকে টাঙ্গাইল আসলাম ২০০ টাকা দিয়ে। তাছাড়া অনেক সময় দাঁড়িয়ে থেকে বাস পেয়েছি।
সিরাজগঞ্জের আবুল কালাম আজাদ এবং বগুড়া আব্দুল লতিফ বলেন, বাস না পেয়ে ট্রাকে করে যাচ্ছি। পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিতে পারব এটাই বড় আনন্দ। অনেকেই বাস না পেয়ে ট্রাক ও পিকআপে করে যাচ্ছে। বাসে দ্বিগুণ ভাড়া চাচ্ছে। এইজন্য ট্রাকে করে যাইতেছি। জেলা প্রশাসক শরীফা হক বলেন, এখন পর্যন্ত ভোগান্তি ছাড়াই মানুষ বাড়ি যেতে পারছে। তবে আগের তুলনায় মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশের প্রায় ১০ কিলোমিটার সড়কজুড়ে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। বুধবার (৪ জুন) রাত পৌনে ১১টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তীব্র যানজট দেখা গেছে।
বাস চালক জানিয়েছেন, ঢাকায় ট্রাক-কাভার্ডভ্যান আটকানোর কারণে গত ২-৩ দিন ধরে তারা এই ভোগান্তির সম্মুখীন হচ্ছেন। কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী ওয়াহিদ মোরশেদ জানান, ডিএমপির পুলিশ মাতুয়াইল এলাকায় ট্রাক-কাভার্ডভ্যান ঢুকতে না দেওয়ায় যানজট সৃষ্টি হয়েছে। কিছুক্ষণর পর এটি ছেড়ে দেওয়া হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

ভোগান্তিহীন স্বস্তির ঈদযাত্রা ঢাকার ভেতরেই যত বিড়ম্বনা

আপডেট সময় : ০২:৩৩:৪৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ জুন ২০২৫

আর মাত্র একদিন পরেই কোরবানির ঈদ। ঈদের আনন্দ পরিবারের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে নাড়ির টানে বাসের ছাদসহ ট্রাক ও পিকআপভ্যানে ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফিরছে ঘরমুখো মানুষ। এতে করে ঢাকা-টাঙ্গাইল যমুনা সেতু মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বাড়লেও মহাসড়কে নেই চিরচেনা সেই যানজট। এবারের ঈদযাত্রা ভোগান্তিহীন এবং স্বস্তির। নির্বিঘেœ মানুষ গন্তব্যে পৌঁছেছে।
এদিকে হাইওয়ে সড়কে বেশি যানজট না থাকলেও ঈদযাত্রায় ঢাকাতেই সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি এবং বিড়ম্বনা। হেমায়েতপুর থেকে শ্যামলী সড়কে ধীরগতি ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি দপ্তরে আজই ছিল শেষ কার্যদিবস। কার্যত ঈদযাত্রায় সর্বোচ্চ চাপ এখন গাবতলী-টেকনিক্যাল, কল্যাণপুরে। কোথাও যানজট, কোথাও ধীরগতির কারণে উত্তরবঙ্গ রুটের অধিকাংশ ঢাকা ফেরত বাস পড়ছে ভোগান্তিতে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাভারের হেমায়েতপুর থেকে রাজধানীর কল্যাণপুর-শ্যামলী পর্যন্ত সড়কে যান চলাচলে গাড়ির জট, কোথাও ধীরগতি। সংগত কারণে সব রুটের বাস আধা ঘণ্টা, এক ঘণ্টা দেরিতে ছাড়ছে।
গত বুধবার রাত ৯টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা যায়, গাবতলী পর্বতা সিগনাল থেকে মাজার রোড, টেকনিক্যাল পর্যন্ত সড়কে তীব্র যানজট। থেমে থেমে কিছুক্ষণ পর পর সচল হচ্ছে গাড়ির চাকা। ঈদযাত্রার এই সময়েও গাবতলীর মতো সড়কে হরহামেশা চলতে দেখা গেছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাও।
অপরদিকে নদীপথের লঞ্চের যাত্রীরা বলেছেন, ঈদে দীর্ঘ ছুটি! যত কষ্টই হোক, উদ্দেশ্য অপেক্ষায় থাকা পরিবার-পরিজন ও নিকটাত্মীয়দের নিয়ে বাড়িতে পৌঁছে সবাই মিলে পবিত্র ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করা। এই আনন্দ ভাগাভাগি করতে রাজধানীবাসী সড়কপথের পাশাপাশি তারা আরামদায়ক ভ্রমন হিসেবে বেছে নিয়েছেন নৌপথও। সন্ধ্যা নামতেই সেই চিত্রই যেন ফুটে উঠেছে রাজধানীর সদরঘাট এলাকায়, যেখান থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যের ৪১টি রুটে যাত্রা করছে ছোট বড় বহু লঞ্চ।
গত বুধবার সন্ধ্যায় সদরঘাটে দেখা যায়, দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ঘরমুখো যাত্রীদের চাপ বিকেল থেকেই বাড়তে থাকে। সন্ধ্যার সঙ্গে সঙ্গে পুরো টার্মিনাল যাত্রীতে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। শিশু থেকে বৃদ্ধ, সব শ্রেণির যাত্রীর আনাগোনা লক্ষ্য করা যায়। যদিও অনেক যাত্রী লঞ্চযাত্রা স্বস্তিকর ও আরামদায়ক বলে মনে করেন। আবার কম আয়ের মানুষেরা ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে প্রশ্ন তুলছেন।
অন্যদিকে ঈদযাত্রায় ঘরমুখো মানুষের নির্বিঘœ চলাচল নিশ্চিত করতে সিরাজগঞ্জের যমুনা সেতুর পশ্চিমপাড়ে গত বুধবার রাত থেকে শুরু হয়েছে সেনাবাহিনী ও হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার পুলিশের যৌথ টহল কার্যক্রম। থে যানজট, চুরি, ছিনতাই কিংবা ডাকাতির মতো যেকোনো অপরাধ ঠেকাতে রাতভর মহাসড়কে টহল দিচ্ছে যৌথবাহিনী। টহলের আওতায় মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ মোড়, সেতুর উভয়পাড় ও ব্যস্ত রুটগুলোতে চলছে তৎপরতা।
বুধবার দুপুর থেকে যানবাহনের চাপ বাড়লেও স্বস্তিতে বাড়ি ফিরছে উত্তরবঙ্গের মানুষ হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রউফ বলেন, ঈদের সময়ে সাধারণত ঘরমুখো মানুষের চাপ বেশি থাকে। তাই আগেই প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সেনাবাহিনী ও পুলিশের সমন্বয়ে আমরা কাজ করছি, যাতে কোথাও কোনো যানজট বা নিরাপত্তা বিঘœ না ঘটে। সেনাবাহিনীর ১১ পদাতিক ডিভিশন জানিয়েছে, গত রমজানের ঈদের দিনগুলোতেও একই ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। মহাসড়কে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সড়কে টহল অভিযান চলমান থাকবে।
এছাড়া রাজধানীর ট্রাফিক পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মাজার রোড ও টেকনিক্যাল, কল্যাণপুর খালেক পাম্প সিগনালে ইউটার্ন বন্ধ রেখেছে ট্রাফিক পুলিশ। ঈদযাত্রার দূরপাল্লার বাসসহ বড় বড় সব যানবাহনকে গণভবন ও আসাদগেট গিয়ে ইউটার্ন নিতে পারছে। তার ওপর ঈদযাত্রার যাত্রীদের যত্রতত্র পারাপার, গরুর সঙ্গে হেঁটে সঙ্গে একদল মানুষও– এসবও সড়কে ধীরগতির কারণ। যে কারণে সড়কে গতি কমেছে।
এদিকে রাজধানীর গাবতলী বালুরমাঠ হানিফ কাউন্টারের সামনে সড়কে আটকে থাকা ফিরতি যাত্রার হানিফ পরিবহনের একটি বাসের হেলপার বলেন, গাবতলী-আমিনবাজার ব্রিজের পর থকে আউটগোয়িং রাস্তা ক্লিয়ার। কিন্তু ফিরতি সড়কে ধীর গতি। এক ঘণ্টা লাগছে শুধু হেমায়েতপুর থেকে পর্বতা সিগনাল ক্রস করতে। শ্যামলী পরিবহনের আরেকটি বাসের চালকও একই কথা জানান। তিনি বলেন, এবার এখন পর্যন্ত ঈদযাত্রায় ঢাকাতেই ভোগান্তি। হাইওয়েতে এখনো যানজটের দেখা মেলেনি।
বরিশালগামী আরেক লঞ্চযাত্রী সোলাইমান বলেন, পদ্মা সেতু হওয়ার কারণে লঞ্চে আগের মতো ভিড় হয় না, তবে আজকে মোটামুটি ভালোই যাত্রী আছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে লঞ্চে যাত্রা আরামদায়ক, তাই আমার মতো অনেকেই লঞ্চকেই বেছে নিচ্ছেন। লঞ্চে তেমন কোনো সমস্যা না থাকলেও গুলিস্তান থেকে অনেককেই হেঁটে সদরঘাট আসতে হয়েছে। যানজটের কিছুটা ভোগান্তি ছাড়া ঈদযাত্রা স্বস্তিরই বলা চলে।
অন্যদিকে ঈদ মৌসুমে ডাকাতি ঠেকানো ও যানজট নিরসনে পুলিশের বিশেষ প্রস্তুতি দেখা গেছে। ঈদের আগে-পরে যাত্রীবাহী যানবাহন এবং পশুবাহী ট্রাকে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। অতীতের ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করে এবার দুটি মহাসড়ক ডাকাতপ্রবণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। তা হলো সাভার, এলেঙ্গা হয়ে যমুনা সেতু সড়ক ও গাজীপুরের সালনা থেকে মাওনা সড়ক। এই দুই সড়কে মোবাইল টিম, পিকেট ডিউটি বাড়ানো, সাব-কন্ট্রোল রুম স্থাপনসহ নিরাপত্তা বাড়িয়েছে হাইওয়ে পুলিশ। এই দুই সড়ক ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেও আলাদা নজর রাখছে পুলিশ। হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি জেলা পুলিশ, ট্রাফিক এবং গোয়েন্দাদের সঙ্গে তথ্যের সমন্বয় করা হচ্ছে। এরই মধ্যে মহাসড়কে ডাকাতির সঙ্গে যুক্ত ১৪শ ডাকাতের তালিকা করা হয়েছে। তাদের নজরদারিতে রেখেছে সংশ্লিষ্ট জেলা ও থানা পুলিশ।
পুলিশের হাইওয়ের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. শামসুল আলম (অ্যাডমিন ও মিডিয়া) বলেন, মহাসড়কে ডাকাতি, চাঁদাবাজি বন্ধ ও যানজট নিরসন। এই তিন বিষয় সামনে রেখে ঈদ পরিকল্পনা সাজিয়েছে হাইওয়ে পুলিশ। পশুবাহী গাড়িতে চাঁদাবাজি প্রতিরোধে কনভয় আকারে গাড়িগুলো চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া যানজটপ্রবণ ১২৫টি জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। ছয়টি মহাসড়কের পাশে ২৩০টি স্থায়ী ও অস্থায়ী পশুর হাট বসেছে এবার। যেগুলোর মধ্যে ৫৪টি হাট গুরুত্বপূর্ণ। এসব স্থানে যানজট এড়াতে নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা।
বিগত সময়ের মতো এবারও মহাসড়কের যাত্রা নিরাপদ করতে চালু রয়েছে ‘হ্যালো এইচপি’ অ্যাপ। এ ছাড়া সড়কে চলাচলকারীদের সেবা নিশ্চিত করার জন্য নতুনভাবে ডেভেলপ করা হয়েছে হাইওয়ে পুলিশের ওয়েবসাইট।
এদিকে মহাসড়কে পশুবাহী ও যাত্রীবাহী যানে চাঁদাবাজি প্রতিরোধে কৌশলী অবস্থান নিয়েছে পুলিশ। নির্ধারিত পয়েন্ট থেকে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে সাত থেকে আটটি ট্রাক একসঙ্গে চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। হাইওয়ে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের প্রস্তুতিতে এই কনভয় আকারে গাড়িগুলো চলাচল করার ব্যবস্থা রয়েছে।
মহাসড়কে যানজট হতে পারে এমন ১২৫টি জায়গা চিহ্নিত করেছে হাইওয়ে পুলিশ। ছয়টি মহাসড়কের মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রামে ৪৫টি, ঢাকা-আরিচায় ৯টি, ঢাকা-সিলেটে ১৮টি, ঢাকা-উত্তরবঙ্গে ৩৭টি, ঢাকা-ময়মনসিংহে ১৪টি ও ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে দুটি এলাকা রয়েছে।
হাইওয়ে পুলিশের প্রধান এবং অতিরিক্ত আইজি মো. দেলোয়ার হোসেন মিঞা বলেন, সম্প্রতি ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কে দুটি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। দ্রুত ডাকাতদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মালপত্রও উদ্ধার হয়েছে। যাত্রীরা পরিবহন করছে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকার। গণপরিবহন সংকট ও অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে অনেকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খোলা ট্রাক-পিকআপ ও বাসের ছাদে গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছে।
এদিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কের গোড়াই থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত প্রায় ৬৫ কিলোমিটার সড়কে সার্বিক নিরাপত্তায় ও ঈদযাত্রা স্বস্তি দায়ক করতে জেলা পুলিশের প্রায় ৬ শতাধিক সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীও মহাসড়কে দায়িত্ব পালন করছে।
মিরপুর থেকে আসা বাসের যাত্রী সুমন খান এবং আবিদ খান বলেন, মিরপুর থেকে চন্দ্রা আসতেই ৪ ঘণ্টা লেগে গেছে। আবার চন্দ্রা থেকে থেকে কালিয়াকৈর পর্যন্ত যানজট। এই যানজটে বেশ ভোগান্তি হয়েছে। তবে মির্জাপুর থেকে টাঙ্গাইলে আসতে কোনো যানজটে পড়তে হয় নাই।
জসীমউদ্দীন নামে আরেক যাত্রী বলেন, চন্দ্রা থেকে আগে টাঙ্গাইল আসতে ৬০ থেকে ৭০ টাকা লাগতো। আজকে চন্দ্রা থেকে টাঙ্গাইল আসলাম ২০০ টাকা দিয়ে। তাছাড়া অনেক সময় দাঁড়িয়ে থেকে বাস পেয়েছি।
সিরাজগঞ্জের আবুল কালাম আজাদ এবং বগুড়া আব্দুল লতিফ বলেন, বাস না পেয়ে ট্রাকে করে যাচ্ছি। পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিতে পারব এটাই বড় আনন্দ। অনেকেই বাস না পেয়ে ট্রাক ও পিকআপে করে যাচ্ছে। বাসে দ্বিগুণ ভাড়া চাচ্ছে। এইজন্য ট্রাকে করে যাইতেছি। জেলা প্রশাসক শরীফা হক বলেন, এখন পর্যন্ত ভোগান্তি ছাড়াই মানুষ বাড়ি যেতে পারছে। তবে আগের তুলনায় মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশের প্রায় ১০ কিলোমিটার সড়কজুড়ে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। বুধবার (৪ জুন) রাত পৌনে ১১টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তীব্র যানজট দেখা গেছে।
বাস চালক জানিয়েছেন, ঢাকায় ট্রাক-কাভার্ডভ্যান আটকানোর কারণে গত ২-৩ দিন ধরে তারা এই ভোগান্তির সম্মুখীন হচ্ছেন। কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী ওয়াহিদ মোরশেদ জানান, ডিএমপির পুলিশ মাতুয়াইল এলাকায় ট্রাক-কাভার্ডভ্যান ঢুকতে না দেওয়ায় যানজট সৃষ্টি হয়েছে। কিছুক্ষণর পর এটি ছেড়ে দেওয়া হবে।