ঢাকা ০৮:০৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৪ মার্চ ২০২৫

মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর আড়ালে ২৪ হাজার কোটি টাকা পাচার

সোহেলী চৌধুরী
  • আপডেট সময় : ০৩:৪৫:০২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ মার্চ ২০২৫ ৫৪ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি
  • অতি দ্রুত আরো মামলা দেয়ার কার্যক্রম চলছে। আমাদের অনুসন্ধানের বিষয়বস্তু হলো, যে সকল কর্মী মালয়েশিয়া গমন করেছেন তাদের নিকট থেকে অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণ সংক্রান্ত ঃ মহাপরিচালক, দুদক

  • এটা মালয়েশিয়ান সরকারের সঙ্গে তাদের একটা চুক্তি। কিন্তু তারা এটার অপব্যবহার করে বাংলাদেশের টোটাল ম্যানপাওয়ারের সাথে ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে, এটা টোটালি ই-লিগ্যাল ঃ বায়রা

মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর নাম করে ২৪ হাজার কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে শুধুমাত্র মেডিকেল ও সিন্ডিকেট ভিসা প্রসেসিং খাতেই এই বিশাল অর্থ পাচার করা হয়। এতে নিঃস্ব হয়ে পথে বসেছে বাংলাদেশের হাজারো শ্রমিক। বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী শিল্প উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল (লোটাস কামাল), সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদ, নিজাম হাজারি, লে.জে. (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীসহ ১৪ জন এই সিন্ডিকেটে জড়িত থাকার প্রমান পাওয়া গেছে। সিন্ডিকেটের সেবাদাস হিসেবে কাজ করেছে একশ’টি রিক্রুটিং এজেন্সি। এ বিপুল অর্থ পাচারের মূল হোতা রিক্রুটিং এজেন্সি কেথারসিস ইন্টারন্যাশানালের মালিক রুহুল আমিন স্বপন এবং বেস্টিনেট এসডিএন বিএইচডি এর মালিক আমিনুল ইসলাম বিন আবদুল নূর (ধাতু শ্রী আমিন মো. নূর)।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, মালয়েশিয়ায় পাঠানোর জন্য ২০ লাখ কর্মীর মেডিকেল করানো হলেও (২০২২-২০২৪) এর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাঠানো হয়েছে মাত্র ৪ লাখ ৭৪ হাজার শ্রমিক। বাংলাদেশ সরকারের বিএমইটি খরচ জনপ্রতি ৫,৪০০ টাকা ধার্য করা থাকলেও সিন্ডিকেট নেয় ১ লাখ ৫২ হাজার টাকা। পাশাপাশি মেডিকেল ফি জনপ্রতি ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা হলেও সিন্ডিকেট হাতিয়ে নিয়েছে ১১ হাজার টাকা। অথচ মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে সরকার নির্ধারিত সর্বোচ্চ খরচ ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকা। মালয়েশিয়া যেতে গড়ে একজন বাংলাদেশি কর্মী খরচ করেছেন ৫ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। যা সরকার নির্ধারিত ফিয়ের চেয়ে ২০ হাজার কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে চক্র ফি নেওয়া হয়েছে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি।
ভেরাইট ইনকর্পোরেটেড এবং অন্যান্য চারটি কোম্পানি (মে ২০২৩) দ্বারা পরিচালিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, এই অভিবাসী কর্মী সিন্ডিকেটের সদস্যরা কর্মী প্রতি ৭৯,০০০ টাকার সরকার-নির্দিষ্ট খরচের পরিবর্তে গড়ে ৫ লাখ ৪৪ হাজার টাকা ধার্য করে।
নানমুখী চতুরতার জালে চক্রটি মালয়েশিয়ার এফডব্লিউসিএমএস (ঋডঈগঝ- ঋড়ৎবরমহ ডড়ৎশবৎং ঈবহঃৎধষরুবফ গধহধমবসবহঃ ঝুংঃবস) নামে একটি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কাজ করেছে। সফটওয়্যার সার্ভিস প্রভাইডার কোম্পানি বেস্টিনেট এসডিএন বিএইচডি এর মালিক ধাতু শ্রী আমিন মো. নূর এবং রুহুল আমিন স্বপন, যা ফরেন ওয়ার্কার সেন্ট্রালাইজড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (এফডব্লিউসিএমএস) চালায়।
অভিযোগ রয়েছে যে, বাংলাদেশের সরকার ও মালয়েশিয়ার সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিত এমওইউতে দেশের স্বার্থ বিরোধী শর্ত যোগ করে বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর নির্বাচন প্রক্রিয়া মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে দিয়েছেন রুহুল আমিন স্বপন ও বেস্টিনেট এসডিএন বিএইচডি এর মালিক ধাতু শ্রী আমিন মো. নূর। অন্যান প্রভাবশালী সদস্যদের মধ্যে রয়েছে- আলাউদ্দিন চৌধুরী নাসিম, কাজি মফিজুর রহমান, আবুল বাশার, নূর আলী, কালা ফিরোজ, মহি উদ্দিন মহি, বাসেক কমিশনার, সাবেক মন্ত্রী ইমরান আহমেদ ও সচিব মুনিরুছ সালেহীনসহ ১০০টি রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক।
অপরদিকে মালয়েশিয়া অংশে বাংলাদেশী বংশভ্রুত মালয়েশিয়ান নাগরিক সফটওয়্যার সার্ভিস প্রভাইডার কোম্পানি বেস্টিনেট এসডিএন বিএইচডি এর মালিক ধাতু শ্রী আমিন মো. নুর ও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী ইমরান আহমেদসহ অনেকেই সম্পৃক্ত রয়েছেন এমন অভিযোগ তুলেছে ভূক্তভোগীরা।
মালয়েশিয়ায় পাচার হওয়া অর্থের সংক্ষিপ্ত পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চক্রটি প্রায় ৮৭.৫০ বিলিয়ন টাকা পাচার করেছে। এর মধ্যে প্রতি শ্রমিকের কাছ থেকে ১ লাখ টাকা ফি নেয়া হয়েছে, যা প্রায় ৫০ কোটি টাকা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভিসা বাণিজ্যের নামে আরও ৩৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা পাচার করা হয়েছে। মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশে মাত্র ১০০টি রিক্রুটিং এজেন্সিকে অনুমতি দেওয়া হলেও, এর মধ্যে অনেক সংস্থা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। ফলে অভিবাসী কর্মী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কর্মী পাঠানো, ঘুষ ও অর্থপাচারের কারণে বাংলাদেশীদের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বারবার বন্ধ হয়ে গেছে। সম্প্রতি ২০২৪ সালের মে মাসে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে শ্রমিক পাঠানো বন্ধ হয়ে যায়।
অভিবাসী কর্মী সিন্ডিকেটের কর্মকান্ড :
মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে আগ্রহী অভিবাসীদের নাম একটি সফটওয়্যারে নিবন্ধন করতে হয়, যার নাম ফরেন ওয়ার্কার্স সেন্ট্রাল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম এফডব্লিউসিএমএস । এই সিস্টেমের মালিক ছিলেন আমিনুল ইসলাম বিন আবদুল নূর পরিচালিত কোম্পানি বেস্টিনেট।
রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকরা জানিয়েছেন, প্রতি কর্মীর রেজিস্ট্রেশন ফি ১০০ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত (প্রায় ২৭০০ টাকা), তবে তাদের কাছ থেকে নেয়া হয়েছে প্রায় ১,০৭,০০০ টাকা। এর মধ্যে ৭ হাজার টাকা স্থানীয় কালেকশন এজেন্সি রাখে এবং বাকি ১ লাখ টাকা অবৈধভাবে মালয়েশিয়ার বেস্টিনেটে পাঠানো হয়। অভিবাসী সফ্টওয়্যার শুধুমাত্র সেইসব কোম্পানির তালিকা করে যারা অভিবাসী কর্মী সিন্ডিকেটের অংশ। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া ঘুষ ও অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়েছে।
এদিকে মালয়েশিয়ার অভিবাসী শ্রমিক সিন্ডিকেটের দুই সদস্যের দাবি, ধাতু শ্রী আমিন মো. নূর মালয়েশিয়ার বিভিন্ন কর্মকর্তাকে ঘুষ দেওয়ার অজুহাতে অতিরিক্ত অর্থ দাবি করেন। বাংলাদেশে তার প্রতিনিধি রুহুল আমিন স্বপন ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি সংস্থার মালিক। ২০২৩ সালে বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে বেস্টিনেটের অনিয়মের অভিযোগ দায়ের করা হয়। মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে নিয়োগকারী সংস্থা ও নিয়োগকর্তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয় ২০২৩ সালের ৯ মে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে একটি চিঠি পাঠায়। বেস্টিনেট থেকে ই-ওয়ালেট টপ-আপ (টাকা জমা) না থাকার কারণে বেশ কয়েকটি নিয়োগকারী সংস্থা মন্ত্রণালয়ের কাছে অভিযোগ করেছে।
মালয়েশিয়ার নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে। তারা চিঠির কপি বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়েও পাঠিয়েছে। একই অভিযোগ তুলে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে চিঠিও পাঠিয়েছে বায়রা। ওই চিঠির ভিত্তিতে ২০২৪ সালের ২ জানুয়ারি মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে চিঠি পাঠায় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। চিঠিতে বলা হয়েছে, এফডব্লিউসিএমএসের মাধ্যমে নির্বাচিত বেশিরভাগ নিয়োগকারী সংস্থার কর্মী সংগ্রহ করে পাঠানোর পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা ও ক্ষমতা নেই।
বেস্টিনেটের সঙ্গে রুহুল আমিন স্বপনের সংযোগ : বাংলাদেশের জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস (আরজেএসসি) অনুসারে, বেস্টিনেট মালয়েশিয়া বাংলাদেশে ২৪ মার্চ ২০২৪ তারিখে নিবন্ধিত হয়েছে, বেস্টিনেট বাংলাদেশ লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছে। আমিনুল ইসলাম বিন আব্দুল নূর চেয়ারম্যান এবং রুহুল আমিন ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন।
অর্থলোপাটে মামলা : মালয়েশিয়া শ্রমবাজারে চলমান সিন্ডিকেট চক্রের বিরুদ্ধে এবার হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। মামলায় সাবেক প্রবাসী মন্ত্রী ইমরান আহমেদ এবং সাবেক সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীনসহ ১০৩ জনকে আসামী করে পল্টন মডেল থানার মামলার নম্বর ০৬ (০৩/৯/২০২৪) ধারা ৪০৬ /৪২০/৩৮৫/৩৮৬/৪১৭ ও ৩৪ পেনাল কোড সহ মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২ এর ৬ /৭ /৮/ ৯ /১০ রুজু করেন ক্ষতিগ্রস্থ রিক্রুটিং এজেন্সি আফিয়া ওভারসীজ (আর এল-১০১০) এর প্রোপাইটর আলতাব খান। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছে সিআইডি।
এদিকে গত ১১ মার্চ ২০২৫ তারিখে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর নামে ১ হাজার ১২৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ওরফে লোটাস কামাল ও তাঁর পরিবারের প্রতিষ্ঠানসহ ১২টি রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন বলেন, আসামির তালিকায় রয়েছেন ১২ রিক্রুটিং এজেন্সির ৩২ মালিক-কর্মকর্তা। তাঁদের বিরুদ্ধে সরকার নির্ধারিত টাকার চেয়ে পাঁচ গুণ অর্থ গ্রহণ করে ৬৭ হাজার ৩৮০ প্রবাসীর কাছ থেকে ওই অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
১২টি রিক্রুটিং এজেন্সির মধ্যে রয়েছে- মেসার্স ওরবিটাল এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স ওরবিটাল ইন্টারন্যাশনাল, স্নিগ্ধা ওভারসিজ লি. বিনিময় ইন্টারন্যাশনাল, ফাইভএম ইন্টারন্যাশনাল, মেসার্স ইউনিক ইস্টার্ন (প্রা.) লি. ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল লি. মেসার্স আহমদ ইন্টারন্যাশনাল, বিএম ট্রাভেলস লি. বিএনএস ওভারসিজ লি. রুবেল বাংলাদেশ লি. দি ইফতী ওভারসিজ।
মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে বিএমইটি খরচ হয়েছে জনপ্রতি ৫ হাজার ৪শ’টাকা, সরকারিভাবে খরচ হয়েছে ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকা। সিন্ডিকেট হাতিয়ে নিয়েছে জনপ্রতি ১ লাখ ৫২ হাজার টাকা এমন এক প্রশ্নের জবাবে রিক্রুটিং এজেন্সি সংস্থা বায়রার সাধারণ সম্পাদক ফখরুল ইসলাম বলেন, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে বিএমইটি ক্লিয়ারেন্স ছিল ৫,৪০০ টাকা। তবে ১ লাখ ৫২ হাজার টাকার বিষয়ে যা বলছেন সেক্ষেত্রে দুটো ইস্যু আপনাকে ক্লিয়ার করতে হবে। একটা হল কর্মীরা ১ লাখ ৫২ হাজার টাকা দিয়েছে বিষয়টা এটা না, কর্মীরা দিয়েছে অনেক বেশি টাকা। মতভেদ আছে কেউ দিয়েছে ৪ লাখ, কেউ ৫ লাখ আবার কেউ ৬ লাখ টাকা। এটা সিন্ডিকেটের উপর ডিপেন্ড করে হচ্ছে। এখানে ১ লাখ ৫২ হাজার টাকাটা হচ্ছে যেটা টোটাল কর্মীরা দিয়েছে তার অতিরিক্ত অর্থ। সিন্ডিকেট যারা তৈরি করেছে, যারা মালিক, মূল ব্যক্তি ও মূলহোতা তাদেরকে এই টাকাটা অতিরিক্ত দেওয়া হয়েছে। ২০১৬-২০১৮ এবং ২০২২-২০২৪ এই সময়টাতে বাংলাদেশ থেকে সাড়ে ৭ লাখ কর্মী গিয়েছে। এই সাড়ে ৭ লাখ কর্মীর প্রত্যেককে এই ১ লাখ ৫২ হাজার টাকা সিন্ডিকেট থেকে চাঁদা দিতে হয়েছে। ধরেন একজন কর্মী যদি ৫ লাখ টাকা দিয়ে থাকে তারমধ্যে ১ লাখ ৫২ হাজার টাকা সিন্ডিকেট চলে গেছে। অথচ সে ৩ লাখেই যেতে পারত। বেস্টিনেটের যে কোম্পানি এফডব্লিউসিএমএস এবং এসডিএন বিএইচডি এর মালিক ধাতু শ্রী আমিন মো. নূর। মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে সরকারের নির্ধারিত ফির বিষয়টি ধার্য থাকলেও সেটা অনেক সময় মানা হয় না। কিন্তু অনেক সময় কর্মীরা টাকা কম দেয় আবার বেশিও দেয়। সরকারের ম্যাকানিজমকে ব্যবহার করে, সরকারের মন্ত্রীকে ব্যবহার করে তারা এক ধরনের চাঁদাবাজি করছে।
২০০৬ থেকে ২০০৮ এ কোনো মেডিকেল বাধ্যতামূলক ছিলো না, তাহলে ২০২২ সালে মেডিকেলের স্লিপ (মাইগ্রাম) কীভাবে হলো? মেডিকেল ফি জনপ্রতি ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা হলেও সিন্ডিকেট তা ১১ হাজার টাকায় গ্রহণ করেছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে জবাবে বায়রার সাধারণ সম্পাদক বলেন- (২০১৬-২০১৮) এবং (২০২২-২০২৪) সালে সিন্ডিকেট হয়েছে একটা অনলাইন পদ্ধতির মাধ্যমে, যেটাকে আমরা এফডব্লিউসিএমএস বলি। এটা হচ্ছে মালয়েশিয়ার বেস্টিনেট কোম্পানির একটা অনলাইন পদ্ধতি, যা মালয়েশিয়ান সরকারকে অনলাইন পদ্ধতিতে কোম্পানি আনা নেওয়ার ব্যাপারে সহযোগিতা করবে এবং অনলাইন পদ্ধতির সুবিধাটা দেবে। এটা মালয়েশিয়ান সরকারের সঙ্গে তাদের একটা চুক্তি। কিন্তু তারা এটার অপব্যবহার করে বাংলাদেশের টোটাল ম্যানপাওয়ারের সাথে ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে, এটা টোটালি ই-লিগেল। প্রথমে ছিল ১০ জন, এরপর ২৫ এবং ১০০ জনের এই টোটাল কন্ট্রোলটা নিজেদের আয়ত্তে নেওয়ার জন্য তারা এফডব্লিউসিএমএস কে ব্যবহার করে। মেডিকেল সেন্টারগুলো তাদের আয়ত্তে রাখার জন্য তারা এ কাজটি করেছে। মেডিকেল সেন্টারগুলো নিজেদের মধ্যে রাখছে এবং এখান থেকে একটা কমিশন নিয়েছে। প্রথমে ৭ হাজার নিয়েছে তারপরে আবার ১০০ রিংগিত মাইগ্রাম ফি আছে এতে আরো আড়াইহাজার। এরমধ্যে যে মেডিকেল সেন্টারগুলোকে ৭ হাজার টাকা দিয়েছে সেখান থেকেও তারা কমিশন নিয়েছে। এফডব্লিউসিএমএস এর যারা সিস্টেমের মালিক, যারা মেডিকেল সেন্টারগুলোকে অনুমোদন দিয়েছে তারাও কমিশন নিয়েছে। আগে যেমন সরকারের পক্ষ থেকে মেডিকেল সেন্টার নির্ধারিত ছিল না, (২০১৬-২০১৮) এবং (২০২২-২০২৪) এবারও সরকারের পক্ষ থেকে নির্ধারিত ছিল না। কিন্তু এটা তারা তাদের সিস্টেমের মধ্যে রেখে মেডিকেল সেন্টারগুলো তালিকাভুক্ত করে। যাতে মেডিকেল সেন্টারগুলো তাদের অধীনে থাকে, তাদের সিস্টেম ফলো করে, তাদেরকে কমিশন দেয়। আর কমিশন না দিলে মেডিকেল সেন্টারগুলো বন্ধ করে দেবে। সেজন্য জন্য বাধ্যতামূলকভাবে তারা তাদের সিস্টেমে কিছু মেডিকেল সেন্টারকে অনুমোদন দিয়েছে।
প্রায় ২০ লাখ মানুষ মেডিকেল করিয়েছে আর মালয়েশিয়া গিয়েছে ৪ লাখ ৭৪ হাজারের মতো। এছাড়া নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যেসব কর্মী মালয়েশিয়ায় যেতে পারেনি এজেন্সিগুলোকে তাদের টাকা ফেরত দিতে বলা হয়েছিল, কিন্তু এজেন্সিগুলো সবাইকে টাকা ফেরত দেয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে ফখরুল ইসলামবলেন, কত লোক মেডিকেল করিয়েছে এর সঠিক তথ্যটা আমার কাছে নাই। এই মেডিকেল করাটা কিন্তু ওই সেন্টারের দোষ নয়, দোষটা এজেন্সিগুলোর। কারন যে এজেন্সিগুলো সিন্ডিকেটে ছিল তারাই মেডিকেল স্লিপ ইসু করত এবং কোন সেন্টারে করাবে তা নির্ধারণ করে দিত। যেমন ধরেন -কেথারসিস ইন্টারন্যাশানালের মালিকরুবেল বাংলাদেশ লিমিটেডকে যতটা স্লিপ ইস্যু করবে তারা কিন্তু তার বেশি মেডিকেল করাতে পারবেনা। নির্ধারিত সময়ে মালয়েশিয়ায় যেতে পারেনি ১৭ হাজার প্লাস কর্মী। তাদের ব্যাপারে সরকারিভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে তারা যে এজেন্সিকে যত টাকা দিয়েছে সেই টাকা ফেরত দিতে হবে। সেটা ৭০ হাজারও হতে পারে আবার আড়াই লাখও হতে পারে। এর মেধ্যে অনেকেই টাকা পেয়েছে। তবে যেসব কর্মী মিডিলমেন্টকে টাকা দিয়েছে সমস্যাটা হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে। মিডিলমেন্টের দায়িত্ব তো অন্য কেউ নেবে না, এই জায়গাটাতেই কিছু গ্যাপ হয়েছে। আমি যতটুকু জানি, রিক্রুটিং এজেন্সিতে যেসব টাকা জমা ছিল প্রত্যেকটা এজেন্সি এই টাকাটা ফেরত দিয়েছে।
এফডব্লিউসিএমএস সফটওয়্যার সার্ভিস প্রভাইডার কোম্পানি বেস্টিনেট এসডিএন বিএইচডি এর মালিক আমিন নূর, রুহুল আমিন স্বপন ও ১০০টি রিক্রুটিং লাইসেন্সের মালিকসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে বায়রা কি পদক্ষেপ নিতে পারে বলে মনে করেন- জবাবে তিনি বলেন, বর্তমানে বায়রার কোন কমিটি নেই। বায়রার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোন সুযোগ নাই। আইন প্রয়োগকারি সংস্থা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। তাদের বিরুদ্ধে ২০২৪ সালে পল্টন থানায় যে মামলাটি হয়েছিল সিআইডিতে তার তদন্ত চলছে। দুদুকে ১২টি মামলা হয়েছে।এখন ওই জায়গাগুলোতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা যাচাই-বাছাই করে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে। আমরা (বায়রা) কথা বলতে পারি, বিরোধিতা করতে পারি,বিভিন্ন সময় আন্দোলন করতে পারি। কিন্তু কাজের কাজ তো আমরা করতে পারি না। সাবেক ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে অনিয়ম দুর্নীতি দেয়া হয়েছে সেটার বিভিন্ন পর্যায়ে বিচার হচ্ছে, এটারও বিচার হওয়া উচিত। কারণ এটার মূল ব্যক্তি কারা,অ্যারেঞ্জমেন্ট কারা করেছে, এর মূল নায়ক কে তাকে খুঁজে বের করা সরকারের দায়িত্ব। এটা তারা খুঁজে বের করবে।
মালয়েশিয়া কর্মী পাঠাতে বিএমইটি খরচ হয়েছে জনপ্রতি ৫ হাজার ৪শ টাকা, সরকার কর্তৃক কর্মী প্রতি ব্যয় নির্ধারিত ছিল ৭৮ হাজার ৯৯০/- টাকা। যেখানে সিন্ডিকেট করে হাতিয়ে নিয়েছে জনপ্রতি ১ লাখ ৫২ হাজার টাকা এমন প্রশ্নের জবাবে দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন বলেন, সরকার কর্তৃক মালয়েশিয়া প্রেরীত কর্মী প্রতি ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৮ হাজার ৯৯০/- টাকা। যার মাধ্যে নিবন্ধন ফি, স্বাস্থ্য পরীক্ষা ফি, ভিসা স্ট্যাম্পিং ফি, আয়কর চালান, কল্যাণ তহবিল ফি, ইপারেন্স ফি, স্মার্ট কার্ড ফি, বায়রা, প্রাতিষ্ঠানিক সার্ভিস চার্জ এবং বিবিদ খরচ বিদ্যমান রয়েছে। এছাড়া জনপ্রতি ১ লাখ ৫২ হাজার টাকা করে বায়ের অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। গত ১১ মার্চ ২০২৫ দুর্নীতি দমন কমিশন ১২টি রিক্রুটিং এজেন্সির ৩২ জনের বিরুদ্ধে করা এরমধ্যে ১২টি মামলার তথ্য প্রদান করেছে।
২০০৬ থেকে ২০০৮ এ কোন মেডিকেল-(কী বাধ্যতামুলক ছিল না) বধাতামুলক ছিলো না, তাহলে ২০২২ সাল মেডিকেলের স্লিপ (মাইগ্রাম) কিভাবে হলো?-এমন প্রশ্নের জবাবে দুদকের মহাপরিচালক বলেন, মালয়েশিয়া এবং বাংলাদেশ সরকার উভয়ের যৌথ চুক্তি এবং শর্ত মোতাবেক এবং মালয়েশিয়া সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে দুই দেশেই মেডিকেল কার্যক্রম করে থাকে। ৩০০০-৩৫০০ টাকা মেডিকেল ফি, কিন্তু ১১,০০০ টাকা করে নিয়েছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে জবাবে আক্তার হোসেন বলেন, ১১,০০০/- টাকা করে নিলেও রেকর্ডে পাওয়া যাচ্ছে ৭,৫০০/- টাকা করে। এমন কি সরকার কর্তৃক মেডিকেল বাবদ নির্ধারিত ফি ৭,৫০০/- টাকা করে। মালয়েশিয়ার কর্মী পাঠানোর সাথে জড়িত ছিল ১০০ টি রিক্রটিং এজেন্সি, কিন্তু তদন্ত ও মামলা হয়েছে ১২টির বিরুদ্ধে। তাহলে অন্য এজেন্সিগুলোর ব্যাপারে আপনরা কি ভাবছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অতি দ্রুত আরো মামলা দেওয়ার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তবে আমাদের অনুসন্ধানের বিষয়বস্তু হলো, যে সকল কর্মী মালয়েশিয়া গমন করেছেন তাদের নিকট থেকে অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণ সংক্রান্তে।
অভিযোগের বিষয়ে আমিনুল ইসলাম বিন আবদুল নূরের বক্তব্য নেয়ার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। রুহুল আমিন স্বপনের বক্তব্যও পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তারা দেশ ছেড়েছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর আড়ালে ২৪ হাজার কোটি টাকা পাচার

আপডেট সময় : ০৩:৪৫:০২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ মার্চ ২০২৫
  • অতি দ্রুত আরো মামলা দেয়ার কার্যক্রম চলছে। আমাদের অনুসন্ধানের বিষয়বস্তু হলো, যে সকল কর্মী মালয়েশিয়া গমন করেছেন তাদের নিকট থেকে অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণ সংক্রান্ত ঃ মহাপরিচালক, দুদক

  • এটা মালয়েশিয়ান সরকারের সঙ্গে তাদের একটা চুক্তি। কিন্তু তারা এটার অপব্যবহার করে বাংলাদেশের টোটাল ম্যানপাওয়ারের সাথে ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে, এটা টোটালি ই-লিগ্যাল ঃ বায়রা

মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর নাম করে ২৪ হাজার কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে শুধুমাত্র মেডিকেল ও সিন্ডিকেট ভিসা প্রসেসিং খাতেই এই বিশাল অর্থ পাচার করা হয়। এতে নিঃস্ব হয়ে পথে বসেছে বাংলাদেশের হাজারো শ্রমিক। বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী শিল্প উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল (লোটাস কামাল), সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদ, নিজাম হাজারি, লে.জে. (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীসহ ১৪ জন এই সিন্ডিকেটে জড়িত থাকার প্রমান পাওয়া গেছে। সিন্ডিকেটের সেবাদাস হিসেবে কাজ করেছে একশ’টি রিক্রুটিং এজেন্সি। এ বিপুল অর্থ পাচারের মূল হোতা রিক্রুটিং এজেন্সি কেথারসিস ইন্টারন্যাশানালের মালিক রুহুল আমিন স্বপন এবং বেস্টিনেট এসডিএন বিএইচডি এর মালিক আমিনুল ইসলাম বিন আবদুল নূর (ধাতু শ্রী আমিন মো. নূর)।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, মালয়েশিয়ায় পাঠানোর জন্য ২০ লাখ কর্মীর মেডিকেল করানো হলেও (২০২২-২০২৪) এর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাঠানো হয়েছে মাত্র ৪ লাখ ৭৪ হাজার শ্রমিক। বাংলাদেশ সরকারের বিএমইটি খরচ জনপ্রতি ৫,৪০০ টাকা ধার্য করা থাকলেও সিন্ডিকেট নেয় ১ লাখ ৫২ হাজার টাকা। পাশাপাশি মেডিকেল ফি জনপ্রতি ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা হলেও সিন্ডিকেট হাতিয়ে নিয়েছে ১১ হাজার টাকা। অথচ মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে সরকার নির্ধারিত সর্বোচ্চ খরচ ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকা। মালয়েশিয়া যেতে গড়ে একজন বাংলাদেশি কর্মী খরচ করেছেন ৫ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। যা সরকার নির্ধারিত ফিয়ের চেয়ে ২০ হাজার কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে চক্র ফি নেওয়া হয়েছে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি।
ভেরাইট ইনকর্পোরেটেড এবং অন্যান্য চারটি কোম্পানি (মে ২০২৩) দ্বারা পরিচালিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, এই অভিবাসী কর্মী সিন্ডিকেটের সদস্যরা কর্মী প্রতি ৭৯,০০০ টাকার সরকার-নির্দিষ্ট খরচের পরিবর্তে গড়ে ৫ লাখ ৪৪ হাজার টাকা ধার্য করে।
নানমুখী চতুরতার জালে চক্রটি মালয়েশিয়ার এফডব্লিউসিএমএস (ঋডঈগঝ- ঋড়ৎবরমহ ডড়ৎশবৎং ঈবহঃৎধষরুবফ গধহধমবসবহঃ ঝুংঃবস) নামে একটি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কাজ করেছে। সফটওয়্যার সার্ভিস প্রভাইডার কোম্পানি বেস্টিনেট এসডিএন বিএইচডি এর মালিক ধাতু শ্রী আমিন মো. নূর এবং রুহুল আমিন স্বপন, যা ফরেন ওয়ার্কার সেন্ট্রালাইজড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (এফডব্লিউসিএমএস) চালায়।
অভিযোগ রয়েছে যে, বাংলাদেশের সরকার ও মালয়েশিয়ার সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিত এমওইউতে দেশের স্বার্থ বিরোধী শর্ত যোগ করে বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর নির্বাচন প্রক্রিয়া মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে দিয়েছেন রুহুল আমিন স্বপন ও বেস্টিনেট এসডিএন বিএইচডি এর মালিক ধাতু শ্রী আমিন মো. নূর। অন্যান প্রভাবশালী সদস্যদের মধ্যে রয়েছে- আলাউদ্দিন চৌধুরী নাসিম, কাজি মফিজুর রহমান, আবুল বাশার, নূর আলী, কালা ফিরোজ, মহি উদ্দিন মহি, বাসেক কমিশনার, সাবেক মন্ত্রী ইমরান আহমেদ ও সচিব মুনিরুছ সালেহীনসহ ১০০টি রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক।
অপরদিকে মালয়েশিয়া অংশে বাংলাদেশী বংশভ্রুত মালয়েশিয়ান নাগরিক সফটওয়্যার সার্ভিস প্রভাইডার কোম্পানি বেস্টিনেট এসডিএন বিএইচডি এর মালিক ধাতু শ্রী আমিন মো. নুর ও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী ইমরান আহমেদসহ অনেকেই সম্পৃক্ত রয়েছেন এমন অভিযোগ তুলেছে ভূক্তভোগীরা।
মালয়েশিয়ায় পাচার হওয়া অর্থের সংক্ষিপ্ত পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চক্রটি প্রায় ৮৭.৫০ বিলিয়ন টাকা পাচার করেছে। এর মধ্যে প্রতি শ্রমিকের কাছ থেকে ১ লাখ টাকা ফি নেয়া হয়েছে, যা প্রায় ৫০ কোটি টাকা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভিসা বাণিজ্যের নামে আরও ৩৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা পাচার করা হয়েছে। মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশে মাত্র ১০০টি রিক্রুটিং এজেন্সিকে অনুমতি দেওয়া হলেও, এর মধ্যে অনেক সংস্থা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। ফলে অভিবাসী কর্মী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কর্মী পাঠানো, ঘুষ ও অর্থপাচারের কারণে বাংলাদেশীদের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বারবার বন্ধ হয়ে গেছে। সম্প্রতি ২০২৪ সালের মে মাসে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে শ্রমিক পাঠানো বন্ধ হয়ে যায়।
অভিবাসী কর্মী সিন্ডিকেটের কর্মকান্ড :
মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে আগ্রহী অভিবাসীদের নাম একটি সফটওয়্যারে নিবন্ধন করতে হয়, যার নাম ফরেন ওয়ার্কার্স সেন্ট্রাল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম এফডব্লিউসিএমএস । এই সিস্টেমের মালিক ছিলেন আমিনুল ইসলাম বিন আবদুল নূর পরিচালিত কোম্পানি বেস্টিনেট।
রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকরা জানিয়েছেন, প্রতি কর্মীর রেজিস্ট্রেশন ফি ১০০ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত (প্রায় ২৭০০ টাকা), তবে তাদের কাছ থেকে নেয়া হয়েছে প্রায় ১,০৭,০০০ টাকা। এর মধ্যে ৭ হাজার টাকা স্থানীয় কালেকশন এজেন্সি রাখে এবং বাকি ১ লাখ টাকা অবৈধভাবে মালয়েশিয়ার বেস্টিনেটে পাঠানো হয়। অভিবাসী সফ্টওয়্যার শুধুমাত্র সেইসব কোম্পানির তালিকা করে যারা অভিবাসী কর্মী সিন্ডিকেটের অংশ। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া ঘুষ ও অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়েছে।
এদিকে মালয়েশিয়ার অভিবাসী শ্রমিক সিন্ডিকেটের দুই সদস্যের দাবি, ধাতু শ্রী আমিন মো. নূর মালয়েশিয়ার বিভিন্ন কর্মকর্তাকে ঘুষ দেওয়ার অজুহাতে অতিরিক্ত অর্থ দাবি করেন। বাংলাদেশে তার প্রতিনিধি রুহুল আমিন স্বপন ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি সংস্থার মালিক। ২০২৩ সালে বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে বেস্টিনেটের অনিয়মের অভিযোগ দায়ের করা হয়। মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে নিয়োগকারী সংস্থা ও নিয়োগকর্তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয় ২০২৩ সালের ৯ মে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে একটি চিঠি পাঠায়। বেস্টিনেট থেকে ই-ওয়ালেট টপ-আপ (টাকা জমা) না থাকার কারণে বেশ কয়েকটি নিয়োগকারী সংস্থা মন্ত্রণালয়ের কাছে অভিযোগ করেছে।
মালয়েশিয়ার নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে। তারা চিঠির কপি বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়েও পাঠিয়েছে। একই অভিযোগ তুলে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে চিঠিও পাঠিয়েছে বায়রা। ওই চিঠির ভিত্তিতে ২০২৪ সালের ২ জানুয়ারি মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে চিঠি পাঠায় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। চিঠিতে বলা হয়েছে, এফডব্লিউসিএমএসের মাধ্যমে নির্বাচিত বেশিরভাগ নিয়োগকারী সংস্থার কর্মী সংগ্রহ করে পাঠানোর পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা ও ক্ষমতা নেই।
বেস্টিনেটের সঙ্গে রুহুল আমিন স্বপনের সংযোগ : বাংলাদেশের জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস (আরজেএসসি) অনুসারে, বেস্টিনেট মালয়েশিয়া বাংলাদেশে ২৪ মার্চ ২০২৪ তারিখে নিবন্ধিত হয়েছে, বেস্টিনেট বাংলাদেশ লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছে। আমিনুল ইসলাম বিন আব্দুল নূর চেয়ারম্যান এবং রুহুল আমিন ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন।
অর্থলোপাটে মামলা : মালয়েশিয়া শ্রমবাজারে চলমান সিন্ডিকেট চক্রের বিরুদ্ধে এবার হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। মামলায় সাবেক প্রবাসী মন্ত্রী ইমরান আহমেদ এবং সাবেক সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীনসহ ১০৩ জনকে আসামী করে পল্টন মডেল থানার মামলার নম্বর ০৬ (০৩/৯/২০২৪) ধারা ৪০৬ /৪২০/৩৮৫/৩৮৬/৪১৭ ও ৩৪ পেনাল কোড সহ মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২ এর ৬ /৭ /৮/ ৯ /১০ রুজু করেন ক্ষতিগ্রস্থ রিক্রুটিং এজেন্সি আফিয়া ওভারসীজ (আর এল-১০১০) এর প্রোপাইটর আলতাব খান। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছে সিআইডি।
এদিকে গত ১১ মার্চ ২০২৫ তারিখে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর নামে ১ হাজার ১২৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ওরফে লোটাস কামাল ও তাঁর পরিবারের প্রতিষ্ঠানসহ ১২টি রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন বলেন, আসামির তালিকায় রয়েছেন ১২ রিক্রুটিং এজেন্সির ৩২ মালিক-কর্মকর্তা। তাঁদের বিরুদ্ধে সরকার নির্ধারিত টাকার চেয়ে পাঁচ গুণ অর্থ গ্রহণ করে ৬৭ হাজার ৩৮০ প্রবাসীর কাছ থেকে ওই অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
১২টি রিক্রুটিং এজেন্সির মধ্যে রয়েছে- মেসার্স ওরবিটাল এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স ওরবিটাল ইন্টারন্যাশনাল, স্নিগ্ধা ওভারসিজ লি. বিনিময় ইন্টারন্যাশনাল, ফাইভএম ইন্টারন্যাশনাল, মেসার্স ইউনিক ইস্টার্ন (প্রা.) লি. ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল লি. মেসার্স আহমদ ইন্টারন্যাশনাল, বিএম ট্রাভেলস লি. বিএনএস ওভারসিজ লি. রুবেল বাংলাদেশ লি. দি ইফতী ওভারসিজ।
মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে বিএমইটি খরচ হয়েছে জনপ্রতি ৫ হাজার ৪শ’টাকা, সরকারিভাবে খরচ হয়েছে ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকা। সিন্ডিকেট হাতিয়ে নিয়েছে জনপ্রতি ১ লাখ ৫২ হাজার টাকা এমন এক প্রশ্নের জবাবে রিক্রুটিং এজেন্সি সংস্থা বায়রার সাধারণ সম্পাদক ফখরুল ইসলাম বলেন, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে বিএমইটি ক্লিয়ারেন্স ছিল ৫,৪০০ টাকা। তবে ১ লাখ ৫২ হাজার টাকার বিষয়ে যা বলছেন সেক্ষেত্রে দুটো ইস্যু আপনাকে ক্লিয়ার করতে হবে। একটা হল কর্মীরা ১ লাখ ৫২ হাজার টাকা দিয়েছে বিষয়টা এটা না, কর্মীরা দিয়েছে অনেক বেশি টাকা। মতভেদ আছে কেউ দিয়েছে ৪ লাখ, কেউ ৫ লাখ আবার কেউ ৬ লাখ টাকা। এটা সিন্ডিকেটের উপর ডিপেন্ড করে হচ্ছে। এখানে ১ লাখ ৫২ হাজার টাকাটা হচ্ছে যেটা টোটাল কর্মীরা দিয়েছে তার অতিরিক্ত অর্থ। সিন্ডিকেট যারা তৈরি করেছে, যারা মালিক, মূল ব্যক্তি ও মূলহোতা তাদেরকে এই টাকাটা অতিরিক্ত দেওয়া হয়েছে। ২০১৬-২০১৮ এবং ২০২২-২০২৪ এই সময়টাতে বাংলাদেশ থেকে সাড়ে ৭ লাখ কর্মী গিয়েছে। এই সাড়ে ৭ লাখ কর্মীর প্রত্যেককে এই ১ লাখ ৫২ হাজার টাকা সিন্ডিকেট থেকে চাঁদা দিতে হয়েছে। ধরেন একজন কর্মী যদি ৫ লাখ টাকা দিয়ে থাকে তারমধ্যে ১ লাখ ৫২ হাজার টাকা সিন্ডিকেট চলে গেছে। অথচ সে ৩ লাখেই যেতে পারত। বেস্টিনেটের যে কোম্পানি এফডব্লিউসিএমএস এবং এসডিএন বিএইচডি এর মালিক ধাতু শ্রী আমিন মো. নূর। মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে সরকারের নির্ধারিত ফির বিষয়টি ধার্য থাকলেও সেটা অনেক সময় মানা হয় না। কিন্তু অনেক সময় কর্মীরা টাকা কম দেয় আবার বেশিও দেয়। সরকারের ম্যাকানিজমকে ব্যবহার করে, সরকারের মন্ত্রীকে ব্যবহার করে তারা এক ধরনের চাঁদাবাজি করছে।
২০০৬ থেকে ২০০৮ এ কোনো মেডিকেল বাধ্যতামূলক ছিলো না, তাহলে ২০২২ সালে মেডিকেলের স্লিপ (মাইগ্রাম) কীভাবে হলো? মেডিকেল ফি জনপ্রতি ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা হলেও সিন্ডিকেট তা ১১ হাজার টাকায় গ্রহণ করেছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে জবাবে বায়রার সাধারণ সম্পাদক বলেন- (২০১৬-২০১৮) এবং (২০২২-২০২৪) সালে সিন্ডিকেট হয়েছে একটা অনলাইন পদ্ধতির মাধ্যমে, যেটাকে আমরা এফডব্লিউসিএমএস বলি। এটা হচ্ছে মালয়েশিয়ার বেস্টিনেট কোম্পানির একটা অনলাইন পদ্ধতি, যা মালয়েশিয়ান সরকারকে অনলাইন পদ্ধতিতে কোম্পানি আনা নেওয়ার ব্যাপারে সহযোগিতা করবে এবং অনলাইন পদ্ধতির সুবিধাটা দেবে। এটা মালয়েশিয়ান সরকারের সঙ্গে তাদের একটা চুক্তি। কিন্তু তারা এটার অপব্যবহার করে বাংলাদেশের টোটাল ম্যানপাওয়ারের সাথে ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে, এটা টোটালি ই-লিগেল। প্রথমে ছিল ১০ জন, এরপর ২৫ এবং ১০০ জনের এই টোটাল কন্ট্রোলটা নিজেদের আয়ত্তে নেওয়ার জন্য তারা এফডব্লিউসিএমএস কে ব্যবহার করে। মেডিকেল সেন্টারগুলো তাদের আয়ত্তে রাখার জন্য তারা এ কাজটি করেছে। মেডিকেল সেন্টারগুলো নিজেদের মধ্যে রাখছে এবং এখান থেকে একটা কমিশন নিয়েছে। প্রথমে ৭ হাজার নিয়েছে তারপরে আবার ১০০ রিংগিত মাইগ্রাম ফি আছে এতে আরো আড়াইহাজার। এরমধ্যে যে মেডিকেল সেন্টারগুলোকে ৭ হাজার টাকা দিয়েছে সেখান থেকেও তারা কমিশন নিয়েছে। এফডব্লিউসিএমএস এর যারা সিস্টেমের মালিক, যারা মেডিকেল সেন্টারগুলোকে অনুমোদন দিয়েছে তারাও কমিশন নিয়েছে। আগে যেমন সরকারের পক্ষ থেকে মেডিকেল সেন্টার নির্ধারিত ছিল না, (২০১৬-২০১৮) এবং (২০২২-২০২৪) এবারও সরকারের পক্ষ থেকে নির্ধারিত ছিল না। কিন্তু এটা তারা তাদের সিস্টেমের মধ্যে রেখে মেডিকেল সেন্টারগুলো তালিকাভুক্ত করে। যাতে মেডিকেল সেন্টারগুলো তাদের অধীনে থাকে, তাদের সিস্টেম ফলো করে, তাদেরকে কমিশন দেয়। আর কমিশন না দিলে মেডিকেল সেন্টারগুলো বন্ধ করে দেবে। সেজন্য জন্য বাধ্যতামূলকভাবে তারা তাদের সিস্টেমে কিছু মেডিকেল সেন্টারকে অনুমোদন দিয়েছে।
প্রায় ২০ লাখ মানুষ মেডিকেল করিয়েছে আর মালয়েশিয়া গিয়েছে ৪ লাখ ৭৪ হাজারের মতো। এছাড়া নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যেসব কর্মী মালয়েশিয়ায় যেতে পারেনি এজেন্সিগুলোকে তাদের টাকা ফেরত দিতে বলা হয়েছিল, কিন্তু এজেন্সিগুলো সবাইকে টাকা ফেরত দেয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে ফখরুল ইসলামবলেন, কত লোক মেডিকেল করিয়েছে এর সঠিক তথ্যটা আমার কাছে নাই। এই মেডিকেল করাটা কিন্তু ওই সেন্টারের দোষ নয়, দোষটা এজেন্সিগুলোর। কারন যে এজেন্সিগুলো সিন্ডিকেটে ছিল তারাই মেডিকেল স্লিপ ইসু করত এবং কোন সেন্টারে করাবে তা নির্ধারণ করে দিত। যেমন ধরেন -কেথারসিস ইন্টারন্যাশানালের মালিকরুবেল বাংলাদেশ লিমিটেডকে যতটা স্লিপ ইস্যু করবে তারা কিন্তু তার বেশি মেডিকেল করাতে পারবেনা। নির্ধারিত সময়ে মালয়েশিয়ায় যেতে পারেনি ১৭ হাজার প্লাস কর্মী। তাদের ব্যাপারে সরকারিভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে তারা যে এজেন্সিকে যত টাকা দিয়েছে সেই টাকা ফেরত দিতে হবে। সেটা ৭০ হাজারও হতে পারে আবার আড়াই লাখও হতে পারে। এর মেধ্যে অনেকেই টাকা পেয়েছে। তবে যেসব কর্মী মিডিলমেন্টকে টাকা দিয়েছে সমস্যাটা হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে। মিডিলমেন্টের দায়িত্ব তো অন্য কেউ নেবে না, এই জায়গাটাতেই কিছু গ্যাপ হয়েছে। আমি যতটুকু জানি, রিক্রুটিং এজেন্সিতে যেসব টাকা জমা ছিল প্রত্যেকটা এজেন্সি এই টাকাটা ফেরত দিয়েছে।
এফডব্লিউসিএমএস সফটওয়্যার সার্ভিস প্রভাইডার কোম্পানি বেস্টিনেট এসডিএন বিএইচডি এর মালিক আমিন নূর, রুহুল আমিন স্বপন ও ১০০টি রিক্রুটিং লাইসেন্সের মালিকসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে বায়রা কি পদক্ষেপ নিতে পারে বলে মনে করেন- জবাবে তিনি বলেন, বর্তমানে বায়রার কোন কমিটি নেই। বায়রার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোন সুযোগ নাই। আইন প্রয়োগকারি সংস্থা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। তাদের বিরুদ্ধে ২০২৪ সালে পল্টন থানায় যে মামলাটি হয়েছিল সিআইডিতে তার তদন্ত চলছে। দুদুকে ১২টি মামলা হয়েছে।এখন ওই জায়গাগুলোতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা যাচাই-বাছাই করে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে। আমরা (বায়রা) কথা বলতে পারি, বিরোধিতা করতে পারি,বিভিন্ন সময় আন্দোলন করতে পারি। কিন্তু কাজের কাজ তো আমরা করতে পারি না। সাবেক ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে অনিয়ম দুর্নীতি দেয়া হয়েছে সেটার বিভিন্ন পর্যায়ে বিচার হচ্ছে, এটারও বিচার হওয়া উচিত। কারণ এটার মূল ব্যক্তি কারা,অ্যারেঞ্জমেন্ট কারা করেছে, এর মূল নায়ক কে তাকে খুঁজে বের করা সরকারের দায়িত্ব। এটা তারা খুঁজে বের করবে।
মালয়েশিয়া কর্মী পাঠাতে বিএমইটি খরচ হয়েছে জনপ্রতি ৫ হাজার ৪শ টাকা, সরকার কর্তৃক কর্মী প্রতি ব্যয় নির্ধারিত ছিল ৭৮ হাজার ৯৯০/- টাকা। যেখানে সিন্ডিকেট করে হাতিয়ে নিয়েছে জনপ্রতি ১ লাখ ৫২ হাজার টাকা এমন প্রশ্নের জবাবে দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন বলেন, সরকার কর্তৃক মালয়েশিয়া প্রেরীত কর্মী প্রতি ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৮ হাজার ৯৯০/- টাকা। যার মাধ্যে নিবন্ধন ফি, স্বাস্থ্য পরীক্ষা ফি, ভিসা স্ট্যাম্পিং ফি, আয়কর চালান, কল্যাণ তহবিল ফি, ইপারেন্স ফি, স্মার্ট কার্ড ফি, বায়রা, প্রাতিষ্ঠানিক সার্ভিস চার্জ এবং বিবিদ খরচ বিদ্যমান রয়েছে। এছাড়া জনপ্রতি ১ লাখ ৫২ হাজার টাকা করে বায়ের অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। গত ১১ মার্চ ২০২৫ দুর্নীতি দমন কমিশন ১২টি রিক্রুটিং এজেন্সির ৩২ জনের বিরুদ্ধে করা এরমধ্যে ১২টি মামলার তথ্য প্রদান করেছে।
২০০৬ থেকে ২০০৮ এ কোন মেডিকেল-(কী বাধ্যতামুলক ছিল না) বধাতামুলক ছিলো না, তাহলে ২০২২ সাল মেডিকেলের স্লিপ (মাইগ্রাম) কিভাবে হলো?-এমন প্রশ্নের জবাবে দুদকের মহাপরিচালক বলেন, মালয়েশিয়া এবং বাংলাদেশ সরকার উভয়ের যৌথ চুক্তি এবং শর্ত মোতাবেক এবং মালয়েশিয়া সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে দুই দেশেই মেডিকেল কার্যক্রম করে থাকে। ৩০০০-৩৫০০ টাকা মেডিকেল ফি, কিন্তু ১১,০০০ টাকা করে নিয়েছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে জবাবে আক্তার হোসেন বলেন, ১১,০০০/- টাকা করে নিলেও রেকর্ডে পাওয়া যাচ্ছে ৭,৫০০/- টাকা করে। এমন কি সরকার কর্তৃক মেডিকেল বাবদ নির্ধারিত ফি ৭,৫০০/- টাকা করে। মালয়েশিয়ার কর্মী পাঠানোর সাথে জড়িত ছিল ১০০ টি রিক্রটিং এজেন্সি, কিন্তু তদন্ত ও মামলা হয়েছে ১২টির বিরুদ্ধে। তাহলে অন্য এজেন্সিগুলোর ব্যাপারে আপনরা কি ভাবছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অতি দ্রুত আরো মামলা দেওয়ার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তবে আমাদের অনুসন্ধানের বিষয়বস্তু হলো, যে সকল কর্মী মালয়েশিয়া গমন করেছেন তাদের নিকট থেকে অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণ সংক্রান্তে।
অভিযোগের বিষয়ে আমিনুল ইসলাম বিন আবদুল নূরের বক্তব্য নেয়ার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। রুহুল আমিন স্বপনের বক্তব্যও পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তারা দেশ ছেড়েছেন।