মুরাদনগরে ট্রিপল মার্ডারের আসামিরা উপদেষ্টার হেফাজতে, আসামি ধরছে না পুলিশ
- আপডেট সময় : ৩৪ বার পড়া হয়েছে
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা থানার কড়ুইরাঁড়ির চাঞ্চল্যকর ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় আসামিদেরকে বিভিন্নভাবে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিতর্কিত উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বিরুদ্ধে। সেই সাথে ভুক্তভোগী পরিবারকে মামলা উঠিয়ে নিতে বিভিন্নভাবে হয়রানি ও হত্যার হুমকি দিয়ে আসছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।
দীর্ঘ চার মাসের ব্যাবধানে মূল আসামিদের কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। অপরদিকে হুমকিতে পরে নিজ বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে ভুক্তভোগী পরিবার। মূল আসামিরা উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও তাঁর বাবার আশ্রয়ে থেকে মামলা তুলে না নিলে বাদীকে মেরে ফেলা ও ধর্ষণের হুমকি দিচ্ছে। আরো নির্মমভাবে মারবে বলেও হুশিয়ারি দেওয়ার অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।
মূল আসামিদের আইনের বাহিরে রেখে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে নামেমাত্র কিছু আসামিকে গ্রেফতার করলেও তাদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ কিংবা নির্দিষ্ট কোন ধারা উল্লেখ না করেই, কোর্টে পাঠানোর অভিযোগ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক নয়ন কুমার চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে। যে কারনে উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিনে বের হওয়ার চেষ্টা করছে আসামিরা।
চার মাস পর মা, বোন, ভাইয়ের কবর জিয়ারত ও দোয়া মাহফিলে কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবারের প্রতিটা সদস্য, আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীরা। ভাইয়ের রক্তের দাগ, বোনকে কূপিয়ে মারার বর্ণনা ও মায়ের মৃত্যু যন্ত্রনার বিবরণ শুনে ভারি হয়ে উঠে চারপাশ। শুধু সঠিক বিচারের অপেক্ষায় দিন গুনছেন তারা। আইনি সহায়তা পেতে জীবনের ঝুকি নিয়ে দৌড়াচ্ছেন বিভিন্ন দপ্তরে। তবে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের ইশারায় কোন সঠিক বিচারের আশার বাণী পাচ্ছেন না তারা, নিশ্চিন্তে ঘুরছেন আসামিরা।
নিহত রুবি আক্তারের ছোট মেয়ে রুমা আক্তার বলেন, আমার মা, বোন, ভাইকে যে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে তা আবু জাহেলকে হার মানায়। আজকে চার মাস হয়ে গেছে, একটা প্রধান আসামি ধরতে পারে নাই পুলিশ৷ আসামি না ধরার পেছনে উপদেষ্টা আসিফ ও তার বাবার হাত রয়েছে। তারাই আসামিদেরকে শেল্টার দিয়ে ধরা ছোয়ার বাইরে রাখছেন। উল্টো আমাকে ও আমার বোনকে মেরে নির্বংশ করে দিতে চান।আমরা উপদেষ্টার ভয়ে এতোদিন বাড়িতে আসি না। কারণ আসিফ আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিছে। ওদের টার্গেট আমাদের মেরে ফেলার। আর উপদেষ্টা আসিফ বলে দিছে ৩ জন মারলে যে আইন হবে, ৪ জন মারলে সেই আইন হবে।
মুল আসামিরা কেন গ্রেফতার হয় না এই জন্য আমি এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করি। তিনি আমাকে বলেন, আমি গেলে তো আসামি পাই না। এখন পর্যন্ত টুকটাক যে আসামি গুলোকে ধরছে একজনকেও ওয়ান সিক্সটি ফোর দেয় না।
নিহত রুবি আক্তারের বড় মেয়ে মামলার বাদি রিক্তা আক্তার বলেন, মামলায় যাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদেরকে কোন ধারাই দেয়নি ডিবি পুলিশ। আসামি ধরার সময় আমরা মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে টাকা-পয়সা দিয়ে সহযোগিতা করেছি। এই আসামি না ধরার পিছনে একমাত্র কারণ হচ্ছে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। আমরা কি আমাদের মা-ভাই-বোন হত্যার বিচার পাব না.? আমরা শুধু সঠিক বিচার চাই। উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও তার বাবার ইশারায় সব চলছে। এসব বন্ধ করে সঠিক আসামিদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি করছি।
নিহত রাসেল মিয়ার স্ত্রীর মিম আক্তার বলেন, উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের লোকজনের ভয়ে আমরা কোন জায়গায় যাইতে পারতেছি না। ওরা এখনো আমাদেরকে ফোনে হুমকি দেয়। আমাকে ফোন দিয়ে বলছে, তর স্বামীকে তো কুপিয়ে মারছি, তরে সামনে পেলে ২০-৩০ জন মিলে ধর্ষণ করে মেরে ফেলবো। আমরা এই অত্যাচারিত মানুষদের কাছ থেকে মুক্তি চাই, দেশবাসীর কাছে আমার পরিবারের হত্যার বিচার চাই।
তবে তদন্ত অফিসার নয়ন কুমার চক্রবর্তী জানান, মামলা দ্রুত গতিতে চলছে। নামীয় ৭ জন ও সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ৯ জনসহ মোট ১৬ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বাকিদের গ্রেফতারের জন্য চেষ্টা করছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের বিরুদ্ধে য়দন্ত চলমান আছে, তদন্ত শেষে আইনি প্রক্রিয়ায় নির্দিষ্ট ধারা যোগ করা হবে।



















