রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন বাংলাদেশ

- আপডেট সময় : ১২:১৪:৩৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫ ৬১ বার পড়া হয়েছে
আজ ২৬ শে মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস । গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সহিত জাতী স্মরণ করে এ দিন টিকে । আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা একটা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ পেয়েছি।
” বিশ্বকবির সোনার বাংলা, নজরুলের বাংলাদেশ, জীবনানন্দের রূপসী বাংলা রূপের যে তার নেইকো শেষ। কেউবা বলে ধানের দেশ , কেউবা বলে গানের দেশ , আমরা বলি প্রানের দেশ । বাংলাদেশের লক্ষ কোটি মানুষের দেশ প্রান প্রিয় আমাদের বাংলাদেশ । এই দেশের আজ শুধু জন্মদিন নয় এটি আমাদের আত্মমর্যাদা , ত্যাগ ও বিজয়ের প্রতীক। আমরা আমাদের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করা যেসব নেতা ও মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করি এবং শ্রদ্ধা জানাই । তাদের ঘাম এবং রক্ত উৎসর্গ করেছিল যাতে আমরা এবং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বিদেশি উপনিবেশিক নিপীড়নের জোয়াল থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন দেশের বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে পারি । বীরের জাতি একসাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে 30 লক্ষ শহীদ ২ লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে এই স্বাধীনতা পেয়েছি । বাংলাদেশের মানুষের আছে মুক্তির প্রতীক্ষায় উদ্দীপ্ত হওয়ার ইতিহাস । পাকিস্তানের শাসন শোষণ ও বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে বিশ্বের মানচিত্রে জায়গা করে নেয়ার ইতিহাস।
১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্ট দ্বিজাতির তত্ত্বের ভিত্তিতে জন্ম নেয় ভারত ও পাকিস্তান নামক দুটি রাষ্ট্র । পশ্চিম দিক অবস্থানের কারণে পশ্চিম পাকিস্তান এবং পূর্ব ভূখন্ড তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান বর্তমানে বাংলাদেশ ।
তৎকালীন পাকিস্তান সরকার এক দেশে দুই নীতির ফলে বৈরতার জন্ম নেয় । অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী পশ্চিম পাকিস্তান আমাদের প্রাণের বাংলা ভাষা থেকে শুরু করে অর্থনীতি , প্রশাসন , দ্রব্যমূল্য , মানবতা , চাকুরী এবং সামরিক বাহিনী সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের উপর বৈসম্য মুলক আচরণ করতে থাকে।
শুধু এটাই নয় অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে রাজনৈতিক ভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের উপর হামলা , মামলা , গ্রেফতার এবং জনসাধারণের কণ্ঠরোধ করতে থাকলে যার ফলশ্রুতিতে , তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান তার স্বায়ত্ব শাসনের দাবিতে জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দলগুলি ছাত্র-জনতা দেশব্যাপী তুমুল আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ে। সারা দেশব্যাপী স্লোগানে স্লোগানে ছড়িয়ে পড়ে ” তোমার আমার ঠিকানা -পদ্মা মেঘনা যমুনা ,” পিন্ডি না ঢাকা- ঢাকা ঢাকা, ” ” জাগো বাঙালি – জাগো “। ” ” বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো – বাংলাদেশ স্বাধীন কর ” ।এই স্লোগানে স্বাধীনতার আন্দোলনের পথকে উন্মুক্ত করে । সময়ের গতিতে পরে অহিংসা আন্দোলন , সহিংস আন্দোলনের রূপান্তরিত হয়। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান সরকার একটি সাধারণ নির্বাচন দিতে বাধ্য হয় । ১৯৭০ সালের ৭ ই ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে । পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসাবে আওয়ামীলীগের উত্তোরন ঘটে । বাংলার মানুষের তৎকালীন প্রত্যাশা ছিল নির্বাচিত রাজনৈতিক দল সরকার গঠন করবে । ঠিক তখনই পাকিস্তানের শাসকবর্গ এবং কিছু রাজনৈতিক দল ও সামরিক কর্মকর্তাগণ বাঙ্গালীদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর যাতে না হয় সেজন্য বিরাট এক ষড়যন্ত্র করে । তৎকালীন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ও সেনাপতি টিক্কা খান ঢাকা সহ বিশ্ববিদ্যালয় , পুলিশ ফাঁড়ি, সামরিক , বেসামরিক সহ সাধারণ মানুষের উপর ট্যাংক , ভারী অস্ত্রশস্ত্রসহ নিরস্ত জনগণের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে । সেই ভয়াল রাত্রি ছিল ২৫ শে মার্চ ১৯৭১ সাল । রাত ১১ টা বারোটার দিকে নিরস্ত্র নিরীহ জনসাধারণের উপর নেমে আসে অন্ধকার এক বিভীষিকা ময় রাত্রি । দেশের মানুষ জীবন বাঁচানোর জন্য দিগ্ববাদিক জ্ঞান শূন্য হয়ে ছোট ছুটি করছিল । কিন্তু তখন কোন নেতৃত্ব পায়নি। সেই এই আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন । এই দুর্যোগের মুহূর্তে কোন নেতৃবৃন্দকে খুঁজে পাওয়া যায়নি । জাতি নেতৃত্ব শূন্য হয়ে পড়ে তখনই বাংলার সেনাবাহিনীর এক সিংহ পুরুষ, বাংলা মায়ের গর্বিত সন্তান । তার স্ত্রী সন্তান সবাইকে ফেলে রেখে , সাহসিকতার সাথে ২৭ শে মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা করলেন । ” আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন ” তার এই ঘোষণায় জিয়াউর রহমান নিজেকে প্রভিশনাল প্রেসিডেন্ট হিসেবে উল্লেখ করেন । জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েই ক্ষান্ত থাকেন নি তিনি ” উই রিভোল্ট” ঘোষণা দিয়ে নিজেও নেতৃত্ব দেন সশস্ত্র সংগ্রামের । এবং মুক্তিযুদ্ধের জেট ফোর্সের অধিনায়ক হিসাবে মুক্তিযুদ্ধের দায়িত্ব পালন করেন । আর এই ঘোষণা দেশ বিদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়। স্বাধীনতার ঘোষণা ছিল I Major Ziaur Rahman provisional President and commander in chief of liberation . Army do hereby proclaim independence of Bangladesh . our liberation struggle. Bangladesh is independent . we have Waged war for the liberation of Bangladesh. Everybody is requested to participate in the liberation war with whatever we have . we have to fight and liberate the country from the occupation of Pakistan army. inshallah victory is ours.
পরবর্তীতে তৎকালীন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের আলাপ আলোচনার মাধ্যমে জিয়াউর রহমান নিজের উদার মনোভাবের পরিচয় দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের নামে দ্বিতীয় বার ঘোষণা পত্রটি পাঠ করেন।
মেজর জিয়ার এই ঘোষণার পর দেশের মানুষের মধ্যে একটা চাঞ্চল্যকর অবস্থার সৃষ্টি হয় এবং দেশের স্বাধীনতার জন্য বেঁচে থাকার জন্য, স্বাধিকার আন্দোলনের জন্য নতুন করে জাগরণ সৃষ্টি এবং দেশের আবাল বৃদ্ধ বনিতা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে দলে দলে যোগ দিতে লাগলো । বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বাঙালি অফিসারএবং সৈনিকরা জিয়াউর রহমানের প্রতি আস্থা রেখে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে । এবং দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে শহরে ,গ্ৰামে -গন্জে মুক্তিযুদ্বের টেনিং আরন্ভ হয়। দলে দলে মানুষ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। পরবর্তীতে ১০ই এপ্রিল মেহেরপুরের আম্রকাননে বাংলাদেশর অস্থায়ী সরকার গঠন করা হয়। সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং তাজ উদ্দিন আহমেদ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি নিযুক্ত হন কর্নেল ( অব : ) এজিএম আতাউল গণি ওসমানী। তার নেতৃত্বে এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের মিত্র বাহিনীর সহযোগিতায় দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পর এ ই প্রানের দেশ স্বাধীনতা লাভ করে। আমরা পৃথিবীর মানচিত্রে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছি। এই দেশের প্রতিটি ইঞ্চি জমি পাহাড়া দেবার দায়িত্ব আমাদের। এ দেশের প্রতিটি ইঞ্চি জমিতে লেখে আছে আমাদের শহিদের রক্ত । এই দেশের মাটিতে জন্মগ্রহণ করেছি । তাই আমারা সবাই বলি – প্রথম বাংলাদেশ আমার, শেষ বাংলাদেশ, জীবন বাংলাদেশ দেশ আমার মরন বাংলাদেশ।।