সংবাদ শিরোনাম ::
রমজানে গ্যাস্ট্রিক ও আলসার রোগীর স্বাস্থ্যের সমস্যা ” সুস্থতার জন্য করনীয় ও বর্জনীয়

ডা.মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
- আপডেট সময় : ০৩:৩০:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫ ৮ বার পড়া হয়েছে
চলছে সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র মাহে রমজান ২০২৫ । প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় ১৬০ কোটি মুসলিম রমজান মাসে সিয়াম সাধনা পালন করেন। বিশ্বের কোথাও ১৬ ঘণ্টা থেকে কোথাও ১৮ ঘণ্টা আবার কোথাও ২১ ঘণ্টা পর্যন্ত রোজা পালন করা হয়।বছরে এক মাস রোজা রাখার অনেক স্বাস্থ্যগত উপকারিতা ইতিমধ্যে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
ইসলাম মধ্যপন্থী ধর্ম। জোর করে কারো ওপর কোনো বিধান ইসলাম চাপিয়ে দেয় নাই। তাই তো ইসলাম যেভাবে রোজা রাখার আদেশ দিয়েছে সাথে সাথে অসুস্থ ব্যক্তির জন্য কিংবা মুসাফিরের জন্য রোজা ভাঙ্গার অনুমতি প্রদান করেছে।এখানে আমি গ্যাস্ট্রিক ও আলসার রোগীদের সমস্যা নিয়ে কিছুটা আলোকপাত করলাম :-
অন্য সময়ের চেয়ে রোজায় বেশি খাওয়া হয়ে থাকে। আমাদের ধারণা যে খালি পেটে থাকলে অ্যাসিডিটির সমস্যা বাড়ে। তাই পেপটিক আলসার বা গ্যাস্ট্রিক আলসারের রোগীরা রমজান এলে উদ্বিগ্ন হন। আসলে শুধু রোজার কারণে অ্যাসিডিটি বা অম্লতা বাড়ে না। নিয়মিত ও স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ এবং নিয়মিত ওষুধ গ্রহণ করলে তেমন সমস্যা হওয়ার কথা নয়; বরং শৃঙ্খলা ও নিয়মের মধ্যে এ সময় অ্যাসিডিটির সমস্যা অনেকাংশে কমে যাবে। তবে খেয়াল রাখুন, ইফতারে ভাজাপোড়া ও গুরুপাক খাবার যেন বেশি না হয়, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে যথেষ্ট পানি ও আঁশজাতীয় খাবার রাখবেন।তবে ইফতারে বেশি ভাজাপোড়া খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই প্রতিদিন ভাজাপোড়া খাওয়ার চেয়ে ইফতারে খাবারে আনতে পারেন ভিন্নতা।বিশেষ করে যারা গ্যাস্ট্রিকের রোগী তাদের জন্য খাবার খাওয়া ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। কারণ ইফতারে গ্যাস্ট্রিকের রোগীরা যা ইচ্ছা তাই খেতে পারবেন না। কারণ নিয়ম মেনে না খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বেড়ে যাবে। যা আপনার জন্য ডেকে আনতে পারে ভয়াবহ বিপদ।তাই যারা শারীরিকভাবে অসুস্থ তাদের রোজার সময় একটু বেশি সতর্ক থাকা উচিৎ। জেনে নিন গ্যাস্ট্রিক ও আলসারের রোগীরা রমজান মাসে কীভাবে সুস্থ থাকতে পারবেন, সেই বিষয়ে কিছু পরামর্শ।
> যা করা যাবে নাঃ-তৈলাক্ত খাবার, ভাজা-পোড়া, বেশি মশলাযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত নয়।চা-কফি একদমই পরিহার করতে হবে।অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবারও এড়াতে হবে ইফতারে।ইফতারে অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না কোনো ভাবেই।বাইরের খাবার এড়িয়ে চলতে হবে পুরোপুরি।সেহরিতে বিরিয়ানি, কাবাব কিংবা ফাস্টফুড জাতীয় কোনো ভারি খাবার খাওয়া যাবে না।
> যা করতে হবে :- ইফতারের পর থেকে সেহরি পর্যন্ত প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। কমপক্ষে আড়াই লিটার পানি পান করা উচিত এ সময়ের মধ্যে।ইফতারে সেদ্ধ, ঝোল, সালাদ, স্যুপ, ভাত এ ধরনের খাবার খেতে হবে।একবারে বেশি ইফতার না খেয়ে প্রয়োজনে কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে খাওয়া যেতে পারে।তারাবীর পর অল্প হলেও খেতে হবে। খাবার মেন্যুতে সুষম রাখতে হবে। রাতের খাবার বাদ দেওয়া যাবে না।ঘুমানোর দেড় ঘণ্টা আগেই খেয়ে নিতে হবে। খেয়েই ঘুমিয়ে পড়লে বুক জ্বালাপোড়া করতে পারে।সেহরির মেন্যুতে কম মশলার ঝোলযুক্ত খাবার রাখুন। সহজে হজম হয় এমন খাবার বেছে নিন সেহরির জন্য।
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধের সময়সূচি পরিবর্তন করে নিন। এসিডিটি বা গ্যাস্ট্রিক এর বাংলা অর্থ অম্ল। গ্যাস্ট্রিক সমস্যাটা বাংলাদেশে অতিপরিচিত পেটব্যাথা ,বুকব্যথা যাই হক আর যে কারণই হোক আমাদের দেশে প্রায় প্রতিটি মানুষ একটা গ্যাসের বড়ি খেয়ে থাকেন । অনেকে বছরের পর বছর দরে এই বড়ি খেয়ে সুস্থ আছেন বলে দাবী করেন । কিন্তু এর সুদূর প্রসারী সমস্যা গুলো একবারও চিন্তা করে না ।
আসলে গ্যাস্ট্রিক কী তা আমারা সকলে জানি। এর ফলে পেট থেকে গ্যাস নির্গত হতে থাকে। কারো কারো গলার কাছে জ্বালা পোড়া বা প্রদেহ করে। কারো কারো চুকা ঢেক উঠে। অনেকে বমি করে গ্যাস্ট্রিক থেকে বা গলার কাছের জ্বালাপোড়া থেকে মুক্তি পান। সুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের অনেকে দেশের অনেকেই বমি করে গলার ভেতর থাদ্য বিষয়ক জ্বালা পোড়া থেকে মুক্তি লাভ করে। এসিডিটি বা গ্যাস্ট্রিক কেন হয় তা’ অনেকেরই জানা তাই আমরা আলোচনা করব হোমিওপ্যাথিক প্রতিবিধান সম্পর্কে।যত্র তত্র ঔষধের দোকান আর দুই নম্বর ঔষধ কোম্পানির ঔষধে ভরে গেছে সারা দেশ । ব্যাথা আর গ্যাসের ট্যাবলেট বিক্রিকরে অনেকে প্রচুর ইনকাম করে আসছে । শ্রমজীবী মানুষের দেশ বাংলাদেশ।দিন রাত একটানা পরিশ্রমের ফলে দেহে সঞ্চিত ব্যাথা আর অনাহারে অর্ধাহারে থাকা মানুষগুলির বেকারির কেক রুটি দ্বরা উদর পুর্ণ করায় পাকস্থলি পুর্ণ গাসের সাময়িক উপশশম দিতে এই গ্যাসের ঔষধ খেতে খেতে এমন এক পর্যায়ে এসে গেছে যে এখন অনেকের পাকস্থলী ,কিডনি প্রায় অক্ষম হয়ে পড়ছে।
> গ্যাস্ট্রিক আলসার: সাধারণ মানুষের কাছে এটি গ্যাস্ট্রিক রোগ নামে পরিচিত। ৪০-৬০ বছর বয়সের মানুষ এই রোগের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা বেশি।
> গ্যাস্ট্রিক আলসারের লক্ষণাবলী: বুক জ্বালা, বদহজম বা অজীর্নতা, পেটে বেদনা, রক্তবমি বা রক্তস্রাব, টক ঢেকুর, বমির রক্ত টকটকে লাল, পেট বেদনা হঠাৎ করে প্রচণ্ড আকারে দেখা দেয়, পেটের খাদ্য বমি হয়ে গেলে ব্যথার উপশম হয়। শরীরে পানি স্বল্পতা থাকে এবং জ্বর থাকে।* ভাবী ফল: নতুন অবস্থায় রোগী সহজে আরোগ্য হয় কিন্তু পুরাতন অবস্থায় ক্যান্সারের পরিণত হতে পারে বা ছিদ্র হলে পেরিটোনাইটিস হতে পারে।
* ডিওডেনাল আলসার: খাদ্য পাকস্থলী হতে নিচের দিকে অপেক্ষাকৃত সরু যে নালিতে প্রবেশ করে সেই বাকা অংশ টিকে ডিওডেনাল বলে। সেই ডিওডেনালের মিওকাস মেমব্রেন ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে ক্ষতের সৃষ্টি হলে তাহাকে ডিওডেনাল আলসার বলে। সাধারণত ৩০-৪০ বছর বয়সের মানুষ এ রোগে বেশী আক্রান্ত হয়। বিশেষ করে যে সকল পুরুষ মানুষের রক্তের গ্রুফ ০(+) তাদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।রোগের মূল কারণ এবং আনুষঙ্গিক
> কারণ: গ্যাস্ট্রিক আলসারের ন্যায়ডিওডেনাল আলসারের লক্ষণগুলো: খাবার গ্রহণের ১-৩ ঘণ্টা পর পেটে ব্যথা শুরু হয়। রক্ত বমি খুব একটা হয় না, কখনও হলেও রক্তের বর্ণ কালো দেখায়। পায়খানার সহিত কালো বর্ণের রক্ত যায় বা রক্ত পায়খানা। জ্বালা যুক্ত ব্যথা। রোগীদেও পেটে ক্ষিদে পেলেই ব্যথা বৃদ্ধি হয়। পেটে ব্যথার সময় মুখে পানি আসে বুক জ্বালা করে।
> আসুন জেনে নেই গ্যাস্ট্রিকের রোগীরা যেসব খাবার ভুলেও খাবেন না।
১. যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে তারা ইফতারে পানি ও খেজুর খেতে পারেন। ট্যাং বা লেবুর শরবত খাওয়া যাবে না।
২. তেলেভাজা পেঁয়াজু-বেগুনি না খেয়ে চিড়া, দই ও কলা খেতে পারেন। ভাজাপোড়া খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে। যদি চিড়া-দই ভালো না লাগে, তবে নরম ভাত বা জাউ ভাত খেতে পারেন।
৩. রাতে ভাত খাবেন। তবে শাক এবং ডাল রাতে না খাওয়াই ভালো। তেল, মসলা এবং ঝাল কম দিয়ে রান্না করা খাবার খান।
৪. বেকিং পাউডার ও বেকিং সোডা দেয়া খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
৫. রোজায় অতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিকেরর সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন।
মনে রাখবেন কিছু খাবার রয়েছে যা আপনার পেটে অস্বস্তি বা গ্যাসের সৃষ্টি করে। যার যে খাবারে সমস্যা হয় তাদের ওই সমস্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
> হোমিও সমাধান :- হোমিওপ্যাথিক নিয়ম অনুযায়ী প্রথমাবস্থায় গ্যাস্ট্রিক ও আলসার
রোগের চিকিৎসা অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের মাধ্যমে চিকিৎসা ও পরামর্শ নিলে অল্প সময়ে চিকিৎসা সম্ভব।
লক্ষণ সাদৃশ্যে নির্দিষ্টমাত্রায় নিম্নলিখিত ওষুধ ব্যবহৃত হয়। যথা- নাক্সভমিকা, পালসেটিলা, চায়না, বেলেডোনা, এবিস নায়গ্রা, লাইকোপোডিয়াম, নেট্রাম সালফ, আর্জেন্ট নাইট্রিকাম, আর্সেনিক, ক্যালি বাইক্রম, ইউরেনিয়াম নাইট্রিকাম,অ্যানাকার্ডিয়াম, চেলিডোনিয়াম, হ্যামামেলিস, ইপিকাক, অ্যানুমিনা, হাইড্রাসটিস, সিকেলী উল্লেখযোগ্য। তবে বিশেষজ্ঞ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের পরামর্শ ছাডা ঔষধ নিজে ব্যবহার ও সেবন করা ঠিক হবে না।
পরিশেষে বলতে চাই, আমাদের ধারণা যে খালি পেটে থাকলে অ্যাসিডিটির সমস্যা বাড়ে। তাই পেপটিক আলসার বা গ্যাস্ট্রিক আলসারের রোগীরা রমজান এলে উদ্বিগ্ন হন। আসলে শুধু রোজার কারণে অ্যাসিডিটি বা অম্লতা বাড়ে না। নিয়মিত ও স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ এবং নিয়মিত ওষুধ গ্রহণ করলে তেমন সমস্যা হওয়ার কথা নয়; বরং শৃঙ্খলা ও নিয়মের মধ্যে এ সময় অ্যাসিডিটির সমস্যা অনেকাংশে কমে যাবে। তবে খেয়াল রাখুন, ইফতারে ভাজাপোড়া ও গুরুপাক খাবার যেন বেশি না হয়, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে যথেষ্ট পানি ও আঁশজাতীয় খাবার রাখবেন।এছাড়া ইফতারের পর থেকে সেহরি পর্যন্ত প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। কমপক্ষে আড়াই লিটার পানি পান করা উচিত এ সময়ের মধ্যে। ইফতারে সেদ্ধ, ঝোল, সালাদ, স্যুপ, ভাত এ ধরনের খাবার খেতে হবে।
একবারে বেশি ইফতার না খেয়ে প্রয়োজনে কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
তারাবির পর অল্প হলেও খেতে হবে। খাবার মেন্যুতে সুষম রাখতে হবে। রাতের খাবার বাদ দেওয়া যাবে না।
ঘুমানোর দেড় ঘণ্টা আগেই খেয়ে নিতে হবে। খেয়েই ঘুমিয়ে পড়লে বুক জ্বালাপোড়া করতে পারে। সেহরির মেন্যুতে কম মশলার ঝোলযুক্ত খাবার রাখুন। সহজে হজম হয় এমন খাবার বেছে নিন সেহরির জন্য।চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধের সময়সূচি পরিবর্তন করে নিন।
লেখক,চিকিৎসক, কলাম লেখক ও গবেষক
প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ,জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি
চেম্বার :-অলংকার শপিং কমপ্লেক্স চট্টগ্রাম।
মোবাইলঃ ০১৮২২৮৬৯৩৮৯
ইমেইল, drmazed96@gmail.com