ঢাকা ১১:০৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৬ জুন ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo জনপ্রিয়তা বাড়াতে রাজনৈতিক নেতাদের নিজ এলাকায় ঈদ Logo রাজধানীর বাউনিয়াবাদে চাচা-ভাতিজার দাপট: হত্যা, চাঁদাবাজি ও ভয়ে স্তব্ধ মানুষ Logo কারাগারে ঈদের ৩ জামাত বন্দিদের বিশেষ আয়োজন Logo রাজধানীতে আসছে উত্তরাঞ্চলের মৌসুমি কসাই Logo জমে উঠছে রাজধানীর পশুরহাট ব্যাপারীরা ক্রেতার অপেক্ষায় Logo ভোগান্তিহীন স্বস্তির ঈদযাত্রা ঢাকার ভেতরেই যত বিড়ম্বনা Logo কালীগঞ্জে ৩ হাজার ২শত কৃষককে দেওয়া হল বিনামূল্যে সার ও বীজ Logo খাতের সফল খামারি উদ্যোক্তাদের মাঝে সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান Logo কাজী মামুনুর রশীদ কচি সদস্য হওয়াতে জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা Logo মৌলভীবাজার অনলাইন প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দের সাথে জাতীয় ভোক্তা অধিকারের মতবিনিময় সভা

কোরবানীর ঈদ টার্গেট

রাজধানীতে আসছে উত্তরাঞ্চলের মৌসুমি কসাই

হালিম মোহাম্মদ
  • আপডেট সময় : ০৮:৩৮:৩৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ জুন ২০২৫ ৪৯ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

কোরবানির ঈদ সামনে রেখে মাংস বানানোর জন্য কসাই রাজধানীতে আসতে শুরু করেছে উত্তরাঞ্চলের পেশাদার ও মৌসুমি কসাই। রাজধানীতে কোরবানির ঈদে পশু জবাইয়ের পর মাংস বানানোর মতো পর্যাপ্ত কসাই মিলে না। এ কসাইর সংকট লাঘবে প্রতিবছরের ন্যায় উত্তরাঞ্চল থেকে শত শত মৌসুমী কসাই রাজধানীতে এসে থাকে। ঈদের দুই তিনদিন আগেই তারা রাজধানীতে এসে পৌঁছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কসাই সংকট দূর করতে প্রতিবছরের মতো এবারও মানিকগঞ্জ, রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, বগুড়া, জয়পুরহাটসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ঢাকায় আসতে শুরু করেছেন।
জানা গেছে, কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার ধামশ্রেনী ইউনিয়নের পেশাদার কসাই বাবু মিয়া টানা ১৫ বছর ধরে কোরবানির ঈদে ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকায় গরুর মাংস বানানোর কাজ করে আসছেন। এ বছরও ঈদের আগের দিন উলিপুর থেকে রওনা হবেন বলে জানান তিনি। তাঁর সঙ্গে আরও তিন-চারজন সহকর্মী বা কসাই থাকবেন। দলবদ্ধভাবে এক দিনে ছয়-সাতটি গরুর কাজ করতে পারেন তারা। যাতায়াত ও থাকা-খাওয়ার খরচ বাদ দিয়ে আয় হয় জনপ্রতি ১৫-২০ হাজার টাকা।
এদিকে লালমনিরহাট শহরের আলোরুপা মোড়ের কসাই রাজু আহমেদও প্রতিবছর তিন-চারজন সঙ্গী নিয়ে ঢাকার মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট এলাকায় আত্মীয়ের বাসায় ওঠেন। ঈদের দিন গরু প্রতি হাজারে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা আয় হয়। দ্বিতীয় দিনেও কিছুটা আয় হয়, সব মিলিয়ে দুই দিনে জনপ্রতি ২০-২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব হয় বলে জানান তিনি।
পুরনো ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের বাসিন্দা আল মামুন জানান, ঢাকায় কোরবানির সময় কসাইদের চাহিদা বেশি থাকে। জবাই করার মানুষ থাকলেও দক্ষভাবে মাংস বানানোর লোকের অভাব পড়ে যায়। ফলে, ঈদের দিন অনেকে জবাইয়ের পরও সন্ধ্যা পর্যন্ত মাংস ঘরে তুলতে পারেন না। এই চাহিদা পূরণেই এগিয়ে আসেন উত্তরাঞ্চলের পেশাদার ও মৌসুমি কসাইরা।
ধানমন্ডি, ঝিগাতলা, গুলশান, বনানী, বারিধারার মতো অভিজাত এলাকায় গরুর দামের প্রতি হাজারে কসাইরা ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত পারিশ্রমিক পান। অন্যদিকে সাধারণ এলাকায় এটি হয় প্রতি হাজারে ১০০ থেকে ১২০ টাকা। অনেক সময় গরুর আকার বুঝে চুক্তিতে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকায় একটি গরুর পুরো কাজ করা হয়। এ ছাড়াও মালিকরা অনেক সময় খুশি হয়ে বকশিশ, মাংস ও যাতায়াত খরচও দিতে দেখা যায়।
দিনাজপুরের বিরল উপজেলার মৌসুমি কসাই আজিজুর রহমান জানান, প্রতিবছর তাদের এলাকা থেকে অন্তত ৫০-৬০ জন কসাই দলবদ্ধভাবে রাজধানীতে আসেন। ধানমন্ডি রায়ের বাজার সুলতান গঞ্জ এলাকায় তারা গরুর মাংস বানানোর কাজ করেন। গরুর আকার অনুযায়ী তারা আগেই মালিকের সঙ্গে চুক্তি করে থাকেন।
ঢাকার মিরপুর ১১ নম্বর এলাকার বাসিন্দা সাব্বির আহমেদ জানান, প্রতি বছর ঈদের আগের রাতে ঠাকুরগাঁও থেকে চারজন পরিচিত মৌসুমি কসাই তার বাসায় আসেন। একেকজন গরুর কাজ শেষ করেন প্রায় দুই ঘণ্টায়। ঢাকার স্থানীয় কয়েকজন সহকারী হিসেবে কাজ করেন তাদের সঙ্গে।
অন্য দিকে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের দামোদরপুরের কসাই শাহিনুর ইসলাম জানান, বছরের বাকি সময় বিভিন্ন কাজে জড়িত থাকলেও ঈদের দুই দিন তারা ঢাকায় গিয়ে মৌসুমি কসাই হিসেবে কাজ করেন। দীর্ঘদিন একই এলাকায় কাজ করায় নির্দিষ্ট কিছু গ্রাহক আগে থেকেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পাশাপাশি সাবেক পেশাদার কসাই ও বর্তমানে ভ্যানচালক আব্দুর রশীদ জানান, ঢাকায় গিয়ে একদিনেই যে আয় সম্ভব, তা অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায় না। তাই প্রতিবছরই কোরবানির ঈদে তিনি রাজধানীতে যান।
এবিষয়ে সমাজ পরিবর্তন ও উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি মোস্তফা সাব্বির বলেন, বছরের একটি দিনকে ঘিরে অনেক নি¤œ আয়ের মানুষ উপার্জনের বড় সুযোগ পান। এই আয় সংসার চালাতে উল্লেখযোগ্য সহায়তা করে থাকে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

কোরবানীর ঈদ টার্গেট

রাজধানীতে আসছে উত্তরাঞ্চলের মৌসুমি কসাই

আপডেট সময় : ০৮:৩৮:৩৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ জুন ২০২৫

কোরবানির ঈদ সামনে রেখে মাংস বানানোর জন্য কসাই রাজধানীতে আসতে শুরু করেছে উত্তরাঞ্চলের পেশাদার ও মৌসুমি কসাই। রাজধানীতে কোরবানির ঈদে পশু জবাইয়ের পর মাংস বানানোর মতো পর্যাপ্ত কসাই মিলে না। এ কসাইর সংকট লাঘবে প্রতিবছরের ন্যায় উত্তরাঞ্চল থেকে শত শত মৌসুমী কসাই রাজধানীতে এসে থাকে। ঈদের দুই তিনদিন আগেই তারা রাজধানীতে এসে পৌঁছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কসাই সংকট দূর করতে প্রতিবছরের মতো এবারও মানিকগঞ্জ, রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, বগুড়া, জয়পুরহাটসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ঢাকায় আসতে শুরু করেছেন।
জানা গেছে, কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার ধামশ্রেনী ইউনিয়নের পেশাদার কসাই বাবু মিয়া টানা ১৫ বছর ধরে কোরবানির ঈদে ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকায় গরুর মাংস বানানোর কাজ করে আসছেন। এ বছরও ঈদের আগের দিন উলিপুর থেকে রওনা হবেন বলে জানান তিনি। তাঁর সঙ্গে আরও তিন-চারজন সহকর্মী বা কসাই থাকবেন। দলবদ্ধভাবে এক দিনে ছয়-সাতটি গরুর কাজ করতে পারেন তারা। যাতায়াত ও থাকা-খাওয়ার খরচ বাদ দিয়ে আয় হয় জনপ্রতি ১৫-২০ হাজার টাকা।
এদিকে লালমনিরহাট শহরের আলোরুপা মোড়ের কসাই রাজু আহমেদও প্রতিবছর তিন-চারজন সঙ্গী নিয়ে ঢাকার মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট এলাকায় আত্মীয়ের বাসায় ওঠেন। ঈদের দিন গরু প্রতি হাজারে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা আয় হয়। দ্বিতীয় দিনেও কিছুটা আয় হয়, সব মিলিয়ে দুই দিনে জনপ্রতি ২০-২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব হয় বলে জানান তিনি।
পুরনো ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের বাসিন্দা আল মামুন জানান, ঢাকায় কোরবানির সময় কসাইদের চাহিদা বেশি থাকে। জবাই করার মানুষ থাকলেও দক্ষভাবে মাংস বানানোর লোকের অভাব পড়ে যায়। ফলে, ঈদের দিন অনেকে জবাইয়ের পরও সন্ধ্যা পর্যন্ত মাংস ঘরে তুলতে পারেন না। এই চাহিদা পূরণেই এগিয়ে আসেন উত্তরাঞ্চলের পেশাদার ও মৌসুমি কসাইরা।
ধানমন্ডি, ঝিগাতলা, গুলশান, বনানী, বারিধারার মতো অভিজাত এলাকায় গরুর দামের প্রতি হাজারে কসাইরা ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত পারিশ্রমিক পান। অন্যদিকে সাধারণ এলাকায় এটি হয় প্রতি হাজারে ১০০ থেকে ১২০ টাকা। অনেক সময় গরুর আকার বুঝে চুক্তিতে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকায় একটি গরুর পুরো কাজ করা হয়। এ ছাড়াও মালিকরা অনেক সময় খুশি হয়ে বকশিশ, মাংস ও যাতায়াত খরচও দিতে দেখা যায়।
দিনাজপুরের বিরল উপজেলার মৌসুমি কসাই আজিজুর রহমান জানান, প্রতিবছর তাদের এলাকা থেকে অন্তত ৫০-৬০ জন কসাই দলবদ্ধভাবে রাজধানীতে আসেন। ধানমন্ডি রায়ের বাজার সুলতান গঞ্জ এলাকায় তারা গরুর মাংস বানানোর কাজ করেন। গরুর আকার অনুযায়ী তারা আগেই মালিকের সঙ্গে চুক্তি করে থাকেন।
ঢাকার মিরপুর ১১ নম্বর এলাকার বাসিন্দা সাব্বির আহমেদ জানান, প্রতি বছর ঈদের আগের রাতে ঠাকুরগাঁও থেকে চারজন পরিচিত মৌসুমি কসাই তার বাসায় আসেন। একেকজন গরুর কাজ শেষ করেন প্রায় দুই ঘণ্টায়। ঢাকার স্থানীয় কয়েকজন সহকারী হিসেবে কাজ করেন তাদের সঙ্গে।
অন্য দিকে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের দামোদরপুরের কসাই শাহিনুর ইসলাম জানান, বছরের বাকি সময় বিভিন্ন কাজে জড়িত থাকলেও ঈদের দুই দিন তারা ঢাকায় গিয়ে মৌসুমি কসাই হিসেবে কাজ করেন। দীর্ঘদিন একই এলাকায় কাজ করায় নির্দিষ্ট কিছু গ্রাহক আগে থেকেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পাশাপাশি সাবেক পেশাদার কসাই ও বর্তমানে ভ্যানচালক আব্দুর রশীদ জানান, ঢাকায় গিয়ে একদিনেই যে আয় সম্ভব, তা অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায় না। তাই প্রতিবছরই কোরবানির ঈদে তিনি রাজধানীতে যান।
এবিষয়ে সমাজ পরিবর্তন ও উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি মোস্তফা সাব্বির বলেন, বছরের একটি দিনকে ঘিরে অনেক নি¤œ আয়ের মানুষ উপার্জনের বড় সুযোগ পান। এই আয় সংসার চালাতে উল্লেখযোগ্য সহায়তা করে থাকে।