ঢাকা ০৪:২৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo `জুলাই চেতনায় ঐক্যবদ্ধ সাংবাদিক সমাজের অঙ্গীকার’ Logo ডামুড্যায় গরীব ও অসহায়দের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ Logo বিশ্বনাথে আলোকিত সুর সাংস্কৃতিক ফোরাম অভিষেক ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা Logo বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের এমডিসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে ঝিনাইদহে মামলা Logo সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্ম শিক্ষক নিয়োগের দাবীতে ঝিনাইদহে মানববন্ধন Logo ঝিনাইদহে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বিএনপির মতবিনিময় সভা Logo ভালো সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে অরবিন্দ শিশু হাসপাতাল ভূমিকা রাখছে Logo বন্ধু একাদশ হাকিমপুরকে হারিয়ে মুন্সিপাড়া ওয়ারিয়ার্স দিনাজপুর চ্যাম্পিয়ান Logo জয়পুরহাটে স্ত্রীকে হত্যার পর আত্মহত্যার চেষ্টা স্বামীর Logo ব্যস্ত সময় পার করছে প্রতিমা শিল্পীরা

রাজনৈতিক স্বার্থই গুমের ঘটনাগুলো

স্টাফ রিপোর্টার
  • আপডেট সময় : ২৪৪ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সংবাদ সম্মেলনে গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিটির সভাপতি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, গুমের ঘটনাগুলো মূলত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই ঘটানো হতো। র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন ও ভারতীয় গোয়েন্দারাও এতে জড়িত ছিল

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় গুম হওয়া মানুষদের অধিকাংশই হত্যা, অজ্ঞাত স্থানে আটকে রাখা, নির্যাতন বা ভয়ভীতি প্রদর্শনের মতো করুণ পরিণতির শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিটির সভাপতি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, এই গুমের ঘটনাগুলো মূলত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই ঘটানো হতো। র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) ও ভারতীয় গোয়েন্দারাও এতে জড়িত ছিল। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার গুলশানে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বিচারপতি মইনুল। তিনি জানান, গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনে যেসব অভিযোগ জমা পড়েছে, সেগুলো বিশ্লেষণ করে এই চিত্র পাওয়া গেছে।
গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিটি প্রধানের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গুম হওয়া ব্যক্তিদের চার ধরনের পরিণতি হতো। যেমন- অনেককেই হত্যা করা হয়েছে, কাউকে কাউকে জঙ্গি তকমা দিয়ে উপস্থাপন করা হয়েছিল, সীমান্ত পার করে ভারতে পাঠিয়ে দেশটির আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে গ্রেপ্তার করানো হয়েছিল অনেককে। আবার কারও ভাগ্য খুব বেশি ভালো হলে অল্পসংখ্যক ক্ষেত্রে মামলা না দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হতো।
গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিটির সভাপতি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী জানিয়েছেন, কমিশনে জমা পড়া ১ হাজার ৮৫০টি অভিযোগ বিশ্লেষণ করে এখন পর্যন্ত ২৫৩ জন গুমের শিকার ব্যক্তির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। তিনি আরও জানান, তদন্ত কমিশনে জমা দেওয়া অভিযোগগুলোর মধ্যে ৮১ শতাংশই জীবিত ভিকটিমদের নিয়ে, যারা গুম থেকে ফিরে এসেছেন। বাকি ১৯ শতাংশ অভিযোগ এমন ভিকটিমদের নিয়ে, যারা এখনো ফেরত আসেননি। তিনি বলেন, গুম হয়ে ফিরে না আসা ১২ জনের বিষয়ে আমরা প্রাথমিক অনুসন্ধান সম্পন্ন করেছি এবং তাদের গুমের পেছনে কারা জড়িত, তা প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করতেও সক্ষম হয়েছি। চলমান অনুসন্ধানের স্বার্থে এই মুহূর্তে এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা সম্ভব নয়।
ফিরে না আসা ভিকটিমদের আরও অনেকের বিষয়েই কমিশনের কাজের অগ্রগতি রয়েছে জানিয়ে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, একেকজন ভিকটিমের বিষয়ে অনুসন্ধান সম্পন্ন করার আগে তথ্য প্রকাশের কোনো সুযোগ নেই। ফিরে না আসা ভিকটিমদের বিষয়ে অপরাধী এবং গুমের অপরাধ সংঘটনের স্থানসহ নানাবিধ বিষয়ে তথ্যের ঘাটতি বা পুরনো কললিস্ট না পাওয়াসহ নানা রকম বিলম্ব ঘটিত প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হলেও কমিশন আন্তরিকতার সঙ্গে অনুসন্ধান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
সন্ত্রাসবাদ সারা বিশ্বে একটি বাস্তব হুমকি-বাংলাদেশও এর বাইরে নয় উল্লেখ করে গুম কমিশনের সভাপতি বলেন, ২০১৬ সালের হলি আর্টিজানে হামলার মতো ঘটনা এর প্রমাণ। তবে এই হুমকি মোকাবিলায় রাষ্ট্রের সততা, মানবাধিকারের প্রতি প্রতিশ্রুতি এবং আইনসম্মত প্রক্রিয়ায় অটল থাকা জরুরি। সরকার সন্ত্রাসবিরোধী প্রচারণাকে যখন রাজনৈতিক বিরোধীদের দমনের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে, তখন তা আইনের শাসন, প্রতিষ্ঠান ও জনগণের বিশ্বাসকে ধ্বংস করে দেয়।
গুমের সঙ্গে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) সবচেয়ে বেশি জড়িত উল্লেখ করে মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এতে বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের পাশাপাশি ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনীরাও জড়িত। বাংলাদেশে যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভারতীয় যারা জড়িত, তাদের বিষয়ে আমরা কিছু করতে পারব না।
গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিটির সদস্য নুর খান লিটন বলেন, গুমের বিষয়ে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) কর্মকাণ্ডে সরাসরি সেনাবাহিনীর দায় নেই। তবে তারা জানত না এটা বলা যাবে না। আরেক সদস্য মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ভারতে বন্দি থাকা বাংলাদেশিদের তথ্য চেয়েছি। এদের মধ্যে গুমের কেউ আছে কিনা খতিয়ে দেখছি। পুশ-ইন যাদের করা হচ্ছে, এদের মধ্যে কেউ গুমের শিকার কিনা খতিয়ে দেখছি।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

রাজনৈতিক স্বার্থই গুমের ঘটনাগুলো

আপডেট সময় :

সংবাদ সম্মেলনে গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিটির সভাপতি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, গুমের ঘটনাগুলো মূলত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই ঘটানো হতো। র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন ও ভারতীয় গোয়েন্দারাও এতে জড়িত ছিল

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় গুম হওয়া মানুষদের অধিকাংশই হত্যা, অজ্ঞাত স্থানে আটকে রাখা, নির্যাতন বা ভয়ভীতি প্রদর্শনের মতো করুণ পরিণতির শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিটির সভাপতি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, এই গুমের ঘটনাগুলো মূলত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই ঘটানো হতো। র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) ও ভারতীয় গোয়েন্দারাও এতে জড়িত ছিল। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার গুলশানে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বিচারপতি মইনুল। তিনি জানান, গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনে যেসব অভিযোগ জমা পড়েছে, সেগুলো বিশ্লেষণ করে এই চিত্র পাওয়া গেছে।
গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিটি প্রধানের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গুম হওয়া ব্যক্তিদের চার ধরনের পরিণতি হতো। যেমন- অনেককেই হত্যা করা হয়েছে, কাউকে কাউকে জঙ্গি তকমা দিয়ে উপস্থাপন করা হয়েছিল, সীমান্ত পার করে ভারতে পাঠিয়ে দেশটির আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে গ্রেপ্তার করানো হয়েছিল অনেককে। আবার কারও ভাগ্য খুব বেশি ভালো হলে অল্পসংখ্যক ক্ষেত্রে মামলা না দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হতো।
গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিটির সভাপতি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী জানিয়েছেন, কমিশনে জমা পড়া ১ হাজার ৮৫০টি অভিযোগ বিশ্লেষণ করে এখন পর্যন্ত ২৫৩ জন গুমের শিকার ব্যক্তির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। তিনি আরও জানান, তদন্ত কমিশনে জমা দেওয়া অভিযোগগুলোর মধ্যে ৮১ শতাংশই জীবিত ভিকটিমদের নিয়ে, যারা গুম থেকে ফিরে এসেছেন। বাকি ১৯ শতাংশ অভিযোগ এমন ভিকটিমদের নিয়ে, যারা এখনো ফেরত আসেননি। তিনি বলেন, গুম হয়ে ফিরে না আসা ১২ জনের বিষয়ে আমরা প্রাথমিক অনুসন্ধান সম্পন্ন করেছি এবং তাদের গুমের পেছনে কারা জড়িত, তা প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করতেও সক্ষম হয়েছি। চলমান অনুসন্ধানের স্বার্থে এই মুহূর্তে এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা সম্ভব নয়।
ফিরে না আসা ভিকটিমদের আরও অনেকের বিষয়েই কমিশনের কাজের অগ্রগতি রয়েছে জানিয়ে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, একেকজন ভিকটিমের বিষয়ে অনুসন্ধান সম্পন্ন করার আগে তথ্য প্রকাশের কোনো সুযোগ নেই। ফিরে না আসা ভিকটিমদের বিষয়ে অপরাধী এবং গুমের অপরাধ সংঘটনের স্থানসহ নানাবিধ বিষয়ে তথ্যের ঘাটতি বা পুরনো কললিস্ট না পাওয়াসহ নানা রকম বিলম্ব ঘটিত প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হলেও কমিশন আন্তরিকতার সঙ্গে অনুসন্ধান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
সন্ত্রাসবাদ সারা বিশ্বে একটি বাস্তব হুমকি-বাংলাদেশও এর বাইরে নয় উল্লেখ করে গুম কমিশনের সভাপতি বলেন, ২০১৬ সালের হলি আর্টিজানে হামলার মতো ঘটনা এর প্রমাণ। তবে এই হুমকি মোকাবিলায় রাষ্ট্রের সততা, মানবাধিকারের প্রতি প্রতিশ্রুতি এবং আইনসম্মত প্রক্রিয়ায় অটল থাকা জরুরি। সরকার সন্ত্রাসবিরোধী প্রচারণাকে যখন রাজনৈতিক বিরোধীদের দমনের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে, তখন তা আইনের শাসন, প্রতিষ্ঠান ও জনগণের বিশ্বাসকে ধ্বংস করে দেয়।
গুমের সঙ্গে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) সবচেয়ে বেশি জড়িত উল্লেখ করে মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এতে বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের পাশাপাশি ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনীরাও জড়িত। বাংলাদেশে যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভারতীয় যারা জড়িত, তাদের বিষয়ে আমরা কিছু করতে পারব না।
গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিটির সদস্য নুর খান লিটন বলেন, গুমের বিষয়ে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) কর্মকাণ্ডে সরাসরি সেনাবাহিনীর দায় নেই। তবে তারা জানত না এটা বলা যাবে না। আরেক সদস্য মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ভারতে বন্দি থাকা বাংলাদেশিদের তথ্য চেয়েছি। এদের মধ্যে গুমের কেউ আছে কিনা খতিয়ে দেখছি। পুশ-ইন যাদের করা হচ্ছে, এদের মধ্যে কেউ গুমের শিকার কিনা খতিয়ে দেখছি।