রামগতিতে বেড়েছে চুরি-ডাকাতি, আইনশৃঙ্খলার অবনতি

- আপডেট সময় : ৪৪ বার পড়া হয়েছে
লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে ব্যাপকহারে বেড়েছে চুরি ডাকাতির ঘটনা। এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হচ্ছে। বাড়ছে চুরি-ডাকাতি, ধর্ষণ,মাদক ও ইভটিজিং সহ নানা অপরাধ কর্মকান্ড। গত একবছর ধরে একের পর এক অপরাধ কর্মকান্ড যেন বেড়েই চলছে। কোনভাবেই থামানো যাচ্ছেনা চুরি ডাকাতি। প্রতিরাতে উপজেলার কোথাও না কোথাও চুরি ডাকাতির খবর পাওয়া যাচ্ছে। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এলাকাবাসী। সুত্র জানায়,উপজেলা সদর থেকে বিচ্ছিন্ন দুর্গম চরাঞ্চলে অবস্থিত চরগাজী ও বড়খেরী ইউনিয়ন। দুর্গম চর হওয়ায় আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরাও যখন তখন আসা যাওয়া করাটা অসম্ভব। এমন পরিস্থিতি দুটি ইউনিয়নের ১৮টি ওয়ার্ডের বিভিন্ন স্থানে চলছে একের পর এক চুরি ডাকাতি ও ধর্ষণের মত ঘটনা।গত এক বছরে ৯ টি ধর্ষণ, ৬ টি ধর্ষন চেষ্টা ও ২১ টি চুরি ও ৭ টি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে এ দুই ইউনিয়নে। গরু চুরি, মানুষের বসত বাড়ি ও দোকানপাটের মালামাল চুরি হচ্ছে। বসতবাড়ির পানির কল,মটার, শাড়ি কাপড় কোন কিছুই বাদ যাচ্ছেনা চোরের হাত থেকে। জানমালের নিরাপত্তা নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। প্রতিদিন কোথাও না কোথাও চলছে সন্ত্রাসীদের মহড়া। উপজেলার দুর্গম চর এলাকা বড়খেরী ও চরগাজী ইউনিয়নের অলিগলিতে বেপরোয়া হয়ে উঠছে কিশোরগ্যাং চক্র। এরা সংঘবদ্ধ হয়ে গভীর রাতে মানুষের গরু চুরি থেকে শুরু করে বসত বাড়িতে হানা দিচ্ছে। মাদকের ভয়াবহ আস্তানা চরগাজী ও বড়খেরী ইউনিয়নের কয়েকটি স্পট।অন্যদিকে এ দুই ইউনিয়নে নারী শিক্ষার্থীদের উত্যক্ত করাসহ ধর্ষণের সংখ্যাও বেড়ে গেছে ব্যাপক হারে। এসব ঘটনায় থানায় অভিযোগ হলে পুলিশ ধর্ষণে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হলেও চুরি ডাকাতির মামলায় আসামী গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এতে দিনদিন মানুষের মধ্যে আতংক ও উৎকন্ঠা বেড়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে উপজেলার ৮ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার বাসিন্দারাও রয়েছে উদ্বেগ উৎকন্ঠায়।সুত্রমতে: চরগাজী ইউনিয়নের চার নম্বর ওয়ার্ডের টুমচর গ্রামের মাইনউদ্দিন মিয়ার বাড়ি থেকে ৬টি গরু চুরি হয়, তিন নম্বর ওয়ার্ডের সামাগ্রামের জসিমের বাড়ি থেকে ৩ ভরি স্বর্ণ ও নগদ ৬০ হাজার টাকা, ছয় নম্বর ওয়ার্ডের নুর উদ্দিনের বাড়ী থেকে একটি অটোরিকশা ও নগদ ১২ হাজার টাকা,চার নম্বর ওয়ার্ডের হকসাহেব প্রকাশ ডুবাইওয়ালার বাড়ি থেকে নগদ ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা ও দুই ভরি স্বর্ণ ডাকাতি হয়, ছয় নম্বর ওয়ার্ডের মীর বাড়ীর হাসান বেপারীর ঘর থেকে নগদ দুই লাখ ৬০ হাজার টাকা ও আড়াই ভরি স্বর্ন ডাকাতি হয়, ছয় নম্বর ওয়ার্ডের মীর বাড়ীর নুর আলমের ঘর থেকে নগদ ৪ লাখ টাকা ও দেড় ভরি স্বর্ণ ডাকাতি হয়, তিন নম্বর ওয়ার্ডের জসিম বেপারীর বাড়ি থেকে নগদ তিন লাখ টাকা চুরি হয়, ছয় নম্বর ওয়ার্ডের হেলাল মেস্তরীর বাড়ী থেকে নগদ ২৬ হাজার টাকা ও একশেট কানপাশা চুরি হয়, চার নম্বর ওয়ার্ডের মাইন উদ্দিনের বাড়ীতে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে, তিন নম্বর ওয়ার্ডের হাসান ড্রাইভারের দোকান থেকে নগদ এক লাখ ৬০ হাজার টাকা চুরি হয়, ছয় নম্বর ওয়ার্ডের সাইফুদ্দিনের দোকান থেকে নগদ ২৮ হাজার টাকা ও মালামাল চুরি হয়, দুই নম্বর ওয়ার্ডের বেচুর দোকান থেকে নগদ ৬ হাজার টাকা ও মালামাল চুরি হয়, ছয় নম্বর ওয়ার্ডের আহমদিয়া মার্কেটের নুর উদ্দিনের দোকান থেকে নগদ ১৭ হাজার টাকা ও মালামাল চুরি হয়, আট নম্বর ওয়ার্ডের নোমান সিদ্দিকীর বাড়ী থেকে দুইটি গরু চুরি হয়। দুই নম্বর ওয়ার্ডের আলী আকাব্বর হাজির হাট বাজারের আবদুর রবের দোকানে গতকাল ২৭ সেপ্টেম্বর রাত ২টার দিকে দোকানের টিনের বেড়া খুলে নগদ দুইলাখ ৫০ হাজার টাকা ও বিকাশ-নগদের এজেন্ট সিম নিয়ে গেছে চোরেরদল। চলতি মাসের ২৪ তারিখে ওই এলাকার প্রবাসী দিদারের ঘরেও চুরির ঘটনা ঘটে। ওই সময় চোরের দল ঘরের আসবাবপত্র ও স্বর্ণালংকার সহ প্রায় ৩ লাখ টাকার মালামাল নিয়ে যায় বলে জানান ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।এছাড়া বড়খেরী ইউনিয়নের ছয় নম্বর ওয়ার্ডের আলিম উদ্দিনের বাড়ী থেকে এক ভরি স্বর্ন ও নগদ ৩২ হাজার টাকা চুরি হয়, বড়খেরী ইউনিয়ন রামগতি বাজারের হাজী জসিম উদ্দিন ট্রেডার্স থেকে প্রায় ৪ লাখ টাকা ডাকাতি হয়, পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের রামগতি বাজারের মাইনউদ্দিনের দোকান থেকে নগদ এক লাখ ২০ হাজার টাকা চুরি হয়, চার নম্বর ওয়ার্ডের তেলিবাড়ীর এরশাদের ঘর থেকে নগদ ২০ হাজার টাকা ও পাঁচ ভরি স্বর্ণ চুরি। রোববার গভীর রাতে রামগতি উপজেলা পরিষদের সামনে তিনটি দোকান চুরির ঘটনা ঘটে। এছাড়াও উপজেলার চররমিজ, চরবাদাম, চরপোড়াগাছা, আলেকজান্ডার, চরআলগী ইউনিয়ন ও রামগতি পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে চুরির খবর পাওয়া যাচ্ছে। এদিকে গত ১২ মাসে বড়খেরী ও চরগাজী ইউনিয়নে ৯ টি ধর্ষণের ঘটনাও ঘটেছে। এর মধ্যে ১লা মার্চ চরবাদাম ইউনিয়নের চরকলাকোপা গ্রামের রাকিব নামের এক যুবক ওই এলাকার এক কিশোরীকে ধর্ষন করে। এ ঘটনায় বিচার সালিশে উল্টো কিশোরীকে নানা অপবাদ দেওয়ায় ওই কিশোরী আত্মহত্যা করে।১১ মার্চ চরগাজী ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি নোমান ওই ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দুই বোনকে উত্যক্ত করার অভিযোগে থানায় মামলা হয়। ২৪ মার্চ রাতে চরগাজী ইউনিয়নে ৪ জন বখাটের সহায়তায় এক গৃহবধূকে ধর্ষণ করেন আপন ননদের জামাই। চরগাজী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের তেগাছিয়া এলাকায় মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারীকে ধর্ষণ করা হয়। ১১ জুন চরগাজী ইউনিয়নের দক্ষিণ টুমচর গ্রামের হাত পাঁ বেঁধে এক কিশোরীকে চারজন মিলে সংঘবদ্ধ ধর্ষন করে। ২২ এপ্রিল চররমিজ ইউনিয়নের চরআফজল গ্রামের কারিগো গোজা নামক স্থানে সাত বছরের শিশুকে ধর্ষণ করেন মসজিদের মুয়াজ্জিন। ২৩ এপ্রিল পৌর আলেকজান্ডার সমবায় গ্রামে আট বছরের আরেক শিশুকে ধর্ষণ করে তার আপন ফুফা। ২৭ মে আলেকজান্ডার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক ওই স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীকে যৌন নিপিড়নের অভিযোগে গ্রেফতার হন। চরআলগী ইউনিয়নের রব রোড এলাকায় বাহার নামের ৭২ বছরের এক বৃদ্ধা ১০ বছর বয়সী চতুর্থ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ চেষ্টা করে। পরে ওই বৃদ্ধকে জুতার মালা গলায় দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়া ধর্ষন ও ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনা চরগাজী ও বড়খেরী ইউনিয়নটি এখন সবার মুখে মুখে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এব্যাপারে চরগাজী ইউনিয়নের টুমচর গ্রামের মাইন উদ্দীন বলেন,যে ভাবে চুরি ডাকাতি বেড়ে গেছে,তাতে আমরা খুবই আতঙ্কে আছি। আমার ৬ টি গরু চুরি হলেও এখন পর্যন্ত কোন সন্ধান পাইনি। বড়খেরী ইউনিয়নের মোঃ এরশাদ বলেন, মানুষের নিরাপত্তা বলতে কিছুই নেই, চরগাজী ও বড়খেরী ইউনিয়নে গণহারে চুরি ডাকাতি হচ্ছে। থানা পুলিশকে জানিয়েও কোন লাভ হচ্ছেনা। চুরি ডাকাতির পাশাপাশি ধর্ষণের ঘটনাও ঘটছে। আমরা মেয়েদের নিয়ে খুবই চিন্তিত। ব্যাপকহারে চুরি ডাকাতি বেড়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করে চরগাজী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মোঃ নাছির উদ্দিন বলেন, কি করতাম? কোনভাবেই থামানো যাচ্ছেনা। পুলিশের টহল জোরদার করতে বলে আসছি। এতো বড় ইউনিয়ন। একদিকে পাহারা দিলে অন্যদিকে ঠুকে পড়ে চোরের দল।বড়খেরী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, আমরা গ্রাম পুলিশ দিয়ে নিয়মিত পাহারা দিচ্ছি। আইনশৃঙ্খলা সভায় বার বার বলছি। এরপরেও কোনভাবেই চুরি ডাকাতি বন্ধ করা যাচ্ছেনা। মানুষকেও একটু সতর্কভাবে চলা উচিত।থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ কবির হোসেন বলেন, টুকটাক কিছু চুরি-ডাকাতির খবর আমরাও পাচ্ছি। থানায় আসা অভিযোগগুলো গ্রহন করছি। ধর্ষণের ঘটনায় পুলিশ মুল অপরাধীদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। অন্য অপরাধী ধরতে পুলিশ কাজ করছে। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের তুলনায় অনেক ভাল বলে দাবি ওসির।