ঢাকা ০১:৫৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৩ অগাস্ট ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::

শুল্ক হ্রাস, সুযোগ নেই আত্মতুষ্টির

মহিউদ্দিন তুষার
  • আপডেট সময় : ৫৮ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

আরও কমাতে আলোচনার পরামর্শ বিজিএমইএ’র

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক হ্রাসে আত্মতুষ্টির কোনো সুযোগ নেই মন্তব্য করে শুল্ক আরও কমাতে আলোচনার পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক হ্রাসে আত্মতুষ্টির কোনো সুযোগ নেই। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ নির্বাহী আদেশে স্পষ্ট বলেছে, বেশকিছু দেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বা নিরাপত্তা চুক্তি আলোচনা এখনও চলমান রয়েছে, যেগুলো সম্পাদিত হলে এসব দেশের শুল্ক আরও কমতে পারে। তাই বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক হ্রাস আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। গতকাল শনিবার রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ সভাকক্ষে বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান এসব কথা বলেন।
শুল্ক হ্রাসের কারণে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে মাহমুদ হাসান খান বলেন, তারা (যুক্তরাষ্ট্র) একটি ভারসাম্যপূর্ণ শুল্ক কাঠামো ঘোষণা করেছে। অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ গত ৪ মাস ধরে আমাদের উদ্বেগের কারণ ছিল। বাংলাদেশ থেকে অতিরিক্ত আমদানি শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ পুনর্নিধারণ করা হয়েছে, যা আমাদের প্রধান পোশাক রপ্তানিকারী প্রতিযোগীদের সমান বা কাছাকাছি এবং প্রধান প্রতিযোগী যেমন- চীন (৩০ শতাংশ) ও ভারতের (২৫ শতাংশ) তুলনায় কম।
তিনি বলেন, গত ২ এপ্রিল যখন যুক্তরাষ্ট্র ‘লিবারেশন ডে ট্যারিফ’ নামে নতুন শুল্ক ঘোষণা করল, তখন বাংলাদেশের উপর ৩৭ শতাংশ ধার্য করা হয়। তখন ভারতের ওপর ২৬ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়া ৩২ শতাংশ ও পাকিস্তানের উপর ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়। এটা আমাদের রপ্তানি বাণিজ্যের জন্য একটি বড় হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হয়। কারণ এত বড় শুল্ক ব্যবধানে বাজার ধরে রাখা সম্ভব নয়। আমাদের মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ২০ শতাংশ আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে, আর দেশটিতে আমাদের মোট রপ্তানির ৮৭ শতাংশ তৈরি পোশাক পণ্য।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, যদিও গত ২ এপ্রিলে ঘোষণা অনুযায়ী ৯ এপ্রিল থেকে বাস্তাবায়ন করার কথা ছিল, সেটি ৯০ দিনের জন্য পিছিয়ে দেওয়া হয়, ফলে আমরা আলোচনার জন্য সময় পাই।
গত ৫ এপ্রিল থেকে ১০ শতাংশ অতিরিক্ত বেস ট্যারিফ চালু করা হয়। তবে এই ৯০ দিন সময়ের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ সময় শেষ হওয়ার পর নেগোসিয়েশনে কি হচ্ছে বা ৯ জুলাইয়ের পর কি ঘটতে চলেছে সেই বিষয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছিল। এরপর জুনের মাঝামাঝি আমরা জানতে পারি সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একটি খসড়া চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছে, তবে এনডিএর জন্য তা প্রকাশ করতে পারছে না।
তিনি বলেন, যেহেতু গোপনীয়তা রক্ষা চুক্তির কারণে বেসরকারি খাত এই আলোচনায় সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল না। তাই রপ্তানিকারক ও ক্রেতাদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছিল, কী হতে যাচ্ছে? আমরা সত্যিই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম, যখন দেখলাম গত ২ জুলাই ভিয়েতনামের ওপর শুল্ক ৪৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা হলো। আর প্রায় তিন মাস নেগোসিয়েশনের পর গত ৭ জুলাই আমাদের ওপর শুল্ক মাত্র ২ শতাংশ কমিয়ে ৩৫ শতাংশ করা হলো। তবে পুনরায় আলোচনার জন্য ৩১ জুলাই পর্যন্ত সময় পাওয়া যায়। এরই মধ্যে পরবর্তী ২ সপ্তাহে ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনও ১৯ শতাংশ হারে সমঝোতায় পৌঁছায়।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি আলোচনায় সম্পৃক্ত হতে, অথবা সব রকম তথ্য-বিশ্লেষণ দিয়ে সরকারকে সহায়তা করতে। আমরা চেষ্টা করেছি যেন বিষয়টিকে সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ গুরত্ব দেওয়া হয়। এছাড়া বিজিএমইএর পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সবার সাথে যোগাযোগ করেছি। এমনকি আমরা ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গেও বৈঠক করেছি। এরপর ৯ থেকে ১১ জুলাই ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় দফা বৈঠকেও যখন কোনো স্পষ্ট অগ্রগতি আসেনি, তখন সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের অনানুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়, লবিস্ট নিয়োগের বিষয়ে আমাদের চেষ্টা করা উচিত। আমরা দেরি করিনি। সঙ্গে সঙ্গে কয়েকটি লবিস্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করি। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ওয়াশিংটনের লবিস্টরা সেই সময় অন্য দেশের পক্ষ হয়ে মার্কিন প্রশাসনের সাথে কাজ করছিলেন এবং অত্যন্ত ব্যস্ত ছিলেন। তারপরও আমরা সাড়া পাই এবং আমরা একটি লবিস্ট প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রাথমিক যোগাযোগ স্থাপন করতে পারি। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ হারে এমএফএন শুল্ক দিতাম। এখন ২০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক নির্ধারিত হয়েছে। এতে আমাদের মোট শুল্কের হার দাঁড়াল ৩৬ দশমিক ৫ শতাংশ। যা সুনির্দিষ্টভাবে বিভিন্ন পণ্যের জন্য বিভিন্ন হারে প্রযোজ্য হবে। আমাদের মার্কিন রপ্তানির ৭৫ শতাংশ হচ্ছে তুলাভিত্তিক পোশাক এবং শুল্ক সংক্রান্ত নির্বাহী আদেশে বলা আছে, যদি ন্যূনতম ২০ শতাংশ আমেরিকার কাঁচামাল (যেমন তুলা) ব্যবহার করা হয়, তাহলে আমেরিকার কাঁচামালের মূল্যের ওপর এই অতিরিক্ত ২০ শতাংশ শুল্ক প্রযোজ্য হবে না। অর্থাৎ আমেরিকার কাঁচামাল ব্যবহার করলে আমরা বাড়তি কিছু শুল্ক ছাড় পাব। আরেকটি কথা বলতে চাই, আমাদের আত্মতুষ্টির কোনো সুযোগ নেই, কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ নির্বাহী আদেশে স্পষ্ট বলা আছে, কিছু দেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বা নিরাপত্তা চুক্তির আলোচনা এখনও চলমান রয়েছে, যেগুলো সম্পাদিত হলে এসব দেশের শুল্ক আরও কমতে পারে। তাই বাংলাদেশকে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে।
গত দশকে কর্মক্ষত্রে নিরাপত্তা ও সামাজিক-পরিবেশগত সকল বিষয়ে একটি ব্যাপক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছি। এখন আমাদের এই সক্ষমতা কাজে লাগাতে হবে। আমাদের নিজেদের প্রয়োজনে মূল্য সংযোজন বাড়াতে হবে, ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, নতুন ডিজাইন ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগ করতে হবে, বাজার ও পণ্যের বৈচিত্র্য আনতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র আমাদের শুধু সবচেয়ে বড় বাজার না, তারা আমাদের দীর্ঘমেয়াদি বাণিজ্য অংশীদার। এই অংশীদারিত্বকে আরও শক্তিশালী করার জন্য আমরা বদ্ধপরিকর। আমরা আশা করি যুক্তরাষ্ট্রের সাথে করা চুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়ে সরকার যত্নশীল থাকবে।
মাহমুদ হাসান খান বলেন, বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যে ২০ শতাংশ শুল্ক অবধারিতভাবে আমাদের পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়াবে, যেখানে শিল্পগুলো আগে থেকেই ঊর্ধ্বমুখী উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে তাল মেটাতে প্রাণান্তকরভাবে যুদ্ধ করছে। এক্ষেত্রে সরকারকেও এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি কারখানাগুলো যাতে করে ব্যবসা থেকে ছিটকে না পড়ে, তা সরকারকে নজরদারিতে রাখতে হবে। আমরা একান্তভাবে আশা করি, শিল্প ও দেশের স্বার্থে সরকারের সকল নীতি সহায়তা চলমান থাকবে। এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরের দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে, বিশেষ করে কাস্টমস সংক্রান্ত নীতিগুলো শিল্পবান্ধব হবে, চট্রগ্রাম বন্দরের দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে এবং শিল্প নিরবিচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ পাবে।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, বিজিএমইএ থেকে আমরা আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখব। আমরা তথ্যভিত্তিক বিশ্লেষণ, স্টেকহোল্ডারদের সাথে মতামত এবং বোর্ড সদস্যদের আলোচনার মাধ্যমে আমাদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কিভাবে আরও বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে কাজ করব। আমরা মনে করি, শিল্প মালিক, সরকার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শ্রমিক সংগঠন ও নাগরিক সমাজ— সবাই মিলে একসাথে কাজ করে শিল্পের জন্য যদি সম্মিলিতভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারি, তাহলে এই শুল্ক প্রতিবন্ধকতা না হয়ে এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিতে পারে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

শুল্ক হ্রাস, সুযোগ নেই আত্মতুষ্টির

আপডেট সময় :

আরও কমাতে আলোচনার পরামর্শ বিজিএমইএ’র

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক হ্রাসে আত্মতুষ্টির কোনো সুযোগ নেই মন্তব্য করে শুল্ক আরও কমাতে আলোচনার পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক হ্রাসে আত্মতুষ্টির কোনো সুযোগ নেই। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ নির্বাহী আদেশে স্পষ্ট বলেছে, বেশকিছু দেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বা নিরাপত্তা চুক্তি আলোচনা এখনও চলমান রয়েছে, যেগুলো সম্পাদিত হলে এসব দেশের শুল্ক আরও কমতে পারে। তাই বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক হ্রাস আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। গতকাল শনিবার রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ সভাকক্ষে বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান এসব কথা বলেন।
শুল্ক হ্রাসের কারণে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে মাহমুদ হাসান খান বলেন, তারা (যুক্তরাষ্ট্র) একটি ভারসাম্যপূর্ণ শুল্ক কাঠামো ঘোষণা করেছে। অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ গত ৪ মাস ধরে আমাদের উদ্বেগের কারণ ছিল। বাংলাদেশ থেকে অতিরিক্ত আমদানি শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ পুনর্নিধারণ করা হয়েছে, যা আমাদের প্রধান পোশাক রপ্তানিকারী প্রতিযোগীদের সমান বা কাছাকাছি এবং প্রধান প্রতিযোগী যেমন- চীন (৩০ শতাংশ) ও ভারতের (২৫ শতাংশ) তুলনায় কম।
তিনি বলেন, গত ২ এপ্রিল যখন যুক্তরাষ্ট্র ‘লিবারেশন ডে ট্যারিফ’ নামে নতুন শুল্ক ঘোষণা করল, তখন বাংলাদেশের উপর ৩৭ শতাংশ ধার্য করা হয়। তখন ভারতের ওপর ২৬ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়া ৩২ শতাংশ ও পাকিস্তানের উপর ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়। এটা আমাদের রপ্তানি বাণিজ্যের জন্য একটি বড় হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হয়। কারণ এত বড় শুল্ক ব্যবধানে বাজার ধরে রাখা সম্ভব নয়। আমাদের মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ২০ শতাংশ আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে, আর দেশটিতে আমাদের মোট রপ্তানির ৮৭ শতাংশ তৈরি পোশাক পণ্য।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, যদিও গত ২ এপ্রিলে ঘোষণা অনুযায়ী ৯ এপ্রিল থেকে বাস্তাবায়ন করার কথা ছিল, সেটি ৯০ দিনের জন্য পিছিয়ে দেওয়া হয়, ফলে আমরা আলোচনার জন্য সময় পাই।
গত ৫ এপ্রিল থেকে ১০ শতাংশ অতিরিক্ত বেস ট্যারিফ চালু করা হয়। তবে এই ৯০ দিন সময়ের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ সময় শেষ হওয়ার পর নেগোসিয়েশনে কি হচ্ছে বা ৯ জুলাইয়ের পর কি ঘটতে চলেছে সেই বিষয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছিল। এরপর জুনের মাঝামাঝি আমরা জানতে পারি সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একটি খসড়া চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছে, তবে এনডিএর জন্য তা প্রকাশ করতে পারছে না।
তিনি বলেন, যেহেতু গোপনীয়তা রক্ষা চুক্তির কারণে বেসরকারি খাত এই আলোচনায় সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল না। তাই রপ্তানিকারক ও ক্রেতাদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছিল, কী হতে যাচ্ছে? আমরা সত্যিই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম, যখন দেখলাম গত ২ জুলাই ভিয়েতনামের ওপর শুল্ক ৪৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা হলো। আর প্রায় তিন মাস নেগোসিয়েশনের পর গত ৭ জুলাই আমাদের ওপর শুল্ক মাত্র ২ শতাংশ কমিয়ে ৩৫ শতাংশ করা হলো। তবে পুনরায় আলোচনার জন্য ৩১ জুলাই পর্যন্ত সময় পাওয়া যায়। এরই মধ্যে পরবর্তী ২ সপ্তাহে ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনও ১৯ শতাংশ হারে সমঝোতায় পৌঁছায়।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি আলোচনায় সম্পৃক্ত হতে, অথবা সব রকম তথ্য-বিশ্লেষণ দিয়ে সরকারকে সহায়তা করতে। আমরা চেষ্টা করেছি যেন বিষয়টিকে সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ গুরত্ব দেওয়া হয়। এছাড়া বিজিএমইএর পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সবার সাথে যোগাযোগ করেছি। এমনকি আমরা ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গেও বৈঠক করেছি। এরপর ৯ থেকে ১১ জুলাই ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় দফা বৈঠকেও যখন কোনো স্পষ্ট অগ্রগতি আসেনি, তখন সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের অনানুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়, লবিস্ট নিয়োগের বিষয়ে আমাদের চেষ্টা করা উচিত। আমরা দেরি করিনি। সঙ্গে সঙ্গে কয়েকটি লবিস্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করি। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ওয়াশিংটনের লবিস্টরা সেই সময় অন্য দেশের পক্ষ হয়ে মার্কিন প্রশাসনের সাথে কাজ করছিলেন এবং অত্যন্ত ব্যস্ত ছিলেন। তারপরও আমরা সাড়া পাই এবং আমরা একটি লবিস্ট প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রাথমিক যোগাযোগ স্থাপন করতে পারি। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ হারে এমএফএন শুল্ক দিতাম। এখন ২০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক নির্ধারিত হয়েছে। এতে আমাদের মোট শুল্কের হার দাঁড়াল ৩৬ দশমিক ৫ শতাংশ। যা সুনির্দিষ্টভাবে বিভিন্ন পণ্যের জন্য বিভিন্ন হারে প্রযোজ্য হবে। আমাদের মার্কিন রপ্তানির ৭৫ শতাংশ হচ্ছে তুলাভিত্তিক পোশাক এবং শুল্ক সংক্রান্ত নির্বাহী আদেশে বলা আছে, যদি ন্যূনতম ২০ শতাংশ আমেরিকার কাঁচামাল (যেমন তুলা) ব্যবহার করা হয়, তাহলে আমেরিকার কাঁচামালের মূল্যের ওপর এই অতিরিক্ত ২০ শতাংশ শুল্ক প্রযোজ্য হবে না। অর্থাৎ আমেরিকার কাঁচামাল ব্যবহার করলে আমরা বাড়তি কিছু শুল্ক ছাড় পাব। আরেকটি কথা বলতে চাই, আমাদের আত্মতুষ্টির কোনো সুযোগ নেই, কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ নির্বাহী আদেশে স্পষ্ট বলা আছে, কিছু দেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বা নিরাপত্তা চুক্তির আলোচনা এখনও চলমান রয়েছে, যেগুলো সম্পাদিত হলে এসব দেশের শুল্ক আরও কমতে পারে। তাই বাংলাদেশকে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে।
গত দশকে কর্মক্ষত্রে নিরাপত্তা ও সামাজিক-পরিবেশগত সকল বিষয়ে একটি ব্যাপক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছি। এখন আমাদের এই সক্ষমতা কাজে লাগাতে হবে। আমাদের নিজেদের প্রয়োজনে মূল্য সংযোজন বাড়াতে হবে, ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, নতুন ডিজাইন ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগ করতে হবে, বাজার ও পণ্যের বৈচিত্র্য আনতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র আমাদের শুধু সবচেয়ে বড় বাজার না, তারা আমাদের দীর্ঘমেয়াদি বাণিজ্য অংশীদার। এই অংশীদারিত্বকে আরও শক্তিশালী করার জন্য আমরা বদ্ধপরিকর। আমরা আশা করি যুক্তরাষ্ট্রের সাথে করা চুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়ে সরকার যত্নশীল থাকবে।
মাহমুদ হাসান খান বলেন, বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যে ২০ শতাংশ শুল্ক অবধারিতভাবে আমাদের পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়াবে, যেখানে শিল্পগুলো আগে থেকেই ঊর্ধ্বমুখী উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে তাল মেটাতে প্রাণান্তকরভাবে যুদ্ধ করছে। এক্ষেত্রে সরকারকেও এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি কারখানাগুলো যাতে করে ব্যবসা থেকে ছিটকে না পড়ে, তা সরকারকে নজরদারিতে রাখতে হবে। আমরা একান্তভাবে আশা করি, শিল্প ও দেশের স্বার্থে সরকারের সকল নীতি সহায়তা চলমান থাকবে। এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরের দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে, বিশেষ করে কাস্টমস সংক্রান্ত নীতিগুলো শিল্পবান্ধব হবে, চট্রগ্রাম বন্দরের দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে এবং শিল্প নিরবিচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ পাবে।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, বিজিএমইএ থেকে আমরা আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখব। আমরা তথ্যভিত্তিক বিশ্লেষণ, স্টেকহোল্ডারদের সাথে মতামত এবং বোর্ড সদস্যদের আলোচনার মাধ্যমে আমাদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কিভাবে আরও বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে কাজ করব। আমরা মনে করি, শিল্প মালিক, সরকার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শ্রমিক সংগঠন ও নাগরিক সমাজ— সবাই মিলে একসাথে কাজ করে শিল্পের জন্য যদি সম্মিলিতভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারি, তাহলে এই শুল্ক প্রতিবন্ধকতা না হয়ে এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিতে পারে।