ঢাকা ১২:৫৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ মার্চ ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo নওগাঁর মান্দায় অবৈধ ইটভাটা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিল প্রশাসন Logo পাইকগাছায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে কয়েকটি ঘর পুড়ে ভস্মীভূত; ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি  Logo ফেনীতে কালিদাস পাহালিয়া নদী হইতে অবৈধ বালু উত্তোলন কারীদের ধড়-পাকড় Logo শাহজাদপুরে গ্রামবাসীর মহাসড়ক অবরোধ রাস্তার দাবিতে Logo সাতক্ষীরার সীমান্ত এলাকা থেকে ১৫টি স্বর্ণের বারসহ আটক-১ Logo জয়পুরহাটে ধর্ষকদের কুশপুতুল ফাঁসিতে ঝুলিয়ে বিক্ষোভ Logo মহাদেবপুরে নাতনি কে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে দাদা আটক Logo মোংলায় ২০০ দরিদ্র ও দুঃস্থ শিশুকে চিকিৎসা সহায়তা দিলো কোস্টগার্ড  Logo শরীয়তপুরের প্রশ্নে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে: কিরণ Logo দাউদকান্দিতে বাঙ্গির বাম্পার ফলন, খুশিতে ভরপুর কৃষকরা

স্বাস্থ্য খাত কি নিষ্ঠুরতার খাতে পরিণত হতে চলেছে!

গণমুক্তি রিপোর্ট
  • আপডেট সময় : ০৯:০৯:২৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ৩৭৯ বার পড়া হয়েছে

জাতীয় মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ

দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

স্বাস্থ্য খাতে প্রতিনিয়ত সংঘটিত অন্যায়, অবিচার, নিষ্ঠুরতার বিভিন্ন ঘটনায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন উদ্বেগ প্রকাশ বলেছে, এসব ঘটনা জাতির জন্য চরম দুর্ভাগ্যজনক। স্বাস্থ্য খাতটি চরম নৈরাজ্য, নিষ্ঠুরতার খাত কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন করা যেতেই পারে

আস্থাহীনতার কারণে বিপুল সংখ্যক রোগী চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন দেশে গমন করছেন। তাতে বর্তমান সংকট সময়েও দেশের বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রাও বেহাত হচ্ছে

স্বাস্থ্য খাত কি নিষ্ঠুরতার খাতে পরিণত হচ্ছে! এই আশঙ্কাজনক উচ্চারণ স্বয়ং জাতীয় মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ-এর।

দেশে স্বাস্থ্যখাতে পর পর কয়েকটি ঘটনায় এবং স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রগুলোয় লাগামহীন নৈরাজ্যের কারণে স্বাস্থ্য খাত নিষ্ঠুরতার খাতে পরিণত হচ্ছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ এই প্রশ্ন তুলেছেন।

সাম্প্রতিক সময়ে সুন্নাতে খতনা করাতে গিয়ে একাধিক শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এমন প্রশ্ন তুলেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান।

ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, স্বাস্থ্য খাতে প্রতিনিয়ত সংঘটিত অন্যায়, অবিচার, নিষ্ঠুরতার বিভিন্ন ঘটনা কমিশন লক্ষ্য করছে। এসব ঘটনা জাতির জন্য চরম দুর্ভাগ্যজনক। ফলে স্বাস্থ্য খাতটি চরম নৈরাজ্য, নিষ্ঠুরতার খাত কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন করা যেতেই পারে।

বিবৃতিতে বলা হয়, কমিশন লক্ষ্য করছে যে, ঢাকার বিভিন্ন অভিজাত হাসপাতালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভুল চিকিৎসা, অবহেলা ও গাফিলতির কারণে রোগীদের মৃত্যুর ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়েই চলেছে। ঢাকার মালিবাগের জেএস হাসপাতালে গত ২০ ফেব্রুয়ারি ১০ বছর বয়সী আহনাফ তাহমিদকে সুন্নাতে খতনা করাতে নিলে লোকাল অ্যানেসথেসিয়া না দিয়ে মাত্রাতিরিক্ত জেনারেল অ্যানেসথেসিয়া দেয়াতেই শিশুটির মারা গেছে বলে অভিযোগ করেছে পরিবার।

কিছুদিন আগেও ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে খতনা করাতে গিয়ে আরেক শিশু আয়ানের মৃত্যু হয়। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, গত ১৬ জানুয়ারি বরগুনার বামনায় লাইসেন্সবিহীন অবৈধ সুন্দরবন হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রসূতি নারী মেঘলাকে ভর্তি করানো হয়।

সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় অনভিজ্ঞ আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা সবুজ কুমার দাসসহ ৫/৬ জন মিলে তার অস্ত্রোপচার শুরু করেন। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয় যে, সেখানে মেঘলার পেটে অস্ত্রোপচারের প্রায় দুই ঘণ্টা পর অবস্থা বেগতিক দেখে জীবিত নবজাতক সন্তানকে ফের মায়ের পেটে ঢুকিয়ে দ্রুত বরিশালে নিতে বলেন চিকিৎসকরা। কিন্তু রোগীর অবস্থার অবনতি হলে ভাণ্ডারিয়া হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

বিবৃতিতে কমিশন জানায়, তদন্তে এই অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় নিহত মেঘলার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদানসহ দায়ীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের সুপারিশ করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। অন্যদিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক রোগীর ছেলেকে ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা চরম নির্যাতন করেছে বলেও জানা যায়।

চিকিৎসা করাতে গিয়ে চিকিৎসকদের ফি এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারে টেস্ট করানোর জন্য ফি দিতে গিয়ে রোগীদের প্রচুর অর্থ খরচ করতে হলেও আশানুরূপ চিকিৎসা সেবা পাওয়া যায় না। আস্থাহীনতার কারণে বিপুল সংখ্যক রোগী চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন দেশে গমন করছেন। তাতে বর্তমান সংকট সময়েও দেশের বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রাও বেহাত হচ্ছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, দেশ যেখানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, সেখানে স্বাস্থ্য খাতের চরম নৈরাজ্য কোনোভাবেই প্রত্যাশিত কিংবা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। স্বাস্থ্য খাতের অব্যবস্থাপনা, প্রয়োজনীয় মনিটরিংয়ের অভাবে যত্রতত্র অনুমোদনহীন হাসপাতাল/ক্লিনিক প্রতিষ্ঠিত হওয়া ছাড়াও চিকিৎসক এবং নার্সদের কোনো ন্যূনতম যোগ্যতা ছাড়াই লাগামহীনভাবে অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসা কর্মকাণ্ড চলছে।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অনতিবিলম্বে এসব অনুমোদনহীন হাসপাতাল চিহ্নিত করে বেআইনি ও হঠকারিতামূলক চিকিৎসা কর্মকাণ্ড বন্ধর এবং দোষীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিতের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

শিশু আয়ান, আহনাফসহ ভুল চিকিৎসা এবং চিকিৎসায় অবহেলার কারণে নিহত রোগীদের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদানসহ দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের আহ্বান জানায় কমিশন।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

স্বাস্থ্য খাত কি নিষ্ঠুরতার খাতে পরিণত হতে চলেছে!

আপডেট সময় : ০৯:০৯:২৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

 

স্বাস্থ্য খাতে প্রতিনিয়ত সংঘটিত অন্যায়, অবিচার, নিষ্ঠুরতার বিভিন্ন ঘটনায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন উদ্বেগ প্রকাশ বলেছে, এসব ঘটনা জাতির জন্য চরম দুর্ভাগ্যজনক। স্বাস্থ্য খাতটি চরম নৈরাজ্য, নিষ্ঠুরতার খাত কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন করা যেতেই পারে

আস্থাহীনতার কারণে বিপুল সংখ্যক রোগী চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন দেশে গমন করছেন। তাতে বর্তমান সংকট সময়েও দেশের বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রাও বেহাত হচ্ছে

স্বাস্থ্য খাত কি নিষ্ঠুরতার খাতে পরিণত হচ্ছে! এই আশঙ্কাজনক উচ্চারণ স্বয়ং জাতীয় মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ-এর।

দেশে স্বাস্থ্যখাতে পর পর কয়েকটি ঘটনায় এবং স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রগুলোয় লাগামহীন নৈরাজ্যের কারণে স্বাস্থ্য খাত নিষ্ঠুরতার খাতে পরিণত হচ্ছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ এই প্রশ্ন তুলেছেন।

সাম্প্রতিক সময়ে সুন্নাতে খতনা করাতে গিয়ে একাধিক শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এমন প্রশ্ন তুলেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান।

ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, স্বাস্থ্য খাতে প্রতিনিয়ত সংঘটিত অন্যায়, অবিচার, নিষ্ঠুরতার বিভিন্ন ঘটনা কমিশন লক্ষ্য করছে। এসব ঘটনা জাতির জন্য চরম দুর্ভাগ্যজনক। ফলে স্বাস্থ্য খাতটি চরম নৈরাজ্য, নিষ্ঠুরতার খাত কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন করা যেতেই পারে।

বিবৃতিতে বলা হয়, কমিশন লক্ষ্য করছে যে, ঢাকার বিভিন্ন অভিজাত হাসপাতালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভুল চিকিৎসা, অবহেলা ও গাফিলতির কারণে রোগীদের মৃত্যুর ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়েই চলেছে। ঢাকার মালিবাগের জেএস হাসপাতালে গত ২০ ফেব্রুয়ারি ১০ বছর বয়সী আহনাফ তাহমিদকে সুন্নাতে খতনা করাতে নিলে লোকাল অ্যানেসথেসিয়া না দিয়ে মাত্রাতিরিক্ত জেনারেল অ্যানেসথেসিয়া দেয়াতেই শিশুটির মারা গেছে বলে অভিযোগ করেছে পরিবার।

কিছুদিন আগেও ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে খতনা করাতে গিয়ে আরেক শিশু আয়ানের মৃত্যু হয়। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, গত ১৬ জানুয়ারি বরগুনার বামনায় লাইসেন্সবিহীন অবৈধ সুন্দরবন হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রসূতি নারী মেঘলাকে ভর্তি করানো হয়।

সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় অনভিজ্ঞ আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা সবুজ কুমার দাসসহ ৫/৬ জন মিলে তার অস্ত্রোপচার শুরু করেন। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয় যে, সেখানে মেঘলার পেটে অস্ত্রোপচারের প্রায় দুই ঘণ্টা পর অবস্থা বেগতিক দেখে জীবিত নবজাতক সন্তানকে ফের মায়ের পেটে ঢুকিয়ে দ্রুত বরিশালে নিতে বলেন চিকিৎসকরা। কিন্তু রোগীর অবস্থার অবনতি হলে ভাণ্ডারিয়া হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

বিবৃতিতে কমিশন জানায়, তদন্তে এই অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় নিহত মেঘলার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদানসহ দায়ীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের সুপারিশ করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। অন্যদিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক রোগীর ছেলেকে ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা চরম নির্যাতন করেছে বলেও জানা যায়।

চিকিৎসা করাতে গিয়ে চিকিৎসকদের ফি এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারে টেস্ট করানোর জন্য ফি দিতে গিয়ে রোগীদের প্রচুর অর্থ খরচ করতে হলেও আশানুরূপ চিকিৎসা সেবা পাওয়া যায় না। আস্থাহীনতার কারণে বিপুল সংখ্যক রোগী চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন দেশে গমন করছেন। তাতে বর্তমান সংকট সময়েও দেশের বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রাও বেহাত হচ্ছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, দেশ যেখানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, সেখানে স্বাস্থ্য খাতের চরম নৈরাজ্য কোনোভাবেই প্রত্যাশিত কিংবা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। স্বাস্থ্য খাতের অব্যবস্থাপনা, প্রয়োজনীয় মনিটরিংয়ের অভাবে যত্রতত্র অনুমোদনহীন হাসপাতাল/ক্লিনিক প্রতিষ্ঠিত হওয়া ছাড়াও চিকিৎসক এবং নার্সদের কোনো ন্যূনতম যোগ্যতা ছাড়াই লাগামহীনভাবে অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসা কর্মকাণ্ড চলছে।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অনতিবিলম্বে এসব অনুমোদনহীন হাসপাতাল চিহ্নিত করে বেআইনি ও হঠকারিতামূলক চিকিৎসা কর্মকাণ্ড বন্ধর এবং দোষীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিতের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

শিশু আয়ান, আহনাফসহ ভুল চিকিৎসা এবং চিকিৎসায় অবহেলার কারণে নিহত রোগীদের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদানসহ দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের আহ্বান জানায় কমিশন।