জবির আকাশে শোকের ছায়া
১০ মাসে ৯ শিক্ষার্থীর অকালমৃত্যু, অক্টোবরেই ৫ জন
- আপডেট সময় : ২০ বার পড়া হয়েছে
২০২৫ সাল যেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) জন্য এক গভীর শোকের বছর। জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়টি মোট ৯ জন শিক্ষার্থীকে (বর্তমান ও সাবেক) হারিয়েছে। এর মধ্যে চারটি আত্মহত্যা, একটি হত্যাকাণ্ড, দুটি সড়ক দুর্ঘটনা, একটি ডেঙ্গু ও একটি হৃদরোগজনিত কারণে মৃত্যু ঘটে। আত্মহত্যা, হত্যাকাণ্ড, সড়ক দুর্ঘটনা, ডেঙ্গু ও আকস্মিক মৃত্যুতে একের পর এক এই ঘটনাগুলোয় ক্যাম্পাসজুড়ে নেমে এসেছে শোকের কালো ছায়া।
বিশেষ করে চলতি অক্টোবর মাসেই পাঁচজন শিক্ষার্থীর মৃত্যু বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারকে গভীরভাবে নাড়িয়ে দিয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের মনে জন্ম দিয়েছে ভয়াবহ শঙ্কা। অক্টোবর মাসই ছিল জবির ইতিহাসে সবচেয়ে মর্মান্তিক।
মাসের শুরুতে, ৫ অক্টোবর ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের (২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ) সাবেক শিক্ষার্থী হাসিবুর রহমান হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। এর তিন দিন পর, ৮ অক্টোবর, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ইতিহাস বিভাগের (২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ) শিক্ষার্থী সানজিদা আক্তার।
এই শোক না কাটতেই ১৯ অক্টোবর পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় ছুরিকাঘাতে খুন হন পরিসংখ্যান বিভাগের (২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ) শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা জোবায়েদ হোসেন। এই হত্যাকাণ্ডে ক্ষুব্ধ সহপাঠীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে খুনিদের দ্রুত বিচারের দাবি জানায়।
এরই মধ্যে আসে আরও দুটি মৃত্যুর খবর। ২৫ অক্টোবর সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান অ্যাকাউন্টিং বিভাগের প্রথম ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী মনিকা আক্তার। এর পরদিন, ২৬ অক্টোবর রাজধানীর ফার্মগেটে মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড মাথায় পড়ে নিহত হন ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চতুর্থ ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী আবুল কালাম।
এর আগে বছরজুড়ে একাধিক শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘটনা উদ্বেগ তৈরি করে। বছরের শুরুতেই, ২৬ জানুয়ারি সমাজবিজ্ঞান বিভাগের (২০২১-২২ সেশন) শিক্ষার্থী সাবরিনা রহমান শাম্মীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিকভাবে সেটিকে প্রেমঘটিত ঘটনা বলে মন্তব্য করে পুলিশ।
ফেব্রুয়ারিতে মাত্র দুই দিনের ব্যবধানে আরও দুজন আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। ১৭ ফেব্রুয়ারি কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের (২০১৮-১৯ সেশন) শিক্ষার্থী হাবিব রিয়াদ এবং ১৯ ফেব্রুয়ারি ফিন্যান্স বিভাগের (২০১৮-১৯ সেশন) শিক্ষার্থী মো. আহাদ হোসেন আত্মহত্যা করেন। এরপর ২৯ এপ্রিল সংগীত বিভাগের (২০২২-২৩ সেশন) শিক্ষার্থী প্রত্যাশা মজুমদারের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে।
বছরজুড়ে একের পর এক সহপাঠীর এমন আকস্মিক ও মর্মান্তিক প্রয়াণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে গভীর শোক ও হতাশা বিরাজ করছে। বিশেষ করে চারটি আত্মহত্যার ঘটনা শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ও ক্যাম্পাসের বাইরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী লিটন বলেন, “আমরা সত্যিই ভারাক্রান্ত। আমাদের সিনিয়রদের হারিয়ে মনে হচ্ছে, তারা এ দেশের অব্যবস্থাপনার বলি হয়েছেন। আমরা চাই, জবিতে এমন আর কোনো হৃদয়বিদারক ঘটনা না ঘটুক।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন, “আমরা একটি কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। অল্প সময়ের ব্যবধানে আমরা আমাদের পাঁচজন শিক্ষার্থীকে হারিয়েছি। আপনারা জানেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আমরা শোক প্রকাশ করেছি এবং বিশ্ববিদ্যালয় দিবস খুব সাধারণভাবে পালন করেছি। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা যেন না ঘটে, সে লক্ষ্যে প্রশাসন নিরলসভাবে কাজ করছে।”












