এবার ভিন্ন আমেজে পুলিশ সপ্তাহ

- আপডেট সময় : ১০:২৪:০৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫ ৪১ বার পড়া হয়েছে
থাকছে বেশকিছু নতুন বিষয়। দাবি-দাওয়া পেশের ক্ষেত্রেও থাকবে ভিন্নতা। নতুন বিষয় নিয়ে জানানো হচ্ছে নিদিষ্ট ৬ দাবি
পুলিশ সপ্তাহ-২০২৫ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ভিন্ন আমেজে। এবার থাকবে বেশকিছু নতুন বিষয়। অতীতে পালন করা হতো এমন কিছু বিষয় আবার বাদ পড়েছে। সরকারের কাছে পুলিশের দাবি-দাওয়া উপস্থাপনেও রয়েছে ভিন্নতা। এবার নতুন বিষয় নিয়ে নির্দিষ্ট ছয়টি দাবি জানানো হবে পুলিশের পক্ষ থেকে। এমন তথ্য জানা গেছে পুলিশ সদর দফতর থেকে।
সদর দফতর থেকে জানা গেছে, আগামী ২৯ এপ্রিল রাজাররাগ পুলিশ লাইনস অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে পুলিশ সপ্তাহ। অর্ন্তবর্তী সরকারের আমলের প্রথম এ পুলিশ সপ্তাহ অনুষ্ঠিত হবে তিনদিনব্যাপী। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন। বিশেষ দরবার অনুষ্ঠিত হওয়ার পর পুলিশ ও রাষ্ট্রপতি পদক পরিয়ে দেবেন তিনি।
বিগত বছরগুলোতে সরকারের কাছে পুলিশ সদস্যরা তাদের একাধিক দাবি-দাওয়া উপস্থাপন করতেন। কিন্তু সরকার পুলিশের সেসব দাবি-দাওয়ার ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহী ছিল না। এ কারণে দীর্ঘদিন ধরে পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ক্ষোভ এবং টানাপোড়েন ছিল। এবার সেখান থেকে বেরিয়ে পুলিশ সদস্যরা বর্তমান সরকারের কাছে নির্দিষ্ট করে ছয়টি দাবি উত্থাপন করবেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, যেসব দাবি উত্থাপিত হবে তার মধ্যে যৌক্তিক হলে সবগুলো দাবি মেনে নিয়ে দ্রুত বাস্তবায়ন করবে অর্ন্তবর্তী সরকার।
পুলিশ সদর দপ্তরের সূত্র জানায়, প্রথমে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ১২টি দাবি জানানোর প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল। পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ে কয়েক দফা বৈঠক শেষে তার মধ্য থেকে ছয়টি দাবি চূড়ান্ত করা হয়।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা যায়, পুলিশের পক্ষ থেকে স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন করে জনসাধারণের জন্য কমপ্লেইন সেল ও পুলিশের জন্য অভিযোগ নিষ্পত্তি কমিটি এবং এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ ভাতা, স্বতন্ত্র সাইবার ইউনিট গঠনসহ ছয়টি দাবি তুলে ধরা হবে।
পুলিশ সদরদপ্তর সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছরই পুলিশ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রী ও সচিবদের সঙ্গে বৈঠকে নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট একগুচ্ছ দাবি উত্থাপন করে পুলিশ। দাবি পূরণের আশ্বাসও দেন দেশের শীর্ষ কর্তাব্যক্তিরা। সেখানে প্রধান অতিথি ভাষণ দেন, সভাপতিত্ব করেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি)। বিভিন্ন কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ চৌকস কর্মকর্তাদের বিপিএম ও পিপিএম প্রদান করেন প্রধান অতিথি।
গত বছর ৪০০ পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যকে বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম), রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম), বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)-সেবা এবং রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম)-সেবা দেওয়া হয়। গত বছরের পুলিশ সপ্তাহে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন পুলিশ সদস্যরা। দেশের মধ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রেষণে নিয়োগের পাশাপাশি, বিদেশি মিশনগুলোতে প্রেষণে পুলিশ অফিসারদের নিয়োগের দাবিও উত্থাপন করা হয়। এ ছাড়া নিজস্ব বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, গাড়ি কিনতে সুদমুক্ত ঋণ ও পরিদর্শক থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ঝুঁকি ভাতা, নন-ক্যাডার পুলিশ সদস্যদের জন্য সুপার নিউমারারি পদ সৃষ্টি করে পদোন্নতি জট কমানোসহ পুরোনো দাবিগুলো ফের তুলে ধরা হয়।
এবছর পুলিশ সপ্তাহ দেরির কারণে জানা গেছে, চাকরিতে কোটা সংস্কার প্রশ্নে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার কারণে বিতর্কিত হয় পুলিশ। যার প্রথম নজির স্থাপিত হয় রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। এরপর আন্দোলন দমাতে পুলিশের মারমুখী অবস্থান অতীতের সব সমালোচনাকে ছাড়িয়ে যায়। ছাত্রদের আন্দোলন গণ-আন্দোলনে রূপ নেয়। একপর্যায়ে ছাত্র-জনতার গণরোষের মুখে গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যায়। ভেঙে পড়ে পুলিশের চেইন অব কমান্ড। তোপের মুখে পড়ে পুলিশ। থানা, ট্র্যাফিক স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, পুলিশ সদস্যদের মারধর, এমনকি তাদের হত্যার ঘটনাও ঘটে। সরকার পতনের পর সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি ঘটে। ছাত্র-জনতার রোষের মধ্যে ডিএমপিসহ পুলিশের অধিকাংশ সুবিধাবাদী এবং সরকার ও আওয়ামী ঘেঁষা সদস্যরা আত্মগোপনে চলে যান। অনেকে হন গ্রেপ্তার। ৫ আগস্টের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং পুলিশকে স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফেরাতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় পুলিশি কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এখন নিজ নির্ভরতায় গতিশীল হচ্ছে পুলিশ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্মমতা, গুম কিংবা বিরোধী মত দমনে পুলিশকে যথেচ্ছ ব্যবহার করা হয়েছে গত ১৫ বছর ধরে। যে কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সঙ্গে সঙ্গে পুরো বাহিনীটি বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে পুলিশকে পেশাদার, জনমুখী ও সেবাদানকারী সংস্থায় পরিণত করতে ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন। সেই সংস্কার প্রক্রিয়া যেহেতু শুরু হয়েছে, সংগত কারণে সংস্কার কমিশনের পরামর্শ অনুযায়ী নতুন ফরমেটে হচ্ছে পুলিশ সপ্তাহ ২০২৫। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগের উপকমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান গতকাল বুধবার রাতে বলেন, প্রতিবছরের মতো এবার ব্যাপক ভাবে পুলিশ সপ্তাহ হচ্ছে না। এবার পুলিশ সপ্তাহ অনুষ্ঠিত হচ্ছে ছোট পরিসরে। পুলিশ সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা জানান, অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে এবারও পুলিশ পদক দেয়ার চিন্তা আছে কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে। তবে তাদের নাম এখনো চুড়ান্ত হয়নি। প্রতি বছরই অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পুলিশ সদস্যদের বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম), রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম) এবং গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদঘাটন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও শৃঙ্খলামলূক আচরণের মাধ্যমে প্রশংসনীয় অবদানের জন্য বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)-সেবা এবং রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম)-সেবা পদকে ভূষিত করা হয়।
এদিকে পুলিশের ছয় দফা দাবিগুলো হচ্ছে,স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন করে জনসাধারণের জন্য কমপ্লেইন সেল ও পুলিশের জন্য অভিযোগ নিষ্পত্তি কমিটি গঠন, এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ ভাতা। স্বতন্ত্র সাইবার ইউনিট গঠন। পুলিশের বিভাগীয় হাসপাতালে জনবল বৃদ্ধি ও আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামাদি সরবরাহসহ মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা। একই পদে দীর্ঘদিন চাকরি করার পর অবসরকালে সুপারনিউমারারি পদোন্নতি দেওয়া (কনস্টেবল থেকে ইন্সপেক্টর পর্যন্ত)। মৃতদেহ দাফন/সৎকারের সুবিধার্থে পুলিশের অনুকূলে আর্থিক বরাদ্দ দেওয়া।