কমেছে পতিত জমি বেড়েছে চাষাবাদ

- আপডেট সময় : ০৮:৫৬:৩৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫ ১৩ বার পড়া হয়েছে
বরিশালে আবাদের পরিমাণ বেড়েছে। সরকারি প্রণোদনা পাওয়ায় চাষাবাদে উৎসাহিত হচ্ছেন কৃষকরা। এ কারণে কমছে পতিত জমি। ফলে আগের তুলনায় ফসলের উৎপাদন বেড়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিনামূল্যে বীজ ও সার পেয়ে অনেক কৃষক অনাবাদি ও পতিত জমিতে বিভিন্ন ফসল করেছেন। ২০২৪-২০২৫ মৌসুমে বরিশাল জেলায় বিগত বছরের তুলনায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর বেশি জমিতে চাষাবাদ হয়েছে।
তথ্য বলছে, বরিশাল অঞ্চলে কৃষি বিভাগের সহযোগিতা, বেসরকারি সংস্থা এবং কৃষকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার কারণে গত বছরের তুলনায় চাষাবাদ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। প্রণোদনার পাশাপাশি সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় সেচ সুবিধার সম্প্রসারণ হওয়ায় পতিত জমি চাষাবাদের আওতায় এসেছে।
বরিশাল অঞ্চলে আবাদযোগ্য জমি বৃদ্ধি পাওয়ায় ফসলের উৎপাদনও বেড়েছে, যা একটি ইতিবাচক দিক। এর প্রধান কারণ হলো উন্নত প্রযুক্তি ও প্রণোদনা কার্যক্রমের মাধ্যমে কৃষকদের উৎসাহিত করা হয়েছে। ফলে পতিত জমিগুলো চাষের আওতায় এসেছে। এতে ফলনও বেড়েছে। বরিশাল কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, ২০২৩-২০২৪ সালে বরিশাল জেলায় এক লাখ ৬২ হাজার ৭৫৩ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। এর মধ্যে বরিশাল সদরে ১৫ হাজার ৭৭৩ হেক্টর, বাবুগঞ্জে ১১ হাজার ৮৮০ হেক্টর, উজিরপুরে ১৬ হাজার ৬০১ হেক্টর, বাকেরগঞ্জে ২৯ হাজার ১২৫ হেক্টর, গৌরনদীতে ১০ হাজার ২৫৭ হেক্টর, আগৈলঝাড়ায় ১০ হাজার ২০০ হেক্টর, মুলাদীতে ১৪ হাজার ৯৯৫ হেক্টর, হিজলায় ১৭ হাজার ৬৮০ হেক্টর, মেহেন্দিগঞ্জে ২৬ হাজার ৯৬২ হেক্টর, বনানীপাড়ায় আট হাজার ৩৭০ হেক্টর এবং বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকায় ৯২০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। ওই অর্থবছরে জেলায় স্থায়ী পতিত জমির (আবাদযোগ্য কিন্তু আবাদ করা হয় না) পরিমাণ ছিল এক হাজার ১৭৪ হেক্টর, সাময়িক পতিত জমি ছিল ৯ হাজার ২১১ হেক্টর ও মোট পতিত জমি ছিল ১০ হাজার ৩৮৫ হেক্টর।
সরকারি প্রণোদনা পাওয়ার পর ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে জেলায় এক লাখ ৬৬ হাজার ১৭২ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। অর্থাৎ গত অর্থবছরের তুলনায় তিন হাজার ৪১৯ হেক্টর জমিতে বেশি চাষাবাদ হয়েছে। এরমধ্যে বরিশাল সদরে ১৬ হাজার ৭১০ হেক্টর, বাবুগঞ্জে ১১ হাজার ৫২৫ হেক্টর, উজিরপুরে ১৭ হাজার ৩১ হেক্টর, বাকেরগঞ্জে ৩০ হাজার ১৮৫ হেক্টর, গৌরনদীতে ১০ হাজার ৪২৮ হেক্টর, আগৈলঝাড়ায় ১০ হাজার ২০৯ হেক্টর, মুলাদীতে ১৫ হাজার ৩৮১ হেক্টর, হিজলায় ১৮ হাজার ৮২৫ হেক্টর, মেহেন্দিগঞ্জে ২৬ হাজার ৭১২ হেক্টর, বনানীপাড়ায় আট হাজার ১৯০ হেক্টর ও বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকায় ৯৭৬ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। চলতি বছর জেলায় স্থায়ী পতিত জমি (আবাদযোগ্য কিন্তু আবাদ করা হয় না) রয়েছে এক হাজার ৬২ হেক্টর, সাময়িক পতিত জমি পাঁচ হাজার ৫৯১ হেক্টর ও মোট পতিত জমি ছয় হাজার ৬৫৩ হেক্টর।
কৃষি বিভাগ আরও জানায়, বরিশালে তিন লাখ ৭৬ হাজার ৫৬২ পরিবার কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত। এরমধ্যে ভূমিহীন কৃষি পরিবার ৭৯ হাজার ৭৬০টি, প্রান্তিক কৃষি পরিবার এক লাখ ৩৩ হাজার ২৯২টি, ক্ষুদ্র কৃষি পরিবার এক লাখ ৮ হাজার ১৫২টি ও মাঝারি পর্যায়ের কৃষি পরিবার রয়েছে ৪৯ হাজার ৭৪০টি। এসব পরিবারের বেশিরভাগ কৃষকই অসচ্ছল ও দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করেন।
এসব কৃষকদের জন্য সরকার ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে বরিশাল জেলায় চার কোটি ৮১ লাখ ৫২ হাজার টাকা প্রণোদনা দেয়। এরমধ্যে বোরো হাইব্রিড, বোরো সমলয় উফসি, গম, ভুট্টা, সরিষা, সূর্যমুখী, চিনাবাদাম, সয়াবিন, মুগ, মসুর, খেসারি, সয়াবিন, আউশ ও পেঁয়াজ ফলনে দুই কোটি ৯৯ লাখ ৫৮ হাজার ৩০০ টাকার প্রণোদনা বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া লেবু, হাইব্রিড মরিচ, নারিকেল চারা, আমন, গ্রীষ্মকালীন শাকসবজি, দেশি জাতের তাল চারা, নিম, বেল, জাম, কাঁঠাল ও আম চারা ফলনে এক কোটি ৮১ লাখ ৯৩ হাজার ৭০০ টাকার প্রণোদনা বিতরণ কার্যক্রম চলমান।
বাবুগঞ্জ উপজেলার দেহেরগতি ইউনিয়নের কৃষক ইউনুস খান বলেন, এবার এক বিঘা জমিতে সরিষা চাষাবাদের জন্য বিনামূল্যে সরকারি বীজ ও সার পেয়েছেন।
একই ইউনিয়নের কৃষক সালাম, জয়নাল ও আনসারী প্রতি বিঘা জমিতে সরিষা চাষের জন্য বিনামূল্যে সরকারি বীজ ও সার পেয়েছেন বলে জানান। কৃষক জয়নাল জানান, ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক কৃষক প্রণোদনা পেয়েছে। একেকজন কৃষককে এক বিঘা জমিতে চাষের জন্য বিনামূল্যে সরকারি বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। সরিষা চাষ করে এখন সবার মুখেই হাসি ফুটেছে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, আগামী মৌসুমে সরকারি প্রণোদনা অব্যাহত থাকলে জেলায় সব স্থায়ী পতিত জমি চাষাবাদের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে। বরিশাল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ীর অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শষ্য) মো. মুছা ইবনে সাঈদ জানান, বরিশাল অঞ্চলে আবাদযোগ্য জমি বৃদ্ধি পাওয়ায় ফসলের উৎপাদনও বেড়েছে, যা একটি ইতিবাচক দিক। এর প্রধান কারণ হলো উন্নত প্রযুক্তি ও প্রণোদনা কার্যক্রমের মাধ্যমে কৃষকদের উৎসাহিত করা হয়েছে। ফলে পতিত জমিগুলো চাষের আওতায় এসেছে। এতে ফলনও বেড়েছে।