পতনের মধ্যেই পুনর্জাগরণ: জামায়াতের জাতীয় সমাবেশ এক প্রতীকী বার্তা

- আপডেট সময় : ১৭২ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ২০২৫ সালের ১৯ জুলাই দিনটি একটি নতুন মাত্রা যোগ করল। রাজধানী ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ‘জাতীয় সমাবেশ’ ইতিহাসের পাতায় একটি সাহসী পুনর্জাগরণের দলিল হয়ে রইল।
দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা একটি দল, যাদের কেন্দ্রীয় অনেক নেতা শাহাদাত বরণ করেছেন, দীর্ঘ কারাবরণ করেছেন এবং বারবার দলকে নিষিদ্ধ করার চেষ্টা হয়েছে—সেই দলই লাখো মানুষের ঢল নামিয়ে একটি শান্তিপূর্ণ, শৃঙ্খলাপূর্ণ ও ঐতিহাসিক সমাবেশ করে দেখিয়ে দিল, তারা এখনো ‘খেলাফতের স্বপ্ন’ নিয়ে রাজনীতিতে জীবিত।
কিন্তু এ সমাবেশের সবচেয়ে প্রতীকী ও হৃদয়গ্রাহী মুহূর্তটি ঘটে সমাবেশের শেষভাগে।
জামায়াতের আমীর, জননেতা ড. শফিকুর রহমান তাঁর সমাপনী বক্তব্য প্রদানকালে ধপাস করে মঞ্চেই পড়ে যান। মুহূর্তেই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় থমকে যায় জনসমুদ্র। সহকর্মীরা তাঁকে ধরেন, তিনি উঠে দাঁড়ান, কাঁপা কণ্ঠে বলেন—
আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ আমাকে আবার দাঁড় করিয়েছেন আপনাদের সামনে।
কিন্তু কিছুক্ষণ পর আবার তিনি পড়ে যান। এবার আর দাঁড়াতে পারেননি। বসেই শেষ করেন তাঁর বক্তব্য। তুলে ধরেন ইসলামী আন্দোলনের রাজনৈতিক এজেন্ডা, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রত্যয়।
প্রতিকী বিশ্লেষণ এই ঘটনার বাস্তবতা হোক শারীরিক দুর্বলতা, কিন্তু এর ভেতর লুকিয়ে আছে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক বার্তা যা সাধারণ মানুষ, কর্মী এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মনোযোগ কেড়েছে।
প্রথম পড়ে যাওয়া বোঝায় জামায়াত অতীতে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের মুখে এক সময় ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিল। ২০১৩-২০১৬ সময়কালে কেন্দ্রীয় ১২ জন নেতার কারাগারে মৃত্যু ও ফাঁসি, দল নিষিদ্ধের উদ্যোগ, অফিস জব্দ, গ্রেপ্তার, রাজনৈতিক কোণঠাসা এসবই ছিল সেই প্রথম পড়ে যাওয়ারই বাস্তবতা।
উঠে দাঁড়ানো মানে দল পুনরায় মাঠে ফিরেছে, জনসমর্থন ফিরে পাচ্ছে। এই জাতীয় সমাবেশ সে কথারই প্রমাণ।
দ্বিতীয়বার পড়ে যেয়ে উঠে বসে বক্তব্য শেষ করা এই প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়,সামনে এখনও বড় চ্যালেঞ্জ আছে, দল হয়তো পুরোপুরি দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করতে পারবে না, কিন্তু বসেও তাদের বক্তব্য, আদর্শ ও লক্ষ্য থেকে সরে আসবে না। তারা শেষ পর্যন্ত লড়ে যাবে।
রাজনৈতিক বার্তা : ড. শফিকুর রহমান তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন আগামীতে যদি সুযোগ পান, তাহলে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, হত্যা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। তিনি বলেন, এটা শুধু রাজনৈতিক আন্দোলন নয়, এটা ঈমানী দায়িত্ব।এই ভাষা, এই শরীরী ভাষা, এই মনোবল সবকিছু মিলিয়ে পুরো ঘটনাটিই হয়ে যায় এটি একটি রাজনৈতিক রূপক।
উপসংহার : বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইসলামপন্থী দলগুলোর টিকে থাকা কঠিন ছিল, এখনো কঠিন। কিন্তু ১৯ জুলাইয়ের এই সমাবেশ দেখিয়ে দিল আদর্শ ও বিশ্বাস থাকলে পতনের মধ্যেও পুনর্জন্ম সম্ভব।
পতন বারবার আসবে, কিন্তু প্রতিবারই একটি দলের শক্তি প্রকাশ পায় সে কত দ্রুত উঠে দাঁড়াতে পারে, বা বসেও শেষ কথা বলতে পারে কিনা।
জামায়াতের এই সমাবেশ ও শীর্ষ নেতার পতন-পুনরুত্থান শুধু একটি নাটকীয় ঘটনা নয়, এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য একটি বার্তা:
আদর্শিক রাজনীতি কখনো শেষ হয় না, সময়ই শুধু তার প্রমাণ দেয়, আজকের এই টোটাল ঘটনা আমার কাছে প্রতিমান হচ্ছে আগামী দিনের ইসলামের বাংলাদেশ শত বাধা-বিপত্তির মধ্যেও সেই ইসলামের বাংলাদেশের নেতৃত্বই দিবে এই শহীদি কাফেলা ।
লেখক পরিচিতি:এইচ.এন. কামরুল ইসলাম একজন লেখক, সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক। তিনি মাগুরা রিপোর্টার্স ইউনিটির প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি, এবং মাগুরা থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয়।