অপরিকল্পিত উন্নয়নে মারাত্মক ক্ষতিরমুখে উপকূলের কৃষি ও মৎস্য সম্পদ
- আপডেট সময় : ০৬:৩২:৫০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ মে ২০২৪ ২১৫ বার পড়া হয়েছে
জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবের পাশাপাশি সরকারের অপরিকল্পিত উন্নয়নের কারণে মারাত্মক ক্ষতিরমুখে পড়ছে উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষি ও মৎস্য সম্পদ। পরিবেশ ধ্বংসী বড় বড় প্রকল্পে কৃষি জমিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সেখানকার নদী ও জলাভূমিতে দ্রুত কমছে মাছের পরিমাণ। এতে উপকূলের অনেক মানুষ জীবন-জীবিকা হারিয়ে সর্বশান্ত হচ্ছে। এমনকি বাধ্য হয়ে এলাকা ছেড়ে শহরে পাড়ি জমাচ্ছে।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘উপকূলের কৃষি ও মৎস সম্পদ সংরক্ষণ ও উন্নয়নে করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় উপস্থাপিত গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য ওঠে এসেছে। পরিবেশবাদী সংগঠন ‘ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা)’ এবং ‘ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ’ আয়োজিত সভায় উপকূলের কৃষি ও মৎস্য খাতের উপর গবেষণালব্ধ তথ্য তুলে ধরেন পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মো. আশিকুর রহমান, কৃষিবিদ রফিকুল ইসলাম ও ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের গবেষণা প্রধান মো. ইকবাল ফারুক।
পৃথক তিনটি গবেষণায় দেখা গেছে, পায়রা বন্দরে বড় বড় জাহাজ চলাচলের কারণে নদীতে ইলিশের পরিমাণ কমেছে। জেলেরা আগের মতো মাছ পাচ্ছেন না। পটুয়াখালী পাওয়ার প্ল্যান্টের কারণে নদীর পানির গুণগতমান কমে গেছে। কৃষি জমিতে তরমুজের ফলন অনেক কমে হচ্ছে। নতুন রোগবালাইয়ে ক্ষতির মুখে পড়ছেন চাষিরা। পাওয়ার প্ল্যান্টের আশপাশে গাছের পাতার ওপর কালো বর্জ্যের আস্তরণ পড়ছে। এতে সামগ্রিকভাবে ওই অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকিও তৈরি হয়েছে।
প্রতিবেদনের উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার বলেন, পরিবেশের সুরক্ষায় সরকার কাজ করছে। সরকার বিভিন্ন প্রকল্পে বরাদ্দ দিচ্ছে। বরাদ্দের বড় অংশ কেউ পকেটে ভরলে সরকারের কি করার থাকে। অনেক সরকারি কর্মকর্তা দায়িত্বকালীন পকেট ভরে, চাকরি শেষে মঞ্চে ওঠে সরকারের সমালোচনা করে ভালো মানুষ সাজে। লবণাক্ততা প্রতিরোধসহ উপকূলের জীবন-জীবিকা ও পরিবেশ সুরক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনা রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল বলেন, অপরিকল্পিত মেগা প্রকল্প গুলো উপকূলের মানুষের জন্য বিপদ ডেকে আনছে। এটার কারণে মানুষের জীবন-জীবিকার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ফলে মানুষ এলাকা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ সাইক্লোনগুলো আরো শক্তিশালী হবে এবং ঘনঘন আসবে। এটা বিবেচনায় নিয়ে পরিবেশ সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
বিজয় নিসফরাস ডি’ক্রুজ বলেন, উপকূলবাসীর কূল নেই। মানুষ বঞ্চিত হবে, শিক্ষা পাবে না, খাবার পাবে না এটা হতে পারে না। আমাদের সকলের জন্য চিন্তা করতে হবে। অন্যের ভালো করতে না পারলেও মন্দ যেন না করি। একসঙ্গে চলতে শিখতে হবে, নইলে মানবজাতি ধ্বংস হবে।
ব্রতী সমাজ কল্যাণ সংস্থার প্রধান নির্বাহী শারমিন মুরশিদ বলেন, যে কোন উন্নয়নে লাভ কতটুকু, আর ক্ষতি কতটুকু এটা বিশ্লেষণ জরুরি। উন্নয়নের নামে মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহত করা ঠিক নয়। তাই উন্নয়ন কাজে সরকারকে কমিউনিটির মতামত নিতে হবে। উপকূলের জন্য উন্নয়ন কৌশল সুনির্দ্দিষ্ট করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে ধরা’র সহ-আহ্বায়ক এমএস সিদ্দিকী বলেন, মে থেকে জুন মাসে ৬৫ দিন এবং অক্টোবরে ২২ দিন প্রজননক্ষম মা ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ থাকে। কিন্তু সেই সময়ে ভারতের জেলেদের উপর কোন নিষেধাজ্ঞা না থাকায় তাঁরা বঙ্গোপসাগরে ইলিশ মাছ অবাধে শিকার করছে। এতে দেশের মৎস সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সরকারকে এই বিষয়ে দৃষ্টি দিতে হবে। তিনি আরো বলেন, উন্নয়ন হতে হবে কিন্তু উন্নয়ন কর্মকান্ডের লাভ-ক্ষতির গবেষণা করতে হবে এবং গবেষণালব্ধ ফলাফল প্রকাশ করতে হবে।
সভায় আরো বক্তৃতা করেন উপকূল রক্ষায় আমরা’র সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র, সুন্দরবন রক্ষায় আমরা’র সমন্বয়ক নূর আলম শেখ, কক্সবাজারের পরিবেশকর্মী ফরিদুল আলাম শাহীন ও দেলোয়ার হোসেন, পটুয়াখালীর কৃষিজীবী ফরিদ উদ্দিন, পাথরঘাটার পরিবেশকর্মী শফিকুল ইসলাম খোকন, খুলনার কৃষিজীবী হিরন্ময় রায়, মোংলার মৎসজীবী রশিদ হাওলাদার প্রমূখ।