ঢাকা ০৪:৩২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫

কিছুই নেই তাদের তবুও আবেদন!

হালিম মোহাম্মদ
  • আপডেট সময় : ০৮:৪৭:৫০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫ ১২ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

কার্যালয় নেই কমিটি নেই কার্যক্রম নেই, এমন নামসর্বস্ব শতাধিক রাজনৈতিক দল নিবন্ধন পেতে আবেদন করেছে নির্বাচন কমিশনে (ইসি)। সম্প্রতি নিবন্ধনের জন্য ইসিতে ২২ জুন পর্যন্ত আবেদনের সুযোগ দেয়া হয়েছিল। সে সুযোগে এ সকল ভুঁইফোড় রাজনৈতিক দলেল তৎপরতা শুরু হয়েছে। আজ সেই রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের সুযোগ শেষ হচ্ছে। ইসি সূত্রে জানা গেছে, ‘নতুন বাংলা’, ‘বাংলাদেশ একুশে পার্টি’, ‘বাংলাদেশ জাগ্রত জনতা পার্টি’ কিংবা ‘বাংলাদেশ ছাত্র জনতা পার্টি’সহ এমন অন্তত ৬৫টি রাজনৈতিক দল নিবন্ধন পেতে আবেদন করেছে নির্বাচন কমিশনে (ইসি)। যাদের বেশিরভাগেরই ঠিক নেই দলীয় কার্যালয়, কার্যকরী কমিটি কিংবা স্বকীয়তা। নামসর্বস্ব এমন রাজনৈতিক দলগুলো সুস্থ ধারার রাজনীতি চর্চায় কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ের মধ্যে অনেকগুলোর অবস্থা এমন যে, কেন্দ্রীয় কার্যালয় তো দূরের কথা, সাইনবোর্ডটি পর্যন্ত নেই, নেই কার্যকরী কমিটি। কোনোটি আবার শুধু কাগজে কলমেই তৎপর। তবে এই দলগুলোই আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নিবন্ধনের আবেদন করেছে নির্বাচন কমিশনে। নির্বাচন কমিশনে দাখিল নিবন্ধনের আবেদনে মিরপুরের আহমেদ নগরের এক বাড়ির ঠিকানা ব্যবহার করেছে ‘বাংলাদেশ ছাত্র জনতা পার্টি’। কিন্তু বাড়ির নিচতলার বাসিন্দারা জানেনই না যে, এখানে কোনো দলের অফিস আছে। বাইরে সাইনবোর্ড না থাকলেও, বাড়ির ভিতরে গিয়ে দেখা মেলে দলটির কার্যালয়ের। ছোট একটি কক্ষে ২টি টেবিল আর ৪টি চেয়ার নিয়েই চলছে কার্যক্রম।
‘বাংলাদেশ ছাত্র জনতা পার্টির’ মুখপাত্র বেলাল হোসেন বলেন, ‘আপাতত আমাদের ক্ষণস্থায়ী অফিস এটাই। গোডাউনের মত আছে। এটা পরিষ্কার করে ঠিক করে নিয়ে এটা পুরোটা নিয়েই আমাদের অফিস হবে। ‘নতুন বাংলা’ নামে আরেকটি দলের কার্যালয়ে গেলে নেতাকর্মীহীন বন্ধ কার্যালয় খুলিয়ে দেখা যায় একটি টেবিল আর কয়েকটি চেয়ার।
রাজধানী জুড়েই খুঁজে পাওয়া অনেক দলের কার্যালয়গুলোই বলে দিচ্ছে তাদের কার্যক্রমের অবস্থা। মিরপুরে সাইনবোর্ডহীন ‘জাগ্রত জনতা পার্টির’ অফিস, কিংবা তার পাশেই ‘বাংলাদেশ একুশে পার্টির’ কার্যালয়গুলোতে চেয়ার টেবিলই সার, নেতাকর্মীর দেখা মেলে না। এছাড়া ‘বাংলাদেশ একুশে পার্টির’ চেয়ারম্যান রবিউল আওয়াল বলেন, ‘এটা কেন্দ্রীয় কার্যালয়, কিন্তু আমরা নতুন একটা অফিস খুঁজছি, তবে পাচ্ছি না।’
রাজধানীর পুরানা পল্টনের একটি ভবনেই চলছে বেশকিছু রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম। ‘লেবার পার্টি বাংলাদেশ’, ‘আমজনতার দল’ আর ‘দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও আন্দোলন’সহ বেশকিছু রাজনৈতিক দলের কার্যালয় এই ভবনে। কার্যালয়গুলো ঘুরে রাজনৈতিক কার্যক্রমের খুব একটা দেখা মিললো না। দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি রফিবুল ইসলাম রিপনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি অজুহাত দেখিয়ে এড়িয়ে যান।
নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন পেতে ন্যূনতম ২১ জেলায় অফিস ও ১০০ উপজেলায় কমিটির কার্যক্রম আবশ্যক। তাই এখন প্রশ্ন, যেখানে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়েরই বেহাল অবস্থা, সেখানে নিবন্ধনের জন্য কতটা প্রস্তুত এসব দল।
এবিষয়ে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘বড় দলগুলোর সাথে তারা যদি সমঝোতায় আসতে পারে তাহলে হয়তো তারা একটা-দুইটা সিটও পেতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থও জড়িত। আর কেউ কেউ আছেন যারা আন্তরিকভাবেই বিশ্বাস করেন যে একটা রাজনৈতিক দল গঠনের মাধ্যমে তারা বাংলাদেশের রাজনীতিতে কোনো পরিবর্তন আনতে পারবেন।’এ নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. আব্দুল লতিফ বলেন, রাজনীতিতে জোট ভারি করতেই গুরুত্ব পায় অনেক নাম সর্বস্ব দল। তাই এক্ষেত্রে, দায় থাকে বড় রাজনৈতিক দলগুলোর। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. আব্দুল লতিফ মাসুম বলেন, রাজনীতির নামে যে লাফালাফি, সুবিধা গ্রহণ, নেতৃত্ব-কর্তৃত্বের যে সম্ভাবনা সেটা ১০০ ভাগ আছে।
আগামীর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কমিশনে এবার নতুনভাবে নিবন্ধন আবেদন পড়েছে প্রায় শতাধিক রাজনৈতিক দলের। এর মধ্যে ৬৫টিই ইসিতে দল নিবন্ধনের সময় বাড়ানো আবেদন করলে কমিশন তা বাড়িয়ে ২২শে জুন পর্যন্ত করেছিল। যদিও নিবন্ধন প্রত্যাশী অনেক দলেরই কার্যালয় আর কার্যকারিতা নিয়ে ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে নানা প্রশ্ন। এতসব যদি-কিন্তু পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত কয়টি দল নতুনভাবে নিবন্ধন পায় সেটিই দেখার বিষয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

কিছুই নেই তাদের তবুও আবেদন!

আপডেট সময় : ০৮:৪৭:৫০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫

কার্যালয় নেই কমিটি নেই কার্যক্রম নেই, এমন নামসর্বস্ব শতাধিক রাজনৈতিক দল নিবন্ধন পেতে আবেদন করেছে নির্বাচন কমিশনে (ইসি)। সম্প্রতি নিবন্ধনের জন্য ইসিতে ২২ জুন পর্যন্ত আবেদনের সুযোগ দেয়া হয়েছিল। সে সুযোগে এ সকল ভুঁইফোড় রাজনৈতিক দলেল তৎপরতা শুরু হয়েছে। আজ সেই রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের সুযোগ শেষ হচ্ছে। ইসি সূত্রে জানা গেছে, ‘নতুন বাংলা’, ‘বাংলাদেশ একুশে পার্টি’, ‘বাংলাদেশ জাগ্রত জনতা পার্টি’ কিংবা ‘বাংলাদেশ ছাত্র জনতা পার্টি’সহ এমন অন্তত ৬৫টি রাজনৈতিক দল নিবন্ধন পেতে আবেদন করেছে নির্বাচন কমিশনে (ইসি)। যাদের বেশিরভাগেরই ঠিক নেই দলীয় কার্যালয়, কার্যকরী কমিটি কিংবা স্বকীয়তা। নামসর্বস্ব এমন রাজনৈতিক দলগুলো সুস্থ ধারার রাজনীতি চর্চায় কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ের মধ্যে অনেকগুলোর অবস্থা এমন যে, কেন্দ্রীয় কার্যালয় তো দূরের কথা, সাইনবোর্ডটি পর্যন্ত নেই, নেই কার্যকরী কমিটি। কোনোটি আবার শুধু কাগজে কলমেই তৎপর। তবে এই দলগুলোই আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নিবন্ধনের আবেদন করেছে নির্বাচন কমিশনে। নির্বাচন কমিশনে দাখিল নিবন্ধনের আবেদনে মিরপুরের আহমেদ নগরের এক বাড়ির ঠিকানা ব্যবহার করেছে ‘বাংলাদেশ ছাত্র জনতা পার্টি’। কিন্তু বাড়ির নিচতলার বাসিন্দারা জানেনই না যে, এখানে কোনো দলের অফিস আছে। বাইরে সাইনবোর্ড না থাকলেও, বাড়ির ভিতরে গিয়ে দেখা মেলে দলটির কার্যালয়ের। ছোট একটি কক্ষে ২টি টেবিল আর ৪টি চেয়ার নিয়েই চলছে কার্যক্রম।
‘বাংলাদেশ ছাত্র জনতা পার্টির’ মুখপাত্র বেলাল হোসেন বলেন, ‘আপাতত আমাদের ক্ষণস্থায়ী অফিস এটাই। গোডাউনের মত আছে। এটা পরিষ্কার করে ঠিক করে নিয়ে এটা পুরোটা নিয়েই আমাদের অফিস হবে। ‘নতুন বাংলা’ নামে আরেকটি দলের কার্যালয়ে গেলে নেতাকর্মীহীন বন্ধ কার্যালয় খুলিয়ে দেখা যায় একটি টেবিল আর কয়েকটি চেয়ার।
রাজধানী জুড়েই খুঁজে পাওয়া অনেক দলের কার্যালয়গুলোই বলে দিচ্ছে তাদের কার্যক্রমের অবস্থা। মিরপুরে সাইনবোর্ডহীন ‘জাগ্রত জনতা পার্টির’ অফিস, কিংবা তার পাশেই ‘বাংলাদেশ একুশে পার্টির’ কার্যালয়গুলোতে চেয়ার টেবিলই সার, নেতাকর্মীর দেখা মেলে না। এছাড়া ‘বাংলাদেশ একুশে পার্টির’ চেয়ারম্যান রবিউল আওয়াল বলেন, ‘এটা কেন্দ্রীয় কার্যালয়, কিন্তু আমরা নতুন একটা অফিস খুঁজছি, তবে পাচ্ছি না।’
রাজধানীর পুরানা পল্টনের একটি ভবনেই চলছে বেশকিছু রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম। ‘লেবার পার্টি বাংলাদেশ’, ‘আমজনতার দল’ আর ‘দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও আন্দোলন’সহ বেশকিছু রাজনৈতিক দলের কার্যালয় এই ভবনে। কার্যালয়গুলো ঘুরে রাজনৈতিক কার্যক্রমের খুব একটা দেখা মিললো না। দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি রফিবুল ইসলাম রিপনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি অজুহাত দেখিয়ে এড়িয়ে যান।
নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন পেতে ন্যূনতম ২১ জেলায় অফিস ও ১০০ উপজেলায় কমিটির কার্যক্রম আবশ্যক। তাই এখন প্রশ্ন, যেখানে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়েরই বেহাল অবস্থা, সেখানে নিবন্ধনের জন্য কতটা প্রস্তুত এসব দল।
এবিষয়ে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘বড় দলগুলোর সাথে তারা যদি সমঝোতায় আসতে পারে তাহলে হয়তো তারা একটা-দুইটা সিটও পেতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থও জড়িত। আর কেউ কেউ আছেন যারা আন্তরিকভাবেই বিশ্বাস করেন যে একটা রাজনৈতিক দল গঠনের মাধ্যমে তারা বাংলাদেশের রাজনীতিতে কোনো পরিবর্তন আনতে পারবেন।’এ নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. আব্দুল লতিফ বলেন, রাজনীতিতে জোট ভারি করতেই গুরুত্ব পায় অনেক নাম সর্বস্ব দল। তাই এক্ষেত্রে, দায় থাকে বড় রাজনৈতিক দলগুলোর। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. আব্দুল লতিফ মাসুম বলেন, রাজনীতির নামে যে লাফালাফি, সুবিধা গ্রহণ, নেতৃত্ব-কর্তৃত্বের যে সম্ভাবনা সেটা ১০০ ভাগ আছে।
আগামীর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কমিশনে এবার নতুনভাবে নিবন্ধন আবেদন পড়েছে প্রায় শতাধিক রাজনৈতিক দলের। এর মধ্যে ৬৫টিই ইসিতে দল নিবন্ধনের সময় বাড়ানো আবেদন করলে কমিশন তা বাড়িয়ে ২২শে জুন পর্যন্ত করেছিল। যদিও নিবন্ধন প্রত্যাশী অনেক দলেরই কার্যালয় আর কার্যকারিতা নিয়ে ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে নানা প্রশ্ন। এতসব যদি-কিন্তু পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত কয়টি দল নতুনভাবে নিবন্ধন পায় সেটিই দেখার বিষয়।